কুরআন অশুদ্ধ তেলাওয়াতে ভয়ংকর গুনা করণীয় কি

রোজা রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কেপ্রিয় পাঠক আপনার কি জানেন। অশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতে কি ধরনের ভয়ংকর গুনাহ শুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত না করলে কি হবে। আপনি কি জানতে চান। তাহলে আজকের আর্টিকেলে আমরা অশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতে কি ধরনের ভয়ংকর গুনাহ তা জানবো।
কুরআন অশুদ্ধ তেলাওয়াতে ভয়ংকর গুনা করণীয় কি
পবিত্র কুরআন অশুদ্ধ তেলাওয়াতে কি ধরনের ভয়ংকর গুনাহ তা জানতে আমাদের পেজে চোখ রাখুন। অশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ করতে এবং মাদ মাখরাজ ও তাজবীদ বিষয়ে জানতে করণীয় কি তা বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।

পেজ সূচিঃ অশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াতে কি ধরনের ভয়ংকর গুনাহ 

কোরআন কারীম কি 

পবিত্র কুরআন একটি চিরন্তন, শাশ্বত, মহাগ্রন্থ ও পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ইহা জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল মাধ্যম। ইহা মহাসত্যের সন্ধানদাতা, সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক ইলাহী কিতাব। ইহা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্য জ্ঞান ও হেদায়াত লাভের মূল উৎস। রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা কুরআনকে আবশ্যক করে নাও। কেননা ইহা বিবেকের খোরাক।
প্রজ্ঞার আলোকমালা, জ্ঞানের প্রস্রবন, আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বাধুনিক। আর আল্লাহ তাওরাতে বলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি তোমার উপর সর্বাধুনিক কিতাব নাযিল করেছি। যা অন্ধের দৃষ্টিকে, বধিরের শ্রবণশক্তিকে এবং অনুভূতিশূন্য বদ্ধ হৃদয়ের বোধশক্তিকে উন্মোচিত করবে। কুরআন (القرآن) শব্দের অর্থ পঠিত, বা এখনই পড়া। 

যা সবকিছুকে শামিল করে। আর কুরআনকে ‘কুরআন’ এজন্যই বলা হয়। যে, তাতে শুরু-শেষ, আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান, হালাল-হারাম, প্রতিশ্রুতি-ধমক, শিক্ষণীয় ঘটনাবলী, উপদেশ, দুনিয়া ও আখেরাতের সবকিছুর আলোচনা রয়েছে। আর সেইসাথে রয়েছে আয়াতগুলির একে অপরের সাথে অনন্য সমন্বয় ও সুসামঞ্জস্য। নিম্নে কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব আলোকপাত করা হলো।

কুরআন শিক্ষাগ্রহণকারী ও শিক্ষাদানকারী উত্তম

আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ রয়েছেন। সকল শ্রেণী ও পেশার লোকদের চাইতে কুরআন শিক্ষাগ্রহণকারী ও শিক্ষাদানকারীগণ সর্বউত্তম মানুষ হিসাবে পরিগণিত। হযরত ওছমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে নিজে কুরআন শিখে ও অন্যকে শিখায়। অন্য বর্ণনায় এসেছে, 

নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বউত্তম সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিক্ষা করে ও অন্যকে শিখায়। অতএব কুরআন নিয়মিত তেলাওয়াত করতে হবে। এবং এর সঠিক মর্ম অনুধাবন করে তদনুযায়ী জীবন গঠন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে কুরআন অনুশীলন ও অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন। আমীন
উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের একাধিক ব্যক্তিকে একই কবরে দাফন করা হয়। আর সবের্বাচ্চ কুরআন হিফযকারীকে রাসূল (সাঃ) আগে কবরে নামানোর নির্দেশ দিলেন। যেমন জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,‘নবী করীম (সাঃ) উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের দু’জনকে একই কাপড়ে একত্রিত করেছিলেন। 

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এদের মধ্যে কুরআনে অধিক বিজ্ঞ কে? যখন তাদের কোন একজনের প্রতি ইশারা করা হলো তখন তিনি তাকেই আগে কবরে নামানোর নির্দেশ দিলেন। অত্র ঘটনায় কুরআনে পারদর্শিতা অর্জনের সম্মান বর্ণিত হয়েছে। যা জীবিত ও মৃত সর্ব অবস্থায় প্রযোজ্য।

কুরআন ধরণকারী প্রকৃত আল্লাহওয়ালা

শুদ্ধ করে কুরআন তেলাওয়াত করা। এবং তার আয়াত গুলি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা ও সেগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহওয়ালা হওয়া যায়। রাসূল (সাঃ) বলেন, দুনিয়াতে মানুষের মধ্যে কতিপয় আল্লাহওয়ালা রয়েছেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তারা আবার কারা? 

তিনি বলেন, কুরআন বুকে ধারণকারী প্রকৃত আল্লাহওয়ালা এবং তাঁর নিকটতম। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালবেসে কুরআন মাজীদ শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করে। স্বয়ং আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন এবং তাঁর নিকটবর্তী হিসাবে মনোনীত করেন।

বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষার গুরুত্ব 

বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা অতীব জরুরী। কুরআন তেলাওয়াতের সময় মাখরাজ সমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ না করলে বা তাজবীদের নিয়ম সমূহ পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ না করলে অনেক সময় আয়াতের অর্থ পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়ে যায়। যাতে পাপ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অতএব ধীরে-সুস্থে ও বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা জরুরী। 

যেমন আল্লাহ বলেন,আর কুরআন তেলাওয়াত কর ধীরে ধীরে, সৌন্দর্যমন্ডিত পন্থায়’ (সুরা মুযযাম্মিল আয়াত নং-৪) তিনি আরও বলেন, ‘আর আমরা তোমার উপর পর্যায়ক্রমে সুন্দরভাবে কুরআন নাযিল করেছি’ (সুরা ফুরক্বান আয়াত নং-৩২) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বরের দ্বারা কুরআনকে সৌন্দর্যমন্ডিত কর। কেননা সুমধুর কণ্ঠস্বর কুরআনের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করে দেয়।

কুরআন ওয়ালাদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ

মহাগ্রন্থ কুরআন মাজীদের বক্তব্য প্রজ্ঞাপূর্ণ ও সুগভীর। একে যথাযথভাবে আয়ত্ত্বকারীগণ মহাপুরুষ। ভালো কাজের আগ্রহ থেকে তাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ করায় কোন দোষ নেই। তবে কারো প্রতি অন্যায়ভাবে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। কেননা  

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, কেবল দু’টি বিষয়ে হিংসা-বিদ্বেষ করা বৈধ- যাকে আল্লাহ কুরআনের জ্ঞান দান করেছেন, আর সে তা রাত-দিন তেলাওয়াত করে। এবং সে ব্যক্তির উপর যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন। অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় ব্যয় করার সক্ষমতা দিয়েছেন।

কুরআনের পরিপূর্ণ হেফাযত জরুরী

পবিত্র কুরআনের যথার্থ হেফাযত করতে হবে। মুখস্থকৃত সূরা বা আয়াত বারবার তেলাওয়াতের মাধ্যমে কুরআন স্মৃতিলোপ থেকে দূরে থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তোমরা কুরআনের যথাযথ হেফাযত ও সংরক্ষণ কর। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন, অবশ্যই উট তার রশি থেকে যেমন দ্রুত পালিয়ে যায়। 

তার চেয়েও দ্রুত গতিতে কুরআন চলে যায়। অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি যত্নবান না হলে কুরআন স্মৃতি থেকে দ্রুত হারিয়ে যাবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে কোরআন মুখস্ত করার এবং তার হেফাজত করার তৌফিক দান করুন। আমীন 

রমজান মাসে অধিকহারে কুরআন তেলাওয়াত

পবিত্র কুরআন কারীম রামাযান মাসে হেরাগুহায় সর্বপ্রথম নাযিলের সূচনা হয়েছিল। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, প্রতি বছর (রামাযানে) জিব্রীল (আঃ) রাসূল (সাঃ) এর সঙ্গে একবার কুরআন পাঠের পুনরাবৃত্তি করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সে বছর তিনি রাসূল (সাঃ) এর সঙ্গে দু’বার কুরআন পাঠ করেন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, জিব্রীল (আঃ) রামাযান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি রাতেই রাসূল (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তখন নবী করীম (সাঃ) তাঁকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। অতএব রামাযান মাসে অন্তত একবার পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত করে শেষ করা আমাদের জন্য উত্তম।

কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইসলামী আইন-কানূন সংক্রান্ত সকল বিষয়ে পবিত্র কুরআনই চূড়ান্ত দলীল হিসাবে গৃহীত। এতেই মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সকল অত্যাবশ্যকীয় বিষয় ও ঘটনার বিবরণ আছে। কুরআন আল্লাহর কিতাব বা বিধান। এর আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করাও ইবাদত। এটি মানুষের যাবতীয় কল্যাণের উৎস ও মাধ্যম। 

