আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক ফসল

প্রিয় পাঠক আমাদের দেশ বাংলাদেশ আর বাংলাদেশে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক ফসল। সাধারণত ধান ও গমের পরই আলুর স্থান বলে জানি। বর্তমান চাষের জমির পরিমাণ ও ফলনের হিসেবে ধানের পরই আলুর স্থান। একেক সময়ে একেক জমিতে সর্বাধিক উৎপাদনের কারণে দিন দিন আলু চাষে জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক ফসল বিস্তারিত জেনে নিন
কারণ আলু চাষে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার জন্য আলু চাষের গুরুত্ব আমাদের কৃষক ভাইদের বেশি আর গুরুত্ব দিয়ে আলু চাষাবাদ করলে এখান থেকে অনেক লাভবান হয়ে থাকে কৃষক তাই আজকে আর্টিকেলে জানাবো ভালো বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চলুন জেনে নিন আলু উৎপাদনের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে।

ভূমিকা:

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকের আর্টিকেলটি ভালো চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পড়া যায়। এখান থেকে কৃষক বন্ধুরা আলু চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ হবে। এবং লাভবান হবে। চলুন তাহলে আলুর চাষের বা উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আলোচনা করা যাক।

আলু চাষের জন্য মাটি নির্বাচন করব:

মাটি নির্বাচন: যে কোনো মাটিতে আলু চাষ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ থেকে দোআঁশ মাটি আলু চাষের জন্য উত্তম। উঁচু থেকে মাঝারি উচুঁ জমি যেখানে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে। সে সকল জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিটি অবশ্যই রৌদ্র উজ্জ্বল হতে হবে। মাটিতে উর্বর আসার পর আড়াআড়ি ভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভুর ভোরে বা ঝুরঝুরে করে প্রস্তুত করতে হবে।

আড়াআড়ি ভাবে কমপক্ষে ৪টি চাষ দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে বড় মাটির ঢিল বা ঢেলা না থাকে। এবং মাটি ভুর ভোরে বা ঝুরঝুরে অবস্থায় আসে। কারণ বড় মাটির ঢিল বা ঢেলা আলুর সঠিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। এবং অনেক সময় অসম ও বিকৃত আকার তৈরি করে। জমি তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে। যাতে জমিতে সুষম সেচ প্রয়োগ করা যায়।

সে জন্য জমির উপরিভাগ সমতল করতে হবে। না হলে জমিতে সেচ দিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। যার জন্য জমি সমতল রাখাটা অনেক জরুরী সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আলুর জাত বা পরিচিতি নির্বাচন:

জাত পরিচিতি: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত আলুর মোট ৮৩টি জাত অবমুক্ত করেছে। যার মধ্যে খাবার আলু, প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী আলু, রপ্তানিযোগ্য আলু, আগাম আলু ও সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। এমন আলুর জাত আছে। খাবার আলুর জন্য ডায়মন্ট কার্ডিনাল

আর এই আলুর ফলন প্রতি হেক্টরে ২৫-৩৫ টন। আগাম জাত হিসেবে গ্রানোলা, বারি আলুর ৭৪-৭৫ যার ফলন প্রতি হেক্টরে ২০-৪০ টন। রপ্তানি উপযোগী গ্রানোলা,বারি আলু-৪৬ যার ফলন প্রতি হেক্টরে ২০-৩৫ টন। প্রক্রিয়াজাত করণ উপযোগী এসটেরিক্স, লেডি রোসেটা, কারেজ, মেরিডিয়ান যার 
ফলন প্রতি হেক্টরে ২০-৩৫ টন। 

মড়ক রোগ প্রতিরোধী বারি আলু-৪৬, ৫৩, ৭৭, এ্যালোটি, ক্যারোলাস যার ফলন প্রতি হেক্টরে ৩০-৪০ টন। আরেক ধরনের আলো রয়েছে। যেটি দীর্ঘ সময় দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়। আইলসা, প্রোভেন্টো, বারি আলু-৬২, ৭৬ যার ফলন প্রতি হেক্টরে ৩০-৪০ টন। ও তাপ সহিষ্ণু বা দেরিতে রোপণ উপযোগী বারি আলু-৭২ বা ৭৩ এর ফলন প্রতি হেক্টরে ২০-২৪ টন।

আলুর বীজ শোধন সম্পর্কে আলোচনা

আলুর বীজ শোধন: কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলুর বীজ বের করার পর ৪৮ ঘণ্টা প্রি হিটিং কক্ষে রাখতে হবে। আলুর বীজ বাড়িতে আনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বস্তা খুলে ছড়িয়ে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য স্বাভাবিক ভাবে বাতাস চলাচল করে। এমন ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে। কারণ বীজ কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের করে বস্তা বন্ধ অবস্থায় রাখলে। 

আলু ঘেমে পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোল্ড স্টোরেজে রাখার আগে বীজ শোধন না হয়ে থাকলে অঙ্কুর টেক গজানোর আগে আলুর বীজ দাদ বা স্ক্যাব এবং বস্ন্যাক স্কার্ফ রোগ প্রতিরোধের জন্য ৩% বরিক এসিড দিয়ে শোধন করে নিতে হয়। এ জন্য ১ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম হারে বরিক এসিড মিশিয়ে বীজআলু ১০-১৫ মিনিট চুবিয়ে বা ভিজিয়ে রেখে পরে ছায়া গুপ্ত জায়গায় শুকাতে হবে।

যাতে করে আলুতে না রোদ না লাগে এমনকি এটি পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর আলু ছড়িয়ে স্প্রে করেও কাজটি করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন আলুর গোটা অংশ ভিজে যায়। সাধারণত বিঘা প্রতি অর্থাৎ ৩৩ শতকে ২শ থেকে ২শ ১০ কেজি আলুর বীজ প্রয়োজন হয়। এই কথাগুলো আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।

আলুর রোপনের পদ্ধতি:

রোপণ পদ্ধতি: অঙ্কুর বা টেক গজানোর পর ১ম কুঁড়িটি ভেঙে দিতে হবে। কারণ ১ম কুঁড়ি ভেঙে দেয়ার পর অন্যান্য কুঁড়ি সমানভাবে বৃদ্ধির সুযোগ পায়। না হলে ছোট বড় হয়ে যায়। এবং ৩০-৪০ গ্রাম ওজনের আস্ত আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করা উত্তম। কেটেও বীজ লাগানো যেতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে। যেন প্রতিটি কাটা অংশে কমপক্ষে ২টি চোখ বা কুঁড়ি থাকে। 

বীজ লাগানোর ২-৩ দিন আগে আলু কেটে ছায়াযুক্ত জায়গায় রেখে দিলে কাটা অংশের ওপর একটা প্রলেপ বা আবরণ পড়ে। ফলে মাটি বাহিত রোগ জীবাণু সহজে বীজে প্রবেশ করতে পারে না। আবার  অন্যভাবে ছাই মেখেও কাজটি করা যেতে পারে। এতে আলুর পচন অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। তাহলে অবশ্যই এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

প্রতিটি আলু কাটার পর সাবান পানি দ্বারা ছুরি বা বটি পরিষ্কার করা উচিত বা ভালো যাতে করে রোগ জীবাণুে এক আলু থেকে অন্য আলু বীজে না ছড়ায়। আলুর বীজ আড়াআড়িভাবে আলু না কেটে লম্বা-লম্বি ভাবে কাটতে হবে। আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ কার্তিক থেকে ১৫ অগ্রহায়ণ অর্থাৎ নভেম্বর মাস আলু রোপণের উপযুক্ত সময়। 

আলুর জমিতে সার প্রয়োগ সম্পর্কে:

সার ব্যবস্থাপনা: আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাটির উর্বরতা বিভিন্ন রকমের, এ জন্য সারের চাহিদা সকল জমির জন্য একই সমান নয়। তাই জায়গা  ভেদে সার প্রয়োগ করা হয়।

ক্রমিক নং

উপকরণের নাম

বিঘা/শতক

কেজি

গ্রাম/পরিমাণ

ইউরিয়া, 

বিঘা প্রতি 

৪৪-৪৮


টিএসপি,

বিঘা প্রতি 

২৭-৩০


এম-ও-পি 

বিঘা প্রতি 

৩৩-৪০


জিপসাম,

বিঘা প্রতি 

১৩-১৬


ম্যাগনেসিয়া,

বিঘা প্রতি 

১৮-২০


সালফেট,

বিঘা প্রতি 

১ কেজি

১ কেজি ৩শ গ্রাম,

বোরন,  

বিঘা প্রতি 


৮শ গ্রাম

গোবর

বিঘা প্রতি 

১২শ-১৩শ



আলুর জমিতে শেষ চাষের সময় ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। আর মাপের অর্ধেক ইউরিয়া, এবং সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ও বোরন সার রোপণের সময় সারির দুই পাশে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয়বার মাটি তোলার সময় উপরে প্রয়োগ করতে হবে। 


সার প্রয়োগের পর সঙ্গে সঙ্গে সার ও বীজ মাটি দিয়ে ভেলি তুলে ঢেকে দিতে হবে। 

আলোর পরিচর্যা সম্পর্কে আলোচনা:

আলুর পরিচর্যা: আলু বীজ রোপণের পর জমিতে ভালো রস না থাকলে সেচ দেয়া উত্তম, তবে খেয়াল রাখতে হবে ক্ষেতে কোনোভাবেই পানি জমাট বেঁধে না থাকে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পানিতে ভেলির ২/৩ অংশ পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। ২-৩টি সেচ প্রয়োগ করা প্রয়োজন হতে পারে (২০-২৫ দিনের মধ্যে স্টোলন বের হওয়ার সময়, ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে গুটি বের হওয়া পর্যন্ত।


এবং পরে আলু বৃদ্ধির সময় জমি থেকে আলু উঠানোর ৭-১০ দিন আগে মাটি ভেদে সেচ প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। উল্লেখ্য যে, দাদ রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আলু রোপণের পর ৩০-৫০ দিনের সময়ে জমিতে কোনো অবস্থায় রসের ঘাটতি। এবং ৬০-৬৫ দিনের পর রসের আধিক্য হতে দেয়া যাবে না। আলুর জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখা উচিত। 


আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করে দুই সারির মধ্যবর্তী স্থান কুপিয়ে উপরি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার মিশ্রিত মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে। কোপানোর সময় যাতে আলুর শিকড় বা স্টোলন না কাটে। এবং মাটি দেয়ার সময় গাছের পাতা মাটি চাপা না পড়ে। ৫৫ থেকে ৬০ দিন পর প্রয়োজন হলে। পুনরায় আগাছা পরিষ্কার করে মাটি তুলে দিতে হবে। 

অন্য জাত আলু বাছাই সম্পর্কে:


আলুরবীজ জমিতে অন্য জাত আলু বাছাই: মানসম্পন্ন আলুবীজ উৎপাদনে রগিং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিকভাবে রগিং করা না হলে বীজআলুর গুণাগুণ কমে যায়। এ জন্য গাছের বয়স ৩০-৩৫ দিন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত নিয়মিত আলুর জমিতে বিভিন্ন জাতের মিশ্রিত গাছ, অস্বাভাবিক এবং রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। 


ভাইরাস রোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আলু গাছ আলুসহ তুলে অন্যত্র মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। সকাল এবং বিকাল রগিংয়ের জন্য উপযুক্ত সময়। সূর্যের বিপরীত দিকে মুখ করে রগিং করতে হবে যেন পাতায় সব লক্ষণ স্পষ্ট বুঝা যায়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন রোগাক্রান্ত গাছ কোনোক্রমেই কোনো সুস্থ গাছের সঙ্গে না লাগে।


এবং শ্রমিকের হাতের স্পর্শ দ্বারাও যেন সুস্থ গাছে রোগ সংক্রমণ না হয়। হামপুলিং: হামপুলিং হলো গাছ টেনে উপড়ে ফেলা। হামপুলিংয়ের ৭-১০ দিন আগে থেকে সেচ বন্ধ করতে হবে। তবে বালি মাটি হলে ৫ থেকে ৭ দিন আগে সেচ বন্ধ করা ভালো। বেশি দিন আগে সেচ বন্ধ করলে বালি মাটির আলুতে হিট ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 


হামপুলিং করার সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলে গাছ খেত থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যদি পর্যাপ্ত রস না থাকে তবে গাছ দ্বারা পিলি ঢেকে দিতে হবে। ফলে হিট ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। ফসল তোলার পরে আলুর আকার ও ফলন দেখে হামপুলিংয়ের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে। হামপুলিংয়ের পর মাটি ও আলুর অবস্থার ওপর নির্ভর করে। 


৭-১০ দিন পর্যন্ত মাটির নিচে রেখে আলুর ত্বক শক্ত করতে হবে। আলুর ত্বক শক্ত হয়েছে কি না তা দেখার জন্য আলু তুলে বৃদ্ধাঙুলি দ্বারা আলুর ত্বকে চাপ দিতে হবে। চামড়া না উঠলে বুঝা যাবে কিউরিং হয়েছে। অথবা চটের বস্তায় ২ থেকে ৩ কেজি নমুনা আলু উঠিয়ে ঝাকুনি দিতে হবে। যদি চামড়া না উঠে তবে বুঝা যাবে কিউরিং হয়েছে। 

আলু ক্ষতির ধরন সম্পর্কে:

আলুর গাছে ক্ষতিকারক এই পোকাগুলো অধিকাংশ দেখা যায়।কাটুই পোকার কীড়া বেশ শক্তিশালী, ৪০-৫০ মিলিমিটার লম্বা হয়৷ পোকার উপর পিঠ কালচে বাদামি বর্ণের, পার্শ্বদেশ কালো রেখাযুক্ত এবং বর্ণ ধূসর সবুজ৷ শরীর নরম ও তৈলাক্ত৷ কাটুই পোকার কীড়া চারা গাছ কেটে দেয় এবং আলুতে ছিদ্র করে আলু ফসলের ক্ষতি করে থাকে৷

পোকার কীড়া দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে৷ আলুর কাটা গাছ অনেক সময় কাটা গোঁড়ার পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায়৷

আলুর পোকা দমন ও প্রতিকার সম্পর্কে:

আলুর গাছে এ সমস্ত পোকা গুলো মধ্যে কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা আলু গাছ দেখে তার কাছাকাছি মাটি উল্টেপাল্টে কীড়া খুঁজে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা উচিৎ৷ কাটুই পোকার উপদ্রব খুব বেশি হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। প্রতি লিটার পানির সাথে ক্লোরোপাইরফর (ডারসবান) ২০ ইসি ৫ মিলিমিটার হারে।

মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর স্প্রে করতে হবে৷

আলুর সুতলী পোকা: আলুর সুতলী পোকার মথ আকারে ছোট, ঝালযুক্ত, সরু ডানা বিশিষ্ট ধূসর বাদামি হয়৷ পূর্ণাঙ্গ কীড়া সাদাটে বা হাল্কা গোলাপী বর্ণের এবং ১৫-২০ মিলিমিটার লম্বা হয়ে থাকে৷ কীড়া আলুর মধ্যে লম্বা সুড়ঙ্গ করে আলুর ক্ষতি করে থাকে৷ বাংলাদেশে বসতবাড়িতে সংরক্ষিত আলু এ পোকার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এবং বাড়িতে সংরক্ষিত আলু শুকনা বালি, ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুড়ার একটি পাতলা স্তর আলুর উপরে ০.৫ সেন্টিমিটার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ও আলু সংরক্ষণ করার আগে সুতলী পোকা আক্রান্ত আলু বেছে ফেলে দিতে হবে।

আলুর গাছে রোগের লক্ষণ:

  • প্রথমে পাতার ও ডগাই ছোট ভিজা দাগ পড় তে দেখা যায়।
  • এবং দাগ ক্রমাগত ভাবে বড় হয়। এবং সমগ্র পাতা ও ডগার কিছু অংশ ঘিরে ফেলে।
  • বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যেই জমির অধিকাংশ ফসল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
  • ভোরের দিকে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাউডারের মতো ছত্রাক চোখে পড়ে।
  • আক্রান্ত ক্ষেতে পোড়াপোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। এবং দেখে যেন মনে হয়। জমির ফসল সব পুড়ে গেছে।

আলুর ক্ষতি থেকে প্রতিকার:

আক্রান্ত অংশে সামান্য বাদামি এলাকার সাথে পর্যায়ক্রমে কালচে রংয়ের চক্রাকার দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরনের হয়। গাছ মরে যাওয়া এ রোগের লক্ষণীয় উপসর্গ। আক্রান্ত টিউবারের গায়ে গাঢ় বাদামি থেকে কালচে বসে যাওয়া দাগ পড়ে। সুষম সার প্রয়োগ এবং সময়মতো সেচ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে। 

আলুর গাছে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। ডাইথেন এম-৪৫ ০.২% হারে প্রয়োগ করা যায়। এবং এভাবেই ক্ষতি দমন করতে হবে। এবং এই সমস্ত রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে আগাম জাতের আলু চাষ করতে হবে।

আলুর কাণ্ড বা ডগা পচা রোগ লক্ষণ:

  • এ রোগের আক্রমণের ফলে বাদামি দাগ কাণ্ডের গোড়া ছেয়ে ফেলে।
  • গাছ ঢলে পড়ে এবং পাতা বিশেষ করে নিচের পাতা হলদে হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত অংশে বা আশেপাশের মাটিতে ছত্রাকের সাদা সাদা জালিকা দেখা যায়।
  • কিছু দিন পর সরিষার দানার মত রোগ জীবাণু গুটি বা স্কেলেরোসিয়া সৃষ্টি হয়।
  • আলুর গা থেকে পানি বের হয় এবং পচন ধরে৷ ক্রমে আলু পচে নষ্ট হয়ে যায়।

এই রোগ থেকে প্রতিকার: 

  • আক্রান্ত গাছ কিছুটা মাটিসহ সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।
  • জমিতে সব সময় পঁচা জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।

সংরক্ষণ বা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা: 

সংরক্ষণ বা ব্যবস্থাপনা: শুষ্ক, উজ্জ্বল ও ভালো আবহাওয়াতে আলু উত্তোলন করতে হবে। এক সারির পর এক সারি কোদাল বা লাঙ্গল দিয়ে আলু উঠাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আলু আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। আলু উঠানোর পর প্রখর রৌদ্রে রাখা যাবে না। মাঠে প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে কাটা, ফাটা, ক্ষতিগ্রস্ত, আংশিক পঁচা আলু বাতিল হিসেবে পৃথক করতে হবে।


যেন ভালো আলুর গাদার সঙ্গে মিশ্রিত হতে না পারে। বস্তায় অথবা চট দ্বারা আবৃত ঝুড়িতে করে সতর্কতার সঙ্গে আলু অস্থায়ী শেডে আনতে হবে।আলুর বস্তা বা ঝুড়ি আছড়িয়ে ফেলা যাবে না, কারণ তাতে আলুর চামড়া উঠে যেতে পারে বা থেতলে যেতে পারে। আলু উৎপাদন মাঠের কাছাকাছি ছায়াযুক্ত ঠান্ডা ও সহজে বাতাস চলাচল করে।


এমন স্থানে অস্থায়ী শেড তৈরি করতে হবে। মাঠ থেকে কেবল মাত্র প্রাথমিক বাছাইকৃত আলু শেডের মেঝেতে বিছিয়ে রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আলুর স্তূপ ৪৫ সেন্টিমিটারের বেশি উঁচু না হয়। এ অবস্থায় কমপক্ষে ৩-৫ দিন কিউরিং করতে হবে। জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ চ্যানেল। 


সংরক্ষণ করার জন্য আলু অবশ্যই ভালোভাবে বাছাই করা দরকার। বাছাই ভালো হলে সংরক্ষণ এবং রপ্তানিযোগ্য আলুর মান ভালো হবে। রোগাক্রান্ত, আঘাতপ্রাপ্ত, আংশিক কাটা, ফাটা, অসম আকৃতির ও অতীব সবুজায়নকৃত আলু সঠিকভাবে বাছাই করে পৃথক করতে হবে।

শেষ কথা:

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকের আর্টিকেলটি ছিল। আলুর চাষ রোগ নির্ণয় এবং পোকা দমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আশা করব এখান থেকে কৃষক ভাইয়েরা অনেক উপকৃত হবে। এবং যদি উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই আমার এই পেজটিকে ফলো দিয়ে রাখবেন। যাতে করে আমি পরবর্তীতে অন্য কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

এই এই প্রত্যাশা তে আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আর্টিকেল লেখা শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন