খেজুরের গুনাগুন সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য জেনে নিন
ফলের গুনাগুন সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য প্রিয় বন্ধুরা আজকের আর্টিকেল জান্নাতি ও পৃথিবীর মৌসুমী ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় একটি ফল খেজুর সম্পর্কে। আর এই ফলের গুনাগুন সম্পর্কে সঠিক ধারণা অনেকেই নাই। তাই আজকের আর্টিকেলে গুণ সম্পন্ন ফল।
খেজুরের আলোচনা করতে যাচ্ছি। যা খেলে আপনাদের সুস্থতার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। তাহলে চলুন আর দেরি না করে খেজুরের গুনাগুন সম্পর্কে কিছু ধারনা আপনাদের সাথে শেয়ার করা যাক।
ভূমিকাঃ
প্রিয় বন্ধুরা আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফল খেয়ে থাকি কিন্তু আমরা জানি না কোন ফলে কতটুকু গুন রয়েছে। কোন ফল খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। এটা আমাদের অনেকের জানা নেই। তাই আজকের আর্টিকেলে জান্নাতি ফল এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রিয় একটি ফল খেজুর আমরা জানি না এই খেজুরের কত গুনাগুন রয়েছে।
আজকে খেজুরের গুনাগুন সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য জানবো যা আমাদের অনেক উপকারে আসবে। তাহলে চলুন খেজুরের গুনাগুন সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
খেজুরের গুনাগুন সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান উপত্যকার মাঝামাঝি অবস্থিত এটি একটি উপকূলীয় অঞ্চল। বর্তমান লেবাননের সম্পূর্ণ এবং সিরিয়া ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের কিছু অংশবিশেষ নিয়ে এটি গঠিত। প্রাচীনকালে তা ফিনিশিয়া নামে পরিচিত ছিল। শব্দটি গ্রিক। এর অর্থ বেগুনি ভূমি। এখানকার অধিবাসীরা মুরেক্স নামক এক প্রকার সামুদ্রিক শামুক থেকে বেগুনি রঙ বের করে আনত।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতি তরমুজ চাষ বিস্তারিত জেনে নিন
এ রংগের জন্য অঞ্চলটি বিখ্যাত ছিল। তাই অঞ্চলটির এমন নামকরণ করেছিল গ্রিকরা। সেখানে প্রচুর পরিমাণে জন্মাত এক ধরনের গাছ। গ্রিকরা ভেবেছিল ফিনিশিয়া সে গাছের আদিভূমি। তাই তারা এর নাম দিল ফিনিক্স (ফিনিশিয়ার গাছ)। কালক্রমে সে অঞ্চলের প্রতীকে পরিণত হলো এ গাছ। ফিনিশীয় মুদ্রায় হয়েছে তার উপস্থাপন।
গ্রিকদের ফিনিক্স আমাদের দেশে খেজুর গাছ নামে পরিচিত। এ গাছকে সংস্কৃত ভাষায় খর্জুর বলা হয়। সেখান থেকেই বাংলায় খেজুর শব্দটি এসেছে।ফিনিক্স বলতে সাধারণত আমাদের মনে পৌরাণিক একটি পাখির চিত্রই ভেসে ওঠে। খেজুর গাছও ফিনিক্স হিসেবে পরিচিত। এমন তথ্য আমাদের কিছুটা আশ্চর্যান্বিত করে তুলে।
মজার ব্যাপার হলো, গ্রিক মিথগুলোতে ফিনিক্স পাখির সঙ্গে খেজুর গাছের সাদৃশ্য মিশ্রণ করা হয়েছে। রোমান লেখক প্লিনি দ্য এলডার তার ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি’ বইতে ফিনিক্স পাখির গল্প বলেছেন। কিংবদন্তি অনুসারে আরবের মরুভূমিতে এ পাখি বাস করে। তার আয়ু ৫০০ বছর থাকে। তবে একই সময়ে দুনিয়ায় কেবল একটিই ফিনিক্স থাকে।
খেজুর গাছের মাথায় বাসা তাদের। দারুচিনির ডাল ও এক ধরনের সুগন্ধি আঠা দিয়ে তৈরি বাসা। ৫০০ বছর পরে সূর্যের তাপে এ পাখি নিজেকে পুড়িয়ে ফেলে। আর সে ছাই থেকেই পাখিটির পুনর্জন্ম ঘটে। ফিনিক্স পাখির মতোই ক্রমাগত জন্ম, মৃত্যু ও পুনর্জন্মের মধ্য দিয়ে খেজুর গাছ পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রতি বছর এ গাছের নতুন শাখা গজায়।
পুরনো শাখাগুলো মরে যায়। মরা শাখা গাছের বাকলে পরিণত হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি দেখে মনে হয়। যেন মরে যাওয়া শাখাগুলো গাছের ভেতরে প্রবেশ করছে। সেগুলোই আবার নতুন শাখা হিসেবে বেরিয়ে আসছে। তাছাড়া ফিনিক্স পাখির মতো খেজুর গাছও সাধারণত দীর্ঘজীবী হয়। খেজুরের বীজ তার গুণাগুণ বজায় রেখে অনেক বছর মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তাতে অংকন গজায়। কয়েক বছর আগে ডেড সির কাছে খেজুরের কিছু বীজ আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেগুলো ছিল দুই হাজার বছরের পুরনো। এ ধরনের খেজুর গাছ জুডিয়াতে (বর্তমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের অংশবিশেষ) জন্মাত। বর্তমানে তা বিলুপ্তপ্রায়। সে বীজগুলোতে অংকন গজানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি বীজ অংকন গজায়। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন মেথুসেলাহ। খেজুর গাছের এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে গ্রিকরা এর নাম দেয় ফিনিক্স।
খেজুরের গাছের বৈজ্ঞানিক নাম করণ
খেজুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটাইলিফেরা। এটি গ্রিক নাম। এর ‘ফিনিক্স’ নামকরণের কারণ তো জানা গেল। এবার ‘ড্যাকটাইলিফেরা’র ওপর আলোকপাত করা যাক। গ্রিক শব্দ ‘ড্যাকটাইলাস’ ও ‘ফেরো’র সমন্বয়ে ড্যাকটাইলিফেরা গঠিত। ড্যাকটাইলাস অর্থ খেজুর। আর ফেরো মানে বহন করা। তবে প্রকৃতপক্ষে ড্যাকটাইলাস শব্দের অর্থ আঙ্গুল।
আরো পড়তে ক্লিক করুনঃ কলা কেন খাবো কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আঙ্গুলের খেজুরে পরিণত হওয়া নিয়ে মজার একটি গল্প আছে। দ্বিতীয় শতাব্দীর গ্রিক স্বপ্নবিশারদ আর্তেমিদোরাস রচিত বুক অব ড্রিমসে এ গল্পের উল্লেখ আছে। গল্পের নায়ক এক অসুস্থ ব্যক্তি। পেটের পীড়ায় ভুগছিল। লোকটি কাতর হয়ে সে চিকিৎসা-দেবতার কাছে আরোগ্য কামনা করে। স্বপ্নে সে নিজেকে চিকিৎসা-দেবতার মন্দিরে আবিষ্কার করে।
দেবতা লোকটির ডান হাতের আঙুলগুলো ধরেন। তিনি তাকে সেগুলো খেতে বলেন। লোকটি সে আদেশ পালন করে। স্বপ্নের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য লোকটি ধরতে পারে। ঘুম ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গেই সে পাঁচটি খেজুর খেয়ে নিল। আর কী আশ্চর্য! সম্পূর্ণ সুস্থতা লাভ করল অসুস্থ লোকটি। এভাবেই স্বপ্নের ব্যাখ্যায় হাতের আঙ্গুল ও খেজুর সমার্থক হয়ে যায়।
এ কারণে খেজুর গাছের বৈজ্ঞানিক নামের দ্বিতীয় অংশ হয় ড্যাকটাইলিফেরা। এ গ্রিক শব্দটিই ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। ইতালীয় ডেটেটরো, ফরাসি ডেটেট, স্প্যানিশ ডেটিল ও ইংরেজি ডেট ড্যাকটাইলিফেরার রূপভেদ। তবে পর্তুগিজ ভাষায় খেজুরকে বলা হয় তামার। হিব্রু ও আরবি ভাষা থেকে তারা শব্দটি গ্রহণ করেছে।
সেমেটীয় ভাষায় তামার দ্বারা খেজুর গাছ ও খেজুর দুটোকেই বোঝায়। তামার শব্দটি এসেছে তামুর থেকে। এর অর্থ হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো কিছু বোঝাতেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন রক্ত, লাল রং ইত্যাদি। যাবতীয় শুভ ও ঋজু বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করতেও শব্দটির ব্যবহার আছে। পাকা খেজুরের রং লাল হয়ে থাকে।
খেজুর গাছ একহারা ও ঋজু। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে সেমেটীয় ধারায় খেজুরকে তামার বলা হয়। ভাষাবিদেরা এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। হিব্রুতে তামার নামে এক নারীর নাম পাওয়া যায়। ওল্ড টেস্টামেন্টে তার বর্ণনা আছে। বর্ণনা অনুসারে কিং ডেভিডের এক মেয়ের নাম ছিল তামার। অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী।