তার থেকে দূরে সরে যাওয়ার মাধ্যমেই মানুষ অকল্যাণে পতিত হয়। কুরআনের মাধ্যমে বিবিধ কল্যাণের দরজা খুলে দেওয়া হয়। যা একজন ব্যক্তিকে পর্যায়ক্রমে আরও কিছু অনুসন্ধান করার পথ দেখায়, যাতে সে এর মাধ্যমে দোজাহানের সম্মানিত হয়। আর কুরআন তেলাওয়াতকারীর উপর কল্যাণ বর্ষিত হয়। কেননা পবিত্র কুরআন মাজিদ কোন সাধারণ বইয়ের মতো নয় ইহা সম্পূর্ণটাই আলাদা। 

ইহা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক মহান আল্লাহর পবিত্র ওশীয় বাণী। যাহা তিনি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নিকট তামাম মানবজাতির হেদায়াতের জন্য নাযিল করেছেন। যেন এর মাধ্যমে তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে পরিচালিত করেন। তাই নিম্নে পবিত্র কুরআন মাজীদ তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযীলত সমূহ সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। (ইনশাআল্লাহ)

কুরআন তেলাওয়াতকারী মুমিন মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতমঃ- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিভিন্ন সময় ছাহাবায়ে কেরামকে নানা উদাহরণের মাধ্যমে দ্বীন শিক্ষা দিতেন। যেমনটি তিনি অন্যান্য মুমিনের চাইতে কুরআন তেলাওয়াতকারী মুমিনের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনার সময় শিক্ষা দিয়েছিলেন। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেন, যে মুমিন কুরআন তেলাওয়াত করে, সে হলো উৎরুজ্জা ফলের (কমলালেবুর) ন্যায়। 

ফলটি সুগন্ধিযুক্ত এবং স্বাদও উত্তম। আর যে মুমিন কুরআন তেলাওয়াত করে না, তার উদাহরণ হলো খেজুরের মত। যার সেন্ট নেই কিন্তু সুস্বাদু। আর যে মুনাফিক কুরআন তেলাওয়াত করে, সে হলো রায়হানা (লতানো) ফুলের মত। যা সুগন্ধিযুক্ত, কিন্তু স্বাদ তিক্ত। যে মুনাফিক কুরআন তেলাওয়াত করে না, সে হলো মাহাকাল (লতানো লেবুজাতীয় তিতা) ফলের মত। যার সেন্ড নেই এবং স্বাদও তিতা।

কুরআন তেলাওয়াতকারীর দুনিয়াবী মর্যাদাঃ- কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তির মর্যাদা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে বৃদ্ধি পায়। নাফে‘ বিন আব্দুল হারিছ (রাঃ) উসফান নামক স্থানে ওমর (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য গেলেন। ওমর (রাঃ) তাকে কর্মকর্তা হিসাবে মক্কায় নিযুক্ত করেছিলেন। অতঃপর তিনি নাফে‘কে জিজ্ঞেস করলেন। 

তুমি মক্কা ও ত্বায়েফের উপত্যকাবাসীদের জন্য কাকে তোমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছ? তিনি বললেন, ইবনু আবযাকে। ওমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, কোন ইবনু আবযা? তিনি বললেন, আমাদের আযাদকৃত গোলামদের একজন। ওমর (রাঃ) বললেন, তুমি একজন ক্রীতদাসকে তাদের জন্য তোমার স্থলাভিষিক্ত করেছ? নাফে বললেন, তিনি মহান আল্লাহর কিতাবের একজন বিজ্ঞ আলেম, ফারায়েয শাস্ত্রেও অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ বিচারক। 

তখন ওমর (রাঃ) বললেন, তোমাদের নবী (সাঃ) যথার্থই বলেছেন। এই কিতাবের অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ অনেক জাতিকে মর্যাদায় উন্নীত করেন। এবং কুরআন পরিত্যাগকারীদের অবনত করেন। উক্ত হাদীছ থেকে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ প্রেরিত কুরআনের উপর ঈমান ও আমলের বদৌলতে মানুষ উচ্চমর্যাদা লাভ করতে পারে। আর কুরআন বিমুখ হলে মানুষ উভয় জগতে হবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত।

