অজুর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
ধর্মীয় প্রসঙ্গে পোস্ট সমূহপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা ইসলামের বিধি বিধান মতাবেক অজু হল এমন একটি পন্থা যা মানব
শরিরের বিভিন্ন জায়গা ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি মাধ্যম। কিন্তু
আমরা অনেকে অজু করার কানুন জানিনা।
তাই আপনি কি জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি। অজু কি?
অজুর বিধান কি? অজু কেন করতে হয়। অজু করলে অপকারিতা কি অজু না করলে কি ক্ষতি চলুন
জেনে নেই।
পেজ সূচিপত্রঃ অজু কি? অজুর বিধান কি সম্পর্কিত
- অজু কি?
- অজুর বিধান কি?
- অজুর ওয়াজিব সম্পর্কে অল্প কিছু আলোচনা
- অজু করা যখন ওয়াজিব
- অজু করা যখন মুস্তাহাব
- অজুর ফজিলত সম্পর্কে
- অজুর উপকারিতা সম্পর্ক
- অজুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো
- অজু সংক্রান্ত হাদিস সমূহঃ
- পাত্রের বাইরে হাত ধোয়ার বিধান
- মাথা কতটুকু মাসেহ করতে হবে
- ওযুর শেষে মুস্তাহাব দোয়া সমূহ
- শেষ কথাঃ
অজু কি?
আমরা সকলে জানি অজু না করলে নামাজ হবে না। কারন মুসলমানদের নামাজের পূর্বে অযু
করে নেয়া বাধ্যতামূলক। আর এটাও জানি অজু-গোসল না করলে শরীর পাক সাব হয় না। এই
ব্যাপারে আল্লাহ পাক তার কোরআন মাজীদে জানিয়ে দিয়েছেন। কোরআনে আছে,
وَيَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِ ۗ قُلْ هُوَ اَذًىۙ فَاعْتَزِلُوا
النِّسَاۤءَ فِى الْمَحِيْضِۙ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتّٰى يَطْهُرْنَ ۚ فَاِذَا
تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ اَمَرَكُمُ اللّٰهُ ۗ اِنَّ اللّٰهَ
يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ (সূরা আল বাকারা আয়াত
নম্বর-২২২)
আরো পড়ুনঃ রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা
আর তারা তোমাকে হায়েয সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা হায়েযকালে
স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো
না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে
নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক
পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।
তাহলে এখান থেকে বুঝা যায়। পার্ক পবিত্রতার জন্যেও ওযু এবং গোসলের বিকল্প নাই।
অজু গোসল করা এটি বাধ্যতামূলক তাছাড়া কোন ইবাদত বন্দেগি গ্রহণযোগ্য হবে না।
কুরআনুল কারীম পড়তে ও স্পর্শ করতেও হুজুর প্রয়োজন হয়। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট বর্ণিত আছে যে, لَّا یَمَسُّهٗۤ اِلَّا الۡمُطَهَّرُوۡنَ
কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া। (সূরা ওয়াক্কিয়াহ্, আয়াত নং- ৭৯)
এখানে পাক পবিত্র বলতে দৈহিক পবিত্রতা নয়। বরং আত্মিক পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে।
দেহ ও পরিধেয় কাপড়ের পবিত্রতা অর্জনকে আরবিতে বলে তাহারাত্। অযু বা গোসলের
মাধ্যমে তাহারাত্ আর্জন করা যায়। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ধর্মের অর্ধেক"। (সহীহ মুসলিম)
অজুর বিধান কি?
অজু শব্দটি আরবি। শাব্দিক অর্থ নির্দিষ্ট চারটি জায়গা বা অঙ্গ ধুয়ে ফেলা। ইসলামি
পরিভাষায় শরীর পাক-পবিত্র করার নিয়তে পবিত্র পানি দিয়ে শরিয়ত বা ইসলামের নিয়ম
অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গা সমূহ ধুয়ে ফেলাকে অজু বলে। অজু তিন ভাগে বিভক্ত করা
হয়। যেমন ফরজ, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব। এখানে একটি জিনিস জানা অতি জরুরী সেগুলো
হচ্ছে। অজুর ফরজ ওয়াজিব মুস্তাহাব।
অজুর ফরজ সম্পর্কে অল্প কিছু ধারনা
আমরা কোরানুল কারীম থেকে ওযুতে মোট চারটি ফরজ বা অবশ্য করণীয় কাজ রয়েছে। যা না
করলে ওযু হবে না। চলুন অজুর ফরজগুলো জেনে নেই।
- সমস্ত মুখ ভালভাবে ধৌত করা।
- দুই হাতের কনুইসহ ভালভাবে ধৌত করা।
- মাথা চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ্ করা।
- দুই পায়ের টাকনুসহ ধৌত করা।
অজু করা যখন ওয়াজিব
- কাবা শরীফ তাওয়াফের ক্ষেত্রে।
- কুরআন স্পর্শ করার ক্ষেত্রে।
অজু করা যখন মুস্তাহাব
- আযান ও তাকবীর অজু মুস্তাহাব।
- খুতবা পাঠের সময়-জুমার খুত্বা হােক বা বিবাহের খুত্ব।
- দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার সময়কালে।
- যিকরে ইলাহীর সময়ে।
- ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে।
- মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পরে।
- রাসূল (সা)-এর রওযা মুবারক যিয়ারতকালে।
- আরফার মাঠে অবস্থানের সময়কালে
- সাফা ও মারওয়া সাঈ তথা দৌড়ানোর সময়কালে। ১০. জানাবাত অবস্থায় খাবার পূর্বে।
- হায়িয-নিফাসের সময় প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে।
- সর্বদা অযু অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব বলে গণ্য।
তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাত্রিকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি
জীবিকা অর্জনের সময়। (সুরা নাবা আয়াত নং- ৯ -১১) মানুষ দিনের বেলায় দুনিয়ার
যাবতীয় কাজ-কর্মে ব্যস্ত সময় পার করে। রাতে ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে বাসায়
ফিরে।
আরো পড়ুনঃ শাবান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা
বিশ্রামের জন্য শয্যাগ্রহণের সুফল ও ফজিলতে রয়েছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ হাদিস। যা আলোচনায় তুলে ধরা হলো যেমনঃ- عَنْ الْبَرَاءِ
بْنِ عَازِبٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا
أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى
شِقِّكَ الْأَيْمَنِ হজরত বারা ইবনে আযিব হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের
ইচ্ছা করবে, তখন সালাতের ন্যায় অজু করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে। (বুখারি ও মুসলিম)
অজুর ফজিলত সম্পর্কে
যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অজু অবস্থায় ) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত
থাকে। অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ্র দরবারে
ফেরেশতাটি দোয়া করতে থাকে, হে আল্লাহ্! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও,
কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল। (আল ইহসান ফি তাকরিব সহীহ ইবনে হিব্বান)
পবিত্র হাদিসে অজুকে নামাজের চাবি বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ যার
ফলাফল দাঁড়ায় জান্নাতের চাবি হলো অজু, যেহেতু অজু ছাড়া নামাজ আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য নহে। অজুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, অজু মানুষকে আলোকিত
করে। কিয়ামতের দিন এই উম্মতের অজুর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল থাকবে, ফলে তাদের অন্য
উম্মতদের থেকে আলাদা করা সহজ হবে।
সুতরাং মানুষের যখনই বিশ্রাম বা শয্যা গ্রহণের প্রয়োজন হবে বা ইচ্ছা পোষণ করবে।
তখন অজুর সহিত ঘুমালে আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত লাভ করা যাবে। আল্লাহ তাআলা আমদের
সবাইকে ক্ষমা মাগফিরাত ও রহমত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন
অজুর উপকারিতা সম্পর্ক
দ্বীনের ফাঁকি ও আলেমগন কোরআন ও হাদিস থেকে অনেক রিচার্জ বা গবেষণা করে অজুর
বহুবিধ উপকারিতার কথা আলোচনা করেছেন। এর অন্যতম হলো অজু মানুষকে বাহ্যিক ও
অভ্যন্তরীণ গোনাহ ও অলসতা বর্জনের প্রতি অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। অজুর মাধ্যমে
আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা অর্জন করা সম্ভব যা কোরআন ও হাদিস থেকে পাওয়া যায়।
অজু মানুষের মধ্যে ফেরেশতা সুলভ স্বভাব তৈরি করে। এ কারণে ফেরেশতাদের নৈকট্য লাভ
হয়। অজুর মাধ্যমে দেহের প্রধান প্রধান অঙ্গে শক্তি আসে ও সচেতনতা তৈরি হয়। অজু
মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়। অজুর কারণে অন্তরে প্রশান্তি অনুভূত হয়। ও
চেহারা উজ্জ্বলতা ফিরতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এ বিষয়ে হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন যখন আমার
উম্মত আগমন করবে তখন অজুর কারণে তাদের হাত, পা ও চেহারা জ্যোতিতে চমকাতে থাকবে।
এজন্য তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা সে যেন তার জ্যোতি বৃদ্ধি করে নেয়। (সহিহ বুখারী)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্য হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, অজুর
পানি যে স্থান পর্যন্ত পৌঁছাবে মুমিনের জান্নাতি অলংকার সে স্থান পর্যন্ত
পৌঁছাবে। (সহিহ মুসলিম)
অজুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো
আল্লাহতালা অজুর মাধ্যমে মানুষকে উজ্জল আলোকিত করে। আর এ অজুর কারণে কিয়ামতের দিন
এই উম্মতের অজুর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল থাকবে, ফলে তাদের অন্য উম্মতদের থেকে আলাদা করা
সহজ হবে। তাই সাহাবায়ে কেরাম অজুর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
নুআইম মুজমির (রহ.) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম।
অতঃপর তিনি অজু করে বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন
আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে, যে অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও
মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে
যেন তা করে। (বুখারি হাদিস নং-১৩৬)
অতএব আমাদের একান্ত উচিত, অজুর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। প্রিয় নবীজির সুন্নত
মোতাবেক অজু করার চেষ্টা করা। কারণ প্রিয় নবীজি কিয়ামতের দিন তাঁর উম্মতদের অজুর
অঙ্গগুলোর উজ্জ্বলতা দেখে চিহ্নিত করবেন। তাদের হাউসে কাউসারের পবিত্র পানি
দ্বারা আপ্যায়ন করবেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি কবরস্থানে এসে
বলেন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে কবরবাসী মুমিনরা, ইনশাআল্লাহ আমরাও
তোমাদের সঙ্গে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয়। আমাদের ভাইদের দেখি। সাহাবায়ে কেরাম
আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা কি আপনার ভাই নয়?
তিনি বলেন, তোমরা তো আমার সাহাবা। আর যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তারা আমাদের
ভাই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার উম্মতের মধ্যে যারা এখনো
(পৃথিবীতে) আসেনি তাদের আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বলেন, কেন যদি কোনো ব্যক্তি
সাদা রঙের কপাল ও সাদা রঙের হাত-পা বিশিষ্ট ঘোড়া অনেকগুলো কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে
যায়।
তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারবে না? সাহাবীরা বলেন, হ্যাঁ, ইয়া
রাসুলাল্লাহ। তিনি বলেন, তারা (আমার উম্মত) সেদিন এমন অবস্থা আসবে যে অজুর ফলে
তাদের মুখমণ্ডল হাত-পা জ্যোতিময় হয়ে উঠবে। আর আমি তাদেরকে হাউসে কাউসার পাড়ে
আমি হব তাদের অগ্রদূত হিসাবে। জেনে রাখো, কিছুসংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাউস থেকে
তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
যেমনিভাবে বেওয়ারিশ উটকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমি তাদের ডাকব, এসো এসো। তখন বলা
হবে, এরা আপনার পরে (আপনার দ্বিনকে) পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তখন আমি বলব, দূর হও,
দূর হও’। (মুসলিম হাদিসঃ-৪৭২) সেদিন আমাদের কি উপায় হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন
আমাদের সবাইকে রাসুলের শাফায়াত নসিব করুন। আমীন
তাই প্রতিটি মুমিন মুসলমান ব্যক্তির উচিত, অজুর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। অজুর
ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথভাবে অজু করা। এখন শীতের মৌসুম,
শীতের তীব্রতায় অজুতে যেন কোনো রকম ত্রুটি না থেকে যায়। সে ব্যাপারে বিশেষ ভাবে
সতর্ক থাকা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন
অজু সংক্রান্ত হাদিস সমূহঃ
আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারমালাহ ইবনু
ইয়াহইয়া আত-তুজীবী (রহঃ) উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ওযুর
পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযু করতে আরম্ভ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি উসমান
(রাযিঃ) তিনবার তার হাতের কজি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন।
এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর
বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু
পর্যন্ত তিনবার ধুলেন- অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন তারপর বললেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে।
আমার এ ওয়ূর করার ন্যায় ওযু করতে দেখেছি এবং ওযু শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায় ওযু করবে এবং একান্ত
মনোযোগের সাথে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ
করে দেয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের আলিমগণ বলতেন যে, সালাতের জন্য কারোর এ
নিয়মের অজু হল। তাহলে সেই অজু একটি পরিপূর্ণ অজু (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৯,
ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪৫)
পাত্রের বাইরে হাত ধোয়ার বিধান
পাত্রের বাইরে দু'হাতের উপর পানি ঢেলে হাত ধোয়ার ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন
হুকুম হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে মতভেদ পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। কুলি করা ও নাকে
পানি দেয়ার বিধান এ বিষয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। আবু হানীফা, মালিক ও শাফেয়ী
রাহিমাহুমুল্লাহ বলেন, অজুতে এ দু'টিই সুন্নাত। ইমাম আহমাদ ইবন আবী লাইলা ও দাউদ
আয যাহেরী বলেন, দু'টোই ফরয। ইমাম আবু সাওর, আবূ উবাইদ ও আহলে যাহেরদের অপর
গোষ্ঠীর নিকট কুলি করা সুন্নাত কিন্তু নাকে পানি নেয়া ফরজ।
মাথা কতটুকু মাসেহ করতে হবে
অজুর পানি দ্বারা মাথা মাসাহ করা ফরয হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের আলেমগণের ঐকমতা
রয়েছে। অনুরূপভাবে পূর্ণ মাথা মাসাহ করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারেও তাদের
ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু মাথার কতটুকু মাসাহ করা ফরয তা নির্ধারণে ফকীহগণ মতভেদ
করেছেন। ইমাম মালিক ও আহমাদ রাহিমাহুমাল্লাহার মতে পূর্ণ মাথা মাসাহ করাই ফরয।
ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, আওযায়ী, সাওরী বলেন, মাথার কিছু অংশ মাসাহ করলেই। ফরয
আদায় হয়ে যাবে; এ কিছু অংশ নির্ধারণে তারা আবার মতভেদ করেছেন। আবু হানীফা বলেন,
এক-চতুর্থাংশ এবং মালেকী মাযহাবের কারো কারো মতে এক-তৃতীয়াংশ। তবে ইমাম শাফেয়ী
কোনো সীমা নির্ধারণ করেননি। বরং তার নিকট মাসাহ বলতে যা বুঝায় তা হলেই হবে।
তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে যে, পুরো মাথা মাসাহ করতে হবে। কারণ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও মাথার কিছু অংশ মাসাহ করা যথেষ্ট মনে
করেছেন তেমন প্রমাণ নেই। যেখানে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মাথার সামনের অংশ মাসাহ করেছেন সেখানেও এসেছে যে, তিনি বাকী মাথার
মাসাহ করার জন্য পাগড়ীর উপর তা সম্পন্ন করেছেন।
ওযুর শেষে মুস্তাহাব দোয়া সমূহ
মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মাইমূন (রহঃ) উকবাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে
বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তার এ কথা শুনতে পেলাম।
যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি
নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ বলেন,
কথাটি শুনে আমি বলে উঠলাম বাহ! হাদীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলতে
লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি উমার।
তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে
এ দু’আ পড়বে- "আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয় আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু
ওয়া রাসূলুহু"। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে
ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪ ইসলামিক সেন্টারঃ
৪৬০)
অজু এবং অজুর পরপরই সালাত আদায়ের ফযীলতউবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয তার পিতার সূত্রে,
অন্য সনদে মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) উসমান ইবনু আফফান
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
উসমান (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে
ব্যক্তি আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন সেভাবে ওযুকে সম্পূর্ণ করে। তার পাঁচ
ওয়াক্তের ফরয সালাত আদায় করলে উক্ত সালাতসমূহ মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের)
কাফফারাহ হয়ে যায়। ইবনু মু’আযের হাদীসে এভাবেই বলা হয়েছে। কিন্তু গুনদার
বর্ণিত হাদীসে বিশরের নেতৃত্বের কথা কিংবা ফরয সালাতের কথা উল্লেখ নেই। (ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৫৪)
এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
ওজু হলো এমন একটি মহা ইবাদত বা উপাসনা যার মধ্যে মহান আল্লাহ মহা পুণ্য বা সওয়াব
নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই এর দ্বারা পাপের ক্ষমা হয় এবং মর্যাদা উচ্চ হয়। সুতরাং
মুসলিম ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন এই ইবাদতটির যত্ন করে এবং এর আদব কায়দা,
শর্তসমূহ আর ওজু বিনষ্টকারী বিষয়গুলির সঠিকভাবে জ্ঞান লাভ করে।
এই হাদীসটি পরিপূর্ণভাবে ও সুন্দরভাবে ওজু করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। এবং বিনয়
নম্রতা ও একাগ্রতার সহিত নামাজ পড়ার প্রতিও উৎসাহ প্রদান করে।
এই হাদীসটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মর্যাদা বর্ণনা করে। আর সেই মর্যাদা হলো এই যে,
এই নামাজের দ্বারা সমস্ত পাপ ক্ষমা করা হয়। তবে এই পাপগুলি বলতে ছোটো পাপগুলিকে
বুঝানো হয়েছে। তাই বড়ো পাপের ক্ষমা অর্জনের জন্য সঠিক পন্থায় সত্য তওবা করা
অপরিহার্য।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠকগণ আজকের আর্টিকেলে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আশা
করি অজু সংক্রান্ত অনেক বিষয় সম্পর্কে ধারণা আসবে বলে আমি মনে করি তাই এই
আর্টিকেলটি পড়ে সঠিকভাবে ওযু করা এবং এ বিষয়গুলোর প্রতি আমল করার আল্লাহ তৌফিক
দান করুন। আমিন ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