পেঁয়াজের বৈশিষ্ট্য ও গুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
দৈনন্দিন জীবনে কিছু উপাদানের আলোচনাপ্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন পেঁয়াজের বৈশিষ্ট্য ও গুণ সম্পর্কে তাই আজকের
আর্টিকেলে পেঁয়াজের বৈশিষ্ট্য ও গুণ এর কিছু ভালো ও কিছু খারপ দিক তুলে ধরার
চেষ্টা করছি। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক উপকারে আসবে।
আমরা পেঁয়াজ খায় কিন্তু জানিনা এই পেঁয়াজ খেলে আমাদের দেহের কি উপকার ও কি
অপকারে আসে তা আমাদের অনেকেরই অজানা তাই আজকে আমরা পেঁয়াজের বৈশিষ্ট্য ও গুণ
সম্পর্কে কিছু অজানা বিষয় সম্পর্কে জানবো ইনশাল্লাহ।
পেজ সূচি পত্রঃ পেঁয়াজের বৈশিষ্ট্য ও গুণ সম্পর্কে কিছু ধারনা
তাহলে চলুন আমরা পেঁয়াজের বৈশিষ্ট্য ও গুণ বিষয়ক কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করি।
যা আমাদের দৈনন্দিন মানব দেহের জন্য উপকারিতা ও অপকারিতা হিসেবে সহায়ক হবে। শুধু
তাই নয়।পেঁয়াজ খেলে কাঁচা খাবেন না রান্না করে খাবেন। কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া
শরীয়াতের কি হুকুম সেই ব্যাপারে আমরা জানতে চলেছি। তাহলে আর দেরি না করে মূল
বিষয় আলোচনা করা যাক।
পেঁয়াজ মূলত কি?
আমরা অবশ্যই অবগত আছি। যে পেঁয়াজ মূলত কোন শাকসবজি কিংবা সুস্বাদু ফল নয়। এটি
একটি মশলা জাতীয় উদ্ভিদ। আর এটি যুগ যুগ ধরে মানুষ কাঁচা বা রান্না করে খেয়ে
আসছে। যা তরকারি রান্না করার লক্ষ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ। এর একটি
বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে। নামটি হচ্ছে (Allium Copa) যাহার নাম ১৭৫৩ সালে বিজ্ঞানী
ক্যারোলাস লিনিয়াস পিঁয়াজের বিবরণ ও বৈজ্ঞানিক নাম দিয়ে থাকেন।
আর পবিত্র কোরআনে তো ১৪০০ বছর আগে থেকেই এই কাঁচা পেঁয়াজের বিবরণ তুলে ধরা
হয়েছে। যেটি সারা বিশ্বের জন্য নিজস্ব রূপ হয়ে আছে। আর পেঁয়াজের ইতিহাস
সূরাতুল বাকারায় রয়েছে। যদি সম্ভব হয়। সূরাতুল বাকারা থেকে পড়ে ভালোভাবে বোঝার
চেষ্টা করবেন।
পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা
- আপনারা জেনে অবাক হবেন। পেঁয়াজ উদ্ভিদে রয়েছে, অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ উপাদান, যা নিয়মিত খেলে মানব দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- বাড়ে ক্যানসার এর মত ভয়ংকর রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
- এই পেঁয়াজ রয়েছে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম যা মুখের ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উদ্ভিদ।
- পেঁয়াজের পুষ্টিগুণ হজমীশক্তি বৃদ্ধি করতে দারুণ কাজ করে।
- পেঁয়াজ চুল, ত্বক ও রক্তের সঠিক চলাচলের গতি কার্যকর অনেক গুণে বাড়িয়ে মানব দেহর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
কাঁচা পেঁয়াজের উপকারিতা
- আপনি জেনে রাখুন কাঁচা পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করতে অনেক সাহায্য করে। আপনারা যারা রক্তচাপের সমস্যায় আছেন। তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খেতে পারেন।
- কাঁচা পেঁয়াজে জৈব সালফার থাকে বিধায় ঝাঁজালো একটা গন্ধ হয়। তবে এই জৈব সালফার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে অত্যান্ত ভূমিকা পালন করে। এর ফলে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও অনেকটা কমে যায়।
- কাঁচা পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার রয়েছে। কাঁচা পেঁয়াজে রয়েছে কুয়ারসেটিন ও জৈব সালফার। শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। যার ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরাও কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারবেন।
- কাঁচা পেঁয়াজে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এটি শরীরকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এবং সব সময় শরীরকে সতেজ রাখে।
কাঁচা পেঁয়াজের কি পরিমান অপকারিতা
আপনারা কি জানেন প্রতিটি জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও থাকে। সেগুলো আমরা
স্টেপ বাই স্টেপ জানবো। যেমন অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা পেঁয়াজ ও কিন্তু শরীরের জন্য
ভালো না। অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি করে শরীরকে ঝুকির দিকে নিয়ে যেতে পারে। শুধু
তাই নয় কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে শরীয়াত ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাত আদায়
করতে মসজিদে যাও নিষেধ। তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। যাতে করে
পেঁয়াজ খেয়ে মসজিদে না যাই।
কাঁচা পেঁয়াজ খেলে কি কি সমস্যা হতে পারে।
- কাঁচা পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে গুলোকোজ এবং ফ্ররুক্টোজ রয়েছে। এ ছাড়া এতে ফাইবারের পরিমাণও অনেক বেশি থাকায়, যা কেউ কেউ ভালোভাবে হজম করতে পারে না। এমন অবস্থায় অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেক গুনে বেড়ে যায়।
- আমদের যদি কোনো কারণে পেট সংক্রান্ত সমস্যা থেকে যায়। তাহলে পেঁয়াজ খাওয়া এড়িয়ে চলবো। তা নাহলে কাঁচা পেঁয়াজের কারণে হজমের সমস্যা আরও বেড়ে গিয়ে মানব দেহের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।
- পরিমাণের বেশি বা কম কাঁচা পেঁয়াজ খেলে মুখে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হয়। তাই কাঁচা পেঁয়াজ খেলেও খিয়াল রাখতে হবে। এবং খাওয়ার পর পর পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- কাঁচা পেঁয়াজ খেলে অনেক সময় বুকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এতে মুখের ভিতরে অম্বলের সমস্যা তৈরি তৈরি হয়ে অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে।
রান্না পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা
আপনারা কি জানেন রান্না বা সিদ্ধ পেঁয়াজ একটি প্রক্রিয়া এনজাইম গুলিকে ভেঙ্গে
ফেলে যা রাসায়নিক বিকৃতি করতে উৎসাহিত করে। একটি কম তীব্র স্বাদ তৈরি করে
রান্নার সুস্বাদ বাড়িয়ে দেয়।শুধু তাই নয়, বিভিন্ন স্তরের তাপ স্বাদের মাত্রা
নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাপ বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে উদ্বুদ্ধ করে যা
সবগুলোই পেঁয়াজের মৌলিক মেক-আপের সাথে মিশ্রণ করে।
পবিত্র কোরআনে পেঁয়াজ প্রসঙ্গ আলোচনা হয়েছে।
যখন বোকা নির্বোধ বনি ইসরাঈল গোত্ররা জান্নাতের খাবার ‘মান্না-সালওয়ার’ পরিবর্তে
যেসব খাবারের চাহিদা করেছিল, তার একটি ছিল পেঁয়াজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র
কোরআনে ইরশাদ করেন। আর যখন তোমরা বললে, ‘হে মূসা, আমরা এক খাবারের উপর কখনো ধৈর্য
ধরব না। সুতরাং তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট দো‘আ কর, যেন তিনি আমাদের জন্য
বের করেন।
আরো পড়ুনঃ কলা কেন খাবো কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ভূমি যে সব্জি, কাঁকড়, রসুন, মসুর ও পেঁয়াজ উৎপন্ন করে। তা সে বলল, ‘তোমরা কি যা
উত্তম তার পরিবর্তে এমন জিনিস গ্রহণ করছ। যা নিম্নমানের? তোমরা কোন এক নগরীতে
অবতরণ কর। তবে নিশ্চয় তোমাদের জন্য (সেখানে) থাকবে, যা তোমরা চেয়েছ। আর তাদের উপর
আরোপ করা হয়েছে।
লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য এবং তারা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হল। তা এই কারণে যে, তারা
আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার করত এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করত। তা এই
কারণে যে, তারা নাফরমানী করেছিল এবং তারা সীমালঙ্ঘন করত। (সুরা বাকারা আয়াত নং-
৬১)
আর এই আয়াতে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পেঁয়াজকে নিকৃষ্টতর বলার দ্বারা উদ্দেশ্য
হলো, জান্নাতের ‘মান্না-সালওয়া’র তুলনায় দুনিয়ার এসব খাবার একেবারেই নিকৃষ্ট। তবে
এর মানে এই নয় যে এসব খাবার মুসলমানদের জন্য বর্জনীয়। তবে হ্যাঁ, মসজিদে কিংবা
কোনো সমাবেশে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে।
কেননা এর মাধ্যমে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। যা অন্য মানুষ ও মসজিদে থাকা
ফেরেশতাদের জন্য কষ্টের মাধ্যম হয়ে পড়ে।
পবিত্র হাদিসে পেঁয়াজ প্রসঙ্গ
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রসুন বা পেঁয়াজ খায় সে যেন
আমাদের থেকে দূরে থাকে অথবা বলেছেন, সে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে আর নিজ
ঘরে বসে থাকে। (বুখারি, হাদিস নং- ৮৫৫)
তবে তরকারি বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পাকানো পেঁয়াজ খেলে যেহেতু তেমন দুর্গন্ধ
হয় না। তাই সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজ খেয়ে মসজিদে আসার আসার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই।
হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসের শেষাংশে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে
ব্যক্তি তা খায়, তা বলতে বোঝানো হয়েছে। (কাঁচা পেঁয়াজ) কে সে যেন তা পাকিয়ে বা
রান্না করে গন্ধমুক্ত করে ফেলে। (নাসায়ি হাদিস নং- ৭০৮)
তবে কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া ইসলামে হারাম না হলেও মাক্রু অপছন্দনীয়। তাই
কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন খেতে নিরুৎসাহিত্যকরা হয়। তবে রান্না করা পেঁয়াজ খেতে
শরিয়তে কোনো আপত্তি নেই। আর কেউ যদি কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন খায়, সে যেন মসজিদ বা
জনসমাগমস্থলে অবশ্যই তার মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে যায়, যাতে মুখ থেকে দুর্গন্ধ
বের না হয়।
কাঁচা পেঁয়াজের রস চুল লাগালে কি উপকার
কাঁচা পেঁয়াজের রস চুল লাগালে পেকে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক গুনে কমে যায়। কারণ, কাঁচা
পেঁয়াজের থাকা একধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা চুলের গোড়ায় হাইড্রোজেন
পার-অক্সাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে চুল পেকে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক
গুনে কমে যায়। তাহলে আপনাদের পাকা চুল যাদের রয়েছে। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে
দেখতে পারেন। আশা করি আপনার পাকা চুল না পাকতে একটু হলেও কমে যাবে।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে তাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য বিশেষ উপকারী একটি
উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলের কথাগুলো উপলব্ধি করে
সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে। জীবন চলার পথে ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে
বিশেষভাবে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
তাই আর্টিকেলটি পড়ে এবং সে অনুযায়ী চলার প্রত্যাশা রেখে এবং আপনাদের
সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত আজকের মত আর্টিকেল লেখা শেষ করছি। ধন্যবাদ আল্লাহ
হাফেজ