আমার বা আমাদের পরিচয় কি শুধুই মুসলিম বিস্তারিত জানুন
ধর্মীয় বিষয়ে কিছু আলোচনাপ্রিয় পাঠক আপনি কি মনে করেন। আমি আপনি শুধুই মুসলমান না এর আগে পিছে কিছু
রয়েছে।বর্তমানে মুসলিম সমাজে একটি মতবিরোধপূর্ণ বিষয হলো আমার আমাদের পরিচয় কি
শুধুই মুসলিম? মুসলমানদের অন্য কোন বৈশিষ্ট্যগত নাম থাকতে পারে কি?
নাকি সর্বক্ষেত্রেই আমরা পরিচয় ‘মুসলিম’ দিতে বাধ্য? আল্লাহ রাববুল আলামীন ও
রাসলুল্লাহ সাঃ) কি মুসলমানদেরকে সর্বক্ষেত্রেই মুসলিম হিসাবে উল্লেখ করেছেন?
সম্প্রতি অতি আবেগী কিছু ভাই জোরালো দাবী জানাচ্ছেন যে, মুসলমানদের একমাত্র পরিচয়
হলো মুসলিম।
মুসলিম ভিন্ন আমাদের অন্য কোন পরিচয় বা বৈশিষ্ট্যগত নাম থাকতে পারে না। তারা মনে
করেন কোন মুসলমানের ‘আহলেহাদীছ’ বলে পরিচয় দেয়া বৈধ নয়। তাদের এ মতবাদ কতটুকু
সঠিক তা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জানা সময়ের দাবী। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে
এ বিষয়ে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা বা শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ।
আমাদেরকে সর্ব প্রথমে জানব আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
পবিত্র বাণীতে মুসলমানদেরকে কি কি নামে অভিহিত করেছেন।
পেজ সূচিপত্রঃ আমাদের পরিচয় কি শুধুই মুসলিম
মুসলমানদের জাতিগত নাম হচ্ছে মুসলিম
মুসলমানদের জাতিগত নাম হচ্ছে ‘মুসলিম’। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,مِلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মের উপর (তোমরা দৃঢ় থাক)। তিনি (আল্লাহ) তোমাদের নাম
রেখেছেন ‘মুসলিম’ (সুরা হজ্জ আয়াত নং-৭৮) অন্য আয়াতে তিনি বলেন وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللهِ
وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ ‘ঐ ব্যক্তির
চাইতে কথায় উত্তম আর কে আছে।
যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে সৎকর্ম করে এবং বলে, নিশ্চয়ই আমি
আজ্ঞাবহদের অন্তর্ভুক্ত’ (সুরা হা-মীম সাজদাহ আয়াত নং-৩৩) তিনি আরো বলেন,قُلْ نَزَّلَهُ رُوحُ الْقُدُسِ مِنْ رَبِّكَ بِالْحَقِّ لِيُثَبِّتَ
الَّذِينَ آمَنُوا وَهُدًى وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ ‘বলে দাও, এটি তোমার
প্রতিপালকের পক্ষ হতে পবিত্র রূহ (জিব্রীল আমিন) যথার্থভাবে নাযিল করেছেন।
যাতে তিনি মুমিনদের দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এবং এটি মুসলমানদের জন্য পথনির্দেশ
ও সুসংবাদ স্বরূপ’ (সুরা নাহল আয়াত নং-১০২) মহান আল্লাহ আরো বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ
تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহকে ভয় কর এবং অবশ্যই মুসলিম না হয়ে
মৃত্যুবরণ করো না’ (সুরা আলে ইমরান আয়াত নং- ১০২)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন,
وَأُمِرْتُ لِأَنْ أَكُونَ أَوَّلَ الْمُسْلِمِينَ ‘আর আমি আদিষ্ট হয়েছি।
যেন আমি মুসলিমদের প্রথম হই’ (সুরা যুমার আয়াত নং-১২)
এই বিষয়ে আল্লার রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর হাদীছ সমূহ,
- আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ সেই (প্রকৃত) মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হ’তে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন, مَنْ صَلَّى صَلاَتَنَا، وَاسْتَقْبَلَ قِبْلَتَنَا، وَأَكَلَ ذَبِيحَتَنَا، فَذَلِكَ الْمُسْلِمُ যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় ছালাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয়। আর আমাদের যবেহকৃত প্রাণী খায়, সে-ই মুসলিম।
- আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেক্বী এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী।
- জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, بَايَعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছি ছালাত ক্বায়েম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সকল মুসলিমের কল্যাণ কামনা করার।
- আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, إِنَّ مِنَ الشَّجَرِ شَجَرَةً لاَ يَسْقُطُ وَرَقُهَا، وَإِنَّهَا مَثَلُ الْمُسْلِمِ ‘গাছগাছালির মধ্যে এমন একটি গাছ রয়েছে। তার পাতা ঝরে পড়ে না। আর এটাই মুসলিমের উদাহরণ। এভাবে অসংখ্য আয়াত ও হাদীছে আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
মুসলমানদের জাতিগত নাম হচ্ছে মুমিন
কুরআনুল কারীমে অনেক আয়াত ও ছহীহ হাদীছে আমাদেরকে যেমন মুসলিম নামে পরিচিত করা
হয়েছে, তেমনি অনেক আয়াত ও হাদীছে মুমিন হিসাবেও পরিচয় দাওয়া হয়েছে। কুরআনুল
মাজিদে দু’টি সূরা এ নামেই নামকরণ করে আল্লাহ তাআলা নাযিল করেছেন। সূরা দুটি
হচ্ছে মুমিন ও অপরটি মুমিনূন। এখানে যে সমস্ত আয়াত ও হাদীছে আমাদেরকে মুমিন এর
ব্যাপারে বর্ণনা করেছে।
ঠিক তেমনভাবেই আরো আয়াত কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা এলো। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاَتِهِمْ
خَاشِعُونَ‘ নিশ্চয়ই সফলকাম হবে মুমিনগণ। যারা তাদের ছালাতে মনোযোগী’ (সুরা মুমিনূন আয়াত
নং-১-২) তিনি আরো বলেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ
زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ মুমিন কেবল
তারাই,
যখন তাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করানো হয়। তখন তাদের অন্তর ভয়ে কেঁপে ওঠে। আর যখন
তাদের উপর আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়। তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। এবং তারা
তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। (সুরা আনফাল আয়াত নং-২) অন্য জায়গায় তিনি আরো
বলেন,
أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ
وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ‘তারাই হলো সত্যিকারের মুমিন।
তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক
উপজীবিকা’ (সুরা আনফাল আয়াত নং-৪) কোরআন মাজিদে অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلاَ يُجْزَى إِلاَّ مِثْلَهَا وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا
مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ
يُرْزَقُوْنَ فِيهَا، بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘যে মন্দকর্ম করবে, সে তার অনুরূপ ফল ব্যতীত পাবে না।
আর যে পুরুষ বা নারী সৎকর্ম করবে মুমিন অবস্থায়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা
সেখানে অফুরন্ত রিযিক প্রাপ্ত হবে। (সুরা মুমিন আয়াত নং-৪০) পবিত্র কুরআনে আরো
এরশাদ হয়েছে।وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُمْ مِنَ اللهِ فَضْلاً كَبِيرًا
‘তুমি মুমিনদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে মহা
অনুগ্রহ’ (সুরা আহযাব আয়াত নং-৪৭)
উক্ত বিষয়ে আলোকে ছহীহ হাদীছ সমূহ
মু‘আবিয়াহ ইবনুল হাকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর
নিকট এসে বললাম,
وَكَانَتْ لِي جَارِيَةٌ تَرْعَى غَنَمًا لِي قِبَلَ أُحُدٍ
وَالْجَوَّانِيَّةِ، فَاطَّلَعْتُ ذَاتَ يَوْمٍ فَإِذَا الذِّئْبُ قَدْ ذَهَبَ
بِشَاةٍ مِنْ غَنَمِهَا، وَأَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِي آدَمَ، آسَفُ كَمَا
يَأْسَفُونَ، لَكِنِّي صَكَكْتُهَا صَكَّةً، فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَظَّمَ ذَلِكَ عَلَيَّ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ
أَفَلاَ أُعْتِقُهَا؟ قَالَ: ائْتِنِي بِهَا فَأَتَيْتُهُ بِهَا، فَقَالَ
لَهَا: أَيْنَ اللهُ؟ قَالَتْ: فِي السَّمَاءِ، قَالَ: مَنْ أَنَا؟ قَالَتْ:
أَنْتَ رَسُولُ اللهِ، قَالَ: أَعْتِقْهَا، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ
আমার এক দাসী ছিল। সে ওহোদ ও জাওয়ানিয়্যাহ এলাকায় আমার বকরী চরাত।
একদিন আমি হঠাৎ সেখানে গিয়ে দেখলাম। বকরীপাল থেকে একটি বকরী নেকড়ে নিয়ে গেছে। আমি
তো অন্যান্য আদম সন্তানের মতো একজন মানুষ। তাদের মতো আমিও রাগে তাকে চপেটাঘাত
করলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আসলাম। এবং সমস্ত কথা খুলে বললাম।
কেননা বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুতর মনে হয়েছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমি কি তাকে (দাসীকে) মুক্ত করে দিব?
তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। সুতরাং আমি তাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে
উপস্থিত করলাম।
তিনি তাকে (দাসীকে) জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ কোথায়? সে বলল, আকাশে। নবী করীম (সাঃ)
বললেন, আমি কে? সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন,
তুমি তাকে মুক্ত করে দাও, কেননা সে একজন মুমিনা নারী।
যায়েদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) আমাদের নিয়ে হুদায়বিয়াহ প্রান্তরে (বৃষ্টিপাতের পরে) ফজরের ছালাত আদায়
করলেন। ছালাত সম্পন্ন করে তিনি উপস্থিত লোকদের লক্ষ্য করে বললেন। তোমরা কি জান রব
কি বলেছেন? তারা উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ই ভাল জানেন।
তিনি বললেন, আল্লাহ এরশাদ করেছেন, আমার কতিপয় বান্দা সকালে উঠেছে মুমিনরূপে এবং
কতিপয় বান্দা উঠেছে কাফেররূপে। যারা বলেছে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় বৃষ্টিপাত
হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী। আর যারা বলেছে
যে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমার প্রতি অবিশ্বাসী এবং
নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
وَالمُؤْمِنُ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ
‘(প্রকৃত) মুমিন সে ব্যক্তি যার থেকে মানুষ নিজের জীবন ও সম্পদকে সম্পূর্ণ নিরাপদ
মনে করে’।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘কোন ব্যভিচারী মুমিন
অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর
মুমিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মুমিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না।
যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ! ذَرَارِيُّ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: مِنْ
آبَائِهِمْ. فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ بِلاَ عَمَلٍ؟ قَالَ: اللهُ أَعْلَمُ
بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ
‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মুমিনদের
(নাবালেগ) বাচ্চাদের (জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে) কি হুকুম? তিনি
উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুগামী হবে। আমি বললাম, কোন নেক আমল ছাড়াই? তিনি
বললেন, আল্লাহ তা‘আলাই অধিক জানেন তারা জীবিত থাকলে কি আমল করত।
মুসলমানদের জাতিগত নাম হচ্ছে মুত্তাক্বী
একজন মুসলিমের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগত নাম হলো মুত্তাক্বী। কুরআন মাজীদে অসংখ্যবার
পরিপূর্ণ মুসলিমদেরকে মহান আল্লাহ মুত্তাক্বী বলে সম্বোধন করেছেন। যেমন আল্লাহ
বলেন, إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا ‘নিশ্চয়ই মুত্তাক্বীদের জন্য রয়েছে
সফলতা’ (সুরা নাবা আয়াত নং-৩১) অন্যত্র তিনি বলেন, إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَعِيمٍ ‘নিশ্চয়ই মুত্তাক্বীরা থাকবে জান্নাতে ও সুখ সম্ভোগে’ (সুরা তূর আয়াত
নং-১৭)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। জেনে রেখো আল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথে থাকেন’ (সুরা
বাক্বারাহ আয়াত নং-১৯৪) পবিত্র কুরআনে মাজিদে আরো এসেছে,
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ ‘নিশ্চয়ই মুত্তাক্বীরা থাকবে
জান্নাতে ও নদী সমূহের মাঝে’ (সুরা ক্বামার আয়াত নং-৫৪)
অন্যত্র আরো আয়াত এসেছে, وَاللهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ ‘আর আল্লাহ হলেন
মুত্তাক্বীদের বন্ধু’ (সুরা জাছিয়াহ আয়াত নং-১৯) আল্লাহ আরো বলেন,
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ، فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ،
يَلْبَسُونَ مِنْ
سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَقَابِلِينَ ‘নিশ্চয়ই মুত্তাক্বীরা থাকবে
নিরাপদ স্থানে। বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণা সমূহের মাঝে। তারা সেখানে পরিধান করবে মিহি ও
মোটা রেশমের কাপড় সমূহ এবং বসবে মুখোমুখি’ (সুরা দুখান আয়াত নং-৫১-৫৩)
এ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কিছু ছহীহ হাদীছ সমূহঃ উক্ববাহ ইবনু আমের (রাঃ)
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, أُهْدِىَ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فَرُّوجُ حَرِيرٍ فَلَبِسَهُ فَصَلَّى فِيهِ ثُمَّ انْصَرَفَ
فَنَزَعَهُ نَزْعًا شَدِيدًا كَالْكَارِهِ لَهُ وَقَالَ: لاَ يَنْبَغِى هَذَا
لِلْمُتَّقِينَ- ‘নবী করীম (সাঃ) কে একটা রেশমী জুববা হাদিয়া হিসাবে দেওয়া
হয়েছিল। তিনি তা পরিধান করে ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু ছালাত শেষ হবার সাথে সাথে
দ্রুত তা খুলে ফেললেন, যেন তিনি তা পরা অপসন্দ করছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন,
মুত্তাক্বীদের জন্য এই পোষাক সমীচীন নয়।
উরওয়া ইবনু যুবায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ قَامَ بِمَكَّةَ، فَقَالَ: إِنَّ نَاسًا
أَعْمَى اللهُ قُلُوبَهُمْ، كَمَا أَعْمَى أَبْصَارَهُمْ يُفْتُونَ
بِالْمُتْعَةِ، يُعَرِّضُ بِرَجُلٍ فَنَادَاهُ، فَقَالَ: إِنَّكَ لَجِلْفٌ
جَافٍ فَلَعَمْرِي لَقَدْ كَانَتِ الْمُتْعَةُ تُفْعَلُ عَلَى عَهْدِ إِمَامِ
الْمُتَّقِينَ- يُرِيدُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ
لَهُ ابْنُ الزُّبَيْرِ: فَجَرِّبْ بِنَفْسِكَ فَوَاللهِ لَئِنْ فَعَلْتَهَا
لَأَرْجُمَنَّكَ بِأَحْجَارِكَ
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) মক্কায় (ভাষণ দিতে) দাঁড়িয়ে বললেন,
কিছু লোক এমন আছে আল্লাহ তাআলা যেমন তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন। তেমনি অন্তরকেও
অন্ধ করে দিয়েছেন। তারা মুত‘আর পক্ষে ফৎওয়া দেয়। এ কথা বলে তিনি এক ব্যক্তির
প্রতি ইঙ্গিত করলেন। সে তাকে ডেকে বলল, তুমি একটি অসভ্য ও কান্ডজ্ঞানহীন
ব্যক্তি।
আমার জীবনের শপথ! ইমামুল মুত্তাক্বীন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে মুত‘আহ প্রচলিত
ছিল। ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি নিজে একবার করে দেখুন। আল্লাহর শপথ!
আপনি যদি তা (মুত‘আহ) করেন তাহলে পাথর দিয়েই আপনাকে রজম (পাথর নিক্ষেপে হত্যা)
করব।
মুসলমানদের জাতিগত নাম হচ্ছে মুহাজির ও আনছার
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জামানাই মুসলিমদের মাঝে দু’টি শ্রেণী ছিল। তাহলো মুহাজির ও
আনছার। তাদের পরিচয় বা নাম মুসলিম থাকা সত্ত্বেও স্বয়ং আল্লাহ রাববুল আলামীন ও
তাঁর রাসূল (সাঃ) তৎকালীন মুসলিমদেরকে বৈশিষ্ট্যগত নাম ‘মুহাজি’র ও ‘আনছার’ নামে
অভিহিত করেছেন।
যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন কুরআনুল কারীমে ,وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ
وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ
بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ
تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ
الْعَظِيمُ
প্রথম দিকের মুহাজির ও আনছারগণ এবং পরে যারা তাদের অনুসারী হয়েছে নিষ্ঠার সাথে,
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।
তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে
তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হ’ল মহা সফলতা’ (সুরা তওবা আয়াত নং-১০০) আল্লাহ
তায়ালা পবিত্র কালামে আরো ঘোষণা করেছেন, لَقَدْ تَابَ اللهُ عَلَى
النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي
سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ
ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘নিশ্চিতভাবে আল্লাহ দয়াশীল হয়েছেন।
নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনছারদের প্রতি, যারা দুঃসময়ে তার অনুসারী হয়েছিল। যখন
তাদের এক দলের অন্তর টলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি দয়াপরবশ
হলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়াময়’ (সুরা তওবা আয়াত নং-১১৭)
কোরআন মাজিদে অন্য আয়াতে তিনি আরো বলেন,
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ
أُمَّهَاتُهُمْ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ
اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ، ‘নবী (মুহাম্মাদ) মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তঁার
স্ত্রীগণ তাদের মা। আর আল্লাহর কিতাবে রক্ত সম্পর্কীয়গণ পরস্পরের অধিক নিকটবর্তী
অন্যান্য মুমিন ও মুহাজিরদের চাইতে’ (সুরা আহযাব আয়াত নং-৬)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ
وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُوْنَ فَضْلاً مِنَ اللهِ وَرِضْوَانًا
وَيَنْصُرُونَ
اللهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ অভাবগ্রস্ত
মুহাজিরদের জন্য। যারা তাদের ঘর-বাড়ি ও মাল-সম্পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। যারা
আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে। এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে।
এরাই হলো সত্যবাদী (সুরা হাশর আয়াত নং-৮)
এ বিষয়ের প্রতি ভিত্তি করে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহঃ আনাস (রাঃ) হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) শীতের এক সকালে বের হ’লেন। মুহাজির ও আনছাররা
তখন খন্দক খনন করছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আখেরাতের কল্যাণই সত্যিকারের
কল্যাণ। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। এর জবাবে তারা বলল, আমরা
তারাই,
যারা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর হাতে বায়‘আত করেছি। মৃত্যু অবধি জিহাদ করার জন্য। বারা
ইবনু আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
اسْتُصْغِرْتُ أَنَا وَابْنُ عُمَرَ يَوْمَ بَدْرٍ وَكَانَ الْمُهَاجِرُونَ
يَوْمَ بَدْرٍ نَيِّفًا عَلَى سِتِّينَ وَالأَنْصَارُ نَيِّفًا وَأَرْبَعِينَ
وَمِائَتَيْنِ
‘বদরের দিন আমাকে ও ইবনু ওমরকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক গণ্য করা হয়েছিল, এ যুদ্ধে
মুহাজিরদের সংখ্যা ছিল ষাটের বেশী এবং আনছারদের সংখ্যা ছিল দুই শত চল্লিশেরও
অধিক।
গায়লান ইবনু জারীর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, قُلْتُ لأَنَسٍ أَرَأَيْتَ اسْمَ الأَنْصَارِ كُنْتُمْ تُسَمَّوْنَ بِهِ أَمْ
سَمَّاكُمُ اللهُ قَالَ بَلْ سَمَّانَا اللهُ كُنَّا نَدْخُلُ عَلَى أَنَسٍ
فَيُحَدِّثُنَا مَنَاقِبَ الأَنْصَارِ وَمَشَاهِدَهُمْ ‘আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম। আপনাদের আনছার নামকরণ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য
কি? এ নাম কি আপনারা করেছেন, না আল্লাহ আপনাদের এ নামকরণ করেছেন?
আনাস (রাঃ) বললেন, বরং আল্লাহ তা‘আলা আমাদের এ নামকরণ করেছেন। (গায়লান (রহঃ)
বলেন,) আমরা যখন আনাস (রাঃ)-এর নিকট যেতাম, তখন তিনি আমাদেরকে আনছারদের গুণাবলী ও
কার্যাবলী বর্ণনা করে শুনাতেন।
মুসলমানদের জাতিগত নাম হচ্ছে ছাহাবী
কুরআনুল কারীমে ছাহাবী শব্দের উল্লেখ পাওয়া না গেলেও বহু ছহীহ হাদীছে রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) এর সময়কার মুসলিমদেরকে ছাহাবী বলা হয়েছে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِى فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ
ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ
‘তোমরা আমার ছাহাবীগণকে গালমন্দ করো না। তোমাদের কেউ যদি ওহোদ পর্বত পরিমাণ
স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাদের এক মুদ বা অর্ধমুদ এর সমপরিমাণ
ছওয়াব হবে না।
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,وَإِنَّ بني
إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ
أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ
مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا
عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي- ‘বনু ইস্রাঈল ৭২ ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩
ফের্কায় বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। তারা বললেন, সেটি কোন
দল হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তিনি বললেন, যারা আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি,
তার উপরে টিকে থাকবে।
আবু ইদরীস আইযুল্লাহ হতে বর্ণিত, উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ) যিনি নবী করীম (সাঃ)এর
সঙ্গে বদর যুদ্ধে এবং আকাবার রাতে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বর্ণনা করেছেন যে,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাহাবীদের একটি দলকে লক্ষ্য করে বললেন, এসো তোমরা আমার কাছে
একথার উপর বায়‘আত কর যে, তোমরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে
না,
তোমরা চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না। তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, কারো
উপর অপবাদ আরোপ করবে না যা তোমরা নিজ হাতে বানিয়ে নাও, তোমরা নেক কাজে আমার
নাফরমানী করবে না, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এসব শর্ত পূরণ করে চলবে সে অবশ্যই
আল্লাহর নিকট তার প্রতিদান পাবে। আর যে এসবের কোন কিছুতে লিপ্ত হয়।
এবং তাকে এ কারণে দুনিয়াতে শাস্তি দেয়া হয়। তবে এ শাস্তি তার প্রতি কাফফারা হয়ে
যাবে। আর যে ব্যক্তি এসবের কোনটিতে লিপ্ত হয়। আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন, তবে তার
ব্যাপারটি আল্লাহ তাআলার ওপর ন্যস্ত। তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলে
ক্ষমা করবেন। উবাদাহ (রাঃ) বলেন, আমিও এসব শর্তের উপর নবী করীম (সাঃ) এর হাতে
বায়‘আত করেছি।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর রামাযান
মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছিয়ামরত অবস্থায় সফরে বের লেন। অতঃপর কাদীদ নামক স্থানে
পৌঁছাবার পর তিনি ছওম ভেঙ্গে ফেললেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে যখনই কোন নতুন বিষয়
প্রকাশ পেত, তাঁর ছাহাবীগণ তা অনুসরণ করতেন।
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,খায়বার যুদ্ধের দিন নবী করীম (সাঃ) এর একদল
ছাহাবী বলতে লাগলেন অমুক অমুক শহীদ হয়েছেন। অবশেষে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে তারা
বললেন, সেও শহীদ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, কখনই না। গণীমতের মাল থেকে চাদর
আত্মসাৎ করার কারণে আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি।
আলোচোনা পর্যালোচনাঃ উল্লেখিত আয়াতে কারীমা ও ছহীহ হাদীছ সমূহ হতে
প্রতীয়মান হয়। যে মুসলমানদেরকে আল্লাহ তাআলা ও রাসূলে করীম সাঃ) শুধু মুসলিম
নামেই অভিহিত করেননি। বরং মুসলিম, মুমিন, মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির, ছাহাবী
স্থান-কাল পাত্রভেদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে অভিহিত করেছেন।
এতে বুঝা যায়, আমাদের পরিচয় সর্বক্ষেত্রে মুসলিমই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। বরং
মুমিন, মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির ও ছাহাবী এ পরিচয়গুলো ‘মুসলিম’ শব্দের চেয়ে
অনেক বেশী অর্থবহ এবং আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর নিকট প্রিয়তর শব্দ। মূলতঃ মুমিন,
মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির, ছাহাবী প্রতিটি শব্দের মধ্যেই ‘মুসলিম’ শব্দটি উহ্য
বা লুক্কায়িত আছে।
মুমিন ব্যক্তি মুসলিম তো বটেই বরং তিনি একনিষ্ঠ মুসলিম। অর্থাৎ সকল মুমিনই
মুসলিম। কিন্তু সকল মুসলিম মুমিন নয়। বিষয়টিকে আমরা ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ ও ইসলামী
রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করতে পারি। মুসলিম রাষ্ট্র বলা হয়। যে রাষ্ট্রে মুসলিমদের
সংখ্যা বেশী কিন্তু ইসলামী শরী‘আতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না।
যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি। পক্ষান্তরে ইসলামী
রাষ্ট্র হলো যে মুসলিম দেশ ইসলামী শরী‘আতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। যেমন- সঊদী
আরব। সকল মুত্তাক্বী, আনছার, মুহাজির, ছাহাবী মুসলিম তো বটেই বরং তারা ১ম সারির
মুসলিম। কিন্তু সকল মুসলিম মুত্তাক্বী, আনছার-মুহাজির বা ছাহাবী নয়। অনুরূপভাবে
আহলেহাদীছগণ মুসলিম তো বটেই বরং তারা ১ম সারির মুসলিম।
সর্বক্ষেত্রে মুসলিম পরিচয় দিলে সমস্যা কি?
অতি আবেগী মুসলমানগণ প্রশ্ন তুলতে পারেন। সর্বক্ষেত্রে মুসলিম পরিচয় দিতে সমস্যা
কি? তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমরা নিম্নরূপ বিষয়গুলি আলোচনা করা হচ্ছেঃ-
- যদি সর্বক্ষেত্রে মুসলিম বলে পরিচয় দিলেই যথেষ্ট হতো তবে আল্লাহ তাআলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সর্বক্ষেত্রেই মুসলমানদেরকে মুসলিম বলেই স্বীকৃতি দিতেন। কিন্তু তাঁরা স্থান-কাল-পাত্রভেদে মুসলমানদেরকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছেন।
- এ উম্মতের ৭৩ ফিরক্বার ৭২ ফিরক্বা জাহান্নামী। তারাও মুসলিম। অর্থাৎ শী‘আ, খারেজী, মু‘তাযেলী, ক্বাদারিয়া, জাবারিয়া, জাহামিয়্যা, আশ‘আরিয়া, মুজাসসিমা পথভ্রষ্ট এ সকল সম্প্রদায়ের সকলেই মুসলিম। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, تَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً আমার উম্মত ৭৩ ফিরক্বায় বিভক্ত হবে। তাদের সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি ফিরক্বা ব্যতীত,
প্রত্যেক নবীর উম্মত মুসলিম। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,وَإِذْ أَوْحَيْتُ إِلَى الْحَوَارِيِّينَ أَنْ آمِنُوا بِي وَبِرَسُولِي
قَالُوا آمَنَّا وَاشْهَدْ بِأَنَّنَا مُسْلِمُونَ- ‘আর (হে ঈসা! তুমি স্মরণ কর) যখন আমি হাওয়ারীদের অন্তরে জাগ্রত করে দিলাম যে,
তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তখন তারা বলল, আমরা
বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, নিশ্চয়ই আমরা মুসলিম (সুরা
মায়েদাহ আয়াত নং-১১১)
কুরআনুল কারীমে অন্য অন্নস্থানে আল্লাহ তায়ালা বলেন,وَإِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ قَالُوا آمَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ
رَبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ- ‘যখন তাদের নিকট এটি পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে আমরা এর উপর বিশ্বাস স্থাপন
করলাম। এটা আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে আগত সত্যবাণী। আর আমরা ইতিপূর্বেও
মুসলিম ছিলাম’ (সুরা ক্বাছাছ আয়াত নং-৫৩)
আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা আরো বলেন, فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَأَلْتُكُمْ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ
عَلَى اللهِ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ (নূহ বলল) এরপরেও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে মনে রেখ, আমি তোমাদের
কাছে কোনরূপ বিনিময় চাই না। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। আর আমি
তো আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত থাকি’ (সুরা ইউনুস আয়াত নং-৭২)
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি ছিল আপনি নিজেকে শুধুই কি মুসলমান না আমি পরিচয়
দিবেন। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। সম্পূর্ণ রূপে আর্টিকেল লিখে দিলে
অনেক বিষয়ে ধারণা পাবেন আশা করি। তাই সম্পূর্ণ পড়ার আহবান এবং আপনাদের সুস্থতা
কামনা করে আজকের আর্টিকেলটি এখানে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