আকসা বা বায়তুল মাকদিস এর গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা-বৈশিষ্ট্য জেনে নিন

আকসা বা বায়তুল মাকদিস এর গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা-বৈশিষ্ট্যপ্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন। মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মাকদিস কিংবা বাইতুল মুকাদ্দাস। গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যদি না জেনে থাকেন। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য আজকে আমরা জানবো মসজিদুল আকসার মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
আকসা বা বায়তুল মাকদিস এর গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা-বৈশিষ্ট্য জেনে নিন
এটা আমাদের অনেকেরই অজানা মসজিদুল আকসা পৃথিবীর বরকতময় ও স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিনের সুন্দর সুশোভিত প্রাচীনতম জেরুজালেম শহরে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। মুসলিম জাতির প্রথম কিবলা ও পৃথিবীর বুকে অবস্থিত সব মুসলমানদের প্রাণের মসজিদ।

পেজ সুচিপত্রঃ আকসা বা বায়তুল মাকদিস এর গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা-বৈশিষ্ট্য

যেকোনো ভাবে বা অন্যদের মাধ্যমে দখলকৃত যেকোনো মুসলিম ভূখণ্ড উদ্ধার করা সমগ্র বিশ্বের ধর্ম  প্রাণ মুসলমানদের অপরিহার্য স্থান আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস। আর তবে ইসলামের প্রথম কিবলার দেশ ফিলিস্তিনের বিষয়টি অন‌্য সবগুলোর চেয়েও ভিন্ন ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

আসুন মুসলমানদের কাছে মসজিদুল আকসা ও ফিলিস্তিন অসামান‌্য মর্যাদা-বৈশিষ্ট‌্য ও প্রাণাধিক প্রিয় হওয়ার নেপথ‌্য-রহস‌্য উম্মোচন করি। এবং হাদিসে ফিলিস্তিন ও মসজিদুল আকসার বিশেষত্ব নিয়ে কী বলা হয়েছে। তা সকল মুসলমানদের জানা অনেক জরুরী। 

তাহলে চলুন মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা ও তথ্য এবং বৈশিষ্ট্য জেনে নিই। মসজিদুল আকসা প্রধান মসজিদ। যেখানে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অন্য সব নবীদের নিয়ে নামাজের ইমামতি করেছিলেন।

প্রিয়নবী (সাঃ) এর গমনস্থল ও ইসরা-মিরাজের সময়

ইসলামের ইতিহাস ও বিশ্বনবীর জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ‌্যায় হলো মিরাজ বা ঊর্ধ্ব গমন। মিরাজ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সন্তান মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন‌্যতম বড় মোজেজা বা নিদর্শন। বিপদে জর্জরিত ও চাচা আবু তালিব ও প্রিয়তমা স্ত্রী খদিজার ইন্তেকালে শোকাভিতো প্রিয়নবীর অশান্ত হৃদয়ে শান্ত্বনার শীতল পরশ বুলানোর নিমিত্তে।
এক অসাধ‌্য সাধন কাজের মাধ‌্যমে নবুয়তের সত‌্যতাকে সুনির্ধারিত করতে আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবীকে একান্ত সান্ন‌্যিধ‌্যে ডেকে নিয়েছিলেন। সৃষ্টিজগতের সেরা আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও তাৎপর্যপূর্ণ এ ঘটনাটিই হলো মিরাজ। আর মসজিদে আকসার দেশ ফিলিস্তিনের বুকেই রচিত হয়। সায়‌্যিদুল আম্বিয়ার সে শ্রেষ্ঠতম আর রাতের ভ্রমণের মাধ্যমে। 

সেসময় সৃষ্টির সেরা দুলালের পদস্পর্শে ধন‌্য হয়। পৃথিবীর বরকতময় ও স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিন। সে রাতে নবীজি মসজিতে আকসা থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত রাতে ভ্রমণ করেন। এরপর বায়তুল মাকদিস হতেই তিনি উর্ধআকাশে গমন করেন জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম এর মাধ্যমে।

‘ইসরা’ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ- سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آَيَاتِنَا পবিত্র তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্য। (সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত নং-১)

أَفَتُمَارُونَهُ عَلَى مَا يَرَى وَلَقَدْ رَآَهُ نَزْلَةً أُخْرَى عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى لَقَدْ رَأَى مِنْ آَيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى ‘সে (মুহাম্মাদ (সাঃ) যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সাথে বিতর্ক করবে নিশ্বয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহা-র (প্রান্তবর্তী বদরী বৃক্ষের) নিকট। যার নিকট অবস্থিত জান্নাতুল মা‘ওয়া। 

যখন বৃক্ষটি যদ্বারা আচ্ছাদিত হবার তদ্বারা ছিল আচ্ছাদিত। তার দৃষ্টি বিভ্রম হয় নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয় নি। সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছিল।

মসজিদুল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল

ইসলামের কিবলা ও কিবলা পরিবর্তনের ইতিহাস একটি বহুল আলোচিত ও পর্যালোচিত বিষয়। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মহানবী (সাঃ) তার সাহাবীদের নিয়ে বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করতেন। আর বায়তুল মাকদিস হলো আমাদের প্রথম কিবলা ছিল। মুসলমানদের প্রথম ভালবাসা। প্রথম ভালবাসা ভোলা সম্ভব হয় না।
আর প্রথমটা পুরাতন হলেও মুসলমানরা তার সুখস্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে বা বেড়াবে সারা জীবন। পরবর্তী সময়ে নবীজির হৃদয়ের চাহিদা ও কামনা মনোবাসনাকে পূর্ণতাসহ বিভিন্ন চাহিদার কারণে আকাঙ্খিত মহান সৃষ্টিতর্কার নির্দেশে কিবলা পরিবর্তিত হলেও এখনও তার ভালবাসা ইসলামের প্রথম সালাতের আদায়ের দিনের মতো প্রজ্জ্বলিত।

হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে মহানবী (সাঃ) কিছু সংখ‌্যক সাহাবায়ে কেরামসহ মদিনার অদূরে মসজিদে বনু সালামায় যোহর মতান্তরে আসরের নামাজ আদায় করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি সময়ে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মহানবী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম চার রাকাতের অবশিষ্ট দুই রাকাত কাবার দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন। 

আর এজন্যই মসজিদটি মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মহানবি (সাঃ) মক্কায় থাকাকালীন সময়ে পবিত্র কাবা তার সামনে থাকাবস্থায় বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেন। মদিনায় হিজরতের পর দীর্ঘ ১৬মাস সেদিকে ফিরেই সালাত আদায় করেন। অতঃপর কাবার দিকে মুসলমানদের কিবলা পরিবর্তিত হয়। (মুসনাদে আহমদ, হাদিসঃ- ২৮৩৬)

আকসা বা বায়তুল মাকদিস পৃথিবীর বুকে স্থাপিত দ্বিতীয় মসজিদ

মসজিদ হলো ইসলামের প্রাণকেন্দ্র। ঈমানের ইস্পাতকঠিন দূর্গ। তাওহিদের বাণীর প্রচার-প্রসার ও কুরআন-হাদিস চর্চার আঁতুড়ঘর। সেকালের জ্ঞানচর্চার প্রধান শিক্ষালয়। ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদ মজসিদুল হারাম হলেও এরপরের স্থানে আছে। প্রাচীনতম জেরুজালেম শহরে অবস্থিত মুসলমানদের তৃতীয় তম মসজিদ মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মাকদিস। 

আকসা বা বায়তুল মাকদিস এ সালাত আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব

কাজের স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে কাজের মর্যাদা ও মান বহুগুণে বেড়ে যায়। তেমনি সালাত আদায় করা ও প্রহরার ক্ষেত্রেও স্থান অনুপাতে এ মর্যাদা শতগুন বেড়ে যায়। মসজিদুল আকসায় সালাত আদায় ও প্রহরায় সওয়াবের বিষয়ে জানতে হলে নিম্নের হাদীসটিতে ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে নিন।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেন যখন সুলায়মান ইবনু দাউদ বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয়ের প্রার্থনা করলেন। তার মতো শাসনক্ষমতা এবং এমন রাজত্ব, যা তার পরে কাউকে প্রদান করা হবে না। 

ও সালাত আদায়ের একনিষ্ঠ মনে উক্ত মসজিদে আগমনকারীর পাপ মোছন করে তার জন্মের দিনের মতো নিস্পাপ করার প্রার্থনা করেছেন। নবীজি (সাঃ) বললেন, আল্লাত তার আবেদনের ভিত্তিতে তাকে দুটি প্রদান করেছেন। তৃতীয়টিও কবুল করেবেন বলে প্রত‌্যাশা করছি। (সুনানে ইবনু মাজাহ)

মসজিদুল আকসায় সফরের প্রতি নবীজির বিশেষ গুরুত্ব সমূহ

আমরা অনেক ছওয়াবের আশায় অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন মসজিদে ভ্রমণ করে থাকে। মসজিদে বরকত বা মৃত ব্যক্তির ফয়েয পাওয়ার আশায় এমনটি করে থাকে। অথচ হাদীছে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আর এর উপর ভিত্তি করে একটি হাদিস নিম্নেঃ-

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ قَالَ لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُوْلِ وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘তিনটি মসজিদ ছাড়া ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। মসজিদুল হারাম, মসজিদে রাসূল (সাঃ) এবং মসজিদুল আক্বছা।

অতএব বড় মসজিদের দোহাই দিয়ে বরকতের আশায় বেশী নেকী অর্জনের জন্য উক্ত তিন মসজিদ ছাড়া পৃথিবীর কোন মসজিদে যাওয়া যাবে না। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মসজিদে যাওয়ার প্রবণতা বর্তমানে বেশী দেখা যাচ্ছে। অথচ রাসূল (সাঃ) দেড় হাজার বছর পূর্বেই এই অভ্যাসের বিরুদ্ধে বলে গেছেন।

সওয়াব এর দিক দিয়ে বাইতুল আকসার সহ বিভিন্ন মসজিদ সমূহ

মসজিদে হারামঃ- আল্লাহর এবাদতের স্থান পৃথিবীর সকল মসজিদই তবে বিভিন্ন মসজিদে আলাদা আলাদা সওয়াব ও মর্যাদা। তবে এই তিনটি মসজিদের সওয়াব ও মর্যাদা আলাদা। পৃথিবীর প্রথম সওয়াব এর ঘর মক্বার কাবাঘর অথবা মসজিদুল হারাম। এ মসজিদে হারাম বলে কাবাঘরসহ চারিদিক পরিবেষ্টিত মসজিদকে।

যদিও হারাম শব্দের অর্থ আলাদা তবে এখানে ‘হারাম’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সম্মানিত। আর এই মসজিদের মধ্যখানে কাবাঘর অবস্থিত। মসজিদে হারামে এক নামাজ ১ লাখ নামাজের সমান।

মসজিদে নববীঃ-মসজিদে নববী হলো ইসলামের সোনালি যুগের সব কর্মকাণ্ডের প্রথম কেন্দ্র। এ মসজিদের এক নামাজ ৫০ হাজার নামাজের সমান। তবে অন্য একটি হাদিসে আছে যে, মসজিদে নববির এক নামাজ ১ হাজার নামাজের সমান। এ হাদিসটি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। (মেশকাত হাদিস নং- ৬৪০)

মসজিদে আকসাঃ- মসজিদে আকসার বিবরণ কোরআনে কারিমে একাধিকবার এসেছে। হজরত নবী করিম (সাঃ) মিরাজ রজনীতে সেখানে গমন করেন। রাসূল (সাঃ) বলেন, মসজিদে আকসার এক নামাজ ৫০ হাজার নামাজের সমান।

জামে মসজিদঃ- মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা ও মসজিদে নববী ব্যতীত অন্যকোনো মসজিদে মুসলমানরা সমবেত হয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা হলে তাকে জামে মসজিদ বলে। এ মসজিদের এক নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।

ওয়াক্ত মসজিদঃ- যে মসজিদে জুমার নামাজ ব্যতীত শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়া হয়, তাকে পাঞ্জেগানা মসজিদ বলে। এ মসজিদের এক নামাজ ২৫ নামাজের সমান।

মসজিদুল আকসা সম্পর্কে নবীজির কাছে কুরাইশদের প্রশ্ন

কুরাইশ মেরাজের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে আরও একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্নের মুখোমুখি করলো এবং তারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তারা জানতে চাইলো।
  • বায়তুল মুকাদ্দাস কোন দিকে অবস্থিত 
  • কোন দিকের দেয়াল কেমন 
  • জানালা কয়টা 
  • দরজা কয়টা
তারা এ জাতীয় বিভিন্ন প্রশ্ন করলো নবীজিকে। সাধারণত এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ আল্লাহর রাসূলের রাত্রীকালীন এই ভ্রমণ ছিলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের ভ্রমণ। তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস দেখতে বা এর দরজা জানালা গুনতে সেখানে যাননি। তবে কুরাইশদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতার মাধ্যমে তার হাবীবের সামনে বায়তুল মুকাদ্দাসের চিত্র তুলে ধরলেন। 

তা দেখে দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসের পুরো বিবরণ তুলে ধরলেন। রাসূলের উত্তর দেওয়ার ভঙ্গিতে মনে হয়েছিলো, যে তিনি সরাসরি বায়তুল মুকাদ্দাস দেখে উত্তর দিচ্ছিলেন। উত্তর শুনে সেই ব্যক্তি বললেন, আপনি সত্য বলেছেন, বায়তুল মুকাদ্দাসের সঠিক বিবরণ তুলে ধরেছেন আপনি।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও এর আগে বায়তুল মুকাদ্দাস দেখেছিলেন, তখন তিনিও বলে উঠেলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি চরম সত্যবাদী। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর রাসূল।(তাফরিরে মাআরিফুল কোরআন, ৫ম-খণ্ড, ৪৩৩, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৩-খণ্ড, ২৬৭)

মসজিদুল আকসা পুনরায় নির্মাণ সম্পর্কে হাদিস থেকে আলোচনা

মসজিদুল আকসা, আল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাসকে বলা হয়। পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু জর গিফারি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! দুনিয়াতে  প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মসজিদুল হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, 

তারপর কোনটি? প্রতি উত্তরে তিনি বললেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। এরপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন চল্লিশ বছরের ব্যবধান। সর্ব প্রথম মসজিদুল আকসা কে নির্মাণ করেছেন তা নিশ্চিত নয়। তবে এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের তিনটি মত পাওয়া যায়। কেউ বলেন, 

এই মসজিদের প্রথম নির্মাতা হলেন আদিপিতা হজরত আদম আলাইহিস সালাম। কেউ বলেন, নুহ আলাইহিস সালামের সন্তান সাম এই মসজিদের আদি নির্মাতা। আবার কারো মতে, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম প্রথম এই মসজিদের ভিত্তি নির্মাণ করেন। আধুনিক গবেষকেরা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে এই মসজিদের প্রথম নির্মাতা বলে মতামত দিয়েছেন। 

নূহ আলাইহিস সালামের মহাপ্লাবনে ধ্বংস হওয়ার পরে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর পুনঃনির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তার বংশধররা এই মসজিদের পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করেন। কালের পরিক্রমায় হজরত মুসা আলাইহিস সালামসহ অনেক নবী এই মসজিদের সংস্কার কাজ কাজ করেন। হজরত দাউদ ও সুলাইমান আলাইহিস সালামের সময় পর্যন্ত অনেক সংযোজনের মধ্য দিয়ে। 

মসজিদুল আকসা বিস্তৃত কম্পাউন্ডে রূপান্তরিত হয়। সুলাইমান আলাইহিস সালাম আকসা চত্বরে একটি আলীশান ভবন নির্মাণ করেন। যেটিকে হায়কালি সুলাইমানি বলা হতো। পরবর্তী সময়ে ধর্ম বিকৃতকারী ইহুদিরা এটিকে তাদের মন্দির হিসেবে গ্রহণ করে। তারা এটির নাম দেয় সলেমন ট্যাম্পল। 

খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী ব্যবিলনের বাদশাহ বুখতে নাসর এই কম্পাউন্ডে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। হায়কালে সুলাইমানিকে সে গুড়িয়ে দেয়। নবীদের স্মৃতিস্মারকগুলোকে লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার ৭০ বছর পর খ্রিস্টপূর্ব ৩৮০ সালে তৎকালীন ইরানের সম্রাট বাবেল শহর জয় করেন। তার আনুকূল্যে ইহুদিরা আবারও বায়তুল মুকাদ্দাসের দখল নেয়। 

আবারও তারা ‘সলেমন ট্যাম্পল’ পুননির্মাণ করে। এটিকে তারা সেকেন্ড ট্যাম্পল নাম দেয়। ইসলাম আগমনের পর হিজরী ১৪ সালে খলিফা ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদুল আকসা জয় করেন। এরপর উমাইয়া, আইয়ূবী, সেলজুক, মামলুক, উসমানীওসহ বিভিন্ন মুসলিম সোনালী শাসনামলে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিলো মুসলিমদের অধীনে।

সর্বশেষ ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে আল আকসার নিয়ন্ত্রণ হারায় মুসলমানরা। এর আগে এটি জর্ডানের শসকদের কর্তৃত্বাধীন ছিল। বর্তমানে আকসা কমপ্লেক্স ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মসজিদ পরিচালিত হয়। 

জর্ডান-ফিলিস্তিনের একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে। এর প্রবেশপথগুলোতে মোতায়েন করা থাকে ইহুদি দখলদার সেনারা। তারা অনেক তল্লাশির পরে মুসল্লিদেরকে মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করতে দেয়।

শেষ কথাঃ

সম্মানিত পাঠক আজকের আর্টিকেল ছিল আকসা বা বায়তুল মাকদিস এর গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা-বৈশিষ্ট্য আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে মসজিদুল আকসা বা বায়তুল বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যাদি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তুর প্রতি বোঝার ও তৌফিক দান করুন আমীন। 

পরিশেষে আল্লাহ পাকের কাছে সকলের জন্য সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর জন্য দোয়া কামনা করে আজকের মত আর্টিকেল শেষ করছি। আল্লাহ হাফিজ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন