কলা কেন খাবো কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কলা দিনে কতটি খাওয়া উচিত
প্রিয় পাঠক আমরা জীবন দশায় নানান ধরনের ফল খেয়ে থাকে আমরা কি জানি কোন ধরনের ফলে কতটুকু পুষ্টি থাকে এবং কতটুকু করে খাওয়া দরকার এবং সেই ফলগুলো খেলে কতটুকু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
অনেকেরই না জানা তাই আজকে একটি পরিচিত ফল সম্পর্ক জানব। আর ফলটি হচ্ছে আমাদের জনপ্রিয় অত্যন্ত পরিচিত এটি হলো কলা শুধু তাই নয়। পাকা কলা খাওয়া উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু ধারনা দেব। তাহলে চলুন দেরি না করে কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
ভূমিকাঃ
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি আমাদের পরিচিত একটি ফল সেটি হচ্ছে কলা আমরা জানবো কলা খাওয়া উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এবং কলা কেন খাব এবং কলা দিনে কতটি খাওয়া উচিত কাঁচা কলা এবং পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অল্প কিছু হলেও ধারণা পাব। তাহলে আর অপেক্ষা কেন?
আরো পড়ুনঃ শীতের-সুস্বাদু-ফল ও গুনাগুন সম্পর্কে
চলুন আর অপেক্ষা না করে আজকের মূল আলোচনা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক আশা করি পাঠকগণ অনেক উপকৃত হবেন।
কলার নাম ও পরিচিত সম্পর্কে আলোচিত বিষয় সমূহঃ
কলা সাধারণত ৫০ প্রজাতির আছে তার মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
- সাগরকলা
- সবরি কলা
- আনাজি কলা
- জিম কলা
- বিচি কলা
- চিনি চাম্পা
সাগর কলাঃ স্বাদের বিবেচনায় দেশীয় সাগরকলার স্বাদ ও গন্ধ তুলনামূলক বেশি। যত রকমের কলাই থাকুক না কেন সাগরকলা নাম উঠে আসে সর্বপ্রথম। টক-মিষ্টি ও ঝাঝালো স্বাদের বাহারে একেকটি কলা মুখে দিলেই নতুন অনুভূতিতে মন ভরে উঠে। সাগরকলা স্বাদের দিক থেকে মিষ্টি, অপরদিকে স্বাদের আকারের দিক থেকে।
সাগরকলা আকারে লম্বাটে এবং উচ্চতার দিক থেকে বেশ লম্বা দ্রব্যমূল্যের বাজারে কলা যেন লাভ জনক ফল। একটি কলায় যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ থাকে, তা দিয়ে সহজেই শরীরের জন্য দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করা সম্ভব হয়। আর বিশ্বজুড়ে কলার যে জনপ্রিয়তা, তাতে যেকোনো সময় মানুষের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে কলার নাম উঠে আসতেই পারে।
বাংলা লোকসাহিত্যে কলা নিয়ে কম লেখালেখি হয়নি। এই যেমন ধরুন-খনার বচন হিন্দু ভাইদের প্রবাদ, বাগধারা সবেতেই উঠে এসেছে কলার নাম। বিদুষী নারী খনার কৃষিভিত্তিক বচনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত। অর্থাৎ কলাগাছ রোপণের পর তার পাতা কাটা যাবে না। তাহলে কলার ফলন ভালো হবে।
আর সেই কলা বিক্রি করে ভাত-কাপড়ের অভাবও পূরণ করা যাবে। এছাড়াও আঙুল ফুলে কলাগাছ কিংবা আদায়-কাঁচকলা সম্পর্ক কিংবা রথ দেখা কলা বেচা প্রভূত বাগধারা-প্রবাদের সঙ্গেও আমরা সকলে কম বেশি পরিচিত। আঁশ ও ভিটামিনে ভরপুর একটি বড় আকৃতির কলায় ৪৯০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। একটি মাঝারি আকৃতির কলায় প্রায় ১০০ ক্যালরি পর্যন্ত থাকে।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কলায় ৭.০ গ্রাম প্রোটিন, ২৫ গ্রাম শর্করা ও ২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে তাই কলার মাধ্যমে শরীরের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি তাই কলা খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। আর দেশীয় সাগরকলার একেকটি ছড়ায় ৫০ থেকে ৬০টি কলা থাকে।
আরো পড়ুনঃ শীতকালীন সময় পিঠা খাওয়ার মজা
অপরদিকে নেপালী কলার একেক ছড়ায় কলা থাকে ১২০ থেকে ১৩০টির মতো দেশীয় সাগরকলা ও নেপালী কলা উভয়ের পরিচর্যা ব্যয় প্রায় একই। তবে দেশীয় সাগরকলার ফলন কম হওয়ায় খরচ একটু বেশিই থাকে। বাংলাদেশে কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো প্রায় সারাবছরই উঁচু জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ পার্বত্য এলাকায় শত শত বছর ধরে কলার আবাদ হয়ে আসছে। তাই বলি কলা খান শারীরিকভাবে সুস্থ থাকুন।
সবরি কলাঃ এটি আকারে মাঝারি আকারে হয়ে থাকে এবং দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। তাই নয় সাধেও ভরপুর থাকে এই সবরি কলাতে আর এই কলা বাচ্চারা খেতে খুব আগ্রহী হয়ে থাকে সবরি কলা বাংলাদেশ সহ সব দেশেই পাওয়া যায়। এবং সবরি কলা আমাদের দেশ বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদ করা হয়।
কৃষকেরা সবরি কলা চাষ করে অনেক লাভবান হয়ে থাকে। এমনকি মুসা একুমিনাটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থানীয় কলার একটি প্রজাতি এর পরিসর ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নিয়ে গঠিত। আধুনিক ভোজ্য মিষ্টান্ন কলাগুলির অনেকগুলি এই প্রজাতির কলা। এ থেকে বোঝা যায়। কলা একটি পুষ্টিতে ভরপুর কৃত ফল।
আনাজি কলাঃ কাঁচা কলা সবাই চিনেন কাঁচা কলাকে আমরা আনাজি বা সবজি হিসেবে জানি। তবে কাঁচা কলা বলে থাকি কিন্তুু এর আসল নাম হচ্ছে আনাজি কলা। আনাজি কলা আমরা বিশেষ করে রান্না করে খেয়ে থাকি। খেতে খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। কাঁচা কলা দিয়ে গরুর মাংস,কাঁচা কলা দিয়ে মুরগির মাংস, কাঁচা কলা দিয়ে চিংড়ি মাছ, এবং কাঁচা কলার ভর্তা তৈরি করে খেয়ে থাকি আমরা।
কাঁচা কলা কিন্তুু ঔষধি গুনাগুনও আছে আপনারা জানেন। আজকে আমি কাঁচা কলা দিয়ে ব্রয়লার মুরগির সুস্বাদু তরকারি রান্না করেছি। আরে আনাজি কলা আমাদের বাংলাদেশে আনাচে কানাচে গ্রামে কিংবা শহরে সব জায়গাতেই এই আনাজি কলা পাওয়া যায়।
জিম কলাঃ এই কলা অন্যান্য কালার চাইতে অধিক ঝাঁঝালো মিষ্টি এটা আকার অনেকটা ছোট পুষ্টি এবং অন্যান্য গুণাবলী জিন কলা ছাড়া অন্যান্য কলার মতই জিন কলা আমাদের বাংলাদেশ প্রায় সব জায়গায় এর দেখা মিলে জিন কলা যখন পেকে যায়। তার শরীরের গঠন হলুদ হয়ে যায়। জিম কলা প্রতি হালি ১৬ থেকে ২০ টাকা দাম হয়ে থাকে।
বিচি কলাঃ বিচিকলা পরিবারভুক্ত একটি ফল। এর উৎপত্তি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় নিউগিনি আগ ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৮০০০ বছর পূর্ব থেকে এটি মানুষ চাষ করে আসছে। বসতবাড়িতে চাষ করা হয় এমন গাছপালার মধ্যে এটি প্রথম দিকের উদাহরণ। কলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফল, যা সারা বছর পাওয়া যায়। বিচিকলা অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন, সুস্বাদু ফল।
আমরা জানি সাধারণত কলা বীজবিহীন ফল হলেও বিচিকলাতে প্রচুর বীজ থাকে। বিচি কলার গাছ বেশ উঁচু, লম্বা ও অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু হয়ে থাকে। ফলে ঝড়, তুফান কিংবা জলাবদ্ধতা তেমন ক্ষতি করতে পারে না। বিভিন্ন ধরনের কলা রোপণের পর থেকে ১০-১২ মাসে ফল আহরণ করা গেলেও, বিচি কলা পরিপক্ব হতে ১৮ মাস সময় লাগে।
বিশেষ কোনও যত্ন ছাড়াই বিচিকলা ভালোভাবে জন্মানো যায়। ফলের ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম। পাকা ফল হলুদ রঙের এবং মিষ্টি, চামড়া তুলনামূলকভাবে পুরু, সুমিষ্ট এবং তাপমাত্রায় অধিক সময় সংরক্ষণ করা যায়। দেশের গ্রামাঞ্চলে সর্বসাধারণের কাছে বিচিকলা অত্যন্ত জনপ্রিয়। একটি বিচিকলায় ১৫ থেকে ৬২টি বীজ থাকতে পারে।
একটি কাঁদিতে ৬১ থেকে ১৬২টি ফল থাকতে পারে। প্রতিটি বীজ তার ৪ গুণ আকারের শর্করাযুক্ত পাল্প তৈরি করে। বিচিকলা নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক রম্যকথা প্রচলিত থাকলেও এটি পুষ্টিতে অনন্য। কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে অনেকে এই কলা খেতে চান না। তবে পাকা বিচি কলায় প্রচুর পরিমাণে শর্করা বিদ্যমান, যা শক্তির অন্যতম উৎস।
বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং ডি এর একটি অসাধারণ উৎস। এটি পটাশিয়ামের একটি অনন্য উৎস, যেখানে একজন মানুষের দৈনিক প্রয়োজনের ২৩% পটাশিয়াম একটি কলা থেকে পাওয়া যায়। পটাশিয়াম পেশি নিয়ন্ত্রণ করে। কলার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা
কমায়। শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় বি৬ এর ৪১% ই কলায় থাকে। কলায় প্রচুর লৌহ থাকে। বিচি কলার অনেক ঔষধি গুণ আছে। কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস থাকে, যা শরীরে স্বাস্থ্যকর টিস্যু গঠনে কাজ করে। কলা গাছের সব অংশের ঔষধি ব্যবহার রয়েছে।
ফুল ব্রংকাইটিস, আমাশয় এবং আলসার, রান্না করা ফুল ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। গাছের কষযুক্ত রস হিস্টেরিয়া, কুষ্ঠ, জ্বর, রক্তক্ষরণ বন্ধ, স্থায়ী আমাশয়, ডায়রিয়া রোধে সহযোগিতা করে। গাছের শিকড় পরিপাকজনিত সমস্যা এবং আমাশয়ে ব্যবহৃত হয়। কলার বীজের মিউসিলেজ ডায়রিয়া হলে ব্যবহৃত হয়।
সম্পূর্ণ পাকা কলার খোসা ও পাল্পে ছত্রাক বিরোধী ও অ্যান্টিবায়োটিক গুণাবলি পাওয়া যায়। সবুজ কলার খোসা ও পাল্পের দ্বারা তৈরি ছত্রাকনাশক টমেটোর ছত্রাকজনিত রোগ দমনে ব্যবহৃত হয়। কলা অন্ত্রীয় সমস্যা বিশেষত আলসার নিরাময়ের জন্য কাজ করে, গ্যাস্ট্রিকজনিত অম্লত্ব প্রশমন করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সাহায্য করে।
কলার ভুয়া কাণ্ডের ভেতরের কোনও অংশ থেকে প্রস্তুত রস কিডনি ও মূত্রাশয়ের পাথর দূরীকরণে উপকারী। কলা মানুষের কৃমিজনিত সমস্যা দূরীকরণে ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, শুধুমাত্র ২টি কলা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে ৯০ মিনিটের কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়। কলা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
বিচিকলার কিছু স্থানীয় নাম আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ কলা এঁটে কলা, বাইশ্যাকলা, আইট্টা কলা, বিচি কলা নামে পরিচিত।
চিনি চাম্পাঃ চাপা কলা বা চিনি চম্পা কলার উপকারিতা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় পেট পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। মস্তিষ্ক সতেজ রাখে ও মানসিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। এই কলা অর্থাৎ চিনি চাম্পা বা চাপা কলা ছোট বাচ্চাদের অনেক প্রিয় একটি ফল। চিনি চাম্পার কলা আমাদের দেশে সব জায়গায় পাওয়া যায়।
তবে তুলনামূলক অন্যান্য কলার চাইতে চিনি চম্পা বা চাপা কলা দামটা বেশি। তাই কলা চাষী ভাইদের এটি একটি লাভজনক ফল তবে কমছে কলার উৎপাদন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট কলা উৎপাদন হয়েছে ২০ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ২২ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।
কলা কেন খাবো কলা
কলার মধ্যে রয়েছে এমাইনো এসিড, যেটি মানসিক চাপ রোধক হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম- যা বিষন্নতা রোধে কাজ করে থাকে। কলার মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং সামান্য পরিমাণ লবণ যা হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। এবং এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা পালন করে।
কলা খাওয়ার উপকারিতা কি?
সবচেয়ে সহজ খাদ্যের একটি হল কলা। এটি যেমন সহজে পাওয়া যায় তেমনি ক্যালরির চাহিদাও পূরণ করে এটি। এই খাদ্য অতি সহজেই পাওয়া যায় এবং দামও নাগালের মধ্যেই থাকে। ক্যালরি ছাড়াও এতে আরো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ভিটামিন, আয়রন, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি পুষ্টি উপাদানও রয়েছে। এতে রকম সকল উপাদান একজন মানুষের দেহের জন্য খুবই উপকারী।
এই ফল নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ধারণা। এর উপকারিতা, ও অপকারিতা সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক- দামে কম কিন্তু মানের দিকে সেরা একটি খাবার হল কলা। এটি খেতেও দারুণ। অনেকের প্রিয় খাবার বা ফলের একটি হল কলা। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল এটি। এর মধ্যে রয়েছে।
ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ইত্যাদি। এ সকল উপাদান দেহের জন্য খুবই উপকারী। এবার জেনে নিবো কলার উপকারিতা। কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। দেহের পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া উপকারী কলা একটি মিষ্টি ফল। তবে মিষ্টি হলেও সুগার বাড়ায় না এই ফল।
এর জিআই ভ্যালু বেশ ভালো হওয়ায় ডায়াবেটিসের রোগীরাও এটি খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। দেহের এনার্জি বা শক্তি বাড়াতে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। শরীরে দুর্বলতা দেখা দিলে তাই এই ফল খাওয়া যায়। এতে শরীরে শক্তি পাওয়া যাবে। এই ফলে পটাশিয়ামের পাশাপাশি রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। আর এই দুই উপাদানই দেহের হাড়কে শক্ত করে।
এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। ছোট বাচ্চাদের নতুন নতুন শক্ত খাবার খাওয়ানোর সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফল হিসেবে কলা খাওয়ানো যেতে পারে। কলা পেট পরিষ্কার রাখে পাশাপাশি হজমশক্তিও বাড়ায়। এতে থাকা ফাইবার এই কাজে সাহায্য করে। কলায় আরো আছে ক্যারোটিনয়েড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এগুলোও দেহের জন্য অনেক উপকারী।
কাঁচা কলা ভর্তার উপকারিতা
কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক তা আগেই জানা গিয়েছে। কিন্তু শুধু কি পাকা কলাই খাওয়া যায়? না। কলা কাঁচা বা পাকা উভয় ভাবেই খাওয়া যায়। পাকা কলার মতো কাঁচা কলাও খাওয়া যায় এবং এর মধ্যেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। কাঁচা কলার মধ্যেও রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এটি মূলত সবজি হিসেবেই খাওয়া হয়।
কাঁচা কলাঃ একটি সবজি জনিত ফল কাঁচা কলা। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট, প্রোবায়োটিক ইত্যাদি। এটি বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। তরকারি কিংবা ভর্তা যেকোনো উপায়েই খাওয়া যায়। কাঁচা কলা ভর্তার রয়েছে অনেক উপকারিতা। যে যে উপকারিতা পাওয়া যায়। কাঁচা কলার ভর্তায় থাকে ফাইবার।
এই ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। এতে সহজে ক্ষুধা লাগে না। ফলে অন্য খাবার না খাওয়ায় ওজন হ্রাস পায়। পড়তে পারেন- ওজন কমানোর উপায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এই ভর্তা সাহায্য করে। আঁশযুক্ত হওয়ায় শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে থাকা ভিটামিন-বি৬ রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আঁশযুক্ত হওয়ায় এই খাবার সহজে হজম হয়। পাশাপাশি এটি হজমশক্তি বাড়ায়। ডায়রিয়া ও পেটের নানা সমস্যা দূরীকরণে একটি উপকারী ও কার্যকর খাবার হল কাঁচা কলা। নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এতে রয়েছে পটাশিয়াম যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কোলন
সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ দূর করতে এটি বেশ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধেও এটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে ডাক্তারদের মতে।
কলা কখন খাওয়া উচিত?
কলা নিয়ে বিভিন্ন ধারণার মধ্যে অন্যতম একটি হল কলা আসলে কখন খাওয়া উচিৎ। দিনে নাকি রাতে? নাকি অন্য কোনো সময়? খালি পেটে নাকি ভরা পেটে? এ সকল প্রশ্নের উত্তর হলো কলা মূলত সকাল বেলাই খাওয়া উচিৎ। সকাল বেলা এটি খেলে সারাদিন এর উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে সকালে এটি খেলেও খালি পেটে কিন্তু খাওয়া ঠিক নয়।
খালি পেটে কোনোভাবেই কলা খাওয়া উচিৎ না। সকালে খেলেও অন্য কোনো খাবারের সাথে মিশিয়ে বা অন্য কোনো নাস্তা খাওয়ার পর এটি খাওয়া উচিৎ। তবে শুধু সকালেই যে খাওয়া যায় এমন নয়। দিনের অন্য সময়ও খাওয়া যায়। তবে সকালে খেলে এর উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়।
রাতে কলা খেলে কি হয়?
রাতে ফল বিশেষ করে কলা খাওয়া নিয়ে একেকজনের রয়েছে একেক রকম মত। অনেকেই রাতে কলা খেতে নিষেধ করেন। এক্ষেত্রে এটা অবশ্য সবার জন্য সমান নয়। মূলত যাদের ঠান্ডা বা অ্যাজমার সমস্যা আছে তারা রাতে কলা না খাওয়াই ভালো। কারো ঠান্ডা বা সর্দি, কাশি থাকলে রাতে এটি না খাওয়া ভালো। কারণ এটি একটি ঠান্ডা ফল। আর হজমেও অনেক সময় নেয়।
তবে যাদের সমস্যা নেই তারা রাতের বেলা এটি খেতে পারেন। কারণ, দেহে প্রচুর শক্তি যোগায় এই ফল। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এটি বেশ কাজে দেয়। পাশাপাশি রাতে ঘুমানোর আগে কলা খেলে ঘুমের জন্য এটি বেশ ভালো ঘুমের প্রস্তুতি দেয় দেহকে। তাই চাইলে রাতে কলা খাওয়া যেতে পারে। এতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
কলা দিনে কতটি খাওয়া উচিত?
শরীর ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার তো খেতেই হবে। এ জন্য ফাস্টফুডের বদলে খুঁজে নিতে পারেন সহজ প্রাকৃতিক খাবার। এর মধ্যে কলা অন্যতম। কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। আর এটি স্বাদেও ভালো। পুষ্টিবিদরা বলেন, দিনে দুটি কলা খাওয়া শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তবে এর জন্য ছোট কলা বেছে নেওয়া ভালো।
আর যদি টানা এক মাস আপনি দিনে দুটি করে কলা খান। গুণগুলো খুব ভালোভাবেই পাবেন। হেলদি ফুড টিমে প্রকাশিত হয়েছে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন। কলার মধ্যে আয়রন রয়েছে। আয়রন রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিন তৈরিতে কাজ করে। আয়রনের ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতা হয়। এক মাস দিনে দুটি করে কলা খেলে রক্তের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে।
প্রতিদিন দুটি কলা খাওয়া শরীরের শক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই ব্যায়াম করার আগে কলা খেতে পছন্দ করে। কলা মুড ভালো করতে কাজ করে, বিষণ্ণতা কমায়। আর প্রতিদিন দুটি কলা খাওয়া এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। কলার মধ্যে থাকা উপাদান মস্তিষ্কে সুখী হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। তাই বিষণ্ণতায় ভুগলে দিনে দুটি করে কলা খান।
ভালোভাবে প্রসব হওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কলা খাওয়া প্রয়োজন। কলা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এটি গর্ভাবস্থায় সকালের ক্লান্তি ভাব দূর করে। কলায় কম সোডিয়াম রয়েছে। তবে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর। এতে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। গবেষণায় বলা হয়।
প্রতিদিন দুটি কলা খেলে ৪০ শতাংশ হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম মস্তিষ্কের কার্যক্রম বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে। গবেষকদের মতে যেসব ছাত্র সকালের নাশতায় বা বিকেলের নাশতায় কলা খায়। তাদের মনোযোগ বাড়ে বহুগুণে। কলার মধ্যে রয়েছে আঁশ। এটি হজমে সাহায্য করে।
দিনে দুটি কলা খেলে হজমের সমস্যা কমে। বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে। হজমের সমস্যা থাকলে টানা এক মাস দিনে দুটি করে কলা খেয়ে দেখতে পারেন।
কলা খেলে কি ওজন বাড়ে?
কলা খেলে ওজন বাড়ে নাকি কমে এ নিয়ে রয়েছে অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ। অনেকে মনে করেন কলায় অনেক বেশি শর্করা ও ক্যালরি থাকায় এটি খেলে ওজন বাড়ে৷ কারণ এ সকল খাদ্য উপাদান সাধারণত ওজন বাড়ায়। কিন্তু কলায় শুধু শর্করা বা ক্যালরি ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক উপাদান। এ সকল উপাদানের মধ্যে অন্যতম হল ফাইবার।
এই ফাইবার মানুষের হজমশক্তি বাড়ায়। সহজে খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে ফাইবার। পাশাপাশি এই ফাইবার থাকার কারণে মানুষের পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। ফলে কলা খেলে দীর্ঘক্ষণ অন্য খাবার খেতে ইচ্ছে হয় না। এর ফলে দেহের ওজন বাড়ার আশংকা কমে। তাই বলা যায়, কলায় ওজন বাড়ে না বরং কমে।
কলা খেলে কি মোটা হয়?
কলা খেতে আমরা কম বেশি সবাই পছন্দ করি। বিশেষ করে যদি সকালের নাশতায় পাউরুটি বা টোস্ট বিস্কুট এর সাথে সকালের নাশতার স্বাদটাই অন্য রকম করে তোলে। কেউ কেউ মনে করেন কলা খেলে ওজন বাড়ে যায়। আবার কারো ধারনা কলা খেলে ওজন কমে। অন্য ফলের চেয়ে কলায় শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে।
যেমন- এক কাপ পরিমাণে কাটা আপেলে যদি ৬০ পারসেন্ট ক্যালোরি থাকে। তাহলে অন্যদিকে ওই পরিমাণ কলায় ১৩০ পারসেন্ট ক্যালোরি পাওয়া যায় । যারা ওজন কমাতে চান ক্যালোরি সম্পন্ন খাবার খাওয়া তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে। তবে কলায় শর্করা ছাড়া আরও অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে থাকা পটাশিয়াম।
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়?
দিনের যেকোনো সময় কলা খাওয়া যায়। বিশেষত সকালে কলা খেলে আরও বেশি ভালো। কারণ এতে সারাদিন কাজ করার শক্তি বাড়ে। কিন্তু সকালে খালি পেটে এটি খাওয়া কি ঠিক? কি হয় খালি পেটে এই ফল খেলে। সকালে খালি পেটে আসলে এই ফল খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান খালি পেটে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
কলায় থাকা প্রচুর পরিমাণে শর্করা খালি পেটে দেহের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আবার খালি পেটে এই ফল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পাশাপাশি খালি পেটে এই খাবার খেলে এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম পেটে এসিডের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও খালি পেটে কলা খেলে দেহে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
তাই সব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, খালি পেটে কলা খাওয়া উচিৎ নয়। ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি ও সি শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। এছাড়া কলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা এর আর্টিকেলটি ছিল ফল-ফালান্তি কোন সম্পর্ক অর্থাৎ কলা কেন খাব কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা দিনে কয়টি হওয়া উচিত আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই এখন পর্যন্ত আমার পেজের সঙ্গে থাকার জন্য আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। এই প্রত্যাশা রেখে এবং আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আর্টিকেলটি সমাপ্ত করছি।