দাড়ি মুসলমান পুরুষের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের নিশান বিস্তারিত জানুন

দাড়ি পুরুষের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের নিশানপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা কি জানেন। দাড়ি পুরুষের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের নিশান। দাড়ি রাখার যেমন দুনিয়াবী উপকারিতা রয়েছে। তেমনি এটি রেখে সুন্নাত পালনের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা যায়। সেজন্য রাসূল (সাঃ) বা তাঁর লক্ষ লক্ষ ছাহাবীর কেউ দাড়ি কামানো বা শেভ করেছেন। 
দাড়ি মুসলমান পুরুষের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের নিশান বিস্তারিত জানুন
এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। দাড়ি নিয়ে সমাজে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি। কিছু আলেম নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে দাড়ি রাখাকে সুন্নাত বলে প্রচার করেন। কিন্তু বিশ্বের নিভর্রযোগ্য সকল আলেম দাড়ি রাখা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।  আমাদের দেশেই শুধু নয়। 

পেজ সূচিপত্রঃ দাড়ি রাখার গুরুত্ব পুরুষের বৈশিষ্ট্য সৌন্দর্যের নিশান সম্পর্কে

বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই দাড়ি রাখা সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, দাড়ি রাখা সুন্নাত। অতএব দাড়ি রাখলে ভাল আর না রাখলে তেমন কোন সমস্যা নেই। একটা সুন্নাত পালন করা হল না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। দাড়ি আল্লাহর একটি মহান ও বড় নেয়ামাত। দাড়ি দ্বারা তিনি পুরুষকে অনুগ্রহ করেছেন। এবং নারী জাতি থেকে তাকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছেন। 
দাড়ি শুধুমাত্র মুখমন্ডলের উপর কয়েকটি কেশগুচ্ছই নয়। বরং এটি ইসলামের বাহ্যিক একটি নিদর্শন। দাড়ি যথাযথ ভাবে রেখে। এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম সমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয়ই এটি হৃদয় নিঃসৃত আল্লাহভীতির বহির প্রকাশ করা। 

ইসলামি দাড়ি রাখার গুরুত্ব

ইসলামি দাড়ি রাখার নির্দেশ দিয়ে রাসূল (সাঃ) থেকে কুড়িটিরও অধিক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যে নির্দেশগুলো পালন করার ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় লক্ষণীয়। প্রথমতঃ দাড়ি রাখা মানুষের স্বভাবজাত তথা সুনানুল ফিৎরাত, যার উপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সেজন্য সকল নবী-রাসূলের দাড়ি ছিল। এটি সকল নবী-রাসূল ও তাঁর উম্মতের জন্য স্বভাবজাত সুন্নাত। 

মুহাম্মাদ (ছাঃ) নবী-রাসূলগণের আকৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে যখন ইবরাহীম (আঃ)-এর আলোচনা আসল তখন তিনি বললেন, আর আমি ইবরাহীম (আঃ) এর দিকে দৃষ্টিপাত করলাম। আমি যখনই তার অঙ্গসমূহের কোন অঙ্গের দিকে তাকাচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল যেন আমারই অঙ্গের দিকে তাকাচ্ছি। যেন তিনি তোমাদেরই সাথী। 

অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দেহের অবয়ব ইবরাহীম (আঃ) এর অবয়বের মতই। তন্মধ্যে তাঁর দাড়িও ইবরাহীম (আঃ) এর দাড়ির মত ছিল। সম্রাট হিরাক্লিয়াস এর নিকট মুসলিম দূত ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গেলে তিনি তাকে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের ছবি প্রদর্শন করেন। সেখানে তিনি দেখেন যে, সকল নবীর দাড়ি ছিল। বিশেষ করে ইবরাহীম (আঃ) এর সাদা দাড়ি ছিল। 

হারূণ (আঃ) এর উপস্থিতিতে সামেরী কর্তৃক গো-বাছুর পূজা শুরু হলে মূসা (আঃ) রেগে হারূণ (আঃ) এর দাড়ি ধরে সতর্ক করেছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন, হারূণ বলল, হে আমার সহোদর ভাই! আমার দাড়ি ও মাথার চুল ধরে টেনো না’ (সুরা তোয়াহা আয়াত নং- ৯৪) আয়াত প্রমাণ করে যে, তাদের দাড়ি ছিল।

মে‘রাজ রজনীতে পঞ্চম আকাশে যখন রাসূল (সাঃ) হারূন (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন তিনি তার দাড়ি দেখলেন। যে তার অর্ধেক দাড়ি সাদা ও অর্ধেক কালো ছিল। আর এতটাই লম্বা ছিল যে সেটি তার নাভি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। 
 
দ্বিতীয়তঃ সেটি রাখার ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ থাকার কারণে বিধানটি পালন করা ওয়াজিব হয়ে গেছে। কারণ রাসূল (সাঃ) তার উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং দাড়ি মুন্ডন করা অন্য ধর্মের শে‘আর হওয়ার কারণে তাদের বিরোধিতা করতে বলেছেন, যা পালন করা সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক। যেমন হাদীছে এসেছে,  
  • আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা গোঁফ অধিক ছোট করবে এবং দাড়ি ছেড়ে দিবে। অন্য একটি হাদীছে এসেছে,
  • ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে গোঁফ খাটো করতে এবং দাড়ি লম্বা করতে আদেশ করেছেন।

দাড়ি কামানো বা শেভ করা ইহুদী-নাছারাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে

রাসূল (সাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে যে সকল ইহুদী-নাছারা ছিল তাদের অধিকাংশ দাড়ি মুন্ডন করত। আবার যে কয়জন দাড়ি রাখত তারা মেহেদী ব্যবহার করত না। সেজন্য রাসূল (সাঃ) স্বীয় উম্মতকে তাদের দু’টি কর্মেরই বিরোধী আমল করার নির্দেশ দেন। 
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা দাড়ি ছেড়ে দাও, গোঁফ ছোট কর, পাকা চুলে (কালো ছাড়া অন্য) খেযাব (মেহেদী) লাগাও এবং ইহুদী ও নাছারাদের সাদৃশ্য অবলম্বন কর না। অন্য একটি হাদীছে এসেছে, ছাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সাঃ) কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) নিশ্চয়ই আহলে কিতাব তথা ইহুদী ও নাছারারা দাড়ি মুন্ডন করে এবং গোঁফ লম্বা করে। 

তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমরা গোঁফসমূহ খাটো করে ফেল এবং দাড়িগুলো ছেড়ে দাও। আর আহলে কিতাবদের বিরোধিতা কর। অত্র হাদীছদ্বয় প্রমাণ করে যে, দাড়ি মুন্ডন করা ধর্মহীন ইহুদী-নাছারাদের বৈশিষ্ট্য, যা থেকে বেঁচে থাকা সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক। 

রাসূল (সাঃ) এর আমলে ধার্মিক ইহুদী-নাছারারাও দাড়ি রাখত। হাবশার বাদশাহ নাজাশী যখন জা‘ফর বিন আবী তালেবের কুরআন তেলাওয়াত শুনছিলেন। তখন তার চোখের পানি দাড়িতে গড়িয়ে পড়ছিল।অন্য একটি হাদীছে এসেছে, আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, আমরা একদিন রাসূল (সাঃ) এর নিকটে বসা ছিলাম। এমন সময় একদল ইহুদী তার কাছে আগমন করল।  

তিনি তাদের সাদা পাকা দাড়ি দেখে বললেন, তোমরা একে পরিবর্তন কর না কেন? তাকে বলা হ’ল, তারা শুভ্রতা পরিবর্তন করাকে অপসন্দ করে। তখন নবী (সাঃ) বললেন, কিন্তু তোমরা তোমাদের দাড়ির শুভ্রতাকে পরিবর্তন করবে। তবে অবশ্যই কালো রঙ থেকে বিরত থাকবে। উল্লেখ্য, বর্তমান মুসলমানরা যেমন দাড়ি কর্তন করে তৎকালীন ইহূদী ও নাছারারাও দাড়ি কেটে ফেলত।

দাড়ি মুন্ডন করা মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে

রাসূল (সাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আমলে মক্কাসহ তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য ছিল দাড়ি মুন্ডন বা শেভ করা এবং লম্বা গোঁফ রেখে মুখ আবৃত করা। রাসূল (সাঃ) এই ধরনের ফিৎরাত বিরোধী আমলের কথা জানার পর এর চরম বিরোধিতা করেন। এবং তাঁর উম্মতকে দাড়ি রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ কর। তোমরা গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি ছেড়ে দাও। অন্যত্র রাসূল (সাঃ) আরো স্পষ্ট করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুশরিকেরা গোঁফ লম্বা করে এবং দাড়ি ছেঁটে ফেলে। তোমরা তাদের বিরোধিতা করতঃ দাড়ি লম্বা কর এবং গোঁফ ছেঁটে ফেল।

দাড়ি মুন্ডন করা অগ্নিপূজকদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে

রাসূল (সাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে তৎকালীন পারস্যের লোকেরা আগুনের পূজা করত। তাদের অন্যতম শারীরিক বৈশিষ্ট্য ছিল দাড়ি মুন্ডন করা এবং গোঁফ লম্বা করা। তারা কখনো দূত হিসাবে রাসূল (সাঃ) এর নিকট আগমন করলে তাদের দাড়ি মুন্ডন করা দেখে তিনি মুখ ফিরিয়ে নিতেন। আর তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করতেন।  
 
তিনি ছাহাবায়ে কেরামকে তাদের বিরোধিতা করতে বলতেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা গোঁফ ছেঁটে ও দাড়ি রেখে অগ্নিপূজকদের বিপরীত কর।আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (সাঃ) অগ্নিপূজকদের সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, তারা নিজেদের গোঁফ লম্বা করে এবং দাড়ি কামিয়ে ফেলে। 

অতএব তোমরা তাদের বিপরীত আমল কর। অন্যত্র রাসূল (সাঃ) বলেন, ইসলামের ফিৎরাত হ’ল জুম‘আর দিনে গোসল করা, মেসওয়াক করা, গোঁফ ছেঁটে ফেলা ও দাড়ি লম্বা করা। কেননা অগ্নিপূজকরা গোঁফ লম্বা করে ও দাড়ি ছেঁটে ফেলে। অতএব তোমরা তাদের বিরোধিতা কর, গোঁফ মুন্ডন কর এবং দাড়িকে লম্বা কর। 

আব্দুল্লাহ বিন ওৎবা বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক রাসূল (সাঃ) এর নিকট আগমন করল। যে তার দাড়িকে মুন্ডন করেছিল এবং গোঁফকে লম্বা করেছিল। নবী করীম (ছাঃ) তার মুখের অবস্থা দেখে বললেন, এটা কী? সে বলল, আমাদের দ্বীনে এটাই বিধান রয়েছে। তখন নবী করীম (সাঃ) বললেন, 

আমাদের দ্বীনে রয়েছে যে, আমরা গোঁফ ছেঁটে ফেলব এবং দাড়িকে ক্ষমা করে দিব। অত্র হাদীছ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, দাড়ি মুন্ডন করা অগ্নিপূজকদের ধর্মীয় নিদর্শন। আর তাদের ধমীর্য় শে‘আর বা নিদর্শন কোন মুসলমান পালন করতে পারে না। 

দাড়ি মুন্ডন বা শেভ করা অনারব কাফেরদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে

দাড়ি মুন্ডন করা কেবল ইহুদী-নাছারা, মুশরিক বা অগ্নিপূজকদের বৈশিষ্ট্য নয়। বরং এটি ছিল ইসলাম বিরোধী সকল কাফেরের বৈশিষ্ট্য। সেজন্য রাসূল (সাঃ) দাড়ি শেভ করার বা কাটার ব্যাপারে কোন ছাড় দেননি। ইয়াহইয়া ইবনু কাছীর বলেন, জনৈক অনারব মসজিদে প্রবেশ করল। যে তার গোঁফকে লম্বা করেছিল। এবং দাড়ি কেটে ফেলেছিল। 

রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, কীসে তোমাকে এই কাজ করতে উৎসাহিত করল? সে বলল, মহান আল্লাহ আমাকে এ কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন রাসূল সাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে আমরা দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছেঁটে ফেলি। সুতরাং দাড়ি রাখা কেবল নবীর নির্দেশ নয় বরং আল্লাহরও নির্দেশ। একদা পারস্য থেকে দু’জন দূত রাসূল (সাঃ) এর নিকট প্রবেশ করল। 

যারা তাদের গোঁফ লম্বা করেছিল এবং দাড়ি কেটে ফেলেছিল। রাসূল (সাঃ) তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করতে ঘৃণা পোষণ করলেন। পরে তাদের নিকট এসে বললেন, তোমাদের ধ্বংস হৌক, কে তোমাদেরকে এই কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছে? 

তারা বলল, আমাদের রব তথা পারস্য সম্রাট কেসরা। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, কিন্তু আমার রব আল্লাহ তা‘আলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে আমি দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছেঁটে ফেলি।

ইমাম খাত্ত্বাবী (রহঃ) বলেন, ইহফাউল লিহ্ইয়া হ’ল একে ছেড়ে দেওয়া ও বৃদ্ধি করা। অনারবদের কর্মের মত দাড়ি কর্তন করতে আমাদের জন্য ঘৃর্নিত করা হয়েছে। কিসরাদের বেশ-ভূসা ছিল দাড়ি কর্তন করা ও গোঁফ লম্বা করা। ফলে নবী করীম (সাঃ) তার উম্মতকে বেশ-ভূষা ও ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ উপরোক্ত হাদীছগুলোতে রাসূল (সাঃ) ইহুদী-নাছারা, মুশরিক ও অগ্নিপূজকদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে নিষেধ করলেন। এবং দাড়ি রাখার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে বলেছেন। কারণ তারা দাড়ি রাখে না। সাথে সাথে মুসলমানদের নির্দেশ দিলেন। যেন তারা অবশ্যই দাড়ি রাখে। আর কোন বিষয়ে রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ সেই বিধানটি ওয়াজিব হওয়ার দলীল। 

এ ব্যাপারে হানাফী, শাফেঈ, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের সকল ইমামের একমত রয়েছে। যে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব এবং দাড়ি কামানো বা শেভ করা হারাম। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্যকারীর শাস্তির ব্যাপারে বলেন, অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে (সুরা নূর আয়াত নং-৬৩) 

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’ (সুরা হাশর আয়াত নং-৭) অত্র আয়াতের শেষেও আল্লাহ কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করে রাসূলের নির্দেশ অমান্যকারীদের সতর্ক করেছেন।

দাড়ি শেভ বা কামিয়ে ফেলা ইহুদী-নাছারা ও মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য

দাড়ি মুন্ডন করাতে ইহুদী-নাছারা, মুশরিক ও অগ্নিপূজকদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। যে সাদৃশ্য অবলম্বন করতে রাসূল (সাঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কারণ কেউ কোন ধর্মের সাথে সাদৃশ্য পোষণ করলে সে তাদেরই অর্ন্তভুক্ত হয়ে যায়। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা তাদের ধর্মীয় নিদর্শন পালন করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতেও নিষেধ করেছেন। 

আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তারা তাদের মধ্যে গণ্য হবে। (মায়েদাহ আয়াত নং-৫১) রাসূল (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আরো বলেন, যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রেখে চলে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইহূদী ও নাছারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না। 

অন্যত্র রাসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মৃত্যু অবধি কাফের-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য পোষণ করল সে ক্বিয়ামতের দিন তাদের সাথে হাশর করবে। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা হারাম। যেখানেই ইহুদী-নাছারা বা মুশরিকদের আমলের কথা এসেছে, সেখানেই রাসূল তাদের বিপরীত আমল করার আদেশ দিয়েছেন।

দাড়ি শেভ বা মুন্ডন করা নারীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণঃ- দাড়ি মুন্ডন করাতে নারীদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে, যা করতেও রাসূল (সাঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। রাসূল (সাঃ) বলেন, আল্লাহর লা‘নত সেই পুরুষদের উপর যারা নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং সেই সকল নারীদের উপর যারা পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে। 

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এটি গোপন নয় যে, পুরুষদের দাড়ি মুন্ডন করা, যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছেন, নারীদের সাথে বড়ই সাদৃশ্যপূর্ণ। তিনি আরো বলেন। নারীদের সাথে পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন হারাম করা হয়েছে। আর পুরুষদের জন্য দাড়ি মুন্ডন করা নারীদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে, যেটি তাদের প্রকাশ্য নারীত্বের পরিচায়ক। ফলে দাড়ি মুন্ডন করা হারাম ও দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব সাব্যস্ত হ’ল।

দাড়ি কামানো বা শেভ করা পুরুষ হিজড়াদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ 

দাড়ি মুন্ডন করাতে পুরুষ হিজড়াদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ তারা নিজেদের পরিচয় লুকাতে দাড়ি শেভ বা মুন্ডন করে থাকে। তাদের সাথেও সাদৃশ্য পোষণ করতে রাসূল (সাঃ) নিষেধ করেছেন। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন। নবী করীম (সাঃ) পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লা‘নত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও’। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) অমুককে বের করেছেন এবং ওমর (রাঃ) অমুককে বের করে দিয়েছেন। সেজন্য কোন কোন বিদ্বান দাড়ি মুন্ডন করাকে পুরুষ হিজড়াদের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন।

ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ৫ম খলীফা খ্যাত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয, বিচারক ইবনু আবী লায়লাসহ অন্যান্য সালাফগণ দাড়ি মুন্ডনকারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করতেন না। দাড়ি একজন মুসলিমের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেই তারা দাড়ি মুন্ডনকারীর সাক্ষ্য গ্রহণ করতেন না। তাছাড়াও দাড়ির ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরাম এবং সালাফে ছালেহীন তথা আমাদের নেককার উত্তরসূরীরাও আমাদেরকে সঠিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের কেউই দাড়ি শেভ করতেন না।

ছাহাবী ক্বায়েস ইবনে সা‘দ (রাঃ)-এর দাড়ি গজায়নি। ছোট থেকে তিনি গোত্রের নেতৃত্ব দিতেন। কিন্তু দাড়ি না থাকার কারণে তাকে নেতা মানাত না। সেজন্য তার কওম আনছার ছাহাবীগণ বলতেন, ‘বীরত্ব ও সাহসিকতায় কতইনা সেরা মানুষ হ’লেন আমাদের নেতা ক্বায়েস ইবনে সা‘দ। কিন্তু কষ্টের বিষয় হ’ল, তার কোন দাড়ি নেই। 

সেজন্য আনছারগণ আফসোস করে বলতেন, ধন-সম্পদ দিয়ে ক্বায়েসের জন্য যদি আমাদের পক্ষে দাড়ি কেনা সম্ভব হ’ত, তাহলে আমরা তার জন্য দাড়ি ক্রয় করতাম। ইবনুল আছীর বলেন, তার মুখে কোন চুল-দাড়ি ছিল না। আনছারগণ বলতেন, আমাদের কামনা হয় ধন-সম্পদ দিয়ে ক্বায়েসের জন্য যদি দাড়ি ক্রয় করা যেত, তাই করতাম। এরপরেও তিনি খুব সুন্দর ছিলেন।

তদ্রূপ তাবেঈ আহনাফ ইবনু ক্বায়েসেরও কোন দাড়ি ছিল না, তিনিও তার গোত্রের নেতা ছিলেন। তার গোত্রের লোকেরা বলতেন, আমরা কামনা করতাম, যদি দাড়ি কিনতে বিশ হাজার দিরহামও লাগে, তা দিয়ে তার জন্য দাড়ি কিনতাম। তিনি টেরা এবং লেংড়া ছিলেন অথচ তারা সেগুলোকে দোষ হিসাবে গণ্য করেননি। 

কিন্তু দাড়ি না থাকাটাকে তারা আফসোসের কারণ হিসাবে গণ্য করেছেন। কাযী শুরাইহ বলতেন,দশ হাযার মুদ্রার বিনিময়ে আমার দাড়ি থাকলে সেটি আমার নিকট প্রিয় হতো আফসোসের বিষয় হ’ল যেখানে আমাদের সালাফ বা পূর্বসূরিগণ দাড়ি কেনার জন্য হাযার হাজার দিরহাম ব্যয় করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। 

সেখানে আজকের মুসলমানরা লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় করে দাড়ি শেভ করে ফেলে দেয়। তাদের থেকে আমরা কত দূরে অবস্থান করছি? তাদের ঈমান এবং আমাদের ঈমানের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে দাঁড়ি রেখে ইসলামের রীতিনীতি মারার তৌফিক দান করুন।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ আর্টিকেল উপরে দাড়ি রাখার এবং দাড়ি কামিয়ে ফেলার ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। তাই আমরা সঠিকভাবে ইসলামের সুন্নাহ মোতাবে দাড়ি রাখব এবং সঠিক দিন দুনিয়ার সব হাসিল করবো আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার এবং মানার তৌফিক দান করুন। আমিন আল্লাহ হাফেজ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন