পুষ্টিগুণে ভরপুর চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবারসম্মানিত পাঠক বৃন্দ আজকের আর্টিকেলটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকারী টপিক নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। যা আমাদের শরীরের পুষ্টিগুণ বাড়াতে সহায়ক হবে। আর্টিকেলটি হচ্ছে চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে। 
পুষ্টিগুণে ভরপুর চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
যদি ভক্ষণের পরে শরীরের নানা ধরনের পুষ্টিগুণ এর ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাই আজকের আর্টিকেলটি পুষ্টিগুণে ভরপুর চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করা যাক তাহলে চলুন দেরি না করে মূল টপিকে প্রবেশ করা যাক।

ভূমিকাঃ

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি মানব দেহের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণের প্রয়োজনীয়তা পূরণের মতো একটি টপিক যার মধ্যে থাকছে। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে ধারণা সেটি অন্য কিছু নয় সেটি হচ্ছে চিয়া সিড। 

আর পুষ্টিগুণে ভরপুর চিয়া সিড আমাদের দেহের ঘাটতি কৃত পুষ্টিগুণ পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি তাহলে চলুন দেরি না করে। আমরা পুষ্টিতে ভরপুর চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
চিয়া সিড: এতে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালংশাকের চেয়ে ৩গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়ে ৮গুণ বেশি ওমেগা মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে চিয়া নামে এক ধরনের গাছ জন্মায়।

পুদিনা পরিবারের ছোট এই গাছটির বীজ হচ্ছে চিয়া সিড। সাদা, কালো ও বাদামি রঙের চিয়া সিডগুলো আকারে খুবই ছোট, অনেকটা তিলের মতো। পানিতে ভেজালে চিয়া সিড ফুলে উঠে ১২ গুণ পর্যন্ত বড় হতে পারে। প্রাচীনকাল থেকে চিয়া সিড মানুষের রসনা তৃপ্ত করে আসছে। অ্যাজটেক এবং মায়ান সভ্যতার সময়ে চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। 

ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি চিয়া সিড রূপচর্চা করতে ব্যবহার করা হতো। এর অনেক ঔষধিগুণ আছে বলে বিশ্বাস করত অ্যাজটেক ও মায়ান আদিবাসীরা। সে কারণে সাধারণ অসুখে চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল তাদের মধ্যে।

চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ

পুষ্টিবিদরা চিয়া সিডকে সুপারফুড নামে ডাকতে ভালোবাসেন। কারণ এতে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ।

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড স্বাদ ও গন্ধবিহীন একটি খাবার। এটা খাওয়ার জন্য রান্না করারও দরকার হয় না। পানিতে ভিজিয়ে সহজেই খাওয়া যায় চিয়া সিড। চাইলে ওটস, পুডিং, জুস, স্মুথি ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নেয়া যায়। এ ছাড়া কেউ চাইলে টকদই, সিরিয়াল, রান্না করা সবজি বা সালাদের ওপরে ছড়িয়েও খেতে পারেন।

চিয়া সিড সরাসরি যে কোন ফলের স্মুদি বা জুসের সাথে পান করা যায়। শুধু পানিতে মিশিয়েও পান করা যায়। চিয়া বীজের নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে এটা সব ধরনের খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত বেক করা খাবার বিস্কুট, কেক ইত্যাদি।
সুপ, সালাদ ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও চিয়া সীড খাওয়া যায়। চিয়া সিড কুসুম গরম পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে চিয়া সিডসহ পানীয়টি পান করুন।

পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবার। এতে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যালমন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩
  • পুষ্টিগুণে ভরপুর: চিয়া বীজে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস সহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। 
  • হার্টের স্বাস্থ্য: চিয়া বীজের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে, রক্তচাপ কমাতে এবং সামগ্রিক হৃদরোগকে সমর্থন করতে পারে।
  • ওজন ব্যবস্থাপনা: চিয়া বীজের উচ্চ ফাইবার সামগ্রী তৃপ্তি বাড়ায় এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে সহায়তা করে।
  • হজমের স্বাস্থ্য: চিয়া বীজের দ্রবণীয় ফাইবার একটি স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্রকে সমর্থন করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে।
  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ: চিয়া বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে, যা ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন প্রতিরোধী ব্যক্তিদের জন্য উপকারী করে তোলে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য: চিয়া বীজ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের একটি সমৃদ্ধ উত্স, যা শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর হাড় বজায় রাখতে অবদান রাখে।
  • শক্তি বৃদ্ধি: চিয়া বীজ তাদের কার্বোহাইড্রেট এবং পুষ্টির ধীরে ধীরে মুক্তির কারণে একটি টেকসই শক্তি বৃদ্ধি প্রদান করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য: চিয়া বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রদাহ বিরোধী প্রভাব: চিয়া বীজে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে উপকারী।
  • ত্বকের স্বাস্থ্য: চিয়া বীজের পুষ্টিগুলি স্বাস্থ্যকর ত্বকে অবদান রাখে, হাইড্রেশন প্রচার করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণগুলি হ্রাস করে।
  • পেশী মেরামত এবং বৃদ্ধি: চিয়া বীজের প্রোটিন উপাদান পেশী মেরামত এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, এগুলি ক্রীড়াবিদ এবং সক্রিয় ব্যক্তিদের জন্য উপকারী করে তোলে।
  • গ্লোটেন মুক্ত বিকল্প: চিয়া বীজগুলি প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন-মুক্ত, এটি গ্লুটেন সংবেদনশীলতা বা সিলিয়াক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি নিরাপদ এবং পুষ্টিকর বিকল্প তৈরি করে।
চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের বীজের মতো। পুষ্টিকর এই খাবারটি সপ্তাহের সাত দিনই খাওয়া যায়। তবে ৩-৪ দিন খেলেও শরীরে উপকারে আসে।

চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

পুষ্টিবিদরা জানান, চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে কাজ করে। দিনে দুই চা চামচ চিয়া সিড শরীরের শক্তি দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় চিয়া সিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে। মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে।

এটি রক্তে চিনির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে বলে ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমে। হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় চিয়া সিড দারুণ কাজ করে। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। চিয়া সিড কোলন পরিষ্কার রাখতে কাজ করে বলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।

চিয়া সিড শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনে। দূর করে অ্যাসিডিটির সমস্যা। চিয়া সিড ভালো ঘুম হতেও সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করেন। চিকিৎসকরা। শুধু কি তাই! হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা কমায়। সুন্দর রাখে ত্বক, চুল ও নখ।

চিয়া সিড খেলে কি হয়

চিয়া সিড যা হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। চিয়া সিড ব্লাড সুগার (রক্তের চিনি) স্বাভাবিক রাখে, যা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়া চিয়া সিড শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের হতে সাহায্য করে,গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।

চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল

চিয়া সিড উচ্চ ফাইবার ও প্রোটিন ধারণ করে এবং নিরামিষ ও বিটামিন-মিনারেল সম্পন্ন হয়। এছাড়াও চিয়া সিড কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হয় কারণ এটি শরীরের মধ্যে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে এবং মধুমেহ ও হাইপারটেনশন নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। চিয়া সিড কিডনির জন্য ক্ষতিকর নয়।

চিয়া বীজ কিডনির জন্য ক্ষতিকর

ফসফরাস সামগ্রী: চিয়া বীজে ফসফরাস বেশি থাকে। যা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। আপনার যদি কিডনি রোগ থাকে তবে আপনার ফসফরাস গ্রহণের নিরীক্ষণ করা এবং আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য।

লেখকের কথাঃ

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আজকের আর্টিকেলটি ছিল পুষ্টিগুণে ভরপুর চিয়াশিড সম্পর্কে যা পড়ে উপলব্ধি করলে মানবদেহের পুষ্টিকর গুণগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আর্টিকেলটি পড়ার আহ্বান রেখে এবং আপনাদের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত আর্টিকেল লেখা শেষ করছি। ধন্যবাদ আল্লাহ হাফেজ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন