ঘরোয়া পদ্ধতি তরমুজ চাষ বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় বন্ধুরা, আমাদের দেশে নানান ধরনের ফল পাওয়া যায়। তার মধ্যে তরমুজ একটি সুস্বাদু অর্থকরী ফসল। গরমের সময় এটি অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক ও তৃষ্ণা নিবারক ফল। আমাদের দেশে যে সব উন্নত মানের তরমুজ পাওয়া যায়। তা বিদেশ থেকে আমদানীকৃত শংকর জাতের বীজ থেকে চাষ করা হয়। আর এই ফল বা ফসল আমাদের দেশে ১২ মাসে ফলানো সম্ভব।
এবং এ ফল ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাড়ির বিভিন্ন স্থানে চাষ করা সম্ভব। শুধু তাই নয় এ ফল বা ফসল রাসায়নিক সার ছাড়া শুধু নিজের বানানো কম্পোজার দ্বারা চাষাবাদ করা যায়।
ভূমিকা:
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকের বিষয়টি বা আর্টিকেল ঘরোয়া পদ্ধতি সুস্বাদু ফল তরমুজ চাষের বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য মনস্থ করেছি। তরমুজ ফল বা ফসল ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাসা বাড়ি বিভিন্ন স্থানে। কিভাবে চাষাবাদ করা যায়। এই ব্যাপারে আপনাদের কাছে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরব আশা করি।
আরো পড়ুন:শীতের পিঠা তৈরীর কলাকৌশল সহজেই জেনে নিন
এখান থেকে তরমুজ চাষ ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
তরমুজের জাত সম্পর্কে:
- টপইল্ড
- গ্লোরী
- তাইওয়ান
- ওয়ার্লড কুইন
- সুগার বেবী,
- চ্যাম্পিয়ন,কঙ্গো
জলবায়ু ও মাটি সম্পর্কে:
জলবায়ু ও মাটি: শুষ্ক, উষ্ণ ও প্রচুর আলোযুক্ত জায়গাতে তরমুজ খুব ভালো হয়ে থাকে। তাই অধিক আর্দ্রতা তরমুজের জন্য ক্ষতিকর। তরমুজের খরা ও উষ্ণ তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা খুব বেশি। উর্বর দোঁ-আশ ও বেলে দোঁ-আশ মাটিই তরমুজ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তাই তরমুজ চাষের জন্য সে সমস্ত মাটি বেছে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
তরমুজ খাওয়া ভালো ও মন্দ ব্যাপারে আলোচনা:
- তরমুজের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এটি শরীরে পানির ঘাটতি কমায় আর মানুষের ক্লান্তি কমিয়ে দেয়। এবং শরীরে প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে
- তবে সমস্যা হলো এটি বেশী মাত্রায় একবারে খেয়ে ফেললে হজমের সমস্যা হতে পারে।
- এ কারণেই পুষ্টিবিদগণ ভারী খাবার গ্রহণের পর তরমুজ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- আর সুগার বেশি থাকায় যাদের ডায়াবেটিস আছে। তাদের এই ফলটি না খাওয়াই উত্তম।
বংশ বিস্তার:
আমরা জানি তরমুজের বংশ বিস্তার সাধারণত বীজ দ্বারাই করা হয়ে থাকে। আর সেই বীজ পলিথিনের ভিতরে কিছু মাটি দিয়ে রোপন করতে হয়। এখান থেকেই তরমুজের চারা গাছ নির্গত হয়ে থাকে।
জমি তৈরি:
জমি তৈরিঃপ্রয়োজনমত জমি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির পর মাদা প্রস্তুত করতে হয়। মাদাতে সার প্রয়োগ করে চারা লাগানো উত্তম। এবং বাড়ির আশেপাশে অথবা বাড়ির ছাদে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে সুন্দর ভাবে মাটি সংরক্ষণ করে সেখানেও তরমুজের চারা বোপন করা যায়।