প্রতি হরফে দশ নেকী পাওয়া যায়

পৃথিবীর বুকে এমন কোন গ্রন্থ, মহাগ্রন্থ, ধর্মগ্রন্থ অথবা বিশ্বকোষ নেই, যার একটি হরফ বা বর্ণ পাঠ করলে ১০টি নেকী পাওয়া যায়। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) থেকে একটি হরফ পাঠ করল তার একটি ছওয়াব হলো। আর একটি ছওয়াবের পরিমাণ হলো দশ গুণ। 

মনে রাখতে হবে যে আলিফ-লাম-মীম (তিনটি বর্ণ মিলে) একটি হয়ফ তা নয়ো। বরং আলিফ একটি হরফ বা বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মীম একটি বর্ণ। তিনটি আলাদা আলাদা বর্ণ উক্ত হাদীছ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, কুরআন মাজীদ তেলাওয়াতের উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। যার ফলে কুরআন থেকে একটি হরফ উচ্চারণ করলে মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে তেলাওয়াত করা ব্যক্তিকে দশটি ছওয়াব প্রদান করেন।

একটি আয়াত তেলাওয়াতের ফযীলত

প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে কুরআনের ১টি বা দু’টি মাত্র আয়াত শিখলে বহু নেকী লাভ হয়। যেমন উক্ববা বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন,তোমাদের মধ্যে কেউ কি এমন পছন্দ করে যে, সে প্রতিদিন সকালে মদীনার ‘বুতহান’ কিংবা মক্কার ‘আক্বীক্ব’ নামক স্থানে যাবে। এবং সেখান থেকে কোন অন্যায় না করে কিংবা কোন প্রকার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করে। 

বড় বড় কুঁজবিশিষ্ট দু’টি উষ্ট্রী নিয়ে আসবে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) অবশ্যই আমরা তা পছন্দ করি। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত শিখে অথবা তেলাওয়াত করে, যা তার জন্য দু’টি উটনীর চেয়ে উত্তম। আর তিন আয়াত তার জন্য তিনটি উটনীর চেয়ে উত্তম। 

এবং চার আয়াত চারটি উটনীর চেয়ে উত্তম। এমনিভাবে যত আয়াত তেলাওয়াত করবে, সেগুলি তত উটনীর চাইতে উত্তম হবে। এই হাদীছ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, কুরআন মাজীদের প্রত্যেক আয়াত তেলাওয়াতকারীকে আল্লাহ এভাবে বিশাল প্রতিদান প্রদান করে থাকেন।

উল্লেখ্য যে, ‘বুতহান’ নামক স্থানটি মদীনা থেকে সড়কপথে ১৮.৫ কি.মি. দূরবর্তী একটি উপত্যকা। আর ‘আক্বীক্ব’ ত্বায়েফের নিকটবর্তী একটি স্থান। যা ইরাকবাসীদের হজ্জের মীক্বাত; মক্কা থেকে উত্তর দিকে ‘যাতু ‘ইর্ক্ব’-এর সন্নিকটে ‘আক্বীক্ব’ মক্কা থেকে ৮৩.৩ কি.মি. দূরে অবস্থিত।

আসমান ও যমীনে উচ্চসম্মান অর্জন করা সম্ভব

পবিত্র কুরআনুল কারিম নিঃসন্দেহে ইহকাল ও পরকালের উচ্চসম্মান অর্জনের মাধ্যম। ফলে কুরআন তেলাওয়াতকারীর সুনাম আসমানে ও যমীনে ছড়িয়ে পড়ে। রাসূল (সাঃ) বলেন, কুরআন তেলাওয়াতকে তুমি আবশ্যক করে নাও। কেননা এটি তোমার জন্য যমীনে আলোকবর্তিকা ও আসমানে ধনভান্ডার স্বরূপ। অতএব যে ব্যক্তি স্বীয়

হৃদয়কে কুরআনের দিকে ও আল্লাহর দিকে পরিচালিত করবে, মহান আল্লাহ তাকে ইহকালে ও পরকালে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। সেকারণ তেলাওয়াতকারীর কর্তৃত্ব ও প্রভাব তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং কুরআনের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে এবং তাঁর সৃষ্টির কাছে মহা সম্মানিত হয়।

কুরআনের তেলাওয়াতকারী পথভ্রষ্ট তালিকা থেকে মুক্তি পায়

নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াতে ঈমান শক্ত হয়। অন্তরের মরীচা দূরভিত হয়। এমনকি উদাসীনতার দাবানল থেকে মুক্ত হয়ে। সোচ্চার ও শক্তিশালী মুমিনে রূপান্তরিত হওয়া যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, আর যে ব্যক্তি রাতে একশ’টি আয়াত তেলাওয়াত করবে, গাফেলদের তালিকায় তার নাম লেখা হবে না। অথবা তার নাম বিনয়ীদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে।

কুরআন তেলাওয়াতকারীর পাপ সমূহ নেকীতে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীর বুকে এমন কোন গ্রন্থ নেই, যা পাঠ করলে পাপসমূহ ক্ষমা করা হয়। এবং তাদের কৃত পাপসমূহ নেকীতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করলে আল্লাহ তাকে যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত করবেন। কেননা আল্লাহকে স্মরণের অন্যতম মাধ্যম হলো কুরআন নিয়ে আলোচনা করা। 

যেমন রাসূল (সাঃ) বলেন, যখন কোন জনসমষ্টি আল্লাহকে স্মরণের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয় অতঃপর পৃথক হয়। তখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা পাপ থেকে ক্ষমাকৃত অবস্থায় দন্ডায়মান হও। কেননা তোমাদের পাপকে পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে।

কুরআন তিলাওয়াতের জন্য তাজবীদের গুরুত্ব

তাজবীদ শব্দ আরবি। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা বা যথাযথভাবে সম্পন্ন করা। যে বিষয়টাতে কোরআন মাজীদকে সঠিকভাবে উচ্চারণে তেলাওয়াতের নিয়ম-কানুন উল্লেখ করা হয়ে থাকে তাকে তাজবিদ বলা হয়। সঠিক উচ্চারণ মাখরাজ এবং সিফাত অনুসারে উচ্চারণের উপরে অধিক নির্ভর করে থাকে। 

তাজবীদ সহ কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব বা কুরআন তেলাওয়াত করা আবশ্যক বা ওয়াজিব। তাজবীদ সহ উচ্চারণ না করলে অর্থ সাধারণত বিকৃত হয়ে গিয়ে থাকে। তাজবীদ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরআন মাজীদের প্রতিটা হরফকে সঠিকভাবে পাঠ করা। কোরআন মাজীদের হরফগুলো এবং শব্দ পাশাপাশি আসার কারণে। 

যে সকল কায়দার (ওয়াকফ, ইত্তেকায়ে সাকিনাইন, মাদ্দ, বারিক, পুর, গুন্নাহ) গঠিত হয়ে থাকে তা সঠিকভাবে উচ্চারণ করা, কোরআনুল কারীম তেলাওয়াত করার সময় কোন কিছু যেন অতিরিক্ত যুক্ত না হয়। প্রয়োজনীয় কোন কিছু যেন বাদ না পড়ে। কোরআন মাজীদকে ধীরে ধীরে থেমে থেমে স্পষ্ট এবং সুন্দর করে পড়া প্রত্যেক মুসলমান নর নারীদের জন্য ফরজ। 

কেননা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজে নির্দেশ দিয়েছেন। এই স্পষ্ট এবং সুন্দর করে পড়ার জন্য কিভাবে পড়তে হবে সেটা আগে জানতে হবে। এবং সেটা তাজবিদ এই বর্ণনা করা হয়ে থাকে। সেই জন্য তাজবীদ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তা না হলে কোরআন মাজীদ পড়বার সময়ে বিভিন্ন ধরনের ভুল হবে। এবং কুরআনের আয়াতের অর্থ অনেক সময়  বিকৃতি হয়ে যায়। 

অর্থাৎ কুরআন মাজীদ পড়ার মূল উদ্দেশ্যটাই তখন বিফলে হয়ে যায়। তাছাড়া ও শ্রবণকারী ভুল উচ্চারণ শোনার মাধ্যমে কোরআন মাজীদ সম্পর্কে ভুল ধারণা জাগতে পারে। অনেক সময় যেটা বিপদের কারণ হতে পারে। যা কখনোই আশা করা যায় না। সেজন্য তাজবীদসহ কুরআন মাজিদ শুদ্ধ তেলাওয়াতের  গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে কুরআন মাজিদ শুদ্ধ তেলাওয়াতের তৌফিক দান করুন। আমীন

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক কোরআন অশুদ্ধ তেলাওয়াতের গুনাহ সম্পর্কে ও তা থেকে বাঁচার করণীয় জানতে আমাদের পেজটিকে ফলো করুন আশা করি এখান থেকে অনেক উপকৃত হবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কোরআনুল কারীম অশুদ্ধ তেলাওয়াত থেকে বেঁচে থাকার এবং শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে ইহকাল পরকালের কল্যাণ সাধন করতে পারি আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন। আমিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন