নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
সালাত আদায়ের নিয়ম-কানুন সমূহ
নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব না থাকলে নিজের জন্য কত বড় ক্ষতি আপনি কি জানেন?
যদি না জেনে থাকেন। তাহলে আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য আর আমি এই আর্টিকেলে নামাজ
আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে যাচ্ছি।
আপনারা যারা নিজের অবহেলায় নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। আজকের আর্টিকেলে বা পোস্টে বিশেষ নজর দিয়ে পড়লে আশা করা যায়। নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্বের প্রতি আগ্রহ আসবে ইনশাআল্লাহ, তাহলে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব আলোচনা
নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব।
ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি আর পাঁচটির দ্বিতীয় তম এবং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
ইবাদত বা আমল হচ্ছে নামাজ। ঈমানের পর নামাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল বা ইবাদত।
আল্লাহ মুমিন নর-নারীর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এবং পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজের জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন।
মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো যথাযথ সময়ে ফরজ নামাজ আদায় ও নামাজ আদায়ের বিশেষ
গুরুত্ব দেওয়া। তাই নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক পবিত্র
কোরআনে অসংখ্য জায়গায় ঘোষণা দিয়েছেন। তাই নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা
দ্বীনদার মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।
নামাজ আদায়ে কোরআনের আয়াত সমূহ।
الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ مِمَّا
رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ (সুরা বাকারা আয়াত নং-৩) অর্থঃ- অদৃশ্যের প্রতি ঈমান
আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে।
এই আয়াতে ঈমান বিল গইব বা অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস হল, রাসূল (সাঃ) যে হিদায়াত ও
শিক্ষা নিয়ে এসেছিলেন। সে সমস্ত বিষয় আন্তরিকভাবে মেনে নেওয়া। ইকামাহ বা
প্রতিষ্ঠা অর্থ হল, শুধু নিজে নামাজ আদায় করা নয়। বরং নামাযকে সকল বিষয়বস্তু ঠিক
করা। নামাজে সব ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব পরিপূর্ণভাবে আদায় করা। এতে
সবসময় সুদৃঢ় থাকা এবং এর ব্যবস্থাপনা সুদৃঢ় করা সবগুলোকেই বুঝায়।
আরো পড়ুনঃ শাবান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা
আর এসব প্রত্যেক নামাযের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এককথায় নামাযে অভ্যস্ত হওয়া, তা
শরীয়াত বা ইসলামের নিয়ম মতো আদায় করা এবং নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব এর সকল
নিয়ম যর্থাথভাবে পালন করা। আহকাম ও আরকানসমূহ পূর্ণরূপে পালন করে নিয়মিত নামাজ
আদায় করা। ইনফাক বা ব্যয় দ্বারা ফরয যাকাত, ওয়াজিব সদাকা এবং নফল দানও বোঝানো
হয়েছে।
وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ
(সুরা বাকারা আয়াত নং-৪৩) অর্থঃ- আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং
রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর।
আর ইকামাহ অর্থ হল, সোজা করা, স্থায়ী রাখা। সাধারণ ভাবে উদাহরণ হলঃ যেসব খুঁটি
দেয়াল বা গাছ প্রভৃতির আশ্রয়ে সোজাভাবে দাঁড়ানো থাকে, সেগুলো স্থায়ী থাকে এবং পড়ে
যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এজন্য এটা স্থায়ী ও স্থিতিশীলকরণ অর্থেও ব্যবহৃত
হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে যাবতীয় শর্তাদি ও নিয়মাবলী রক্ষা করে নামায আদায়ের বিশেষ
গুরুত্ব করা।
وَاسۡتَعِيۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَالصَّلٰوةِ ؕ وَاِنَّهَا لَكَبِيۡرَةٌ اِلَّا
عَلَى الۡخٰشِعِيۡنَۙ (সুরা বাকারা আয়াত নং-৪৫) অর্থঃ- তোমরা ধৈর্য্য ও সলাতের
মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর, আর তা আল্লাহভীরু ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য সকলের
কাছে নিশ্চিতভাবে কঠিন।
ধৈর্য ধারণ করে ভোগ-বিলাস ও প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে বশীভূত করে ফেলো। তাতে
সম্পদপ্রীতি কমে যাবে। সাহায্য চাওয়ার পদ্ধতি ধৈর্য ও নামায। বিনয় অর্থ অধিকারের
ক্ষেত্রে ইতর-ভদ্র নির্বিশেষে সবার সঙ্গে একই রকম ব্যবহার করা এবং আল্লাহ যা ফরয
করেছেন।
তা পালন করতে যেয়ে হৃদয়কে শুধু তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়া। ইচ্ছাকৃত কৃত্রিম
উপায়ে বিনয়ীদের রূপ ধারণ করা শয়তান ও প্রবৃত্তির প্রতারণা ফাঁদ মাত্র। আর তা
অবশ্যই নিন্দনীয়। অবশ্য তা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলে সেটি ক্ষমা যোগ্য।
وَّاَقِيۡمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّکٰوةَ ؕ ثُمَّ تَوَلَّيۡتُمۡ اِلَّا
قَلِيۡلًا مِّنۡکُمۡ وَاَنۡـتُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ (সুরা বাকারা আয়াত নং-৮৩) আর
নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দিবে। কিন্তু অল্প সংখ্যক লোক ছাড়া তোমরা
অগ্রাহ্যকারী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে।
وَاَقِيۡمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّکٰوةَ ؕ وَمَا تُقَدِّمُوۡا
لِاَنۡفُسِكُمۡ مِّنۡ خَيۡرٍ تَجِدُوۡهُ عِنۡدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا
تَعۡمَلُوۡنَ بَصِيۡرٌ (সুরা বাকারা আয়াত নং-১১০) এবং তোমরা নামায কায়িম কর এবং
যাকাত দাও এবং যা কিছু সৎ কার্যাবলী তোমরা স্বীয় আত্মার জন্যে আগে পাঠাবে, তোমরা
তা আল্লাহর নিকট পাবে, তোমরা যা কিছু করছো নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’ দেখছেন।
يٰٓاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِيۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَالصَّلٰوةِ ؕ
اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِيۡنَ (সুরা বাকারা আয়াত নং-১৫৩) হে মু’মিনগণ! ধৈর্য
ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।
وَاَقَامَ الصَّلٰوةَ وَاٰتَى الزَّکٰوةَ ۚ وَالۡمُوۡفُوۡنَ بِعَهۡدِهِمۡ اِذَا
عٰهَدُوۡا ۚ وَالصّٰبِرِيۡنَ فِى الۡبَاۡسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيۡنَ
الۡبَاۡسِؕ اُولٰٓٮِٕكَ الَّذِيۡنَ صَدَقُوۡا ؕ وَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ
الۡمُتَّقُوۡنَ (সুরা বাকারা আয়াত নং-১৭৭) এবং নামায কায়িম করবে ও যাকাত দিতে
থাকবে, ওয়া‘দা করার পর স্বীয় ওয়া‘দা পূর্ণ করবে এবং অভাবে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংকটে
ধৈর্য ধারণ করবে, এ লোকেরাই সত্যপরায়ণ আর এ লোকেরাই মুত্তাকী।
حَافِظُوۡا عَلَى الصَّلَوٰتِ وَالصَّلٰوةِ الۡوُسۡطٰى وَقُوۡمُوۡا لِلّٰهِ
قٰنِتِيۡنَ (সুরা বাকারা আয়াত নং-২৩৮) তোমরা সলাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে
মধ্যবর্তী সলাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও।
الصّٰلِحٰتِ وَاَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ لَهُمۡ اَجۡرُهُمۡ
عِنۡدَ رَبِّهِمۡۚ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُوۡنَ (সুরা
বাকারা আয়াত নং-২৭৭) নামায কায়িম করে এবং যাকাত আদায় করে, তাদের জন্য তাদের
প্রতিপালকের নিকট সওয়াব নির্ধারিত আছে। তাদের কোন ভয় নেই, তারা চিন্তিতও না।
الۡمَلٰٓٮِٕكَةُ وَهُوَ قَآٮِٕمٌ يُّصَلِّىۡ فِى الۡمِحۡرَابِۙ اَنَّ اللّٰهَ
يُبَشِّرُكَ بِيَحۡيٰى مُصَدِّقًۢا بِكَلِمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ وَسَيِّدًا
وَّحَصُوۡرًا وَّنَبِيًّا مِّنَ الصّٰلِحِيۡنَ (সূরাহ আলে ইমরান আয়াত নং-৩৯)‘যখন
তিনি কামরার ভেতরে নামাযে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাঁকে ডেকে বললেন যে,
আল্লাহ আপনাকে ইয়াহ্ইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন।
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقۡرَبُوا الصَّلٰوۃَ وَاَنۡتُمۡ سُکٰرٰی
(সূরাহ নিসা আয়াত নং-৪৩) হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নেশাগ্রস্ত থাক, তখন সালাতের
কাছেও যেয়ো না,
اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ قِیۡلَ لَہُمۡ کُفُّوۡۤا اَیۡدِیَکُمۡ وَاَقِیۡمُوا
الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ (সূরাহ নিসা আয়াত নং-৭৭) তুমি কি তাদেরকে দেখনি,
(মক্কী জীবনে) যাদেরকে বলা হত, তোমরা নিজেদের হাত সংযত রাখ, সালাত কায়েম কর ও
যাকাত দাও।
وَاِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِی الۡاَرۡضِ فَلَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَقۡصُرُوۡا
مِنَ الصَّلٰوۃِ ٭ۖ اِنۡ خِفۡتُمۡ اَنۡ یَّفۡتِنَکُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ؕ
اِنَّ الۡکٰفِرِیۡنَ کَانُوۡا لَکُمۡ عَدُوًّا مُّبِیۡنًا (সূরাহ নিসা আয়াত
নং-১০১) তোমরা যখন যমীনে সফর কর এবং তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফিরগণ তোমাদেরকে
বিপন্ন করবে, তখন সালাত কসর করলে তাতে তোমাদের কোনও গুনাহ নেই। নিশ্চয়ই কাফিরগণ
তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
وَاِذَا کُنۡتَ فِیۡہِمۡ فَاَقَمۡتَ لَہُمُ الصَّلٰوۃَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَۃٌ
مِّنۡہُمۡ مَّعَکَ وَلۡیَاۡخُذُوۡۤا اَسۡلِحَتَہُمۡ (সূরাহ নিসা আয়াত নং-১০২) এবং
(হে নবী!) তুমি যখন তাদের মধ্যে উপস্থিত থাক ও তাদের নামায পড়াও, তখন (শত্রুর
সাথে মুকাবিলার সময় তার নিয়ম এই যে,) মুসলিমদের একটি দল তোমার সাথে দাঁড়াবে এবং
নিজেদের অস্ত্র সাথে রাখবে।
فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ قِیٰمًا وَّقُعُوۡدًا
وَّعَلٰی جُنُوۡبِکُمۡ ۚ فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ
اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا (সূরাহ
নিসা আয়াত নং-১০২) যখন তোমরা সালাত আদায় করে ফেলবে, তখন আল্লাহকে (সর্বাবস্থায়)
স্মরণ করতে থাকবে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শোওয়া অবস্থায়ও। অতঃপর যখন (শত্রুর দিক থেকে)
নিরাপত্তা বোধ করবে, তখন সালাত যথারীতি আদায় করবে। নিশ্চয়ই সালাত মুসলিমদের এক
অবশ্য পালনীয় কাজ নির্ধারিত সময়ে।
اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ یُخٰدِعُوۡنَ اللّٰہَ وَہُوَ خَادِعُہُمۡ ۚ وَاِذَا
قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی ۙ یُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَلَا
یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰہَ اِلَّا قَلِیۡلًا (সূরাহ নিসা আয়াত নং-১৪২) এ মুনাফিকরা
আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজী করে, অথচ আল্লাহই তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছেন। তারা
যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসতার সাথে দাঁড়ায়। তারা মানুষকে দেখায় আর আল্লাহকে
অল্পই স্মরণ করে।
لٰکِنِ الرّٰسِخُوۡنَ فِی الۡعِلۡمِ مِنۡہُمۡ وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ
بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَمَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ وَالۡمُقِیۡمِیۡنَ
الصَّلٰوۃَ وَالۡمُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ
الۡاٰخِرِ ؕ اُولٰٓئِکَ سَنُؤۡتِیۡہِمۡ اَجۡرًا عَظِیۡمًا (সূরাহ নিসা আয়াত
নং-১৪২) অবশ্য তাদের (অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের) মধ্যে যারা জ্ঞানে পরিপক্ক ও মুমিন,
তারা তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতে ঈমান রাখে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল
করা হয়েছিল তাতেও। (সেই সকল লোক প্রশংসাযোগ্য), যারা সালাত কায়েমকারী, যাকাতদাতা
এবং আল্লাহ ও আখিরাত দিবসে বিশ্বাসী। এরাই তারা, যাদেরকে আমি মহা প্রতিদান দেব।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ
وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ
وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ وَإِن
كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاء أَحَدٌ مَّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ
أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاء فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا
طَيِّبًا فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ
لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ
نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ (সূরাহ মায়িদাহআয়াত
নং-৬-১২-৫৫-৫৮-৯১-১০৬)
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই
পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে
নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায় খানা
সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর,
অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ,
স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায়
ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয়
নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।
- (সূরা আনআম আয়াত নম্বর- ৭২)
- (সূরা আনআম আয়াত নম্বর- ৯২)
- (সূরা আনআম আয়াত নম্বর- ১৬২)
- (সূরা আরাফ আয়াত নং-১৭০)
- (সূরা আনফাল আয়াত নং-০৩)
- (সূরা আনফাল আয়াত নং-৩৫)
- (সূরা তওবা আয়াত নং-০৫)
- (সূরা তওবা আয়াত নং-১১)
- (সূরা তওবা আয়াত নং-১৮)
- (সূরা তওবা আয়াত নং-৫৪
- (সূরা তওবা আয়াত নং-৭১)
- (সূরা ইউনুস আয়াত নং-৮৭)
- (সূরা হুদ আয়াত নং-৮৭)
- ( সূরা হুদ আয়াত নং-১১৪)
- (সূরা রাদ আয়াত নং-২২)
- (সূরা ইব্রাহীম আয়াত নং-৩১-৩৭-৪০)
- (সূরা ইসরা আয়াত নং-৭৮)
- (সূরা ইসরা আয়াত নং-১১০)
- (সুরা মারিয়াম আয়াত নং-৩১-৫৫-৫৯)
- (সূরা ত্বহা তোহা আয়াত নং-১৪-১৩২)
- (সূরা আম্বিয়া আয়াত নং-৭৩)
- (সূরা হজ্জ আয়াত নং-৩৫)
- (সূরা হজ্জ আয়াত নং-৪১-৭৮)
- (সূরা মুমিনুন আয়াত নং- ০২)
- (সূরা মুমিনুন আয়াত নং- ০৯)
- (সূরা নূর আয়াত নং-৩৭-৩৭-৫৬-৫৮)
- (সূরা নামল আয়াত নং-৩)
- (সূরা আনকাবুত আয়াত নং-৪৫)
- (সূরা রুম আয়াত নং-৩১)
- (সূরা লোকমান আয়াত নং-০৪-১৭)
- (সূরা আহযাব আয়াত নং-৩৩)
- (সূরা ফাতিরআয়াত নং-১৮-২৯)
- (সূরা মুজাদলাহ আয়াত নং-১৩)
- (সূরা জুমাআ আয়াত নং-৯-১০)
- (সূরা মাআরিজ আয়াত নং-২২-২৩-৩৪)
- (সূরা মোজাম্মিলআয়াত নং-২০)
- (সূরা মুদ্দাসসির আয়াত নং-৪৩)
- (সূরা কিয়ামাহ আয়াত-৩১)
- (সূরা আলা আয়াত নং-১৫)
- (সূরা আলাক আয়াত নং-১০)
- (সূরা বাইয়িনাহ আয়াত নং-০৫)
- (সূরা মাউন আয়াত নং-৪-৫)
- (সূরা কাওসার আয়াত নং-৩৩)
নামাজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন মেরাজে গমন করেন। আল্লাহ তায়ালা আল্লাহ তাআলার দিদার
পাওয়ার লক্ষ্যে তখন কোনো প্রকার মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি রাসুলুল্লাহকে (সাঃ)
নামাজের দায়িত্ব দেন। এতে নামাজের মহত্ত্ব, মর্যাদা ও গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটে। এ
সালাতের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করে। আল্লাহর সঙ্গে মানুষের
সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় ও মজবুত হয়।
আরো পড়ুনঃ রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা
ইহকাল ও পরকালের মুক্তির পথ হয় নামাজ। নামাজ ব্যক্তি, পরিবার, সামাজিক ও
রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ ফিরিয়ে বিশেষ ভূমিকা
রাখে। আর গড়ে ওঠে সামাজিক ঐক্যতা। নামাজের মাধ্যমে সগিরা গুনাহগুলো থেকে বান্দা
বেঁচে থাকতে পারে। আল্লাহর একত্ববাদ ও মুহম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়ার
পর নামাজ হলো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সবকিছুর মূল হলো ইসলাম, আর ইসলামের খুঁটি হল নামাজ। আর
ইসলামের শীর্ষ পীঠ হলো জিহাদ (তিরমিজিঃ ৩৫৪১) নামাজ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ও
সর্বোত্তম আমল। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা অটুট ও অবিচল থাকো, গণনা করো
না, আর মনে রাখবে। তোমাদের সর্বোত্তম আমল হচ্ছে নামাজ। একজন মুমিন অবশ্যই সব সময়
অজু সংরক্ষণ করতে থাকে (ইবনে মাজাহঃ ২৭৩)
নামাজ হলো নূর। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক আর
আলহামদুলিল্লাহ পাল্লাকে সম্পূর্ণ করে, সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ আসমান ও
জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পূর্ণ করে। নামাজ হলো নূর-আলো। দান-খয়রাত প্রমাণ
স্বরূপ। ধৈর্য উজ্জ্বলতা আর কোরান তোমার পক্ষে প্রমাণ অথবা তোমার বিপক্ষে প্রমাণ
(মুসলিম: ৩২৭)
নামাজ আল্লাহর নৈকট্য ও উচ্চ-মর্যাদা লাভের উপকরণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে যখন সে সিজদারত থাকে। সুতরাং তোমরা সিজদা
অবস্থায় বেশি বেশি প্রার্থনা করো (মুসলিম: ৭৪৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমার মধ্যবর্তী
গুনাহসমূহের প্রায়শ্চিত্ত করে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়
(মুসলিমঃ ৩৪৪)
সর্বপ্রথম বান্দার নামাজ আদায়ের হিসাব নেয়া হবে। তাতে হয় সে মুক্তি পাবে অথবা
ধ্বংস হবে। সফলতা ও সম্মানিত স্থান জান্নাতে প্রবেশকে আল্লাহ তায়ালা নামাজের উপরই
স্থাপন করেছেন। তিনি বলেন,মু’মিনরা সফলকাম হয়ে গেছে। যারা নিজেদের নামাযে বিনয়
নম্রতা অবলম্বন করে। (সূরা মুমিন আয়াত নম্বর-১-২)
নামাজের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা।
বান্দার নামাজের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে। বান্দা প্রতিদিন সিজদা দিয়ে
আল্লাহকে বুঝাতে চাইছে যে, বান্দা শুধুমাত্র কেবলমাত্র একমাত্র আল্লাহর কাছেই
আত্মসমর্পণ করছে। এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ ও মাবুদ নেই। এমনকি আল্লাহ
ছাড়া আর কারো আনুগত্য করে না। একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই মহান মাবুদের নিকটবর্তী
হওয়া যায়। একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই বান্দা তার প্রভুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার
সুযোগ পায়।
নামাজের বিশেষ শিক্ষার উদ্দেশ্য।
اِنَّنِیۡۤ اَنَا اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدۡنِیۡ ۙ وَ اَقِمِ
الصَّلٰوۃَ لِذِکۡرِیۡ (সুরা ত্বহা আয়াত নং- ১৪) ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া
কোন (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।
এখানে বলা হয়েছে, মুসা (আঃ) এর মূল দায়িত্ব হলো, মানুষকে তাওহিদমুখী করা। এক
আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস এবং শুধু তাঁর উদ্দেশে ইবাদত করা জরুরি।
এ আয়াতে মুসা (আঃ) কে আল্লাহর স্মরণে নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। মুসা (আঃ) এর শরিয়তেও
নামাজ বা সালাত ছিল, যদিও তার পদ্ধতি মুহাম্মদ (সাঃ) এর শরিয়তের সঙ্গে মিল থাকা
জরুরি নয়। এখানে সালাতের মূল উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, সালাত আদায়
করো, যাতে আমাকে স্মরণ করতে পারো। অর্থাৎ বান্দা যেন আল্লাহ থেকে পথভ্রষ্ট না হয়ে
যায়। সেটি নিশ্চিত করে সালাত।
নামাজের বিশেষ স্তর।
মুমিন মুসলমানের জীবনের বিশেষ অংশ হচ্ছে নামাজ। নবিজি (সাঃ) বলেছেন, ‘নামাজ হচ্ছে
দীনের মূলভিত্তি। অতএব যে নামাজ কায়েম করল, সে মূলত দীন কায়েম করল। আর যে নামাজ
ধ্বংস করল সে মূলত দীনকে ধ্বংস করল। (তিরমিজিঃ-২৬১৬ ইবনে মাজাঃ- ৩৯৭৩)
সুতরাং
নামাজ আদায়ে খুব সতর্ক থাকা চাই। মানুষের নামাজের স্তর ও প্রকার সম্পর্কে অসংখ্য
হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এসব হাদিস একত্র করে বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম
জাওজিয়া (রহ.) নামাজিদের পাঁচটি স্তর উল্লেখ করেছেন।
প্রথম স্তর প্রথম শ্রেণির নামাজি হচ্ছে ‘মুহাকাব’। অর্থাৎ অনিয়মিত নামাজ
আদায়কারী। সুযোগ হলে নামাজ পড়েন, কিংবা নামাজ ছেড়ে দেন। কখনো জুমার নামাজে বা
বিভিন্ন ওয়াক্তিয়া নামাজে তাদের উপস্থিতি দেখা যায়। আবার নামাজের সময় বাইরে
ঘোরাফেরা করতেও দেখা যায়। এদের অন্তরে নামাজের গুরুত্ব নেই।
এরা নামাজ আদায়ের কারণে পরকালে কিছু শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেলেও জাহান্নামে
প্রবেশ করতে হবে। অবশ্য ঈমান এনে থাকলে নির্ধারিত শাস্তি শেষ করে একসময় তারা
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারেন।
দ্বিতীয় স্তর এ প্রকার মুসল্লি হলো ‘মুহাসাব’। অর্থাৎ নিয়মিত নামাজ পড়েন ঠিকই,
কিন্তু নামাজে কোনো মনোযোগ থাকে না। মনোযোগ আনার চেষ্টাও করে না। শুধু নামাজ শুরু
করে আর শেষ করে। নামাজের মাঝখানে কী পড়েছে আর কী করেছে তার কিছুই সে বুঝতে
পারেনা। দৈনিক পাঁচবার শুধু নামাজের সময় অঙ্গসঞ্চালন করেন।
বাহ্যিক রোকন ও হক আদায় করেন বটে নফসকে আয়ত্তে এনে তার ওয়াসওয়াসা দূর করতে অনিহা
প্রকাশ করে। তবে বলা যেতে পারে এই শ্রেণির নামাজির শরীর নামাজ পড়ে, তার অন্তর
সালাত আদায় করেনা। এরা নামাজের প্রতি উদাসীনতার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হবে। দুঃখজনক
সত্য যে সমাজে এই শ্রেণির মুসল্লিই সবচেয়ে বেশি।
তৃতীয় স্তর এরা হচ্ছেন ‘মুফাফফার আনহু’। অর্থাৎ এ প্রকারের মুসল্লিরা সব সুন্নত ও
রুকন ঠিকঠাক আদায় করেন। অন্তরের ওয়াসওয়াসা ও নফসের কুমন্ত্রণা দূর করতেও চেষ্টা
করেন। এ শ্রেণির মুসল্লিরা সব রুকন ও শর্ত আদায়ের পাশাপাশি মনোযোগ ধরে রাখার অনেক
চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু শতভাগ মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম হতে পারেন না।
কখনো মনোযোগ আসে, কখনো অন্যমনস্ক হয়ে যায়। এরা হলো সেই শ্রেণির মুসল্লি, যাদের
আল্লাহ তায়ালা নামাজের উসিলায় তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। এই শ্রেণির নামাজি
নামাজের মাধ্যমে দায়মুক্ত হবেন।
চতুর্থ স্তর এই শ্রেণি হচ্ছে ‘মুসাব’। অর্থাৎ যারা নামাজের সব হক, রুকন ও সুন্নত
আদায় করেন, অন্তরকেও তার সুরক্ষা ও হক আদায়ে লিপ্ত রাখেন। যেন সামান্য সওয়াবও
নষ্ট না হয়। যথাযথভাবে নামাজ আদায়ে চেষ্টার সেরাটা ব্যয় করেন।
এসব মুসল্লি নামাজের পুরো সময়টাতে একাত্মতা ও রবের ইবাদতে মশগুল থাকেন। তার নামাজ
আদায় করা আল্লাহ দেখছেন এটি বারবার মনে জাগ্রত করেন। এই শ্রেণি নামাজের বিনিময়ে
যথেষ্ট সওয়াব পাবেন।
পঞ্চম স্তর এটা হচ্ছে নামাজিদের সর্বোচ্চ স্তর। তাদের বলা হয় ‘মুকাররাব’। অর্থাৎ
বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত। নবিজি (সাঃ) যেমন বলেছেন, ‘নামাজ আমার চোখের শীতলতা। এ
প্রকারের মুসল্লিরা অন্তরের সুখ-তৃপ্তি ও আনন্দ নামাজের মাধ্যমে পূর্ণ
করেন।
নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছ থেকে পার্থিব ও অপার্থিব সব চাহিদা পূরণ করেন। যারা
সালাত কে নিজের চোখের শীতলতা বানিয়েছেন। আর বলাই বাহুল্য, দুনিয়ায় যার চোখ
নামাজের দ্বারা শীতল হবে আখিরাতে তার চোখ রবের নৈকট্য পেয়ে শীতল হবে। সূত্রঃ
আল-ওয়াবিলুস সাইয়িব
নামাজ শিক্ষার বিশেষ কৌশল।
পরিপূর্ণভাবে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে খুশু-খুজু তথা নামাজে একাত্মতা খুবই জরুরি।
কিন্তু বহু নামাজি এ বিষয়ে উদাসীন। এর প্রতিকার কী? ইমাম গাজালি (রহ.) তার
বিখ্যাত ‘ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি ছয়টি
বিষয়ের কথা বর্ণনা করেন। যেগুলো থাকলে নামাজে মনোযোগী হওয়া যায় না।
নামাজে ‘হুজুরে দিল’ বা একাগ্র থাকা এটি নামাজের প্রাণ। এমনভাবে নামাজ পড়তে হবে
যেন আল্লাহ আমাকে দেখছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে
যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন।
(সহিহ বুখারিঃ- ৫০ মুসলিমঃ- ৮)
নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কল্পনা ধরে রাখার অনুশীলন করুন। যে ‘আল্লাহ
আমাকে দেখছেন। এভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে নামাজ শেষ করার চেষ্টা করুন। রাসুল (সাঃ)
বলেন, যে সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে একাগ্রতার সঙ্গে দুই
রাকাত নামাজ আদায় করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে- যে নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না),
তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় (অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে
দেওয়া হয়)। (সহিহ বুখারিঃ ১৯৩৪ নাসাঈঃ- ১৫১)
নামাজে যা কিছু তেলাওয়াত করা হয়। তা বিশুদ্ধ উচ্চারণে পড়ার চেষ্টা করুন। এটি
অন্তরের উপস্থিতিকে আরও দৃঢ় করে। অন্তত সুরা ফাতিহা ও তাসবিহগুলোর অর্থ বুঝে পড়ার
চেষ্টা করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,অথবা তার চেয়ে একটু বাড়াও। আর স্পষ্টভাবে ধীরে
ধীরে কুরআন আবৃত্তি কর। اَوۡ زِدۡ عَلَیۡهِ وَ رَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِیۡلًا
(সুরা মুজ্জাম্মিল আয়াত নং-৪) রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিটি সুরা তারতিলসহকারে
তেলাওয়াত করতেন। (সহিহ মুসলিমঃ-৭৩৩ তিরমিজিঃ-৩৭৩)
নামাজে আল্লাহর প্রতি ‘তাজিম’ বা ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন। কেননা আল্লাহ
তায়ালা তার বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও
বিনীতভাবে।’ (সুরা বাকারা : ২৩৮) কাজেই ধীরস্থিরতা অবলম্বন করুন। আবু কাতাদা
(রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিকৃষ্টতম চোর হলো সেই ব্যক্তি, যে
নামাজে চুরি করে।’ জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজে কীভাবে চুরি করে?
তিনি বলেন, ‘যে রুকু-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না।’ (মুসনাদ আহমাদ, মিশকাত : ৮৮৫)
নামাজে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহকে ভয় করুন। ভাবুন, এই নামাজই হয়তো আপনার জীবনের শেষ
নামাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি
তাকে বলেন, ‘যখন তুমি নামাজে দণ্ডায়মান হবে তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই
তোমার জীবনের শেষ নামাজ।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত : ৫২২৬)
নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ আশা করুন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, তোমরা
ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। وَ اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ
وَ الصَّلٰوۃِ ؕ وَ اِنَّهَا لَکَبِیۡرَۃٌ اِلَّا عَلَی الۡخٰشِعِیۡنَ (সুরা
বাকারা আয়াত নং- ৪৫) এই বিশ্বাস রাখুন, আল্লাহ আমার প্রতিটি প্রার্থনায় সাড়া
দিচ্ছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার
প্রভুর সঙ্গে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কীভাবে সে কথোপকথন করছে।’ (মুসতাদরাক
হাকেম, সহিহুল জামে হাদিসঃ-১৫৩৮)
নামাজে নিজের গুনাহর কথা চিন্তা করে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে
নিজের মাঝে ‘হায়া’ বা লজ্জা নিয়ে আসুন। দণ্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মতো মস্তক
অবনত রেখে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখুন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
(দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (তাফসিরে তবারিঃ ৯/১৯৭)
উপরের ছয়টি বিষয় অনুসরণ অনুকরণ করলে নামাজে মনোযোগ তৈরি হবে, ইনশাআল্লাহ। এক
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে অজু
করে এবং একনিষ্ঠতার সঙ্গে সুন্দরভাবে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ
আগের সব গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত
হয়। আর এ সুযোগ তার সারাজীবনের জন্য। (সহিহ মুসলিমঃ-২২৮)
প্রতিদিন মোট কত রাকাত নামাজ ফরজ?
প্রতিদিন একজন মুসলিমক নর নারীকে ৫ ওয়াক্ত সালাত বা নামাজ আদায় করতে হয়।
প্রথম নামাজের ওয়াক্ত ফজর দুই রাকাত সুন্নাত ও দুই রাকাত ফরজ
দ্বিতীয় নামাজের ওয়াক্ত যুহুর ৪ রাকাত সুন্নাত চার রাকাত ফরজ দুই রাকাত সুন্নত
দুই রাকাত নফল
তৃতীয় নামাজের ওয়াক্ত আসর চার রাকাত সুন্নাত চার রাকাত ফরজ
চতুর্থ নামাজের ওয়াক্ত মাগরিব দুই রাকাত সুন্নাত ৩ রাকাত ফরজ
পঞ্চম নামাজের ওয়াক্ত ইশা চার রাকাত ফরজ দুই রাকাত সুন্নাত তিন রাকাত বেতের
ফরজ নামাজ কত রাকাত
আমরা মুসলমান প্রতিনিয়ত ফরজ নামাজ আদায় করি এগুলো হলো ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজে মোট
১৭ রাকায়াত ফরজ পাওয়া যায়। যেমনঃ ফজরের নামাজ ২ রাকাত, যোহরের নামাজ ৪ রাকাত,
আসরের নামাজ ৪ রাকাত, মাগরিবের নামাজ ৩ রাকাত, এশার নামাজ ৪ রাকাত) পাশাপাশি অনেক
আলেম বিতর নামাজকেও ফরজ বা ওয়াজিব বলে দাবি করে থাকেন, আবার কিছু আলেম একে ফরজ
বা ওয়াজিব নয় বলে দাবি করে থাকেন।
فَسُبۡحٰنَ اللّٰهِ حِیۡنَ تُمۡسُوۡنَ وَ حِیۡنَ تُصۡبِحُوۡنَ অতএব তোমরা আল্লাহর
তাসবীহ কর, যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে এবং সকালে উঠবে। আসলেই পবিত্র কুরআনুল কারিমের
নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা সময়গুলো
সুস্পষ্ট করে দিয়ে বলেন-
সুতরাং তোমরা আল্লাহর তাসবিহ আদায় কর, যখন সন্ধ্যায় (মাগরিব ও ইশার নামাজ দ্বারা)
উপনীত হবে এবং সকালে (ফজর নামাজ দ্বারা) উঠবে। আর অপরাহ্নে (আসর নামাজ দ্বারা) ও
জোহরের সময়ে। আর আসমান ও জমিনে সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। (সুরা রূম আয়াত নং-
১৭-১৮)
শেষ কথাঃ
সম্মানিত মুসলমান ভাই ও বোনেরা আজকের আটিকেলে আলোচনা ছিল। নামাজ আদায়ের বিশেষ
গুরুত্ব সম্পর্কে তাই নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব যদি আমরা না দেই। তাহলে বিশেষ
ধরনের গুনাহ হয়ে যাবে আল্লাহ পাক আমাদের সঠিকভাবে সালাত আদায় করা তৌফিক দান
করুন আমীন ধন্যবাদ আল্লাহ হাফেজ