রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আজকের আর্টিকেলটি ইবাদতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত সেটি আপনাদের সামনে সম্পৃক্ত আকারে তুলে ধরব আশা করি এখান থেকে উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ। আরবি চন্দ্রবর্ষের সপ্তম মাস হলো রজব।
রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা
রজব মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘আর রজব আল মুরাজজাব’ বা ‘রজবুল মুরাজ্জাব’ ‘রজব’ শব্দের অর্থ ‘প্রাচুর্যময়’ ‘মহান’ ‘মুরাজ্জাব’ অর্থ ‘সম্মানিত’ ‘রজবে মুরাজ্জাব’ অর্থ হলো ‘প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস হারাম তথা সম্মানিত ও যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ মাসগুলোর অন্যতম হলো রজব।

ভূমিকাঃ

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি নফল ইবাদতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত সেটি হচ্ছে। রজক মাসের গুরুত্ব ও তৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা যা আমাদের অনেকেরই বিষয়গুলো জানা নেই। তাই এই আর্টিকেলটি যদি গুরুত্ব সহকারে পড়া যায়। আমি আশা করি নফল ইবাদতের জন্য এই আর্টিকেলটি যথেষ্ট হবে।

তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের মূল আলোচনা রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে জেনে নিই। সাথে আরো অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা রয়েছে আর্টিকেলের মধ্যে তাহলে আর বিলম্ব না করে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
চারটি মাসকে হারাম মাস হিসেবে ধরা হয়। এগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই বৎসর হয় বারো মাসে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত তিনটি একাধারে জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং চতুর্থটি হলো “রজব মুদার”, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী। (মুসলিম)

‘মুদার’ উভয়বিধ বা বহুবিধ কল্যাণের সম্মিলন। রজব ও শাবান হলো জোড়া মাস। রজব ও শাবান মাসদ্বয়কে একত্রে রজবান বা রজবাইন অর্থাৎ রজবদ্বয় বলা হয়। রমজানের আগে এ দুই মাস আমল ও সাধনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী ও সবিশেষ উর্বর।রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি পরিমাণে পড়তেন।

‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান’ অর্থ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন। রমজান মাস আমাদের নসিব করুন। (বুখারি ও মুসলিম)

উম্মে সালমা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন। শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজি (সা.)–এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়।

নবীজি (সাঃ) রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন; রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজির) মাস। রমজান হলো আমার উম্মতের মাস। (তিরমিজি) ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা) খেত চাষ দিল না এবং শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে) খেত আগাছামুক্ত করল না। সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।

(বায়হাকি) রজব মাসের বিশেষ আমল হলো বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বিশেষত প্রতি সোমবার বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং মাসের ১, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ২০, ২৯, ৩০ তারিখ রোজা রাখা। অধিক হারে নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আউয়াবিন, তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি আদায় করা।

এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ আরও আমল হলো অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা। কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া; যাঁরা জানেন তাঁদের জন্য সহিহ্-শুদ্ধ করা এবং অর্থসহ শেখা।

তাহাজ্জুদ কাকে বলে?

তাহাজ্জুদ (আরবি: تهجد) রাতের নামাজ আবার এই নামাজকে কিয়ামুল লাইল নামেও আখ্যায়িত করা হয়। ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্যে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে্র অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।তবে এটা বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন। এবং তার সাহাবীদের কে নামাজ আদায়ের জন্য উৎসাহিত করতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজ এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। ফরজ নামাজের পরে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন। রমজানের পর উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদের নামাজ)। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় মুমিন বান্দাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। তবে দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত থেকে শুরু করে যত রাকাত ইচ্ছা আদায় করা যায়। ইসলামিক স্কলারদের পরামর্শ হলো ন্যুনতম চার রাকাত আদায় করা। যে কয় রাকাতই পড়া হোক, তা নিয়মিত আদায়ের অভ্যাস করা।
যেমন হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেন। রমজানে নবীজীর নামাজ কেমন হতো? তিনি উত্তরে বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে এবং রমজানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না।

প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাইবাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। সহিহ বুখারীঃ-১/১৫৪

আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি কাইস বলেন, আমি হজরত আয়েশা (রা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। সুনানে আবু দাউদঃ ১/১৯৩

উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনও তাহাজ্জুদ নামাজ চার রাকাত পড়তেন। কখনও ছয় রাকাত পড়তেন। কখনও আট রাকাত পড়তেন। কখনও দশ রাকাত পড়তেন। সুতরাং তাহাজ্জুদের নামাজ ১০ রাকাত পর্যন্ত পড়া হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আমরা সহিহ হাদিসে পাই। এরচেয়ে বেশি পড়া যাবে না এমন নয়।

যেহেতু এটি নফল নামাজ, তাই যত বেশি পড়া যায়। ততই সওয়াব। সেই সঙ্গে চার রাকাতের কম পড়লে তা তাহাজ্জুদ হবে না। বিষয়টি এমন নয়। তাই দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ নামাজ হিসেবেই গণ্য হবে। সময় কম থাকলে দুই রাকাত পড়ে নিলেও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। রাতের এবং দিনের নফল নামাজের নিয়ত চার রাকাত করে নিয়ত করা যায়।

এমনিভাবে দুই রাকাত করেও নিয়ত করা যায়। কোনো সমস্যা নেই। তাহাজ্জুদ নামাজে ২ রাকাতের নিয়ত করে ২ রাকাত ২ রাকাত করে পড়া যায়, আবার ৪ রাকাতের নিয়ত করে ৪ রাকাত করে পড়া যায়। ফাতওয়ায়ে শামি: ২/৪৫৫

ইশরাক' নামাজ কাকে বলে?

সালাতুল ইশরাক বা ইশরাকের নামাজ। নফল এ নামাজ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে পড়তেন এবং অন্যকে পড়তেও বলতেন। এ নফল নামাজের চমৎকার ফজিলতও বর্ণনা করেছেন তিনি। কী সেই ফজিলত? আর কখন, কত রাকাআত পড়তে হবে এ নামাজ

সালাতুল ইশরাক শব্দের অর্থ 

ইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হওয়া। সূর্য উঠার পর জগত আলোকিত হয়। বলে এ সময় হাদিসে যে নামাজের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মুহাদ্দিসিনে কেরামগণ তাকে সালাতুল ইশরাক বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ নামাজ পড়তেন না বরং একটু সময় নিয়ে আদায় করতেন। এ নফল নামাজের ফজিলত বর্ণনায় একাধিক হাদিসে এসেছে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাআতে আদায় করার পর সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ওখানে বসে বসেই আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সমান সাওয়াব রয়েছে। (তিরমিজি, মিশকাত)

হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক নামাজের পর (ধারাবাহিক) আর এক নামাজ যার মাঝখানে কোনো গোনাহ হয়নি। তা ইল্লিয়্যুন (উচ্চ মর্যাদায়) লেখা হয়। (আবু দাউদ)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ল। অতপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করল। অতপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করলো সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সাওয়াব নিয়ে ফিরে গেল। (তাবারানি আত-তারগিব)

আর অন্য আদিসের বর্ণনা অনুযায়ী। সূর্য উঠার আগে আল্লাহর জিকির, তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার কাছে ইসমাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও অধিক উত্তম। (মুসনাদে আহামদ)

সালাতুল ইশরাক নামাজের সময়

ফজর নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সূর্য উঠার পর এ নামাজ আদায় করতে হয়। কেউ কেউ বলেছেন। সূর্য উঠার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর আবার কেউ কেউ বলেছেন। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর এ নামাজ পড়তে হয়। আর সূর্য এক বর্শা পরিমাণ (দেড় মিটারের মতো) মধ্যাকাশের দিকে উঠা পর্যন্ত এ নামাজের ওয়াক্ত থাকে।

ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাক নফল নামাজ। এটি অন্যান্য নামাজের মতোই দুই রাকাআত করে আদায় করতে হয়। ইশরাকের নামাজের জন্য সুস্পষ্ট আলাদা কোনো নিয়ম ও নিয়ত নেই। শুধু ‘আল্লাহু আকবার’ বলে শুরু করা। আর দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ পড়া। ইশরাকের নামাজের সুনির্দিষ্ট রাকাআত সংখ্যারও উল্লেখ না।

থাকলেও কেউ কেউ দুই রাকাআত থেকে শুরু করে আট রাকাআত পর্যন্ত পড়ে থাকে। আবার কিছু সংখ্যক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ইশরাকের নামাজ দুই রাকাআত করে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়। তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত পড়তেন। এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ফজরের নামাজের পর সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২৫ মিনিট পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ আদায় করা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও ঘোষিত ফজিলত পেতে এ নফল নামাজের আমল অব্যাহত রাখা।

সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত কি?

প্রিয় বন্ধুরা সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত, একটি গুরুত্বপূর্ন নফল সলাত। বলা হয়ে থাকে এটি দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নফল সলাত। প্রথম হলো তাহাজ্জুতের সলাত এবং দ্বিতীয় হলো এই সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত। চলুন জেনে নেই। এই সলাতের গুরুত্ব এবং সলাতের বিভিন্ন নিয়ম কানুন।

সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত কেন এত গুরুত্বপূর্ন?

আবূ যার (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা তিনি বলেন। তোমাদের প্রত্যেকেই এমন অবস্থায় প্রভাব করে যে, তাকে তার প্রত্যেক জোড়াগুলোর পরিবর্তে সাদকাহ দেয়া লাগে। কাজেই প্রত্যেক বার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলা সাদকাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রত্যেক বার ‘আল্লাহু আকবর’ বলা সাদকা হিসেবে গণ্য হয়। এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করাও সাদকাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর এসবের মুকাবিলায় চাশতের দু’রাকআ’ত নামাযই হবে যথেষ্ট। (মুসলিম ৭২০)

অর্থাৎ প্রতিদিন সকালে আমাদের প্রতিটি জোড়ার জন্য সাদকাহ করতে হয় আর তা আল্লাহু আকবার, সুবাহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লালাহ ইত্যাদি বলার, সৎ কাজ করা, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত আদায়ের মাধ্যে এই সাদকাহ আদায় হয়ে যায়।

তাছাড়া রাসূল সাঃ এই সলাতের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এবং তিনিও প্রায় নিয়মিতই এই সলাত পড়তেন। অপর এক হাদিসে আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন। আমার খলীল ও বন্ধু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেন। মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। সহিহ বুখারী, তাহাজ্জুদ অধ্যায়, ১১৭৮
  • প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করা।
  • সালাতুয-যোহা চাশত এর সালাত আদায় করা।
  • বিতর(সালাত) আদায় করে শয়ন করা।

চাশতের নামাজ কখন পড়তে হয়?

চাশতের নামাজ পড়তে হয়। সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২০ পর (যখন হারাম সময় পার হয়ে যায়) যোহর পর্যন্ত যদিও এ সময় ইশরাকের ২ রাকাত সলাত রয়েছে। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে। আসিম ইবনে যামরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন। আমরা আলী (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিনের (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম।

তিনি বললেন, তোমরা আসেভাবে আদায় করার ক্ষমতা রাখো না। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, আমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে আদায় করবে। এরপর তিনি বললেন, আসরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে তেমন হলে তিনি ২ রাক’আত (ইশরাক সালাত) আদায় করতেন। আবার যোহরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে।

(পূর্ব দিকে সূর্য ততটা উপর হলে) তিনি ৪ রাক’আত (চাশতের সালাত) আদায় করতেন। যোহরের পূর্বে ৪ রাক’আত ও পরে ২ রাক’আত এবং আসরের পূর্বে ৪ রাক’আত আদায় করতেন। প্রতি ২ রাক’আতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, নবীগণ এবং যেসকল মুমিন-মুসলিম তাদের অনুসরণ করেছেন। তাদের প্রতি সালাম প্রেরণের মাধ্যমে ব্যবধান করতেন। সুনানে নাসাঈ, হা/৮৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১১৬১

অর্থাৎ সূর্য যখন পূর্ব আকাশ থেকে উপরে উঠতে শুরু করে। যেমনি ভাবে আসরের সময় সূর্য পশ্চিম আকাশে যেখানে থাকে তেমন পূর্ব আকাশে সূর্য আসলে ইশরাকের সলাত আদায় করতেন। আর তার থেকে উপরে উঠলে সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত আদায় করতেন।

আরো সহজ করে বললে, আপনাদের জন্য ভালো হবে। সকাল ৬:৩০ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত এমন সময় কালে ইশরাকের সলাত এবং ৯ টা থেকে যোহরের আগ পর্যন্ত বা সূর্য মাথার উপর উঠা পর্যন্ত চাশতের সলাত আদায়ের সময়।

চাশতের সলাত কত রাকাত?

চাশতের সলাত ২ থেকে শুরু করে যত ইচ্ছা দুই দুই করে পড়া যায়। তবে অনেক হাদিস থেকে জানা যায়। আল্লাহর রসূল (সাঃ) ৪ রাকাতের নিচে চাশতের সলাত পড়তেন না। তাই সর্বনিম্ন ৪ রাকাত পড়া সহীহ হবে।

মু’আযা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন। আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি চাশতের সালাত আদায় করতেন। উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ- ৪ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আল্লাহ চাইলে কখনো কখনো বেশিও পড়তেন। সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯৬

ইবনে মাজাহ, হা/১৩৮১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৮২; বায়হাকী, হা/৪৬৭৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৫২৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০০৫

এছাড়াও অপর এক হাদিসে এসেছে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) চাশতের সলাত ১২ রাকাতও পড়তেন। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যদি কখনো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রা বা প্রবল ঘুমের চাপের কারণে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তাহলে তিনি দিনে (চাশতের সময়) ১২ রাক’আত সালাত আদায় করে নিতেন। শারহুস সুন্নাহ, হা/৯৮৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৬৪৫

সুতরাং চাশতের সলাত আমাদের সাধ্য মত ২ থেকে যত বেশি পড়া যায় পড়তে পারবো তবে সর্বনিম্ন ৪ রাকাত (যদি সমস্যা না থাকে) পড়া উত্তম হবে।

চাশতের সলাত পড়তে কোন নিয়ম আছে কি?

চাশতের সলাত অন্য সকল নফল সালাতের মতই একটি সালাত এটি পড়তে আলাদা কোন নিয়ম কানুন নেই। সাধারন নফল সালাতের মত পছন্দ মত সুরা মিলিয়ে পড়া যায়।

আউয়াবিন নামাজ কাকে বলে?

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে ও তাঁর সাহাবীগণ মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করতেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত, হুযাইফা (রা) বলেন, ‘‘আমি নবীজী (সাঃ) এর কাছে এসে তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। তিনি মাগরিবের পরে ইশা’র সালাত পর্যন্ত নফল সালাতে রত থাকলেন। হাদীসটি সহীহ

অন্য হাদীসে আনাস (রা) বলেন। সাহাবায়ে কেরাম মাগরিব ও ইশা’র মধ্যবর্তী সময়ে সজাগ থেকে অপেক্ষা করতেন এবং নফল সালাত আদায় করতেন। হাদীসটি সহীহ। তাবিয়ী হাসান বসরী বলতেন। মাগরিব ও ইশা’র মধ্যবর্তী সময়ের নামাযও রাতের নামায বা তাহাজ্জুদ বলে গণ্য হবে।

বিভিন্ন হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, কোনো কোনো সাহাবী তাবিয়ীগণকে এ সময়ে সালাত আদায়ের জন্য উৎসাহ প্রদান করতেন। এ সকল হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে মুমিন কিছু নফল সালাত আদায় করবেন। যিনি যত বেশি সালাত আদায় করবেন তিনি তত বেশি সাওয়াব লাভ করবেন।

এ সময়ের সালাতের রাক‘আত সংখ্যা বা বিশেষ ফযীলতে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি। কিছু জাল বা অত্যন্ত যয়ীফ সনদের হাদীসে এ সময়ে ৪ রাক’আত, ৬ রাক’আত, ১০ বা ২০ রাক’আত সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলতের কথা বলা হয়েছে। যেমন, যে ব্যক্তি এ সময়ে ৪ রাক’আত সালাত আদায় করবে, সে এক যুদ্ধের পর আরেক যুদ্ধে জিহাদ করার সাওয়াব পাবে।

যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কোনো কথা বলার আগে ৬ রাক’আত সালাত আদায় করবে তাঁর ৫০ বছরের গোনাহ ক্ষমা করা হবে। অথবা তাঁর সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। যে ব্যক্তি এ সময়ে ১০ রাক’আত সালাত আদায় করবে, তাঁর জন্য জান্নাতে বাড়ি তৈরি করা হবে। যে ব্যক্তি এ সময়ে ২০ রাক’আত সালাত আদায় করবে, তাঁর জন্য আল্লাহ জান্নাতে বাড়ি তৈরি করবেন।

এসকল হাদীস সবই বানোয়াট বা অত্যন্ত যয়ীফ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী এ সময়ে ৬ রাক‘আত নামায আদায় করলে ১২ বছরের সাওয়াব পাওয়ার হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন। হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল। কোনো কোনো মুহাদ্দিস হাদীসটিকে জাল ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন।

আমাদের দেশে এ ৬ রাক‘আতে সূরা ফাতিহার পরে কোন সূরা পাঠ করতে হবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো সবই বানোয়াট কথা ও ভিত্তিহীন।

দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, কোনো কোনো সাহাবী-তাবিয়ী বলেছেন, সালাতুল মাগরিবের পর থেকে সালাতুল ইশা পর্যন্ত যে নফল সালাত আদায় করা হয় তা ‘সালাতুল আওয়াবীন’ অর্থাৎ ‘বেশি বেশি তাওবাকারীগণের সালাত’ বিভিন্ন সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) চাশতের নামাযকে ‘সালাতুল আওয়াবীন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

হজরত সালমান ফারসি (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। হজরত উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন। অতি মহান চারটি রাত হলো: রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের মধ্য দিবসের রাত (শবে বরাত), শাওয়াল মাসের প্রথম রাত (ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদের রাত।

জিলহজ মাসের দশম রাত (ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের রাত)।রজব ও শাবান মাস হলো রমজান মাসের প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক অর্থাৎ সার্বিক বা সামগ্রিক। রমজান মাসে যেহেতু ইবাদতের সময়সূচি পরিবর্তন হবে। তাই সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে এবং রমজান মাসের শেষ দশকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ রয়েছে।

তাই আগে থেকেই তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রজব ও শাবান মাসের নেক আমল ও পাপ বর্জনের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তওবা ও ইস্তিগফার করতে হবে। মোহমুক্তি ও পাপ পরিহার করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সমাজের একে অন্যকে সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে হবে।

রমজান মাসে যেন ইবাদতের পরিবেশ রক্ষা হয়। সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজের চাপ কমাতে হবে। দান-খয়রাতের পরিমাণ বাড়াতে হবে। রমজানে গরিব মানুষ যেন ভালোভাবে সাহ্‌রি ও ইফতার করতে পারে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে পরিকল্পনা রজব শাবান মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। 

শেষ কথাঃ

সম্মানিত পাঠকগন আজকের আর্টিকেলের আলোচনাটি ছিল। নফল ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত রজব মাস সম্পর্কে সেটি আমাদের অনেকেরই জানা ছিল না। তাই আর্টিকেলটি আমাদের ইবাদত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। 

তাই আর্টিকেলটি পড়ার আহ্বান রাখতাম। এবং আপনাদের সুস্থতা দীর্ঘায়ু কামনা করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আজকের আর্টিকেল শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন