রমজানের রোজা রাখার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানুন

রোজা রাখার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতাসম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা আপনারা কি জানেন রমজান মাস আত্মশুদ্ধি রহমত বরকত ও নাজাতের মাস এ মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি তাই এই মাসের রোজা রাখলে বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। যা আমাদের অনেকেরই অজানা তাই চলুন।
রমজানের রোজা রাখার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
রমজানের রোজা রাখার কারণে বিশেষ কি উপকারিতা ও অপকারিতা উপলব্ধি করা যায়। সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেই। আশা করি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কিত কিছু ধারণা উপলব্ধি করা যাবে। তাহলে আর বিলম্ব না করে, মূল আলোচনায় প্রবেশ করি।

পেজ সূচিপত্রঃ রমজানের রোজা রাখার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা

সিয়াম বা রোজা কি

রোযা (ফার্সি روزہ রুজ়ে) সাউম বা সাওম আরবি صوم স্বাউম যার মানে বা অর্থঃ সংযম বা বিরত থাকা মনোনীত ধর্ম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল খুটি বা ভিত্তির তৃতীয় খুটি। সুবহে সাদেক বা ভোরের সূক্ষ আলো থেকে শুরু করে, সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,পাপাচার, কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম সিয়াম বা রোযা।

শব্দ ব্যবহার
অনেক মুসলিম আলেম মূল ইসলামী আরবী শব্দ "সাওম" বা সিয়াম (صوم) এর ব্যবহারকে অধিক উৎসাহিত করে থাকেন, যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, সাওম শব্দটি কুরআন মাজিদে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই শব্দটি বলার সময় প্রতি হরফে দশ নেকি করে, তিন হরফে মোট ৩০ নেকি সাওয়াব পাওয়া যাই, যা রোজা বা অন্যান্য অ-কুরআনীয় প্রতিশব্দ উচ্চারণে পাওয়া যাবে না। 

কুরআনীয় শব্দ বলায় প্রতি হরফে দশ নেকির ক্ষেত্রে তারা ইসলামী নবী মুহাম্মদ {সাঃ} হাদীস পেশ করেন। حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ الْحَنَفِيُّ، حَدَّثَنَا الضَّحَّاكُ بْنُ عُثْمَانَ، عَنْ أَيُّوبَ بْنِ مُوسَى، قَالَ سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ كَعْبٍ الْقُرَظِيَّ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ.মুহাম্মাদ ইবন বাশশার {রহঃ} আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। 

তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে তার নেকী হবে। আর নেকী হয় দশ গুণ হিসাবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম মিলে একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, এবং মীম আরেকটি হরফ। {তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ- ২৯১০}

রোজা আল্লাহ তাআলার বিধান বা হুকুম

রোজা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ-يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ -হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারীতা {তাকওয়া} অর্জন করতে পার। {সূরা বাকারাঃ আয়াত নং- ১৮৩} 
আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ
আল্লাহ তা’আলা  আরো বলেনঃ- فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫) গ্রাম্য পরিবেশের একজন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললঃ আমাকে বলুনঃ আল্লাহ আমার উপর রোজা থেকে কি ফরজ করেছেন? 

উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ-شَهْرَ رَمَضَانَ إِلاََّنْ تَطَّوَّعَ شَيْئًا তোমার উপর রামাযান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। তবে তুমি এর চেয়ে বেশী নফল রোজা রাখতে পার।

রোজা কি ভাবে পালন করতে হয়

রহমত, বরকত, মাগফিরাত এর পাইগাম নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান মুমিনের দ্বারপ্রান্তে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার এ মাস। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় একজন মুমিন তাকওয়ার গুনে গুণান্বিত হতে পারে। হতে পারে রাসুলের {সাঃ} শ্রেষ্ঠ একজন উম্মত। লাভ করতে পারে ইহকালীন ও পরকালীন প্রভূত কল্যাণ সান্নিধ্য। 

আল্লাহ ও তার রাসুলের বাতলানো পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের নমুনায় রমজান পালনেই তা সম্ভব।আমাদের অবশ্যই রমজানের সব শর্ত, আদব প্রতি যত্নশীল হতে হবে। একজন মুমিন যেন যথাযথ নিয়মে সিয়াম পালন করতে পারে তার জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস প্রচেষ্টা। আল্লাহ প্রত্যেক ইমানদার পুরুষ ও নারীকে। পবিত্র রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাত হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ইসলামে রোজা রাখার গুরুত্ব কতটুকু

রহমত, বরকত, ও মাগফিরাত  এর বার্তা-সংবাদ নিয়ে আসা রমজান নিঃসন্দেহে অন্যান্য মাসের চেয়ে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন। এ মাসের অর্জিত জ্ঞান অন্য সব মাসে প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের জীবন সুন্দর এবং উজ্জ্বল ও আলোকিত হয়ে ওঠে। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে আমাদের জীবনে রমজানের অনেক বেশি গুরুত্ব ও ফজিলত। 
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে ইসলামের বিধান রোজা রাখার এবং রহমত বরকত এবং মাগফিরাত হাসিল করে ইহকাল এবং পরকাল উভয়ের কল্যাণ সাধিত করার তৌফিক দান করুন, {আমীন}

রমজানের রোজা রাখার উপকারিত-অপকারিতা

রোজা রাখার উপরাকিতা,গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে কি বলা হয়েছে। তা আমরা সবাই কম-বেশি জানা রয়েছে। রোজা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতেও রোজার উপকারিতা অধিক বেশি। আসুন আমরা জেনে নেই, রোজা শরীরের জন্য কতটা উপকার ও কল্যাণ বয়ে আনে।
  • রোযা থাকা অবস্থায় কমপক্ষে ১৪/১৫ ঘণ্টা যাবতীয় খানাপিনা বন্ধ থাকে। এ সময় পাকস্থলী, অন্ত্র-নালী, যকৃত, হৃদপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। তখন এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিজেদের পুনর্গঠনে নিয়োজিত হতে পারে। অন্যদিকে দেহে যেসব চর্বি জমে শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেগুলো রোযার সময় দেহের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য ছুটে যায়।
  • নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঔষুধ ও শল্য চিকিৎসার প্রখ্যাত ডা. অ্যালেকসিস বলেছেন, উপবাসের মাধ্যমে লিভার রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়। ফলে ত্বকের নিচে সঞ্চিত চর্বি, পেশীর প্রোটিন, গ্রন্থিসমূহ এবং লিভারে কোষসমূহ আন্দোলিত হয়।
আভ্যন্তরীণ দেহ যন্ত্রগুলোর সংরক্ষণ এবং হ্নদপিণ্ডের নিরাপত্তার জন্য অন্য দেহাংশগুলোর বিক্রিয়া বন্ধ রাখে। খাদ্যাভাব কিংবা আরাম-আয়েশের জন্য মানুষের শরীরের যে ক্ষতি হয়। রোজার তা পূরণ করতে সাহায্য সহযোগিতা করে।
  • বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানীগনেরা বলেন, ‘ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েকদিনের রোযার কারণেই নিরাময় হয়। রোযাব্রত পালনের কারণে মস্তিস্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জীবিত হয়। রোযা সম্পর্কে বিশেষ্য ডাক্তারগন বলেছেন, রোযা হলো পরমহিতৈষী ওষুধ বিশেষ। 
কারণ রোযা পালনের ফলে বাতরোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে মানুষ কম আক্রান্ত হয়। বৈজ্ঞানিকদের ব গবেষণায় দেখা গেছে, যে রোযাদার পেপটিক আলসারের রোগীরা রোযা রাখলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্যও রোযা উপকারী।
  • ডাক্তারদের মতে, রোযার ফলে মস্তিষ্কের সেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ার কারণে মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর হয়-যা উচ্চ রক্তচাপের জন্য মঙ্গলজনক। বহুমূত্র রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে রোযা খুব উপকারী। ডাক্তারী পরীক্ষায় দেখা গেছে, একাধারে ৩০ দিন রোযা রাখলে বহুমূত্র রোগের অত্যন্ত উপকার হয়।
কিডনী সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা রোযা রাখলে এ সমস্যা আরো বেড়ে যাবে ভেবে রোযা রাখতে চান না। অথচ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোযা রাখলে কিডনীতে সঞ্চিত পাথর কণা ও চুন দূরীভূত হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, রোজা রাখার উপকারিতা হলো সারা বছর অতিভোজ, অখাদ্য-কুখাদ্য ভেজাল খাদ্য খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে যে জৈব বিষ জমা হয়। 

তা দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এক মাস রোজা পালনের ফলে তা সহজেই দূরীভূত হয়ে যায়। তাই আমাদের প্রয়োজন নিয়মিত রমজান মাসের ২৯ টি বা ৩০ টি রোজা সঠিকভাবে পালন করে, শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হইত করে, শরীরকে সুস্থ সুন্দর রেখে আল্লাহর ইবাদত বন্দি করে। তার সান্নিধ্য অর্জন করার তৌফিক আমাদের সবাইকে দান করুন। {আমীন}

রোজাদারের ইফতারি কেমন হওয়া প্রয়োজন

রমজান মাসের রোজা যেহেতু আল্লাহ তাআলার আদেশ বা হুকুম ফরজ ইবাদত, মুসলিম দেশগুলোতে রমজান মাস এলে সবাই রোজা রাখার প্রস্তুতি গ্রহণ করে, এবং নিজেদের দৈনন্দিন কার্যাবলীর সময়সূচির মধ্যেও পরিবর্তন পরিবর্ধন দেখা যায়। 
রমজান এলে বিকাল বেলা থেকেই ইফতারের জন্য বিভিন্ন প্রকার খাবার আয়োজনের ব্যস্ততার শুরুর লক্ষণীয়। বিশেষ করে বাসাবাড়িতে নানা রকম সুস্বাদু ও মুখরুচি খাবারের আইটেম তৈরি করার প্রবণতা দেখা যায়। মানুষের এই প্রবণতাকে কেন্দ্র করে, বিভিন্ন রকম ইফতারের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা রাস্তার ধারে, ফুটপাতে, অলিতে-গলিতে বসে যায়। 

এ ইফতার সামগ্রীর মধ্যে যেগুলো থাকবেই তার মধ্যে রয়েছে। খোলা খেজুর, পেঁয়াজী, আলুর চপ, বেগুনী, ছোলা, মুড়ি, ডাল বড়া, সবজি বড়া, হালিম, বিভিন্ন ধরণের কাবাব, জিলাপি ইত্যাদি। এছাড়াও আছে, বিভিন্ন ফল ও ফলের রস, আখের গুড়ের শরবত, বিভিন্ন রঙ মিশ্রিত বাহারি শরবত রুহ আফজা। আর হালের চিকেন ফ্রাই, বারবিকিউ এর পাশাপাশি। 

চিরায়ত মুখরুচি খাবার-বিরিয়ানি, তেহারি ও ভুনা খিচুড়ি চাউলপুর পরি তো থাকেই। এখন প্রশ্ন হলো, এ সমস্ত মুখের স্বাদ জনিত খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে, কিনা আমাদের দেশের অধিকাংশ জায়গায় এসব মুখরুচি ভাজা খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ভজ্র ভজন ভেজাল প্লপ, বেসন ও কৃত্রিম রঙ। এছাড়াও একই তেল বারবার ব্যবহারের ফলে তেলের মধ্যে যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় তা জেনে না জেনে সবাই একই তেল ব্যবহারের কাজটি করে যাচ্ছে।

একই তেল বারবার ব্যবহারে পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয় যার মধ্যে আছে বেনজা পাইরিন নামক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ। তদুপরি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ইফতার তৈরির ফলে ইফতার বিভিন্ন জীবাণু দিয়ে দূষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যা পেটের পিঁড়ার কারণ হতে পারে।

ইফতারের সামগ্রীগুলো স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে না ভেজে বেশি তেলে ভাজা হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে ফল সংরক্ষণে ফরমালিনের ব্যবহার যে পরিমাণ বেড়েছে তাতে ভেজাল মুক্ত টাটকা ফল পাওয়া দুষ্কর। ফল কিনে এক ঘণ্টা ভিনেগারযুক্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কিছুটা ফরমালিন মুক্ত করা যায়। কিন্তু রাস্তা ঘাটে যে রকমারি শরবত বিক্রয় হয় সেগুলো আদৌ বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি হয়। কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

একজন রোজাদার ইফতারিতে কি খাবেন তা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের উপর। পারতপক্ষে দোকানের তৈরি ইফতার ও সেহরির খাবার থেকে দূরে থাকায় ভালো। সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারে খেজুর বা খুরমা, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, কচি শশা, ফরমালিন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইডমুক্ত সতেজ মৌসুমী ফল, ভেজানো চিড়া থাকা ভালো।

এছাড়াও বাসায় তৈরি পরিমাণ মত বিশুদ্ধ তেলে ভাজা পেঁয়াজী আলুর চপ, বেগুনী, জিলাপি এবং বুট ও মুড়ি রাখা যেতে পারে। অনেকে খাবারের আইটেমে ভিন্নতা আনতে নুডুলস, সেমাই, তেহারি, হালিম ইত্যাদি রাখতে পারেন। এ খাবারগুলো দোকান থেকে কেনার চেয়ে বাসায় তৈরি করে নেয়া সবচাইতে উত্তম বলে আমি মনে করি।

খেজুর দিয়ে ইফতারি বা সেহেরী খাওয়ার উপকারিতা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় খাবার এর তালিকা মধ্যে খেজুর অন্যতম একটি খাবার যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকায় রোজা শেষে ইফতারিতে খেলে খুব দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করা যায়। সেই সাথে দ্রুত দুর্বলতাও কেটে যায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ডাক্তারদের মতে পুষ্টি গুণের মধ্যে অনেক প্রকারের গুণ খেজুরের মধ্যে বিদ্যামান।
ইফতারের সামনে আল্লাহর কাছে দোয়া
তাই খেজুর দিয়ে ইফতারির করলে সারাদিনের ক্লান্তি খেজুরের মাধ্যমে প্রশান্ত লাভ করা যায়। এমনকি আমরা সেহেরী খাবার পরে খাদ্য তালিকায় খেজুরও রাখতে পারি, আমি নিজে পরিক্ষিত সেহরি খাওয়ার পরে দুই থেকে চার দানা খেজুর খেয়ে পানি পান করলে সারাদিনের পিপাসার ঘাটতি আল্লাহর রহমতে খেজুরের মাধ্যম দিয়ে পূরণ করা সম্ভব হয়ে থাকে।

তাই খেজুরের কোন বিকল্প নেই, আমাদের পক্ষে যদি সম্ভব হয়। সেহরি খাওয়ার পরে দু চার দানা খেজুর খেয়ে পানি খেয়ে নিলে ইনশাল্লাহ সারাদিন হাজারো ক্লান্তির মধ্যে আপনার পিপাসার কারণে এমনকি মুখ বা গলা কোনটাই অস্বস্তির কারণ হবে না ইনশাআল্লাহ। তাহলে বোঝা গেল সেহরি খাওয়ার পরে আমরা দু-চার দানাক খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করব।

কারণ খেজুরে যেহেতু সকল গুণ বৃদ্ধা মান। তাহলে সেই গুণ থেকে আমরা কেন, বঞ্চিত হব, আল্লাহ সুবাহানাতালা আমাদের সকলকে ইফতারি এবং সেহেরীতে দু চার দানা খেজুর খেয়ে সারাটা দিন শরীর সতেজ রেখে খুশি খুঁজো ভাবে ইবাদত করে, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত হাসিল করার তৌফিক দান করুন। {আমীন}

রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহতালার নিজেই দিবেন

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সকল ইবাদতের প্রতিদান তিনি কোন না কোন মাধ্যম দিয়ে দেবেন, কিন্তু রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার কুদরতি হাতে নিজে প্রদান করবেন। আল্লাহ রাব্বিল আলামিন তিনি হাদিসের কুদসিতে বলেন, রোজা আমার জন্য আর এর প্রতিদান। আমি আল্লাহ নিজ হাতে বান্দাকে প্রদান করব। {আলহামদুলিল্লাহ}

আমরা জানি রমজানের রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। আল্লাহতায়ালা সকল মুসলমান নারী ও পুরুষের উপর  রমজান মাসে রোজা পালন ফরজ করে দিয়েছেন। তাই রোজাদারদের জন্য রয়েছে, অসংখ্য নিয়ামত এবং সওয়াব। সকল ইবাদতের বিনিময় আল্লাহ যে কোন মাধ্যম দিয়ে দিতে পারে বা দিবে, কিন্তু শুধুমাত্র রোজার বিনিময় স্বয়ং আল্লাহ দেবেন। 

আল্লাহতালা ঘোষণা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে। 

রমজান এক বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের ওপর এ মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শিকলবদ্ধ করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত। {নাসায়ি-২১০৬}

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন।  কেননা রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। {মুসলিম-১৫৫১} 

হজরত সাহল বিন সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল(সা.) এরশাদ করেন, জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কেয়ামতের দিন রোজাদারগণই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। 

সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। {বোখারি- ১৭৯৭}

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যারা হিদায়াতকে বর্জন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর শক্তিকে ভয় করেন এবং তার নির্দেশকে সত্য প্রতিপন্ন করার কারণে রহমতের আশা ছাড়েন না তারাই মুত্তাকি। মাসব্যাপী রোজা পালন করে যদি তাকওয়া অর্জন করা না যায়, তা হলে এ রোজা অর্থহীন উপবাস ও নিছক আত্মপ্রবঞ্চনায় পর্যবসিত হয়। {মুসলিম-২১৩৪}

এ প্রসঙ্গে হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বাজে কথা ও কাজ ত্যাগ করল না, তার পানাহার ত্যাগ নিছক উপবাস ছাড়া আর কিছু নয়। {বোখারি-১৮০৪}

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে আরও এরশাদ করেন-শুধু পানাহার বর্জনের নাম রোজা নয়। রাজা হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা-কাজ বর্জন করার নাম। কেউ তোমাকে গালি দিলে বা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তুমি তার সঙ্গে তেমনটি না করে কেবল এটুকুই বলো আমি রোজাদার।{মুসলিম- ২৪১৬}

শুধু না খেয়ে থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজের নফস ও প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। সংযমের পরিচয়ে দিতে হবে সবক্ষেত্রে পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সকল প্রকার অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা রোজাদারদের অপরিহার্য কর্তব্য। 

রাজশাহী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ইফতারের সময়সূচি

ক্রমিক নাম্বার

তারিখ  

বার

সেহেরির সময়

ইফতারের সময়

১২ই মার্চ

মঙ্গলবার

৪-৪৪ মিনিট

৬-১৭ মিনিট

১৩ই মার্চ

বুধবার

৪-৪৩  মিনিট

৬-১৮ মিনিট

১৪ই মার্চ

বৃহস্পতিবার

৪-৪২ মিনিট

৬-২০ মিনিট

১৫ই মার্চ

শুক্রবার

৪-৪১ মিনিট

৬-২০ মিনিট

১৬ই মার্চ

শনিবার

৪-৪০ মিনিট

৬-২১ মিনিট

১৭ই মার্চ

রবিবার

৪-৩৯ মিনিট

৬-২১ মিনিট

১৮ই মার্চ

সোমবার

৪-৩৮ মিনিট

৬-২২ মিনিট

১৯ই মার্চ

  মঙ্গলবার

৪-৩৬ মিনিট

৬-২৩ মিনিট

২০ই মার্চ

বুধবার

৪-৩৫ মিনিট

৬-২৪ মিনিট

১০

২১ই মার্চ

বৃহস্পতিবার

৪-৩৪ মিনিট

৬-২৫ মিনিট

১১

২২ই মার্চ

শুক্রবার

৪-৩৩ মিনিট

৬-২৫ মিনিট

১২

২৩ই মার্চ

শনিবার

৪-৩২ মিনিট

৬-২৬ মিনিট

১৩

২৪ই মার্চ

রবিবার

৪-৩১ মিনিট

৬-২৬ মিনিট

১৪

২৫ই মার্চ

সোমবার

৪-২৯ মিনিট

৬-২৭ মিনিট

১৫

২৬ই মার্চ

মঙ্গলবার

৪-২৯ মিনিট

৬-২৭ মিনিট

১৬

২৭ই মার্চ

বুধবার

৪-২৮ মিনিট

৬-২৮ মিনিট

১৭

২৮ই মার্চ

বৃহস্পতিবার

৪-২৭ মিনিট

৬-২৮ মিনিট

১৮

২৯ই মার্চ

শুক্রবার

৪-২৬ মিনিট

৬-২৯ মিনিট

১৯

৩০ই মার্চ

শনিবার

৪-২৫ মিনিট

৬-২৯ মিনিট

২০

৩১ই মার্চ

রবিবার

৪-২৩ মিনিট

৬-৩০ মিনিট

২১

১ই এপ্রিল

সোমবার

৪-২২ মিনিট 

৬-৩০ মিনিট

২২

২ইএপ্রিল

মঙ্গলবার

৪-২১ মিনিট

৬-৩১ মিনিট

২৩

৩ইএপ্রিল

বুধবার

৪-২০ মিনিট

৬-৩১ মিনিট

২৪

৪ইএপ্রিল

বৃহস্পতিবার

৪-১৯ মিনিট

৬-৩২ মিনিট

২৫

৫ইএপ্রিল

শুক্রবার

৪-১৮ মিনিট

৬-৩২ মিনিট

২৬

৬ইএপ্রিল

শনিবার

৪-১৭ মিনিট

৬-৩২ মিনিট

২৭

৭ইএপ্রিল

রবিবার

৪-১৬ মিনিট

৬-৩৩ মিনিট

২৮

৮ইএপ্রিল

সোমবার

৪-১৫ মিনিট

৬-৩৩ মিনিট

২৯

৯ইএপ্রিল

মঙ্গলবার

৪-১৪ মিনিট

৬-৩৪ মিনিট

৩০

১০ইএপ্রিল

বুধবার

৪-১২ মিনিট

৬-৩৪ মিনিট

শেষ কথাঃ

সম্মানিত পাঠক মন্ডলী এতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা রমজানের রোজা রাখার বিশেষ উপকারীতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত করে উপলব্ধি করতে পারলেন। যে রমজান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য জানতে পারলেন। তাই আপনাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে, দোয়া কামনা করি, আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে।

সঠিকভাবে রোজা রেখে তার সান্নিধ্য অর্জন করে। ইহকাল এবং পরকাল উভয় জাহানের কামিয়াবী হাসিল করতে পারি। আল্লাহু আমিন আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। এই প্রত্যাশা রেখে এবং আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আবার অন্য কোন বিষয় অন্য কোন তথ্য নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব ইনশাআল্লাহ। {আল্লাহ হাফেজ} 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন