পবিত্র-ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী কি ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর সম্পর্কে তথ্য জেনে নিন
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা ইসলামিক ইতিহাস গুলো আমাদের অনেকেরই না জানা কিন্তু জানার
অনেকটা কৌতূহল জাগে আর সেটি যদি অর্থাৎ ইসলামের সহজ ব্যাখ্যাগুলো সহজ ভাবেই বোঝা
যায়। তাহলে খুব ভালো হয়। আমি প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে আজকে পবিত্র ঈদ-ই
মিলাদুন্নবী সম্পর্কে কিছু ধারনা আপনাদের সাথে শেয়ার করব আশা করি আপনাদের ভাল
লাগবে এবং উপকৃত হবেন।
পবিত্র-ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী কি? ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী যার আরবি প্রতিশব্দ
হলো ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী হলো ইসলামের শেষ নবী ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)
এর আগমন উপলক্ষে মুসলিমদের মাঝে পালিত এক আনন্দ উৎসব।
ভূমিকাঃ
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক নিয়ে আলোচনা করতে
যাচ্ছি। যদিও বা বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই জানা কিন্তু সঠিকভাবে না জানার কারণে
নানা ধরনের সংশয় এবং দ্বিধাদ্বন্দ থেকে যায়। তাই দ্বিধা দ্বন্দ্ব ও সংশয়
দূরীভূত করার জন্য আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের সামনে স্বচ্ছ আকারে তুলে ধরবো।
তাহলে চলুন আর দেরি না করে পবিত্র-ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী কি ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর
করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করি যাতে করে
ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য এই আর্টিকেলটি অনেক কাজে লাগে। তাহলে বেশি কথা না বলে মূল
আলোচনায় যাওয়া যাক।
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম সম্পর্কেঃ
আমাদের শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ১২ ই রবিউল আউয়াল হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করেন।
যদিও এই তারিখ নিয়ে অনেকের মাঝেই মতো বিরোধ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সংশয় রয়েছে। অনেকেই
মনে করেন তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ৯ই রবিউল আউয়াল। যদিও প্রায় সব জায়গায় ১২ রবিউল
আউয়াল হিজরিতেই ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম তারিখ ১২ রবিউল আউয়াল কিনা এই বিষয়ে অনেকের
মাঝেই মত পার্থক্য থাকলেও তিনি যে ১২ই রবিউল আউয়াল হিজরিতেই ওফাত বরন (শেষ
নিশ্বাস ত্যাগ) করেন। এই বিষয়ে কারোর মাঝে কোন মতো বিরোধ নাই। অর্থাৎ রাসুল (সাঃ)
এর জন্ম দিন ও মৃত্যু দিন একিই দিনে।।
যেহেতু জন্ম দিন ও মৃত্যু দিন একিই দিনে, সেহেতু মুসলিম সমাজের জন্য এটি একিই
সাথে যেমন আনন্দের আবার তেমনি কষ্টদায়ক। আর এই কারনেই অনেকেই এই দিনে আনন্দ উৎসব
পালন করেন না ও পালনে নিরুৎসাহিত করে থাকেন। আমাদের বাংলাদেশে এই দিনটাকে
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী হিসেবে বলা হলেও অন্যান্য জায়গায় অন্যান্য নামে অভিহিত করা হয়ে
থাকে দিনটিকে।
ঈদ-ই মিলাদুন্নবীতে আমাদের করনীয় কি?
যেমন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম গন এই দিনটাকে নবী দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। তাই
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী তে আমাদের করনীয় কি? ইসলামে সন্দেহের কোন অবকাশ নাই। আর ধর্ম
নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেও সম্পুর্ন নিষেধ করেছেন রাসুল (সাঃ)। এই সম্পর্কে আল্লাহ
তায়ালা আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন। “কিতাবধারী হে! নিজেদের ধর্ম নিয়ে অযথা
বাড়াবাড়ি কোরো না।
আর ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তোমাদের আগে যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়ে ও অন্যদেরকে
পথভ্রষ্ট করে সহজ সরল পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাদের পথ অবলম্বন কোরো না। সুরা
মায়িদা-৭৭ হে কিতাবধারীরা! তোমরা তোমাদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ো
না। আর আল্লাহ সম্বন্ধে যথাযথ বলো। সুরা নিসা-১৭১ উপরের আয়াত দুইটির মাধ্যমে
আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে।
যে ইসলামে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কোন স্থান নাই। তাই আমাদের উচিত না এইসব বিষয় নিয়ে
অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা। যেহেতু এই বিষয় নিয়ে ইসলাম বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতো বিরোধ
রয়েছে। আর এটি কোন ফরজ বা ওয়াজিব বা সুন্নাত কোন ইবাদত ও না অথবা এটি এমন কিছুও
না যে যেটি না করলে আমাদের অনেক বড় গুনাহ হবে।
তাই এইসব এড়িয়ে চলায় আমাদের জন্য উত্তম। বিদাই হজ্বের ভাষনে রাসূল (সাঃ) সমবেত
জনতার উদ্দেশ্যে যে ভাষন দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন“আমি তোমাদের জন্য দুটি
জিনিস রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা আকড়ে ধরবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো
আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার সুন্নাহ্।
মিশকাত-১ম খন্ড হাদিস নং-১৭৭ অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) আমাদের বলে গেছেন। আমরা যেন কেবল
মাত্র আল্লাহ প্রদত্ত আল কোরআন ও রাসূল (সাঃ) এর হাদিস অনুসরণ করি তাহলেই আমরা
কখনো পথভ্রষ্ট হব না। আর আমাদের ও সেটিই করা উচিত ৷ বর্তমান সময়ে আর যেহেতু কোরআন
হাদিসে এই ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সম্পর্কে সরাসরি কোন হুকুম নেই।
তাই আমাদের উচিত এসব থেকে দূরে থাকা। কুরআন হাদিসের মাধ্যমে আমাদের উপর যে হুকুম
গুলো দেয়া হয়েছে। সেই সবের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করা মানেই ঝামেলায় জড়ানো। একজন
মুসলিম হিসেবে নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত সহ অন্যান্য সকল ফরজ সুন্নত ও ওয়াজিব
আমাদের পালন করা উচিত।
আরো পড়ুনঃআমলের প্রতিদান নির্ভর করে নিয়তের উপর
এইসব নফল বা মুস্তাহাব বিষয় নিয়ে নিজেদের মাঝে ফেতনা সৃষ্টি করা নেহাত বোকামি
ছাড়া আর কিছুই না বলে আমি মনে করি। যেহেতু হযরত মোহাম্মদ সাঃ শেষ নবী ও
রাসুল এবং ওনার পরে কোন নবী রাসুল এই পৃথিবীতে আসবে না। তাই আমাদের উচিত
হলো কোরআন ও হাদিস অনুসরণ করে সেই অনুযায়ীই জীবনযাপন করা।
এবং গ্রহণ করা কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা একমাত্র ইসলামকেই ইহকালীন শান্তি ও
পরকালীন মুক্তির অনন্য পথ হিসেবে গ্রহণ করা। তবেই আমাদের এ আনন্দ উদ্যাপন সার্থক
হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন। তিনি সে মহান প্রভু যিনি রাসুল প্রেরণ করেছেন।
সঠিক পন্থা ও সত্য ধর্মসহযোগে, যাতে সে ধর্মকে প্রকাশ করতে পারেন সর্ব ধর্মের
শিখরে।
সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ৩৩; সুরা-৪৮ ফাৎহ, আয়াত: ২৮ অতি পরিতাপের বিষয়, রবিউল আউয়াল
মাস এলে আমরা আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করি। বাণী আর বিবৃতি প্রচার করি কিন্তু
ফরজ–ওয়াজিব আদায় করি না। হারাম সুদ পরিত্যাগ করতে পারি না। দুর্নীতি ও ঘুষ ছাড়তে
পারি না। মিথ্যা বর্জন করতে পারি না। লোভ–হিংসা–মোহমুক্ত হতে পারি না।
এমন হয় কেন? তবে কি নবীপ্রেমের তাৎপর্য আমাদের অন্তরে স্থান পেয়েছে। আল–কুরআনে
আরও বর্ণনা করা হয়েছে। বলুন হে রাসুল সাঃ যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসবে তবে আমার
অনুকরণ কর আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৩১) এ আলোকে নিশ্চিত
করে বলা যায়। রাসুল (সা.)–এর প্রতি ভালোবাসা ইমানের পূর্বশর্ত।
হাদিস শরিফে আছে। তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে পারবে না। যতক্ষণ
না আমি হব তার নিকট তার পিতা, পুত্র ও সকল মানুষ এবং যাবতীয় সবকিছু হতে প্রিয়।
বুখারি: ১৩-১৪ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের ভালোবাসা ও অহিংস নীতি বিশ্বশান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
হজরত আনাস (রা.) বলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে
বলেছেন, ‘হে বৎস! যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় যে তুমি এভাবে রাত-দিন অতিবাহিত করবে।
তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো বিদ্বেষ থাকবে না। তবে তুমি তাই করো। তিনি আমাকে আরও
বললেন। ‘হে বৎস! এটাই আমার সুন্নাত।
আর যারা আমার সুন্নাতকে ভালোবাসল তারা আমাকেই ভালোবাসল যারা আমাকে ভালোবাসল তারা
জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে। মুসলিম: ২৭২৬
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল বা আলোচনাটি ছিল। পবিত্র-ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী কি
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর করণীয় সম্পর্কে আশা করি আর্টিকেলটি সম্পন্ন রূপে
পঠিত হলে এখান থেকে কিছু শিক্ষা অর্জন করা যাবে বলে আমি মনে করি তাই পূর্ণাঙ্গ
আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।