শরীয়ত বা ইসলামে সহবাসের সঠিক নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন
ভূমিকা:
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটিতে সঠিক পন্থায় বংশবিস্তার বা সহবাসের সঠিক
নিয়ম বা পদ্ধতি বিষয় নিয়ে আলোচনা আশা করি এখান থেকে অনেক উপকৃত হবেন। চলুন
তাহলে দেরি না করে সঠিক নিয়ম গুলো শরীয়তের আলোকে জেনে নেই।
আল্লাহপাক বলেন: আমি তোমাদের স্ত্রীকে তোমাদের জন্য বানিয়েছি। ক্ষেত স্বরূপ তোমরা যেভাবে খুশি তোমরা আবাদ করতে পারো।
তাহলে বোঝা গেল বংশবিস্তারের জন্য মিলনের বা সহবাসের প্রয়োজন। এবং সেটির সঠিক নিয়ম জানা অবশ্যই জরুরী চলুন আমরা জেনে নেই। শরীয়তের সঠিক নিয়ম গুলো শুরুতেই আমরা শরীয়তে স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে শরীয়ত কি বলে। আর সেটির বিবরণ নিম্নে বর্ণনা করা হচ্ছে।
শরীয়তে স্বামী-স্ত্রী সহবাসের নিয়ম ও পদ্ধতি:
শরীয়ত বা ইসলামে মানব জীবনের বৈধ অবৈধ সকল বিধি-বিধান রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলনের জন্যে সঠিক নিয়ম রয়েছে। কিভাবে সহবাস বা মিলন করতে হবে। কিভাবে সহবাস করা বৈধ, কখন সহবাস করা নিষিদ্ধ ইত্যাদি। নিয়ম বা পদ্ধতিগুলো কুরআন এবং হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম দাম্পত্য জীবনকে মধুর ও রোমান্টিক করতে উৎসাহিত করেছে।
শুরুতে সহবাসের নিয়ত:
আর সেটি আরবিতেই নিয়ত করতে হবে ব্যাপারটা এমন নয়। নিয়ত মানে মনোস্থির করা সংকল্প করা। মনে মনে এই কামনা করা। আমি সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে সহবাস করবো। এর মাধ্যমে নিজেকে হারাম থেকে বিরত রাখবো এবং সন্তান লাভের আশা থাকবে। হাদিসে আছে, স্ত্রী সহবাসও সাদকা। এর মাধ্যমে সাওয়াব বা নেকি সঞ্চয় করা যায়।
মিলনের বা সহবাসের সময় আলিঙ্গন বা আদর-সোহাগ করা:
শরিয়াত বা ইসলামে সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে আদর করার কথা বলা হয়েছে। হাদিসে এই আদর সোহাগের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। যৌন মিলনকে মধুর করতে যত উপায় আছে যেকোন ভাবে তা করা যাবে পারে। স্বামী চুম্বন, আলিঙ্গন, মর্দন ইত্যাদির মাধ্যমে স্ত্রীকে আদর করবে।
তেমনি স্ত্রীও স্বামীকে আদর-সোহাগ করবে। এক্ষেত্রে একে অপরে সাড়া দেওয়া খুবই জরুরী। একে অপরকে মিলনের জন্য আগ্রহী করে তুলবে। আর এটা স্বামী-স্ত্রী দাম্পত্য জীবনে থাকা খুবই প্রয়োজন। এতে করে সম্পর্ক গভীর হয়। অন্যথায় শয়তান খারাপ পথে নিয়ে যায়। যা ডিভোর্স বা বিচ্ছেের কারণ হতে পারে।
মিলন বা সহবাসের সময় দোয়া পড়া:
আমরা জানি শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু শয়তান মানুষের রক্তের শিরা-উপশিরায় অবস্থান করতে পারে। এইজন্যে সহবাসের সময় দোয়া করা অতি জরুরী একটা বিষয়। স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে যে দোয়া পড়তে হয়।
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।
অনুবাদ:‘হে আল্লাহ! তোমার নামে যৌন মিলন বা সহবাস আরম্ভ করছি। তুমি আমাদের স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান তুমি দান করবেন। সে সন্তানকেও শয়তান যাবতীয় আক্রমণ থেকে দূরে রাখ।
শুধু তাই নয় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন: এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয়। অথবা বাচ্চা পয়দা হয়। তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)
শরীয়ত বা ইসলামে সহবাসের প্রস্তুতি:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার কুরআনের কারীমে বলেন: তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন কর, যেভাবে চাও। আর তোমরা নিজদের কল্যাণে উত্তম কাজ সামনে পাঠাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় তোমরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে । আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও।(সূরা বাক্বারা-২২৩)
মিলনের বা সহবাসের পদ্ধতি সম্পর্কে সরাসরি কোন বিধি নিষেধ নেই। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, কাত হয়ে। সামনে থেকে, পিছন থেকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সহবাস করা যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে তা যৌনিপথে করতে হবে। কিছু বর্ণনায় স্বামী উপরে আর স্ত্রীকে নিচে থাকার কথা বলা হয়েছে। ইহা সুবিধাজনক ও প্রশান্তিদায়ক এবং উত্তম। তবে বাধ্যতামূলক নয়।
আর স্ত্রী যদি উপরে থাকে আর স্বামী যদি নিচে থাকে এতে গুনাহের কিছু নেই। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে এই পজিশনে বীর্যপাত হলে বীর্য আটকে কষ্টের কারণ হতে পারে। আরে প্রস্তুতির কারণে সন্তান সন্ততির বিকলাঙ্গ হবে এ কথা একদম ভিত্তিহীন। এ কথার ইসলামী শরিয়তে এবং বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই। আশা করি ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছেন।
যেভাবে স্ত্রী মিলন বা সহবাস করা অবৈধ বা হারাম:
শরীয়ত বা ইসলামে স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে সহবাস করা অবৈধ বা হারাম করেছে। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি মলদ্বারে সঙ্গম করে আল্লাহ তার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকান না। পায়ুপথ বা মলদ্বারে সহবাস করে ফেললে গোনাহগার হবে। এইজন্যে তওবা করতে হবে। এছাড়াও পায়ুপথে সহবাস করলে রোগ ব্যাধি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শরীয়ত বা ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়:
মিলন বা সহবাসের এমন কিছু সময় আছে যখন সহবাস করা অবৈধ বা হারাম। আর এই নিষিদ্ধ সময়ে মিন বা সহবাস করলে গোনাহগার হবেন। ইসলাম এই সময় গুলোতে নিজেদেরকে মিলন বা সহবাস করা থেকে বিরত রাখার কথা বলেছে। কেউ যদি সঙ্গম করে ফেলে তার জন্য তওবা করতে হবে এবং কাফফারা আদায় করতে হবে।
যে সময় গুলোতে মিলন বা সহবাস নিষিদ্ধ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
স্ত্রীর মাসিকের সময় স্ত্রী যখন ঋতুবতী অবস্থায় থাকে তখন যৌন মিলন করা যাবে না। তাই মাসিকের সময় সহবাস করা অবৈধ বা হারাম। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
অনুবাদ: আর তারা তোমাকে হায়েয মাসিক সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা হায়েযকালে স্ত্রীদের মিলন বা সহবাস থেকে দূরে থাক। এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হইও না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আসো যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।(সূরা বাকারা- ২২২)
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাদিসেও এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া বৈজ্ঞানিকদের মতে এসময় সহবাস করলে রোগ-ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে।
শরীয়াতের বিধান রোজা থাকা অবস্থায় মিলন বা সহবাস করা:
অনুবাদ: সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও।
এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না।
এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।(বাকারা-১৮৭)
রোজা থাকা অবস্থায় সহবাস করা অবৈধ বা হারাম। তবে রমজান মাসে রাত্রি বেলায় সহবাস করা যাবে। দিনের বেলায় সহবাস করা নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ সঙ্গম করে ফেললে তাওবা করতে হবে এবং কাযা, কাফফারা আদায় করতে হবে।
যে সময় মিলন বা সহবাস করা নিষিদ্ধ:
- ইত্তেকাফের সময়,
- হজ্জের ইহরাম বাঁধা অবস্থায়,
- স্ত্রীর গর্ভপাতের ৪০ দিন সময় পর্যন্ত
উপরোক্ত সময়গুলো ছাড়া অন্যযেকোন সময় যৌন মিলন করা যাবে। এক্ষেত্রে পূর্ণিমা, আমাবস্যা, দিনের বেলা, শুক্রবার, ঈদের দিনে, ঈদের রাতে, শবে বরাতে, শবে কদরের রাতে ইত্যাদি সময় সহবাস করা যাবে এবং তা বৈধ বা হালাল। এতে কোনো ক্ষতি বা গোনাহ হবে না।
স্ত্রী সহবাসের পর ফরজ গোসলের নিয়ম:
মিলন বা সহবাসের পর গোসল করা অতী জরুরী। মিলন বা সহবাসের ক্ষেত্রে বীর্যপাত হোক অথবা না হোক উভয় ক্ষেত্রেই গোসল ফরজ। আবার বীর্যপাত ছাড়াও যদি স্ত্রীর লাজ্জাস্থানে সঙ্গম করা হয়। তাহলেও গোসল ফরজ হয়ে যাবে। যৌন মিলনের পরেই দ্রুত গোসল করে নেওয়া উত্তম। পরে করলেও সমস্যা নেই।
তবে নামাজের পূর্বে অবশ্যই গোসল করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে শরীয়ত বা ইসলামে ফরজ গোসলের নিয়ম পালন করতে হবে। এই গোসল স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মিলন বা সহবাস স্বামী-স্ত্রীর মধু মিলন। স্বামী স্ত্রী উভয়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বুঝে যৌন মিলন করা উচিত। এক্ষেত্রে প্রত্যেক মুসলিমকে অবশ্যই ইসলামিক নিয়ম মানতে হবে।
- প্রথমে দুই হাতের কবজি পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করা
- মুখে পানি দিয়ে গড়গড়া করা এবং নাকে পানি দেওয়া
- সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা
- দুই হাতের কনা পর্যন্ত ধৌত করা
- মাথা মাসহে করা
- দুই পায়ের টাকা পর্যন্ত সুন্দর ভাবে ধৌত করা
লেখকের কথা:
প্রিয় পাঠক আজকের আটিকেল গুরুত্বপূর্ণ ট্রফিক নিয়ে আলোচনা ছিল। আশা করি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে অনেক উপকার হবে আশা করি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক নিয়মে সহবাস করার তৌফিক দান করুন। আমীন এই প্রত্যাশা রেখে এবং আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আর্টিকেল লেখা এখানে শেষ করছি।