সেখান থেকেও হিব্রু ও আরবিতে খেজুরের এমন নামকরণ হতে পারে। এমন নাম দ্বারা খেজুরের সৌন্দর্যের দিকেই যেন ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রাচীন গ্রিক ও লাতিন ভাষায় খেজুর গাছকে পালমা নামেও অভিহিত করা হয়েছে। পালমা তামারের একটি অপভ্রংশ হতে পারে বলে অনেক ভাষাবিদ মনে করেন।
খেজুর গাছ জন্মানোর স্থান সমূহ
খেজুর সাধারণত মরু অঞ্চলে জন্মায়। শুষ্ক আবহাওয়া ও ঊষর ভূমিতে বেড়ে ওঠে খেজুর গাছ। তথাপি এ ফল তার অঙ্গে এত রস কীভাবে ধারন করে। তা এক বিস্ময়ই বটে। মরুভূমির মানুষের কাছে তাই এ ফল অতি আদরের। খেজুর তাদের অন্যতম প্রধান খাদ্য। খাবার পরবর্তী মিষ্টান্ন হিসেবেও খেজুরের ব্যবহার আছে।
আবার দুই খাবারের মাঝে হালকা নাশতা হিসেবেও তারা খেজুর খেয়ে থাকে। তাই খেজুরকে বলা হয় ‘মরুভূমির রুটি’ এর আরেকটি নাম আছে। আমাদের দেশে বসে সে নাম শুনলে অবাকই লাগবে। মরুবাসীর কাছে খেজুর ‘গরিবের পিঠা’ নামে পরিচিত। সেখানে খেজুরের প্রাচুর্য ও সহজ প্রাপ্ততার কারণে এমন নামকরণ।
ইংরেজ উদ্ভিদবিজ্ঞানী ই.কর্নার খেজুর গাছকে আদর্শ উদ্ভিদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি অব পামস’ বইয়ে তিনি এমন দাবি করেছেন। পরিপূর্ণ একটি খেজুর গাছ দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০ ফুট (১৫ মিটার) বা তার বেশি হয়ে থাকে। এটি খুব ধীরগতিতে বাড়ে। পরিপূর্ণ রূপ পেতে এর ১০০ বছর লাগে। এর কোনো প্রধান মূল নেই।
এর মূলগুলো আঁশযুক্ত খেজুর গাছের কাণ্ড থেকে অসংখ্য গৌণ মূল বের হয়ে আসে। সেগুলো আবার অধিকতর ছোট মূলের জন্ম দেয়। গৌণ মূলগুলোতে অসংখ্য বায়ুকুঠুরি আছে। এগুলোর মাধ্যমে খেজুর গাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদটি নিজেকে সতেজ রাখে। খেজুর গাছের কাণ্ডের একেবারে ওপরের দিকে একটি প্রান্তিক কুঁড়ি থাকে।
সেখান থেকে নতুন পাতা গজায়। এ কুঁড়িকে গাছটির হৃৎপিণ্ড বা মাথা বলা হয়। এটি কেটে দিলে গাছটি মরে যায়। প্রতিটি পাতার একটি মেরুদণ্ড থাকে। এটি লম্বা ও শক্ত। একে মধ্যশিরা বলা হয়। এর উভয় পাশে পালকের মতো অনেকগুলো গৌণ পাতা গজায়। এগুলো লম্বা ও অগ্রভাগ সুচালো। তারা খেজুর গাছকে বাতাসে দোল খাওয়া কিংবা ভেঙে পড়ার হাত থেকে বাঁচায়।
মধ্যশিরার নিচের অংশ জুড়ে কিছু কাঁটা জন্মায়। এগুলো খুবই ধারালো। এ কাঁটাগুলো প্রান্তিক কুঁড়িটিকে প্রাণিকুলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। গৌণ পাতাগুলোর বহিরাবরণ বেশ শক্ত হয়। মরুভূমিতে বালিঝড়ের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তারা খেজুর গাছকে নিরাপদ রাখে। তাছাড়া মরু অঞ্চলের গরম বাতাস থেকে কোষগুলোকে রক্ষায় গৌণ পাতাগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখে।
পানি এগুলোর কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তাই মাছ ধরার উপকরণ তৈরিতে তাদের ব্যবহার আছে। প্রান্তিক কুঁড়ির কাছাকাছি কচি পাতাগুলো আঁশযুক্ত আবরণে ঢাকা থাকে। পাতাগুলো বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁশগুলোও বড় হয়। বড় পাতাগুলো ছোট পাতাগুলোকে সূর্যের তাপ থেকে ছায়া দেয়।
খেজুরের গাছে ফুল আসার সময়
বসন্তকালে খেজুর গাছে ফুল আসে। ফুলগুলো লম্বা ও শক্ত খোলের ভেতর থাকে। এসব খোল প্রথমে সবুজ থাকে। ধীরে ধীরে বাদামি হয়। ক্রমে তা পরিপূর্ণ হয়। তখন সূর্যের তাপে সেগুলো শুকিয়ে যায় এবং সংকুচিত হয়ে আসে। একপর্যায়ে খোলগুলো ফেটে ফুলের গোছা বেরিয়ে আসে। প্রতিটি গোছায় একটি কাণ্ড থাকে। সেখান থেকে ৫০ থেকে ১৫০টি বা তারও বেশি শাখা বের হয়।
প্রতিটি শাখায় অসংখ্য ফুল থাকে। পুরুষ ফুল দেখতে তারার মতো। এর রঙ সাদা। শরীর মোমের মতো মসৃণ। নারী ফুল ডিম্বাকৃতির মুক্তার মতো দেখায়। রং হলুদ, পুরুষ ফুলের গোছা ছোট শাখার রূপ নেয়। এতে অনেকগুলো ফুল থাকে। প্রতিটি গোছা ছয় ইঞ্চি লম্বা হয়। নারী ফুলের গোছা লম্বায় এর দ্বিগুণ। তবে তাতে ফুলের সংখ্যা কম থাকে।
খেজুর বেরি জাতীয় ফল। একটি ডিম্বাশয় থেকে একটি খেজুরই জন্মায়। প্রতিটি ফুলে তিনটি গর্ভপত্র আছে। পরাগায়নের পর কেবল একটি গর্ভপত্র থেকে ফল হয়। অন্য দুটির গর্ভপাত হয়ে যায়। খেজুর থোকায় থোকায় জন্মায়। প্রতিটি থোকার একটি কাণ্ড থাকে। এ কাণ্ড থেকে অনেকগুলো শাখা বের হয়। বৃতির মাধ্যমে খেজুর শাখার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
উপযুক্ত পরিবেশ পেলে একটি খেজুর গাছ বছরে প্রায় ৭০ কেজি খেজুর উত্পন্ন করতে পারে। খেজুর স্বতন্ত্র একটি ফল। এটি তিনটি স্তরে পাকে। প্রথম পর্যায়ে পাকা খেজুর শক্ত থাকে। তখন রঙ থাকে উজ্জ্বল হলুদ কিংবা লাল। এ সময় খেজুর খানিকটা মুচমুচে, রসালো ও মিষ্টি হয়। আরেকটু পাকলে তা আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নরম হতে থাকে।
তখন খেজুরের কিছু অংশ শক্ত থাকে। শক্ত অংশের রঙ হয় হলুদ কিংবা লাল। আর কিছু অংশ থাকে নরম। সে অংশের রঙ হয় স্বচ্ছ বাদামি। একসময় সম্পূর্ণ খেজুর পেকে নরম হয়ে যায়। মুচমুচে ভাবটি চলে যায়। তখন তা অধিকতর মিষ্টি ও রসালো হয়। গাছের পাকা খেজুর রোদে শুকিয়ে যায়। তখন তার চামড়া কুঁচকে যায়। কালচে বর্ণ ধারণ করে।
অপূর্ব লাগে দেখতে। অনেকটা ক্যান্ডির মতো দেখতে খেজুরগুলো তখন গাছ থেকে পাড়া হয়। মোড়কজাত হয়ে এসব খেজুর চলে যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।
খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে
খেজুরের পুষ্টিগুণ অতুলনীয়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। ফ্ল্যাভোনয়েডস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। অ্যালঝেইমার প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ক্যান্সার থেকে মানব শরীরকে রক্ষা করে। খেজুরে ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে। এটি এক প্রকার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এছাড়া ক্যারোটিনয়েডস ও ফেনোলিক অ্যাসিড নামে আরো দুই ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে।
খেজুরে ক্যারোটিনয়েড হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। চোখের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে। ফেনোলিক অ্যাসিড ক্যান্সার ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। খেজুরে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ আছে। এর মধ্যে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম অন্যতম। এসব উপাদান হাড়কে মজবুত করে। হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা থেকে শরীরকে বাঁচিয়ে রাখে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খেজুর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এসব পুষ্টি উপাদান খেজুরকে একটি আদর্শ খাবারে পরিণত করেছে। মধ্যযুগে আরব বণিক ও অভিযাত্রীরা উত্তাল সাগরে দিনের পর দিন খেজুর খেয়েই টিকে থাকত। তখন স্কার্ভির প্রকোপ ছিল বেশি। ইউরোপীয় নাবিকেরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হতো। কিন্তু খেজুর খাওয়ার কারণে আরবরা এ রোগ আরোগ্য পেয়েছিল।
খেজুর গাছের ব্যবহারিক উপযোগিতাও দারুণ। এর কোনো অংশই ফেলনা নয়। খেজুর শুকিয়ে বহু বছর রেখে দেয়া যায়। সাগর ও মরু অভিযাত্রীদের কাছে তা অমূল্য। খেজুর সিদ্ধ করে ও ছেঁকে মধু তৈরি করা যায়। গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খেজুর থেকে উত্কৃষ্ট পানীয় প্রস্তুত হয়। খেজুর গাছের আঁশ থেকে দড়ি ও ঝুড়ি তৈরি করা যায়।
একসময় বাড়ি বানাতে খেজুর গাছের পাতার ছাউনি ব্যবহূত হতো। খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হতো খেজুর গাছের শাখা। সেমেটিক ধারার ধর্মগুলোতে খেজুরের আলাদা গুরুত্ব আছে। এটি পবিত্র ফল হিসেবে বিবেচিত। ইসলাম ধর্মে খেজুরকে কেন্দ্র করে অনেক আয়াত ও হাদিস আছে। ইহুদি ধর্মেও আছে নানা প্রবাদ ও কিংবদন্তি।
বারো শতকের এক ইহুদি ধর্মযাজকের কণ্ঠে তারই প্রতিধ্বনি। নেতানিয়েল আল ফাইয়ুমি নামের সেই রেবাইয়ের উক্তি দিয়েই লেখাটি শেষ করব। আজ থেকে ৮০০ বছর আগে তিনি লিখেছেন, ‘প্রাণিকুলের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ। আর উদ্ভিদকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো খেজুর গাছ।
কী গুন আছে এই খেজুর ফলে
- কয়েকটি খেজুরই সাময়িক ক্ষুধা নিবারণে সহায়তা করে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকায় দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী সামান্য পরিশ্রমে যারা পেরেশান হয়ে যান। ইফতারে খেজুর খেলে তাদের দুর্বলতা কেটে যায় এবং রোজা রাখা সহজ হয়।
- শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের স্বাভাবিকভাবে রোজা রাখা সহজ হয়।
- খেজুর হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ক্ষুধামন্দা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে খেজুর বিশেষ উপকারী। পেটের গ্যাস, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী। গ্যাসের জন্যও উপকার।
- রোজাদারের পেট খালি থাকায় শরীরে গুক্লোজ প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খেজুর সেটা দ্রুত পূরণে সাহায্য করে। খাদ্যশক্তি থাকায় দুর্বলতা দূর হয় স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
- রোজায় অনেকক্ষন খালি পেটে থাকা হয় বলে দেহের প্রচুর গুক্লোজ দরকার হয় খেজুরে অনেক গুক্লোজ থাকায় এ ঘাটতি পূরণ হয়।
- হৃদরোগীদের জন্যও খেজুর বেশ উপকার খেজুরের প্রচুর খাদ্য উপাদান রয়েছে খেজুর রক্ত উৎপাদনকারী
- হজমশক্তি বর্ধক, ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক রুচি বাড়ায় ত্বক ভালো রাখে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।
- অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান জন্মের সময় খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপিসির দ্রুত সংকোচন প্রসারণ ঘটিয়ে প্রসব হতে সাহায্য করে।
- প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয় খেজুরে আছে ডায়েটরই ফাইবার যা কলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়।
- খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখে নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা প্রশংসিত।
- তাজা খেজুর নরম এবং মাংসল যা সহজেই হজম হয়। খেজুরে আছে ডায়েটরই ফাইবার যা কলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়।
- ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই ফল দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখে। আজওয়া খেজুর বিষের মহৌষধ।
- মুখের অর্ধাঙ্গ রোগ পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী। খেজুরের বিচিও রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে। পাতলা পায়খানা বন্ধ করে।
- এর চুর্ণ মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে দাঁত পরিষ্কার হয়। খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী।
- ৭/৮ মাস সময় থেকে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খেজুর একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য। এসময় গর্ভবতী মায়েদের শরীরে অনেক দুর্বলতা কাজ করে। তখন খেজুর মায়েদের শরীরের এই
- দুর্বলতা কাটাতে অনেক সাহায্য করে এবং ডেলিভারীর পর মায়েদের অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করতে ও খেজুর সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তী সময়ে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- দেহকে সচল ও কার্যক্ষম রাখতে শক্তির প্রয়োজন। এর অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়,শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয়। এসব ক্ষেত্রে শর্করা জাতীয় খাদ্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।আর এই শর্করা জাতীয় খাদ্য হিসেবে খেজুর খাদ্য শক্তির উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করে।
- খনিজ পদার্থ দৈহিক পুষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে। খেজুর দেহে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
- খেজুর লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। রক্তে লৌহিত কণিকার প্রধান উপাদানের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। খেজুর লৌহসমৃদ্ধ বলে এই রক্তশূন্যতা দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
- খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম বিদ্যমান যা আমাদের শরীরের নার্ভ সিস্টেমকে সচল রাখার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে খেজুরের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম বিদ্যমান থাকে যা মানুষের ষ্ট্রোক হওয়ার ভয়াবহতাকে ৪০% কমিয়ে দেয়।
- খেজুরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল, যা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে ৩২৪ মিলিগ্রাম ক্যালরি থাকে। ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে, তাই খেজুর শিশুদের জন্যও অনেক উপকারী একটি ফল।
- খেজুরে রয়েছে ৭৭.৫% কার্বহাইড্রেট, যা অন্যান্য খাদ্যের বিকল্প শক্তি হিসেবে কাজ করে। ক্ষুধা নিবারণের বিকল্প খাদ্য হিসেবে আমরা ২-৪টি খেজুর খেয়ে এক গ্লাস পানি পান করতে পারি।খেজুরে রয়েছে ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ যা হাড়, দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ভালো রাখতে সহয়তা করে। আয়রনের পরিমাণও রয়েছে খেজুরে। তাই রক্তস্বল্পতা ও শরীরের ক্ষয়রোধ করতে খেজুরের রয়েছে বিশেষ গুণ।
আজওয়া খেজুর এর গুন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারে খেজুর খেতেন। খেজুরের মধ্যে মদিনার আজওয়া খেজুর উৎকৃষ্টমানের। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক পছন্দ করতেন আজওয়া খেজুরের। এই খেজুরের অনেক উপকারীতার কথাও তিনি বলেছেন হাদিসে। এখানে এখানে আজওয়া খেজুরের উপকারিতা-সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের ফল এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে। (তিরমিজিঃ ২০৬৬)
হজরত সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও জাদুটোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারিঃ ৫৭৬৮)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘মদিনার উঁচু ভূমির আজওয়া খেজুরে আরোগ্য রয়েছে।’ অথবা তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে এই খেজুর আহার করা বিষনাশক (প্রতিষেধক)।’ (মুসলিম: ৫১৬৮)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘সকালে সবার আগে (খালি পেটে) (মদিনার) উঁচু ভূমির আজওয়া খেজুর খেলে তা (সর্বপ্রকার) জাদু অথবা বিষক্রিয়ার আরোগ্য হিসেবে কাজ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৫৯২) এখানে উঁচু ভূমি বলতে বোঝানো হয়েছে মদিনার পূর্ব দিকের কয়েক মাইল দূরের কয়েকটি গ্রাম।
হজরত সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তাঁর হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তাঁর শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, ‘তুমি হৃদ্রোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও।
কেননা, সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তা দিয়ে তোমার জন্য সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়।’ (আবু দাউদ: ৩৮৩৫)
উরওয়া (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) পরপর সাত দিন সাতটি আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালের উপবাস ভাঙার অথবা এই অভ্যাস তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২৩৯৪৫)
হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২)
আমরা কেন এত গুরুত্বের সঙ্গে খেজুর খাই। মিষ্টি মধুর ছোট এই ফলটির গুণের কথা আমরা হয়তো অনেকেই জানি। হাদিসে পাকে এসেছে। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বোখারি ও মুসলিম)
সুতরাং পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং হাদিসের নির্দেশনায় খেজুর মানুষের জন্য অনেক উপকারী। খেজুরের পুষ্টি গুণ কথিত আছে যে, বছরে যতগুলো দিন আছে, খেজুরে তার চেয়েও বেশি গুণ রয়েছে। খেজুর যেমনি সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর ফল। খেজুর খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ অনেক। যেমন খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর। খেজুরে সুগারের পরিমাণ এত বেশি থাকে।
যে এক কামড়েই অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজ, ম্যাগনেশিয়াম ও সুক্রোজ থাকে। যে কারণে খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায়। সারাদিন উপোস করে শরীরে ক্লান্তি আসে, তা দূর করে এনার্জি জোগাতে সাহায্য করে খেজুর।
খেজুরে হজম ভালো হয়
রোজা রাখলে সাধারণত অ্যাসিডিটি হয়। যার থেকে অস্বস্তি হতে থাকে। খেজুর শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বশে রেখে অস্বস্তি কমায়। সারাদিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে।তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে তা পৌষ্টিকতন্ত্রের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। খেজুর শরীরে উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে হজম ভালো হয়।
তিনি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি করে খেজুর খেয়ে নাস্তা করতেন। রমযানের রোযায় সকল মুমিন মুসলমানদেরকে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতে বলতেন। একবার তিনি বলেছিলেন কারো বাড়িতে যদি অল্প কিছু খেজুর থাকে তবে তাকে গরীব বলা যাবে না।
তিনি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি করে খেজুর খেয়ে নাস্তা করতেন। রমযানের রোযায় সকল মুমিন মুসলমানদেরকে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতে বলতেন। একবার তিনি বলেছিলেন কারো বাড়িতে যদি অল্প কিছু খেজুর থাকে তবে তাকে গরীব বলা যাবে না।
খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নত
খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নত। খেজুরবিহীন বাড়ির পরিবার যেন ক্ষুধার্ত পরিবার। খেজুর হলো জাদু ও বিষ প্রতিরোধক। মদিনার খেজুর হলো, সবচেয়ে উত্তম খেজুর। বিশেষ করে, সর্বোত্তম খেজুর হলো ‘আজওয়া খেজুর’। তা ছাড়া প্রতিদিনের ইফতারের সঙ্গে খেজুর খাওয়া যেমন একদিকে সুন্নত, অপরদিকে দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য ঘাটতির চাহিদা পরিপূরক।
ইফতারের বিশেষ আয়োজন
খেজুরের পুষ্টিগুণের কারণে এ ফলটি অনেক জনপ্রিয়। এটি স্বাস্থ্যসম্মত ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি খাবার। হাদিস শরিফেও খেজুর দিয়ে ইফতার করার নির্দেশ রয়েছে। হজরত সালমান ইবনে আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তাতে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে।’ (মেশকাত ১৮৯৩)
আরেকটি হাদিসে রয়েছে, আনাস বিন মালেক (রা.)রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি ৬৩২)
খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা
খেজুর শুধু রোজার ইফতারে নয়, সারা বছরই আমাদের পছন্দের খাদ্য তালিকায় থাকতে পারে। প্রথমত হাদিসের অনুসরণে খেজুর দিয়ে ইফতার করা। দ্বিতীয়ত খেজুরের ভেষজগুণকেও উপেক্ষা করা যায় না। তাই খেজুর হতে পারে ইফতারের প্রধান উপাদান। সুতরাং খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা তা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
- কয়েকটি খেজুরই সাময়িক ক্ষুধা নিবারণে সহায়তা করে।
- খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকায় দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী, সামান্য পরিশ্রমেই যারা পেরেশান হয়ে যান, ইফতারে খেজুর খেলে তাদের দুর্বলতা কেটে যায় এবং রোজা রাখা সহজ হয়।
- শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের স্বাভাবিকভাবে রোজা রাখা সহজ হয়।
- হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ক্ষুধামন্দা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে খেজুর বিশেষ উপকারী।
- খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী। গ্যাসের জন্যও উপকার।
- রোজাদারের পেট খালি থাকায় শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খেজুর সেটা দ্রুত পূরণে সাহায্য করে।
শেষ কথাঃ
সম্মানিত পাঠক বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি ছিল। খেজুরের গুনাগুন সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য সম্পর্কে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খোদা নিবারণে এবং দৈহিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাই আপনাদেরকে অনুরোধ করব আর্টিকেলটি গুরুত্ব সহকারে পড়বেন এবং অন্যদেরকে পড়ার জন্য উৎসাহিত করবেন।
এই প্রত্যাশায় এবং আপনাদের সুস্থতা দীর্ঘ আয়ু কামনা করে এর গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি এখানেই শেষ করছে আল্লাহ পাক আপনাদের সবাইকে ভাল রাখুক সুস্থ রাখুক আল্লাহ হাফেজ।