রোজা রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার কিছু আমলপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা কি জানেন। রমযনের সিয়াম বা রোযা ইসলামের পাঁচটি খুঁটি বা স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম খুঁটি বা স্তম্ভ। ঈমান, নামায ও যাকাতের পরই রমযনের সিয়াম বা রোযার স্থান বা জায়গা। 
রোজা রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
রোযার শব্দের আরবি হচ্ছে  সওম, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা বেঁচে থাকা। পরিভাষায় সওম বলা হয়। আর সিয়াম বা রোযা প্রতিটি সজ্ঞান, বালেগ মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ। এবং সিয়াম বা রোযা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। 

রোযার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস শারীরিক মেলামেশা ও রোযাভঙ্গ হয়। ওই সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকা। সুতরাং রমযান মাসের চাঁদ পশ্চিম আকাশে উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, মুকীম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা নারীর উপর পূর্ণ রমযান রোযা রাখা ফরজ।

পেজ সূচিপত্রঃ আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম সিয়াম বা রোজা আলোচনা

এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন। 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (সূরা বাকারা নং-১৮৩) অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন- فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে। (সূরা বাকারা নং- ১৮৫)
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। যখন তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ১৯০৯ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১০৮০) 

তাহলে বোঝা যায়। উল্লেখিত কোরআনের আয়াত ও রাসুলের হাদীস এবং এ বিষয়ক অন্যান্য দলীলের আলোকে প্রমাণিত যে, রমযান মাসের রোযা রাখা ফরজ, ইসলামের আবশ্যক বিধানরূপে রোযা পালন করা ও বিশ্বাস করাও ফরয এটি আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে মনে রাখা এবং পালন করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

তাছাড়া কোনো শরীয়াতে ওজুর ছাড়া কোন মুসলমান যদি রমযান মাসের একটি রোযাও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ বা ছেড়ে দেয় তাহলে সে বড় পাপী ও জঘন্য অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে। দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ঈমান-ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী হিসেবে চিহ্নিত হবে। হাদীস শরীফে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ত্যাগকারী ও ভঙ্গকারীর জন্য কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। তা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ-

হযরত আবু উমামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার নিকট দুই ব্যক্তি আগমন করল। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে আসলো। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ের উপর উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না। 

তারা বলল, আমরা আপনাকে সহজ করে দিব। আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌঁছালাম, হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বললাম, এ সব কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশী দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। 

এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোযা ভেঙ্গে ফেলে। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং- ১৯৮৬ সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং-৭৪৪৮ সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৩২৮৬ মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস নং-১৬০ তবারানী, হাদীস নং-৭৬৬৬)

রমযান মাসের একদিন রোযা না রাখলে মানুষ শুধু গুনাহগার বা পাপি হয় না। ঐ রোযার পরিবর্তে আজীবন রোযা রাখলেও রমযানের এক রোযার যে মর্যাদা ও কল্যাণ, যে অনন্ত রহমত ও খায়ের-বরকত তা কখনো লাভ করতে পারবে না। এবং কোনোভাবেই এর যথার্থ ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের একটি রোযাও ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোযা রাখলেও ঐ রোযার হক আদায় হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং- ৯৮৯৩ মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং- ৭৪৭৬ সহীহ বুখারী ৪/১৬০)

হযরত আলী রা. বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমযান মাসের একটি রোযা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোযার (ক্ষতিপূরণ) আদায় করতে পারবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং- ৯৮৭৮)

হাদীস শরীফে বর্ণিত রোযার কিছু ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য এখানে উল্লেখ করা হলোঃ-

রোযার প্রতিদান আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজেই দিবেন এবং বিনা হিসাবে দিবেন। প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোযার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ রোযার বিষয়ে আছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এক অনন্য ঘোষণা।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন।মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। 

বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১১৫১ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ৯৭১৪ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং- ৮৯৮৭ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ১৬৩৮

অন্য এক হাদিসের বর্ণনায় আছেঃ-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে, রোযা আমার জন্যই, আমি নিজেই তার পুরস্কার দিব আর (অন্যান্য) নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে তার দশগুণ। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ১৮৯৪ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ৯৯৯৯ মুয়াত্তা মালেক ১/৩১০

রোযা বিষয়ে-অন্য বর্ণনায়-আললাহ তাআলা বলেন, ‘‘প্রত্যেক ইবাদতই ইবাদতকারী ব্যক্তির জন্য, পক্ষান্তরে রোযা আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। (সহীহ বুখারী হাদীস-১৯০৪)

এ কথার তাৎপর্য হল, যদিও প্রকৃতপক্ষে সকল ইবাদতই আল্লাহর জন্য, তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। তবুও রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। তা হল-অন্যান্য সকল ইবাদতের কাঠামোগত ক্রিয়াকলাপ, আকার-আকৃতি ও নিয়ম পদ্ধতি এমন যে, তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ছাড়াও ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ থাকে। 

মুখে প্রকাশ না করলেও অনেক সময় তার অন্তরে রিয়া বা অহংকার তথা লোক দেখানো ভাব তৈরি হতে পারে। তার অনুভূতির আড়ালে এ ধরনের ভাব লুকিয়ে থাকে। তা সে অনুভব করতে না পারলেও তার ভিতরে অবচেতনভাবে বিদ্যমান থাকে। ফলে সেখানে নফসের প্রভাব এসে যায়। পক্ষান্তরে রোযা এমন একটি পদ্ধতিগত ইবাদত, তার-আকার-আকৃতি এরূপ যে, 

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের বিন্দু পরিমাণ সুযোগ নেই। রোযাদার ব্যক্তি নিজ মুখে রোযার বিষয়টি প্রকাশ না করলে সাধারণত তা আলেমুল গায়েব আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশিত হওয়ার মত নয়। তাই রোযার ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয়টি একনিষ্ঠভাবে প্রতিভাত হয়। একারণেই রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের মাঝে এরূপ আকাশ জমিন ব্যবধান রয়েছে।

রোযার অনেক বড় ফযীলতের কারণ এটাও হতে পারে যে, রোযা ধৈর্য্যের ফলস্বরূপ। আর ধৈর্য্যধারণ কারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার সুসংবাদ হল-ও اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ اَجۡرَهُمۡ بِغَیۡرِ حِسَابٍ ধৈর্য্যধারণকারীগণই অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে। (সূরা যুমার আয়াত নং-১০)

সকল মাখলুকের স্রষ্টা, বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, আল্লাহ তাআলা নিজেই যখন এর পুরস্কার দিবেন, তখন কী পরিমাণ দিবেন? ইমাম আওযায়ী রাহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন- আল্লাহ যে রোযাদারকে প্রতিদান দিবেন, তা মাপা হবে না, ওজন করা হবে না অর্থাৎ বিনা হিসাবেই দিবেন।

আল্লাহ তাআলা রোযাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন
হযরত আবু মুসা রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টির জণ্য গ্রীষ্মকালে (রোযার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন অর্থাৎ কাল (কিয়ামাতের দিন) পানি পান করাবেন। (মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং-১০৩৯ মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস নং- ৫০৯৫)

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, রোযা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। কেয়ামতের দিন রোযাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোযাদার ব্যতীত অন্য কারো আগমন ঘটবে না। (মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং- ৮১১৫ মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস নং-৫০৯৩)

রোযা হল জান্নাত লাভের বিশেষ রাস্তা

হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম, তারপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোযা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো দান-সদকা করে তারপর তার মৃত্যু হয়। সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-২৩৩২৪ মুসনাদে বাযযার, হাদিস নং-২৮৫৪)

হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আগমন করে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। তিনি বলেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় তার নিকট এসে একই কথা বললাম। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-২২১৪৯ সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং-১৮৯৩ সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং-৩৪২৬ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-২৫৩০

রোযাদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা দিয়ে

হযরত সাহল ইবনে সা’দ রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম "রাইয়ান" কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোযাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে- কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোযাদারগণ তখন তারা উঠে দাড়াবে। 

তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোযাদারগণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৮৯৬ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৫২ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-২২৮১৮)

হযরত সাহল ইবেন সা’দ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জান্নাতে রোযাদার ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। রোযাদারগণ ছাড়া অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। যখন সর্বশেষ রোযাদার ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। 

যে ব্যক্তি ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, সে (জান্নাতের পানীয়) পান করবে। আর যে পান করবে, সে কখনো পিপাসিত হবে না। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-২২৮৪২ সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস নং-১৯০২ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৬৫ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-২৫৪৪)

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক প্রকারের নেক আমলকারীর জন্য জান্নাতে একটি করে বিশেষ দরজা থাকবে, যার যে আমলের প্রতি অধিক অনুরাগ ছিল। তাকে সে দরজা দিয়ে আহবান করা হবে। রোযাদারদের জন্যও একটি বিশেষ দরজা থাকবে, 

যা দিয়ে তাদেরকে ডাকা হবে, তার নাম হবে ‘রাইয়ান’। আবু বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ এমন কেউ কি হবেন, যাকে সকল দরজা থেকে আহবান করা হবে। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি আশা রাখি তুমিও তাদের একজন হবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ৯৮০০ মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস নং- ৩২৬২৮)

এ সম্পর্কে বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৮৯৬-৩৬৬৬ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১০২৭ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস-৭৬৩৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস -৩০৯)

রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ স্বরূপ

হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন- রোযা হল ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোযা আমার জন্য আর আমিই এর পুরস্কার দিব। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৪৬৬৯ শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী, হাদীস নং-৩৫৭০)

উসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ)বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, রোযা হল জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের (শত্রুর আঘাত হতে রক্ষাকারী ঢালের মত। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৬২৭৮ সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং-২১২৫ সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং-৩৬৪৯ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীসনং-১৬৩৯)

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- রোযা হল (জাহান্নাম থেকে পরিত্রান লাভের) ঢাল এবং সুরক্ষিত দুর্গ। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-৯২২৫ বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৫৭১)

রোযা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। 

(অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।(মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-৬৬২৬ মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীসনং-২০৮০ বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং- ১৯৯৪)

রোযাদারের সকল গুনাহ মাফ করা হয়।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮, ২০১৪ সহীহ মুসলিম ৭৬০ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ৭১৭০ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং- ৮৯৬৮

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর রমযানের রোযা ফরয করেছেন, আর আমি কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবীহ’র নামাযকে সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম ও কিয়াম আদায় করবে, 

সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে। যেদিন সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্যভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসনাদে আহমদ, নহাদীস নং-১৬৬০, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস নং-৭৭৮৭, মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং-১০৪৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং-২২০১, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-২৫১৮)

রোযা গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।

রোযা গুনাহের কাফফারা হওয়া কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন প্রকার গুনাহের কাফফারা স্বরূপ রোযার বিধান নাযিল করেছেন। আর হজ ও উমরা আল্লাহর জন্য পূর্ণ কর। অতঃপর যদি তোমরা আটকে পড় তবে যে পশু সহজ হবে (তা যবেহ কর) আর তোমরা তোমাদের মাথা মুন্ডন করো না, যতক্ষণ না পশু তার যথাস্থানে পৌঁছে। 

আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ কিংবা তার মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে তবে সিয়াম কিংবা সদাকা অথবা পশু যবেহ এর মাধ্যমে ফিদয়া দেবে। আর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যে ব্যক্তি উমরার পর হজ সম্পাদনপূর্বক তামাত্তু করবে, তবে যে পশু সহজ হবে, তা যবেহ করবে। কিন্তু যে তা পাবে না তাকে হজে তিন দিন এবং যখন তোমরা ফিরে যাবে, তখন সাত দিন সিয়াম পালন করবে। 

এই হল পূর্ণ দশ। এই বিধান তার জন্য, যার পরিবার মাসজিদুল হারামের অধিবাসী নয়। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাবদানে কঠোর (সুরা বাকারা আয়াত নং-১৯৬) 

মুমিনকে হত্যা করা যেন মুমিনের কাজ নয়। তবে ভুলবশত করলে সেটা স্বতন্ত্র; এবং কেউ কোন মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করলে এক মুমিন দাস মুক্ত করা এবং তার পরিজনবর্গকে রক্তপণ আদায় করা কর্তব্য, যদি না তারা ক্ষমা করে। যদি সে তোমাদের শত্রু পক্ষের লোক হয়। এবং মুমিন হয় তবে এক মুমিন দাস মুক্ত করা কর্তব্য। 

আর যদি সে এমন সম্প্রদায়ভুক্ত হয় যাদের সাথে তোমরা অংগীকারাবদ্ধ তবে তার পরিজনবর্গকে রক্তপণ আদায় ও মুমিন দাস মুক্ত করা কর্তব্য। আর যে সঙ্গতিহীন সে একাদিক্রমে দু মাস সিয়াম পালন করবে তাওবাহ্‌র জন্য এগুলো আল্লাহর ব্যবস্থা এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা নিছা আয়াত নং-৯২) 
আল্লাহ তোমাদেরকে দায়ী করবেন না তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য, কিন্তু যে সব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর সেই সকলের জন্য তিনি তোমাদেরকে দায়ী করবেন। অতঃপর এর কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হল, দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাদ্য দান করা; যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও, অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করা, কিংবা একটি দাস মুক্ত করা। 

কিন্তু যার (এ সবে) সামর্থ্য নেই, তার জন্য তিন দিন রোযা পালন করা। তোমরা শপথ করলে এটিই হল তোমাদের শপথের প্রায়শ্চিত্ত। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা কর। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সুরা মায়েদা আয়াত নং- ৮৯)

যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে জিহার করে, অতঃপর তারা যে কথা বলেছে তা প্রত্যাহার করে নেয় তবে পরস্পরকে স্পর্শ করার পূর্বে তাদেরকে একটি দাস মুক্ত করতে হবে, এর দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন। কিন্তু যার (দাস সংগ্রহ করার) সামর্থ্য নেই, সে এক নাগাড়ে দু’মাস রোযা রাখবে পরস্পরকে স্পর্শ করার পূর্বে। 

আর যে তা করতে পারবে না, সে ষাট জন মিসকীনকে খাবার খাওয়াবে। এ নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এ জন্য যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনো। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। (যারা এটা অস্বীকার করবে সেই) কাফিরদের জন্য আছে মর্মান্তিক শাস্তি।ন (সূরা মুজাদালা আয়াত নং-৩-৪) আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে রোযার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তাই সহজেই বোঝা যায়। যে রোযা বান্দার পাপ এগুলোকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে রোযাদারকে পরিশুদ্ধ করে দেয়।

হযরত হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষের জন্য তার পরিবার, ধন-সম্পদ, তার আত্মা, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী ফিতনা স্বরূপ। তার কাফফারা হল নামায, রোযা, দান-সদকাহ, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৫২৫ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৮৯২-২৬ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-২৩২৮০, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং- ২২৫৮)

রোযাদারের মুখের গন্ধ মিসকা আম্বার চেয়েও সুগন্ধিময় 

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৯০৪ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৫১ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-৭১৭৪ সুনানে নাসায়ী, হাদীস -নং২৫২৩ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নং-১৬৩৮)

রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত বর্ণনা

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হবে। এক. যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে তখন তার রোযার কারণে আনন্দিত হবে। 

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন সে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, আর তিনি তাকে পুরস্কার দিবেন, তখন সে আনন্দিত হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৯০৪ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৫১ (১৬৩-১৬৪-১৬৫) মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৪২৯-৭১৭৪ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৬৬)

রোযাদার পরকালে সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত করবেন।

হযরত আমর ইবনে মুররা আলজুহানী রা. হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি একথার সাক্ষ্য দিই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। এবং অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসূল, আর আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি। 

যাকাত প্রদান করি, রমযান মাসের সিয়াম ও কিয়াম (তারাবীহসহ অন্যান্য নফল) আদায় করি তাহলে আমি কাদের দলভুক্ত হব? তিনি বললেন, সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবে। (মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং- ২৫ সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং-২২১২ সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং-৩৪২৯)

রোযাদারের দুআ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে কবুল হয়।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইফতারের সময় রোযাদার যখন দুআ করে, তখন তার দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। অর্থাৎ তার দুআ কবুল হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৭৫৩)

নহযরত আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না অর্থাৎ তাদের দুআ কবুল করা হয়। ন্যায়পরায়ন শাসকের দুআ রোযাদার ব্যক্তির দুআ ইফতারের সময় পর্যন্ত ও মজলুমের দুআ। তাদের দুআ মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং এর জন্য সব আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। 

তখন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, আমার ইয্যতের কসম! বিলম্বে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-৮০৪৩ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫৯৮ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৭৫২ সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং-৩৪২৮)

হযরত আবু হুরায়রা রা. র্বণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযাদারের দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৮৯৯৫)

রোযা হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়।

হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সবরের মাসের (রমযান মাস) রোযা এবং প্রতি মাসের তিন দিনের (আইয়্যামে বীয) রোযা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়। (মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং-১০৫৭ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-২৩০৭০ সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং-৬৫২৩)

আল্লাহ পাকের কাছে যাওয়া যায় রোজা বা সিয়ামের মাধ্যমে 

হযরত আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কোনো নেক আমলের কথা বলুন, তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর কোনো সমতুল্য কিছু নেই। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং-১৮৯৩ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ২২১৪০ সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস নং-৩৪২৫ সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-২৫৩৩)

হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন কোনো আমলের আদেশ করুন, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাকে উপকৃত করবেন। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা তার তুলনা হয় না। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-২৫৩১ মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-২২১৪১ বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান ৩৮৯৩ তাবারানী, হাদীস নং-৭৪৬৩)

রমযান হল নির্দিষ্ট ইবাদতের সময়। তাই এ মাসের সময়গুলো যতটা শুধু আল্লাহর সাথে কাটানো যায় ততটা ভালো হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে হাদীস অনুযায়ী আমল করার ও উক্ত রহমত ও ফযীলত লাভ করার তাওফীক দান করুন। আমীন

লেখকের কথাঃ

প্রিয় পাঠক উপরের হাদিস গুলো পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা অবগত হয়েছেন। সিয়াম বা রোজার গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সিয়াম বা রোজার সঠিক নিয়ম কানুন মেনে সিয়াম পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন এই প্রত্যাশা রেখে আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আর্টিকেল শেষ করছি। ধন্যবাদ আল্লাহ হাফেজ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন