ফুলকপির বহুমুখী গুনাগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানুন

লাইফ স্টাইল নিয়ে আলোকপাতপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা কি জানেন? ফুলকপিতে কি কি গুনাগুন রয়েছে। যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটা আপনাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফুলকপির বহুমুখী গুনাগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানব।
ফুলকপির বহুমুখী গুনাগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
ফুলকপি যদিও বা সবজি কিন্তু এর মধ্যে বিশেষ উপকারও রয়েছে। যেগুলো আমাদের অনেকেরই না জানা তাই না জানার বিষয়গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। জানার জন্য পেজটিকে কন্টিনিউ করার অনুরোধ রইলো তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

পেজ সুচিঃ ফুলকপির বিভিন্ন ধরনের উপকারীতা ও অপকারিতা বিষয় সমূহ

সকল মৌসুমে ফুলকপি খাবেন না, তা কি হতে পারে ? ফুলকপির যে গুণগুন পাওয়া যাই! ফুলকপি শুধু স্বাদের জন্যই নয়, এতে থাকা সালফার সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য উপকারী সমূহ। দেহ থেকে ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান দূরভিত করে এটি সুস্থ রাখতে পারে ফুলকপি। ফুলকপির বিশেষ কিছু গুণ আছে, যা সবার জেনে রাখা দরকার।

এই ফুলকপি গুণ সম্পন্ন সবজিটি কাঁচা, সেদ্ধ বা রান্না করেও খাওয়া যায়। চলুন জেনে নিই ফুলকপির চমৎকার কিছু উপকারিতার ও অপকারিতা বিষয় সমূহ যা আমাদের দেহের বিভিন্ন পুষ্টির জন্য বিশেষ কাজে লাগে যা এখন আমরা স্টপ বাই স্টেপ জানবো।

ফুলকপি হৃদ-স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহযোগিতা করে

আমরা জেনে খুশি হব ফুলকপিতে সালফারের যৌগ সালফোরাফেন থাকে যা ব্লাড প্রেশারের উন্নতিতে সাহায্য করে। গবেষণা মতে সালফোরাফেন ডিএনএ এর মিথাইলেশনের সাথে সম্পর্কিত যা কোষের স্বাভাবিক কাজের জন্য এবং জিনের সঠিক প্রকাশের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, বিশেষ করে ধমনীর ভেতরের প্রাচীরের।
সালফোরাফেন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করতে পারে এবং টিউমারের বৃদ্ধিকে বাঁধা দেয়। অন্য এক গবেষণায় জানা যায়। যে, ফুলকপির সাথে হলুদ যোগ করে গ্রহণ করলে প্রোস্টেট ক্যান্সার নিরাময়ে ও প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখেন।

ফুলকপি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়

ফুলকপিতে আরেকটি উপকারী যৌগ কোলাইন থাকে। কোলাইন একটি বি ভিটামিন। এটি মস্তিষ্কের উন্নয়নে সাহায্য করে। প্রেগনেন্সির সময়ে ফুলকপি গ্রহণ করলে ভ্রূণের মস্তিষ্কের গঠনে সাহায্য করে। গবেষণায় নির্দেশ করা হয়েছে যে, জ্ঞানীয় কাজের, শিক্ষার এবং স্মৃতির উন্নয়নে সাহায্য করে কোলাইন।

ফুলকপি দেহ থেকে বিষমুক্ত হতে সাহায্য করে থাকে

ফুলকপির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীর পরিষ্কার হতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে গ্লোকোসাইনোলেটস থাকে যা এনজাইমকে সক্রিয় করে। এবং ডিটক্স হতে সাহায্য করে। তাই ফুলকপি খাওয়া আমাদের জন্য অতিব জরুরী আমরা অবশ্যই ফুলকপি রান্না করে খাওয়ার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।

ফুলকপি হজমে উন্নতি ঘটায়

ফুলকপি ফাইবারের গুরুত্বপূর্ণ উৎস সেহেতু এটি হজমের উন্নতিতে সাহায্য করে। ওয়ার্ল্ডস হেলদিয়েস্ট ফুডস এর মতে, ফুলকপি পাকস্থলীর প্রাচীরের সুরক্ষায় সাহায্য করে। ফুলকপির সালফোরাফেন পাকস্থলীর হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে এবং পাকস্থলীর প্রাচীরে এর আবদ্ধ হওয়াকে প্রতিহত করে।

ফুলকপি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ

ফুলকপিতে ভিটামিন সি, বিটাক্যারোটিন, কায়েম্ফেরোল, কোয়ারসেটিন, রুটিন, সিনামিক এসিড সহ আরো অনেক উপাদান থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতির হাত থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয় থাকে। এগুলো বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর গতির করে। এবং টিস্যু ও অঙ্গের ক্ষতি হওয়া প্রতিহত করে শরীরকে সমৃদ্ধ রাখে।
  • কোলস্টেরল কমায়ঃ- এতে প্রচুর ফাইবার আছে, যা শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতেঃ- গবেষণায় দেখা গেছে, ফুলকপি মস্তিষ্ক ভালো রাখে, ওজন কমায় এবং সর্দি-কাশিসহ নানা রোগ প্রতিরোধ করে।
  • হাড় ও দাঁত শক্ত করেঃ- ফুলকপিতে রয়েছে দাঁত ও মাড়ির উপকারী ক্যালসিয়াম ও ফ্লোরাইড। এর ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে।
  • ক্যানসার প্রতিরোধ করেঃ- মারাত্মক ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে ফুলকপি। এতে আছে সালফোরাপেন, যা ক্যানসার কোষকে মেরে টিউমার বাড়তে দেয় না। স্তন ক্যানসার, কোলন ও মূত্রথলির ক্যানসারের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতাও আছে ফুলকপির।
  • হৃদ্‌যন্ত্রের জন্য উপকারীঃ- ফুলকপি হৃদ্‌যন্ত্রের জন্য ভালো। এতে যে সালফোরাপেন আছে, তা হৃদ্‌রোগের বিরুদ্ধে লড়তে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধ করেঃ- ফুলকপিতে আছে ভিটামিন ‘বি’, ‘সি’ ও ‘কে’, যা এ সময়ের সর্দি, ঠান্ডা, কাশি জ্বর ভাব, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গা-ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ফুলকপির আরও সব প্রয়োজনীয় উপাদান রোগ প্রতিরোধেও অংশ নেয়।
  • শক্তি জোগায়ঃ- এই সবজিতে আছে প্রচুর আয়রন। রক্ত তৈরিতে আয়রন রাখে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। গর্ভবতী মা ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা মানুষের জন্য ফুলকপি অত্যন্ত জরুরি।
  • চুল ও ত্বকের জন্য উপকারীঃ- কম ক্যালরিযুক্ত ও উচ্চমাত্রার আঁশসমৃদ্ধ ফুলকপি চুল ভালো রাখে। ত্বকের সংক্রমণও প্রতিরোধ করে।
  • পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখেঃ- ফুলকপি পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ- চোখের যত্নে ফুলকপির কোনো তুলনা হয় না। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। চোখ সুস্থ রাখতে বেশি করে ফুলকপি খাওয়া উচিত।

ফুলকপি খেলে কি ক্ষতি বা অপকারিতা হয়

এ সবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিকেলসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। ​তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এই সবজি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। কারণ এই সবজি হজম করা খুব কষ্টকর। তাছাড়া উপরের সমস্যাগুলো যাদের নেই তাদের জন্য এই সবজি খুবই উপকার।

ফুলকপি খেলে কি ওজন বাড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফুলকপি ওজন কমাতেও বেশ কার্যকরী। এ কারণে যারা ওজন কমাতে চান খাদ্য তালিকায় ফুলকপি রাখতে পারেন। তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে মাত্র ২৫ গ্রাম ক্যালরি থাকে। এ কারণে ফুলকপি দিয়ে তৈরি খাবার খেলে খুব বেশি ওজন বাড়বে না।

ফুলকপি খেলে কি উপকার হয়

ফুলকপির সালফোরাফেন ক্যান্সারের স্টেম সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ধরনের টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে ফুলকপি বেশ সহায়ক। এর সালফোরাফেন উপাদান রক্ত চাপ কমায় এবং কিডনি ভালো রাখে। তাছাড়া ধমনীর ভিতরে প্রদাহ রোধ করতেও সাহায্য করে ফুলকপি।

ফুলকপি কাঁচা নাকি রান্না করে খাওয়া উপকার

কাঁচা ফুলকপি খাওয়া সর্বোচ্চ ভিটামিন সি কন্টেন্ট প্রদান করে, কিন্তু ফুলকপি রান্না করলে আপনার শরীর ভিটামিন কে এবং পটাসিয়ামের মতো আরও বেশি পুষ্টি শোষণ করতে দেয় । ফুলকপি ভাজা বা ভাপানো তার প্রাকৃতিক স্বাদ বের করে এবং একটি আনন্দদায়ক টেক্সচার যোগ করে।

ফুলকপি খেলে কি গ্যাস হয় 

ফুলকপি হল ক্রুসিফেরাস গোত্রের সবজি। আর এই সবজিতে ব়্যাফিনোস নামক একটি কমপ্লেক্স সুগার রয়েছে যা কিনা সহজে হজম হতে চায় না। বরং এই উপাদানের কারসাজিতে অন্ত্রে গ্যাসের প্রকোপ বাড়ে। আর এই কারণেই বেশি বেশি ফুলকপি খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি সহ গ্যাসট্রাইট্রিসের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা বাড়ে যায়।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় বা আর্টিকেলটি ছিল। ফুলকপির সংক্রান্ত কিছু আলোচনা আশা করি পূর্ণাঙ্গ আর্টিকেলটি করলে এখান থেকে ফুলকপির গুনাগুন উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু ধারনা পাওয়া যাবে। আপনাদের কাছে উদার্থ আহ্বান জানিয়ে এবং আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত আর্টিকেল শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন