মানসম্মত আলমারি কালার বা লিকার করা নিয়ম

পৃথিবীতে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু চাহিদা রয়েছে। চাহিদার শেষ হবেনা যতদিন আমি আমরা বাঁচবো মৃত্যুর পরে আর প্রয়োজন হবে না। কিন্তু বেঁচে থাকতে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস প্রতিনিয়ত লেগেই থাকে গাড়ি-বাড়ি আসবাব-পত্র জামা-কাপড় খাট পালং শোকেস আলমারি ইত্যাদি। তবে প্রতিটা
মানসম্মত আলমারি কালার বা লিকার করা নিয়ম
জিনিসের মতোই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস খাট যেটিতে আমরা শুয়ে থেকে আরাম আয়েশ করে থাকি। তাই অন্যান্য প্রয়োজনের জিনিসের মতই প্রয়োজনীয় জিনিস।

ভূমিকাঃ

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সম্পর্কে। যেটা আমাদের বাসা বাড়িতে শোয়ার কাজে আরাম-আয়েশের ক্ষেত্রে অনেকটা গুরুত্ব অন্য ভূমিকা রাখে। তো মূল বিষয় আজকে আমরা জানবো মানসম্মত খাট শোকেস ড্রেসিং আলমারি ইত্যাদি কিভাবে বানানো হয়। এবং কতটুকু কেমিক্যাল প্রয়োজন হয়।

সেই ব্যাপারে জানব আশা করি আপনারা যারা শোকেস আলমারির রং বা লিকার করেন। তাদের জন্য অনেক উপকারে আসবে। তাহলে চলুন দেরি না করে। মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।

শুরুতেই কেমিক্যাল গুলোর নাম জেনে নেই।

  • ব্রাউন সিলার
  • ক্লিয়ার সিলার
  • হারিনার
  • টপকোড
  • সুপার গুলু আঠা
  • এনসি থিনার
  • ৪৪৬ থিনার
  • চক পাউডার
  • এসটি পুটিং
  • ১২০ সিরিজ পেপার
  • ২৪০ সিরিজ পেপার
  • ৮০ নাম্বার পেপার

একটি আলমারির কালার রং লিকার এর কেমিক্যালের পরিমাণ।

  • ব্রাউন সিলার:- একটি আলমারির লিকার কালার করার জন্য ব্রাউন সেলারের পরিমাণ ১০০০ গ্রাম অর্থাৎ এক কেজি পরিমাণ ব্রাউন সিলার প্রয়োজন।
  • ক্লিয়ার সিলার:- একটি আলমারির লিকার কালার করার জন্য যতটুক পরিমাণ ব্রাউন সিলার লাগবে ঠিক ততটুকু পরিমাণ ক্লিয়ার অবশ্যই নিতে হবে। তার মানে ১০০০ গ্রাম অর্থাৎ এক কেজি পরিমাণ ক্লিয়ার সিলার প্রয়োজন।
  • হারিনার:- দেড় থেকে ২ কেজি পরিমাণ হারিনার প্রয়োজন হবে।
  • টপকোড:- ১০০০ গ্রাম অর্থাৎ ১ কেজি পরিমাণ।
  • সুপার গুলু আঠা:- ১০০ শত গ্রাম ১ টুকরা।
  • এন,সি-থিনার:- ৩০০০ গ্রাম অর্থাৎ ৩ কেজি পরিমাণ।
  • ৪৪৬-থিনার:- ১০০০ গ্রাম অর্থাৎ ১ কেজি পরিমাণ।
  • চক পাউডার:- ২০০ শত গ্রাম পরিমাণ। 
  • এস,টি-পুটিং:- ২০০ শত গ্রাম পরিমাণ।
  • ১২০ সিরিজ-পেপার:- ১ টুকরা পরিমাণ।
  • ২৪০ সিরিজ-পেপার:- ২ টুকরা পরিমাণ।
  • ৮০ নাম্বার-পেপার:- ১ ফিট পরিমাণ।
আলমারি কালার করার জন্য প্রথমে আমরা আলমারি থেকে বডি এবং পাল্লা গুলো আলাদা করব। তার পরে বডিতে সুপার গুলু দিতে হবে। এবং পাল্লা গুলোতে সুন্দর ভাবে ক্লিয়ার সিলার ব্রাশ দিয়ে অথবা কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে স্প্রে গান দিয়ে। ভালোভাবে ক্লিয়ার সিলার স্প্রে করতে হবে। তারপরে কিছুক্ষণ জন্য রেখে দিতে হবে।

ক্লিয়ার সিলার শুকিয়ে যাওয়ার পরে আলমারির পাল্লা গুলো ১২০ সিরিজ নাম্বার পেপার দিয়ে ঘষা দিয়ে নিতে হবে এবং বডিতে বিভিন্ন জায়গায় পুডিং এর প্রয়োজন হয়। সেই জায়গা গুলোতে সুন্দরভাবে পুটিং দিতে হবে যাতে করে। উঁচু নিচু না হয়ে থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবং পাল্লা গুলোর মতই বডিতেও ১২০ সিরিজ পেপার দিয়ে ভালো ভাবে ঘষা দিতে হবে।

ঘষার কাজ শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী স্টেপে ব্রাউন সিলার স্প্রে গান দিয়ে। আলমারির বডি এবং পাল্লাতে স্প্রে করতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে বডি এবং পাল্লাতে কোনো ভাবেই ব্রাউন সিলার স্প্রে কম বেশি না করা হয়। তারপরে ঠিক আগের ক্লিয়ার এর মত কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। এবং ভালোভাবে যখন বডি এবং পাল্লা শুকিয়ে যাবে ঠিক তখনই আবার চেক দিতে হবে।

কোথাও উঁচু-নিচু আছে কিনা-যদি থেকে যায়। তাহলে সেখানে পুটিং দিয়ে নিচু জায়গা গুলো ভরাট করে দিতে হবে। যাতে করে নিচু না থাকে। আর পুটিং দেওয়ার পরে পুটিং কৃত জায়গা যদি উঁচু হয়ে থাকে এখানে ২৪০ নাম্বার সিরিজ পেপার দিয়ে ঘষে নিতে হবে। উঁচু নিচু জায়গা গুলো একদম সমান করে দিতে হবে। পুরো বডিটা একদম সমান করে দিতে হবে।

এবার ডিজাইনের পালা যদি আমরা মনে করি। আলমারির বডি ফাইবার হবে তাহলে কালার করার পূর্বেই ফাইবার করে নিতে হবে। ফাইবার কয়েক ধরনের হয়। চট ফাইবার হতে পারে, রবার ফাইবার হতে পারে আরো অন্যান্যভাবে ফাইবার করা যায়। চাহিদা মতন বিভিন্ন কোয়ালিটিতে ফাইবার করা সম্ভব যেমন খুশি তেমন হবে চাহিদা অনুযায়ী।

আলমারি বিভিন্ন কালারের করা যায়। পছন্দ অনুযায়ী হয়তোবা সেটি কাঠ কালার হতে পারে। তেঁতুল বিচি কালার হতে, পারে ব্ল্যাক কালার হতে পারে ইত্যাদি। কালার করার পরে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দেবো যাতে করে। কালারটি শুকিয়ে যায় খেয়ে। দেওয়া আলমারি ফিনিশিং দিলে কালারটি টেকসই এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে কালারটা শুকিয়ে যায়।

ক্লিয়ার সিলার মিশ্রন বা তৈরি করার নিয়ম 

ক্লিয়ার সিলার যদি ১ কেজি হয়। তাহলে হারিনার হাফ কেজি অর্থাৎ.৫০০ গ্রাম নিতে হবে এবং এন,সি থিনার ১ কেজি বা পরিমান মত ব্যবহার করতে হবে। 

ব্রাউন সিলার মিশ্রন বা তৈরি করার নিয়ম 

ব্রাউন সিলার যদি ১ কেজি হয়। তাহলে হারিনার হাফ কেজি অর্থাৎ.৫০০ গ্রাম নিতে হবে এবং এন,সি থিনার ১ কেজি বা পরিমান মত ব্যবহার করতে হবে। 

টপ-কোড মিশ্রন অথবা তৈরি করার নিয়ম

ফিনিশিং এর জন্য টপ-কোড কিভাবে তৈরি করতে হলে। একটি আলমারির জন্য টপ-কোড ১০০০ গ্রাম অর্থাৎ এক কেজি পরিমাণ টপ কোড প্রয়োজন হবে। ১ কেজি টপ-কোড এর জন্য হারিনার ৫০০ গ্রাম প্রয়োজন। আর ৪৪৬ থিনার প্রয়োজন হবে। ৮০০ গ্রাম ১কেজি পরিমান মত যদি টপ-কোড গাড়ো বা মোটা হলে ৪৪৬ থিনার এর পরিমান বেশী হয়।

এভাবেই একটি আলমারি কালার বা লিকার কালার করা হয়। আশা করি লিখার মিস্ত্রি ভাইদের জন্য এটি উপকারে আসবে।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক আশা করি আর্টিকেলটি আলমারি খাট শোকেস ডেসিন এগুলো তৈরি করতে অনেকটি উপকারে আসবে। যদি একটু উপকারে এসে থাকে অবশ্যই সাইটটিকে ফলো দিবেন। যাতে করে আরো সুন্দর কোন বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লিখতে উৎসাহিত হয়। এবং আপনাদের সুস্থ স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আর্টিকেলটি এখানে সমাপ্ত করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন