শীতকালে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত পিঠা সম্পর্কে জেনে নিন।

প্রিয় বন্ধুরা আমরা জানি শীতকালীন সময়ে আমরা উষ্ক-খুষখো ভাবে শরীরে শীতের পোশাক জড়িয়ে কখনো শীতের তীব্রতায় আগুন জ্বালিয়ে হাত পায়ে সেতের মাধ্যমে দিন পার করে দেই। কিন্তু বাঙালির যে ঐতিহ্য শীতের পিঠা সেগুলো বানাতে বা খেতে আমরা কখনোই পিছুপা হইনা। বাঙালির হাজার দারিদ্রতার মধ্যে হলেও পরিবারের জন্য বা নিজের জন্য শীতের পিঠা অপরিহার্য।
শীতকালে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত পিঠা সম্পর্কে জেনে নিন।
আসলে আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি। সেটা আপনারা উপরে লেখাগুলো দেখেই বুঝতে পেরেছেন। তার মানে শীতের পিঠাগুলো বানানো এবং খাওয়া বিষয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আলোচনা করা যাক।

ভূমিকাঃ 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা শীতকালে যে সমস্ত পিঠা গুলো বানিয়ে খেয়ে থাকি সে বিষয়গুলো নিয়েই আজকের আর্টিকেল কিভাবে স্মৃতির পিঠাগুলো তৈরি করা যায়। এবং পরিবেশন করা যায় সে বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ তাহলে চলুন আর দেরি না করে শীতের পিঠাগুলো বানানো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক প্রথমে আমরা ভাপা পিঠা সম্পর্কে আলোচনা করব।

আমরা সকলেই জানি ভাপা পিঠা বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা যা প্রধানত শীত মৌসুমে প্রস্তুত ও খাওয়া হয়। এটি প্রধানত চালের গুঁড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের মাধ্যমে আঁচে তৈরী করা হয়। এবং সেটি মিষ্টি করার জন্য তার ভিতরে গুড় দেয়া হয়। যাতে করে মিষ্টি হয়। এবং স্বাদ বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়।

আর একটু সুস্বাদু বৃদ্ধির জন্য ভাপা পিঠার মধ্যে নারকেলের শাঁস দেয়া হয়। এবং এই পিঠা বাঙালির ঐতিহ্যগত ভাবে এটি একটি গ্রামীণ নাশতা বা খাবার। বিংশ শতকের শেষভাগে প্রধানত গ্রাম ও শহরে আসা গ্রামীণ মানুষদের খাদ্য হিসাবে এটি গ্রাম ও শহরে বহুল প্রচলিত হয়েছে। রাস্তা ধারে এখানে ওখানে এমনকী রেস্তোরাঁতে আজকাল ভাপা পিঠা পাওয়া যায়।

এই পিঠা অনেক অঞ্চলে ধুপি নামেও পরিচিত। এর ধরনের পিঠার মধ্যে রয়েছে মিষ্টি ভাপা ও ঝাল ভাপা। ইত্যাদি।

ভাপা পিঠা বা ধুপি এর উপকরণ সমূহ।

ভাপা পিঠা তৈরী করার জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা করতে হয়। এবং বাষ্প পানির আঁচে এটি তৈরী করতে হয়। এজন্যে একটি মাটির অথবা সিলভারের পাতিল প্রয়োজন। কারণ তার মাথা গোলাকার ফুটো থাকে যার ফলে পাতিলের মুখে বাটিতে করে মিশ্রণ আটা পাতলা কাপড় দিয়ে আটকে নিতে হয়।এবং পাতিলের অর্ধেক পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে পানি ফুটাতে হয়।

ক্রমিক নং

উপকরণ

ওজন

পরিমাণ

চালের গুঁড়া 

এক কেজি


খেজুরের গুড় 

আধা কেজি


নারিকেল কোরানো 


চার বাটি

লবণ 


পরিমাণ মত

পানি 


পরিমাণ মত

ছোট একটি বাটিতে প্রথমে মাখানো চালের গুঁড়া ও মাঝখানে নারিকেল কোরানো দিয়ে বাটি ভর্তি করে বাটির মুখ পাতলা কাপড় দিয়ে মুড়ে ফুটন্ত হাঁড়ির ছিদ্রতে বসিয়ে ভাপা পিঠা ১/২ মিনিট সেদ্ধ করতে হয়। তারপর গরম গরম খেতে হয়। সেদ্ধ হওয়ার সময় গুড় গলে বাইরে বেরিয়ে আসলে সাদা চালের গুঁড়ার ফাঁকে ফাঁকে গুড়ের উঁকি মনোরম দেখায়।

এবার চলুন আমরা শীতকালের সময় শুধু ভাপা পিঠা নয়। আরো কিছু শীতের পিঠার নাম এবং বানানো উপকরণ সম্পর্কে জেনে নেই।

শীতের পিঠাগুলো নাম ও উপকরণ সমূহ।

চিংড়ি মাছের নোনতা পাটিসাপটা: ময়দা ১২৫ গ্রাম,চালের গুঁড়ো ২৫ গ্রাম, লবন এক চিমটি, ডিম ১টা, দুধ ৩০০ মিলি, মাখন ২৫ গ্রাম, পনির ৪০ গ্রাম, টুকরো করা চিংড়ি মাছ ৫০০ গ্রাম, পেয়াজ ১টা, ধনে পাতা ১ টেবিল চামচ। তেল বা মাখন ভাজার জন্য।পাতিলে অলিভ অয়েল গরম করতে হবে। এবং পেয়াজ গুলো তাতে ভাল করে ভাজতে হবে।

২৫ গ্রাম মাখন এবং ২৫ গ্রাম ময়দা মিশিয়ে একটা হালকা মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এর পর এতে ৩০০ মিলি দুধ দিয়ে ঘন বা না। হওয়া পর্যন্ত সমানে নাড়তে হবে। এর পর চুলার আচ বাড়িয়ে দিয়ে তার মধ্যে পনিরের টুকরো, নুন, অথবা লবণ ১ টেবিল চামচ। ধনেপাতা পরিমান মত। এবং চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে দিতে হবে।

ময়দা, চালের গুঁড়ো, এক টেবিল চামচ ধনেপাতা এবং একটু লবন দিয়ে বাটিতে ভাল করে মিশ্রন বা মিশিয়ে নিতে হবে। ডিম ও ৩০০ মিলি দুধ মিশিয়ে সেটি যেন একটা ঘন মিশ্রণ তৈরি হয়। সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং বাকি দুধ দিয়ে একটা পাতলা মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। পাতিলে মাখনটা গরম করতে হবে।

প্যানে মিশ্রণের কিছুটা দিয়ে হাতা দিয়ে ঘুরিয়ে পাটিসাপটা তৈরি করতে হবে। নিচের অংশে রং ধরা পর্যন্ত রান্না করতে হবে। ভাজাটাকে নাড়তে হবে। এবং সেটি কয়েক সেকেন্ড ধরে রান্না করতে হবে। তার পর চিংড়ি মাছের মিশ্রণটা এর মধ্যে ভরে পরিবেশন করতে হবে।

গাজর ও কপি পাটি সাপটা পিঠা

গাজর ও কপি পাটিসাপটা: চালের গুঁড়া সিকি কাপ, ময়দা ১ কাপ, খেজুরের রস ১ কাপ, গাজরকুচি ১ মুঠো, ফুলকপি ১ মুঠো, নারকেলের কোরা ২ মুঠো, চিনি ১ কাপ। প্রথমে উপরের ১-৩ নং পর্যন্ত উপকরণগুলো সব দিয়ে গোলা তৈরি করতে হবে। তারপর ৪-৭ নং পর্যন্ত উপকরণগুলো সব মিলিয়ে জ্বাল দিয়ে পুর তৈরি করতে হবে। 

প্যানে সামান্য ঘি লাগিয়ে ১ হাতা করে গোলা দিয়ে পাটিসাপটা রুটি বানিয়ে তার মধ্যে পুর দিয়ে ভাঁজ করে নামিয়ে নিতে হবে। এভাবে সব বানিয়ে সার্ভিং ডিশে রেখে খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে ঘন করে পিঠার ওপর দিয়ে দিতে হবে।

তেলেভাজা পিঠা অথবা পাকান পিঠা

তেলেভাজা পিঠা অথবা পাকান পিঠা:চালের গুঁড়া আধা কেজি, খেজুরের গুড় ৫০০ গ্রাম, আটা আড়াইশো গ্রাম। সরিষা অথবা সোয়াবিন তেল আধা কেজি। খেজুরের গুড় আর এক গ্লাস পানি জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। তারপর এতে চালের গুঁড়া ও আটা দিয়ে ঘন করে মিশাতে হবে। কড়াইতে তেল দিয়ে গরম হলে। 
এক চামচ করে পিঠার গোলা ছেড়ে দিতে হবে। পিঠা ফুলে উঠলেই তৈরী হয়ে গেলো তেলেভাজা বা পাকান পিঠা তৈরি করা শেষ এবং পরিবেশনের পালা।

সুন্দরী পাকান পিঠা

সুন্দরী পাকান পিঠা:দুধ এক লিটার, নারকেল একটা কুরানো ময়দা এক কেজি। লবণ অল্প, তেল ভাজার জন্য। এক কেজি, পানি দুই কাপ, তেজপাতা দুইটা, দারচিনি দুইটা। একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে সিরা বানাতে হবে। দুধ জ্বাল দিয়ে ফুটে উঠলে চিকন বাটা নারকেল, লবণ ও ময়দা দিয়ে খামির তৈরি করতে হবে। ভাল করে মাখিয়ে পুরু করে বেলে নিতে হবে।

এরপর বিস্কুট কাটার দিয়ে কেটে উপরে খেজুর কাঁটা অথবা ছুরি দিয়ে ডিজাইন করে সব পিঠা তৈরি করে ডুবোতেলে ভেজে সিরায় ডুবাতে হবে। তাহলেই সুন্দরী পাকান ও পিঠা তৈরি হয়ে যাবে।

গোলাপফুল পিঠা

গোলাপফুল পিঠা:দুধ ২ কাপ ময়দা ৩ কাপ চিনি ৪ টেবিল চামচ লবণ সামান্য ঘি ২ টেবিল চামচ।সিরার জন্য-চিনি ৩ কাপ পানি দেড় কাপ দারুচিনি ২ টুকরা। দুধ গরম হলে চিনি, লবণ, ময়দা দিয়ে কাই করে নিতে হবে। পরে ঠান্ডা হলে অল্প অল্প করে ঘি দিয়ে ভালো করে মথে রুটি বেলে দুই ইঞ্চি ব্যাসে গোল গোল করে কেটে গোলাপ তৈরি করতে হবে।

এবার গরম ডুবোতেলে বাদামি রং করে ভেজে সিরায় ছাড়তে হবে। তাহলে এই সিস্টেমে গোলাপ ফুল পিঠা তৈরি বা বানানো হয়ে যাবে। তারপরে পরিবেশনের পালা এটা আমরা সকলেই জানি।

লেখকের কথাঃ

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকের আর্টিকেল ছিল শীতকালে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত পিঠা সম্পর্কে আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেকটা উপকার এসেছে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ আমার সাইট থেকে অবশ্যই ফলো দিয়ে রাখবেন যাতে করে পরবর্তীতে আবার অন্য কোন টিম বা অন্য কোন খাদ্য সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি এই প্রত্যাশায় এখানেই শেষ করছি ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন