শরীয়াত বা ইসলামে ফরজ গোসলের নিয়ম সহজভাবে জেনে নিন
ফরজ গোসল শরীয়াত বা ইসলামী জীবন বিধানের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারো ওপর গোসল
ফরজ হলে সঠিক পদ্ধতিতে গোসল আদায় না করা পর্যন্ত ওই ব্যক্তি নাপাক থাকে। আর
নাপাক অবস্থায় নামাজ পড়লে সওয়াবতো হবেই না। বরং কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে
হবে। নামাজ ছাড়াও অনেক ইবাদত রয়েছে। আর
যেগুলো নাপাক অবস্থায় শুদ্ধ হয় না। তাই কিভাবে শুদ্ধ করা যায় এই ব্যাপারে
বিস্তারিত কিছু আলোচনা নিয়ে আজকের আর্টিকেল।
ভূমিকাঃ
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত
হয়েছে। যেটি আমাদের অনেকেই অজানা বিষয়টি হচ্ছে। ফরজ গোসল শরীয়াত বা ইসলামী জীবন
বিধান সম্পর্কে আশা করি না জানা অনেক বিষয় এই আর্টিকেলে জানতে পারা যাবে
তাহলে চলুন। মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা বা শেয়ার করা যাক।
ফরজ গোসল কি?
ফরজ গোসল মানে স্ত্রী-সঙ্গম, স্বপ্নদোষ, ঋতুগ্রাব ও প্রসব ইত্যাদির কারণে যে
নাপাকি এসেছে। সেটা দূর করার নিয়ত করবেন। অর্থাৎ, মনে মনে এই চিন্তা করবেন।
যে-নাপাকি দূর করার জন্য গোসল করছি। এরপর লজ্জাস্থানে লেগে থাকা নাপাকি প্রথমে
ভালোভাবে সাবান বা এমনিতেই ধুয়ে নেবেন। তারপর দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে
নেবেন।
মুখমণ্ডল দ্রুত করতে হবে। মাথা নাচা করতে হবে। তারপরে পুরো শরীর দ্রুত করার পরে
গোসলের স্থান থেকে সরে গিয়ে দুই পায়ের টাকনো পর্যন্ত সুন্দরভাবে ধরতে হবে। এক
কথায় নামাজের সূরাতে যেমন ভাবে অজু করতে হয়। ঠিক তেমনভাবেই ফরজ গোসলের জন্য অজু
করতে হবে একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
ফরজ গোসলের ব্যাপারে আল্লাহতালা যা বলেনঃ
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ কিন্তু যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে
উত্তমরূপে পবিত্র হবে। আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ
প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর, তারপর পানি না পাও,
তবে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে-ঐ মাটি দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল ও হাত
মাসহ করে নিবে।
আল্লাহ্ তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না। বরং তিনি তোমাদের পাক-পবিত্র রাখতে চান
এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নিয়ামাত পূর্ণ করতে চান। যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৫/৬ আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নেশায় মত্ত অবস্থায় সালাতের কাছেও যেও না যতক্ষণ না
তোমরা যা বল তা বুঝতে পার; আর অপবিত্র অবস্থায় নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল
কর, তবে মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক
অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে।
অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে
তায়াম্মুম করে নাও- মাসেহ করবে স্বীয় মুখমন্ডল ও হাত। নিশ্চয় আল্লাহ্ হলেন
অতিশয় মার্জনাকারী। পরম ক্ষমাশীল। (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/৪৩)
আম্মাজান আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু’টো ধুয়ে নিতেন। অতঃপর
সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের
গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর তাঁর উভয় হাতের তিন আজলা পানি মাথায় ঢালতেন।
তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি ঢেলে দিতেন। (২৬২, ২৭২; মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৬,
আহমাদ ২৫৭০৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪৬)
রাসুল (সা.) যেভাবে গোসল করেছেনঃ
হযরত মায়মুনা (রা.) বলেন। আমি আল্লাহর রাসুল (সা.) এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম।
তা দিয়ে তিনি জানাবাতের (অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার) গোসল করেন। আল্লাহর নবী
(সা.) পাত্র হাতে নিয়ে নিজের ডান হাতের ওপর কাত করে তা দুই বা তিনবার ধৌত
করেন। অতঃপর তিনি তাঁর লজ্জাস্থানের ওপর পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে ধৌত
করেন।
পরে তিনি মাটির ওপর হাত ঘষে (দুর্গন্ধমুক্ত হওয়ার জন্য) তা পানি দিয়ে ধৌত করেন।
অতঃপর তিনি কুলি করেন এবং নাক পরিষ্কার করেন। অতঃপর মুখমন্ডল ও দুই হাত ধৌত
করেন। এরপর তিনি নিজের মাথা ও সর্বাঙ্গে পানি ঢালেন। পরে তিনি সেই স্থান থেকে
অল্প দূরে সরে গিয়ে উভয় পা ধৌত করেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৫) বর্ণিত হয়েছে।
তবে মনে রাখা জরুরী পুরুষ মানুষের দাঁড়ি এবং মেয়ে মানুষের চুল ভালোভাবে
খিলাল করে। চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে দিতে হবে। এই গোসলের পরে নতুনভাবে
অজুর প্রয়োজন হবে না।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন। আজকের আর্টিকেল ছিল শরীয়াত
বা ইসলামে ফরজ গোসলের নিয়ম সম্পর্কে আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে
আসবে। তাই অনুরোধ রইল সম্পন্ন আর্টিকেলটি গুরুত্ব সহকারে পড়বেন। তাহলে এখান
থেকে অবশ্যই উপকৃত হবেন। এই প্রত্যাশা রেখে আজকের আর্টিকেলটি শেষ
করছি।