আলু চাষ ও আলু উৎপাদনের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে।
প্রিয় কৃষক ভাই আমরা জানি আমাদের দেশে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। সাধারণত ধান ও গমের পরই আলুর স্থান। বর্তমান চাষের জমির পরিমাণ ও ফলনের হিসেবে ধানের পরই আলুর স্থান। একেক সময়ে একেক জমিতে সর্বাধিক উৎপাদনের কারণে দিন দিন আলু চাষে জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যার কারণ আলু চাষে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। চলুন জেনে নেই আলু চাষ ও আলু উৎপাদনের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা এই আটিকেলে আমরা আলুর চাষ ও আলু উৎপাদনের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানব। এবং কিভাবে আলু চাষ করে। ও আলু উৎপাদনের আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে দেরি না করে চলুন মূল বিষয়ে যাওয়া যাক।
প্রথমে আমরা জানবো মাটি নির্বাচন করবো।
মাটি নির্বাচনঃযে কোনো মাটিতে আলু চাষ করা যায়। তবে বেলে ও দোআঁশ থেকে দোআঁশ মাটি আলু চাষের জন্য অধিক উত্তম। উঁচু থেকে মাঝারি উচুঁ জমি যেখানে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে। সে সকল জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিটি অবশ্যই রৌদ্র উজ্জ্বল হতে হবে। মাটিতে জোর অর্থাৎ মাটি বতর আসার পর।
আড়া আড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝুরে করে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করতে হবে। জমি আড়া আড়ি ভাবে কমপক্ষে ৪টি চাষ দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে বড় মাটির ঢেলা না থাকে। এবং মাটি ঝরঝুরে অবস্থায় আসে। কারণ বড় মাটির ঢেলা আলুর সঠিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং অনেক সময় অসম ও বিকৃত আকার তৈরি করে।
জমি তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে জমিতে সুষম সেচ দেওয়া করা যায়। সে জন্য জমির উপরিভাগ সমতল অবশ্যই যেন হয়। সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত আলুর জাত নির্বাচন করা।
জাত পরিচিতিঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত আলুর মোট ৮৩টি জাত উন্মুক্ত করেছে।
- যার মধ্যে খাবার আলু রয়েছে।
- প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী আলু রয়েছে।
- রপ্তানিযোগ্য আলু রয়েছে।
- আগাম আলু ও সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। এমন আলুর জাত রয়েছে।
খাবার আলুর জন্য ডায়মন্ট, কার্ডিনাল যার ফলন প্রতি হেক্টরে ২৫-৩৫ টন। আগাম জাত হিসেবে গ্রানোলা, বারি আলু ৭৪-৭৫ ফলন প্রতি হেক্টরে ২০-৪০ টন। তবে বেশী রপ্তানি উপযোগী গ্রানোলা। আর বারি আলু ৪৬ ফলন প্রতি হেক্টরে ২০-৩৫ টন। এবং এই আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ উপযোগী। এসটেরিক্স, লেডি রোসেটা, কারেজ, মেরিডিয়ান আলু ফলন প্রতি হেক্টরে ২০-৩৫ টন।
তবে মড়ক রোগ প্রতিরোধী বারি আলু ৪৬-৫৩- ৭৭ এ্যালোটি, ক্যারোলাস ফলন প্রতি হেক্টরে ৩০-৪০ টন হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়। আইলসা, প্রোভেন্টো, বারি আলু ৬২- ৭৬ ফলন প্রতি হেক্টরে ৩০-৪০টন। তাপ সহিষ্ণু বা দেরিতে রোপণ উপযোগী বারি আলু ৭২-৭৩ ফলন প্রতি হেক্টরে ২০-২৪টন।
আলু শোধন করার নিয়ম।
বীজআলু শোধনঃ কোল্ড স্টোরেজ থেকে বীজ আলু বের করার পর ৪৮ ঘণ্টা প্রি হিটিং কক্ষে রাখতে হবে। বীজআলু বাড়িতে আনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বস্তা খুলে ছড়িয়ে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য স্বাভাবিকভাবে বাতাস চলাচল করে। এমন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। কারণ বীজ কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের করে বস্তা বন্ধ অবস্থায় রাখলে।
ঘেমে পচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেশি থাকে থাকে। তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে আলুর বীজগুলো নষ্ট না হয়ে যায়। কোল্ডস্টোরে রাখার আগে বীজ শোধন না হয়ে। থাকলে ট্যাগ গজানোর আগে আলুবীজ দাদ বা স্ক্যাব এবং বস্ন্যাক স্কার্ফ রোগ প্রতিরোধের জন্য ৩% বরিক এসিড দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
এ জন্য ১ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম হারে বরিক এসিড মিশিয়ে আলুবীজ ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে পরে ছায়ায় শুকাতে হবে। পলিথিন এর উপর আলু ছড়িয়ে স্প্রে করেও কাজটি করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন আলুর সব অংশ যেন ভিজে যায়। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণত বিঘা প্রতি অর্থাৎ ৩৩ শতকে ২শত থেকে ২শত ১০কেজি আলুবীজ প্রয়োজন হয়।
আলুর রোপনের পদ্ধতি
রোপণ পদ্ধতিঃ ট্যাগ বা অংকুর গজানোর পর ১ম কুঁড়িটি ভেঙে দিতে হবে। কারণ ১ম কুঁড়ি ভেঙে দেয়ার পর অন্যান্য কুঁড়ি সমান ভাবে বৃদ্ধির সুযোগ পায় থাকে। ৩০-৪০ গ্রাম ওজনের গোটা আলুবীজ হিসেবে ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম। কেটেও আলুবীজ লাগানো যায়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রতিটি আলু কাটা অংশে কমপক্ষে ২টি চোখ বা কুঁড়ি থাকে।
বীজ লাগানোর ২-৩ দিন আগে আলু কেটে ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিলে কাটা অংশের ওপর একটা প্রলেপ পড়ে। ফলে মাটি বাহিত রোগ জীবাণু সহজে বীজে প্রবেশ করতে পারে না। অন্যভাবে ছাই মেখেও কাজটি করা যেতে পারে। এতে আলুর পচন অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। প্রতিটি আলু কাটার পর সাবান পানি দ্বারা ছুরি বা বটি পরিষ্কার করা উচিত বলে মনে করি।
যাতে রোগ জীবাণু এক বীজ থেকে অন্য বীজে না ছড়ায়। আলুবীজ আড়া আড়ি ভাবে না। কেটে লম্বালম্বি ভাবে কাটা ভালো। আর আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ কার্তিক থেকে ১৫ অগ্রহায়ণ অর্থাৎ নভেম্বর মাস আলু রোপণের উপযুক্ত সময়।
আলুর জমিতে সার প্রয়োগ
সার ব্যবস্থাপনাঃদেশের বিভিন্ন স্থানে মাটির উর্বরতা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এ জন্য সারের চাহিদা সকল জমির জন্য সমান নয়। স্থান ভেদে বিঘা (৩৩ শতক) প্রতি ইউরিয়া ৪৪-৪৮ কেজি, টিএসপি ২৭-৩০ কেজি, এমওপি ৩৩-৪০ কেজি, জিপসাম ১৩-১৬ কেজি, জিংক সালফেট ১কেজি ১কেজি ৩শত গ্রাম। ম্যাগনেসিয়াম সালফেট প্রয়োগ করতে হয়।
আর যে মাটিতে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি আছে ১৮-২০ কেজি, বোরন ৮শত গ্রাম ১কেজি, গোবর ১২শ-১৩শ কেজি দিতে হবে। গোবর ও জিংক সালফেট শেষ। চাষের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া, সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ও বোরন সার রোপণের সময় সারির দুই পাশে মিশিয়ে দিতে হবে।
বাকি ইউরিয়া রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয়বার মাটি তোলার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর সঙ্গে সঙ্গে সার ও বীজ মাটি দিয়ে ভেলি তুলে ঢেকে দিতে হবে।
লেখকের কথাঃ
প্রিয় কৃষক বন্ধুরা আপনারা যারা সঠিকভাবে আলু চাষাবাদ করতে চান তাদের জন্যই এই আর্টিকেলটি আশা করব বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেলটি সম্পন্ন করবেন। এবং বুঝে সে অনুযায়ী আলু চাষাবাদ করলে সঠিকভাবে ফলন পাওয়া যাবে। আর আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার একটু উপকারে আসে।
তাহলে আপনার কাছে অনুরোধ আমার পেজটিকে অবশ্যই ফলো দিয়ে রাখবেন। যাতে করে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লেখে আপনাদেরকে উপহার দিতে পারে আল্লাহ হাফেজ।