আর গাড়ির ছাদের কাছ থেকে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে বোপনকৃত চারা অল্প দিনে ফুল-ফল আসে। এবং ফলগুলো মান-সম্মত হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় পরিত্যক্ত জায়গা আবাদের উপযোগী হয়ে থাকে।
তরমুজের বীজ বোপনের সময়সীমা:
বীজ বপন সময়ঃ বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া তরমুজ চাষের বেশি উপযোগী। বীজ বোনার জন্য ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সবচাইতে ভালো। আগাম ফসল পেতে হলে জানুয়ারি মাসে বীজ বুনে শীতের হাত থেকে কচি চারা রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য পলি টানেল ব্যবহার করা যায়। তাহলে অতিরিক্ত শীত থেকে যারা গাছগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে।
বীজের অংকন সম্পর্কে: শীতকালে খুব ঠান্ডা থাকলে বীজ ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে গোবরের মাদার ভিতরে কিম্বা মাটির পাত্রে রক্ষিত বালির ভিতরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যেই বীজ অংকুরিত হয়। বীজের অংকুর দেখা দিলেই বীজতলায় অথবা মাদায় স্থানান্তর করা ভালো। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তরমুজের বীজ বপন/রোপণ পদ্ধতি সম্পর্কে:
আমাদের জেনে রাখা ভালো সাধারণত মাদায় সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও চারা তৈরি করে মাদাতে চারা রোপণ করাই অতি উত্তম বলে আমি মনে করি।
বীজ বপনঃ তরমুজের সাধারণত প্রতি মাদায় ৪/৫টি বীজ বপন করা হয়। বপনের ৮/১০ দিন আগে মাদা তৈরি করে মাটিতে সার মিশিয়ে নিতে হয়। ২ মিটার দূরে দূরে সারি করে। প্রতি সারিতে ২মিটার অন্তর মাদা করতে হয়। প্রতি মাদা ৫০ সেমিঃ প্রশস্থ ও ৩০ সেমিঃ গভীর হওয়া বাঞ্ছনীয়। চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় দুটি করে চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলে দিতে হবে।
তরমুজের জমিতে সার প্রয়োগ সম্পর্কে:
বিশেষ লক্ষণীয় তরমুজের চারা রোপণ বীজ বপনের চেয়ে তরমুজ চাষের জন্য চারা রোপণ করা উত্তম। এতে বীজের অপচয় কম হয়। চারা তৈরির জন্য ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে বালি ও পচা গোবর সার ভর্তি করে প্রতি ব্যাগে একটি বা দুইটা করে বীজ বপন করতে হয়। তার পরে গাছ গজালে ৩০-৩৫ দিন বয়সের এমনকি ৫/৬ পাতা বিশিষ্ট একটি চারা মাদায় রোপণ করা উপযোগী হয়।
তরমুজের জমি পরিচর্যা সম্পর্কে:
পরিচর্যাঃ শুকনো মৌসুমে সেচ দেয়া খুব প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিটি গাছে ৩-৪ টির বেশি ফল রাখতে না দেওয়া। গাছের শাখার মাঝামাঝি গিটে যে ফল হয়। সেটিই রাখতে হয়। চারটি শাখায় চার পাঁচটি ফল রাখাই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি।
তবেএখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। ৩০টি পাতার জন্য মাত্র একটি ফল রাখা উচিত। সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
পরাগায়ণঃ সকালবেলা স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ফোটার সাথে সাথে স্ত্রী ফুলকে পুরুষ ফুল দিয়ে পরাগায়িত করে দিলে ফলন ভালো হয়। তাছাড়া প্রকৃত উপায়ে এটি সম্ভব হয়। যেমন ভোমরা বা অন্যান্য প্রকার মাধ্যম পরাগায়ন হয়ে যায়।
পোকামাকড় ধমন সম্পর্কে:
আমরা জানি আসল পলতে গিয়ে পোকার হাত থেকে আমরা রক্ষা পাই না। ঠিক তেমনি ভাবেই তরমুজের পাতায় এক ধরনের পোকা দেখা যায়। যার নাম পাতার বিটল পোকা প্রথম দিকে পোকা গুলোর সংখ্যা যখন কম থাকে তখন পোকা, ডিম ও বাচ্চা ধরে নষ্ট করে দিতে হবে। আর পোকার সংখ্যা বেশি হলে।
তরমুজের জমিতে বিষ প্রয়োগ করতে হবে। বিষের নাম হচ্ছে। রিপকর্ড/সুমিথিয়ন/ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১ মিলি/লিটার মাত্রায় সপ্তাহান্তে স্প্রে করতে হবে। তাহলে পোকা দমন করা সম্ভব।
জাব পোকাঃ এ পোকা গাছের কচি কান্ড, ডগা এবং পাতার রস শুষে খেয়ে ক্ষতি করে। এ পোকা দমনের জন্যে সুমিথিয়ন/ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ২ মিলি/লিটার মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
মাজরা পোকাঃ স্ত্রী পোকা ফলের খোসার নিচে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো বের হয়ে ফল খেয়ে নষ্ট করে ফেলে এবং ফলগুলো সাধারণত পচে যায়। এ পোকা দমনের জন্যে রিপকর্ড/সুমিথিয়ন/ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১ মিলি লিটার মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
তরমুজের গাছে রোগ বালাই সম্পর্কে:
কান্ড পচা রোগঃ এ রোগের আক্রমণে তরমুজ গাছের গোড়ার নিকটের কান্ড পচে গাছ মরে যায়। প্রতিকারের জন্য ২.৫ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে।
এ্যানথ্রাকনোজঃ এ রোগের আক্রমণে পাতা, পাতার বোঁটা, কান্ড এবং ফলে বাদামি থেকে কালচে দাগ দেখা যায়। প্রতিকারের জন্য ২.৫ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে।
ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগঃ এ রোগের আক্রমণে গাছ ঢলে পড়ে মারা যায়। নিস্কাশনের সুব্যবস্থা করা হলে এ রোগের প্রকোপ কম থাকে। রোগাক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে তরমুজ পাকে। সাধারণত ফল পাকতে বীজ বোনার পর থেকে ৮০-১১০ দিন সময় লাগে। তরমুজের ফল পাকার সঠিক সময় নির্ণয় করা একটু কঠিন। কারণ অধিকাংশ ফলে পাকার সময় কোনো বাহ্যিক লক্ষণ দেখা যায় না। তবে নিচের লক্ষণগুলো দেখে তরমুজ পাকা কিনা তা অনেকটা অনুমান করা যায়।
- তরমুজের বোঁটার সঙ্গে যে আকর্শি থাকে তা শুকিয়ে বাদামি রং হয়। খোসার উপরে সূক্ষ্ণ লোমগুলো মরে পড়ে গিয়ে তরমুজের খোসা চকচকে হয়।
- তরমুজের যে অংশটি মাটির উপর লেগে থাকে তা সবুজ থেকে উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের হয়ে উঠে।
- তরমুজের শাঁস লাল টকটকে হয়।
- আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলে যদি ড্যাব ড্যাব শব্দ হয় তবে বুঝতে হবে যে ফল পরিপক্কতা লাভ করেছে। অপরিপক্ক ফলের বেলায় শব্দ হবে অনেকটা ধাতবীয়।
ফলনঃতরমুজ সযত্নে চাষ করলে ভালো জাতের তরমুজ থেকে প্রতি হেক্টরে ৫০-৬০ টন ফলন পাওয়া যায়।
শেষ কথা:
প্রিয় বন্ধুরা আজকের আটিকেল ছিল ঘরোয়া পদ্ধতিতে তরমুজ চাষের ব্যাপারে আশা করা যায়। এই আর্টিকেল থেকে তরমুজ চাষি ভাইদের জন্য উপকারী তাই অবশ্যই আর্টিকেলটি ভালো করে ফলো করুন এখান থেকে অনেক উপকার আসবে বলে আমি মনে করি।