রমজান মাসের রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
রমজান মাসের রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কেপ্রিয় পাঠক আজকে আমরা রমজান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে জানব, রমজান মাস মুসলিম
সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত পবিত্র এবং মহৎ মাস। এই মাসে মুসলিম ভাই-বোনরা রোজা
রেখে আল্লাহর প্রতি তাদের আত্মসমর্পণ করেন।
এবং সাদাকা দেওয়ার প্রত্যেক সুযোগ নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। রমজান মাসের
আগমন আপনার জন্য শুভ হোক! আপনার সকল ইবাদত গ্রহণ করা হোক এবং আপনার জীবনে শান্তি,
সুখ, সমৃদ্ধি এবং আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত হোক।
পেজ সূচিপত্রঃ- রমজানের বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং মহত্ত্ব
- রোজা কি এবং কেন?
- রমজান মাসের মহত্ব ও ফজিলত
- এ মাসের যে সকল ফজিলত রয়েছে তা হল
- রমজান মাসে কোন কাজগুলি বেশি বেশি করতে হয়
- রমজানে শবে কদরের ফজিলত
- রমজানে ইফতারের ফজিলত
- রমজানে কুরআনের ফজিলত
- রমজানে তারাবীর ফজিলত
- রমজানে ইতেকাফের ফজিলত
- কেন সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়
- কোন কোন জিনিসের মাধ্যমে সাদকাতুল ফিতর এবং কি পরিমান
- যাকাত প্রদানের ৮টি খাত
- পনির কি
- শেষ কথা
রোজা কি এবং কেন?
রোজা একটি ইসলামী ইবাদত যা মুসলিম ব্যক্তির দ্বারা প্রতি বছরে রমজান মাসে
পালন করা হয়। এই মাসে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার, কামাচার
এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। রোজা পালনের মূল
উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা, পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজের
দেহ-মন-প্রাণকে বিরত রাখা।
রোজা পালন করার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে সংযত ও সুসংহত রাখতে পারে, এবং আল্লাহর পক্ষ
থেকে অনেক দয়া পেতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে এরশাদ করছেনঃ-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ
عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের
পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।
রমজান মাসের মহত্ব ও ফজিলত
রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক
স্বতঃস্ফূর্ত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, বল এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর
দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম।
{সূরা ইউনুস আয়াত নং- ৫৮}
পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের
অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন। তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস
রমজান এসেছে। এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন।
আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে
দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা
হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ
থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। {নাসায়ী}
আমাদের কর্তব্যঃ- আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত
ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত
থাকা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে এই মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে
সঠিক বুঝ দান করুন। {আমীন}
এ মাসের যে সকল ফজিলত রয়েছে তা হল
- এ মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের সম্পর্ক রয়েছে ; আর তা হলে সিয়াম পালন। হজ যেমন জিলহজ মাসের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে সে মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। এমনি ভাবে সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ
عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
হে মোমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের
পূর্ববর্তীদের উপর-যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। {সূরা বাকারা আয়াত নং- ১৮৩}
রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির
উপর প্রতিষ্ঠিত তার একটি হল সিয়াম পালন। এ সিয়াম হচ্ছে জান্নাত লাভের একটি
মাধ্যম, যেমন হাদিসে এসেছে, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত
কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, সিয়াম পালন করল রমজান মাসে, আল্লাহ তাআলার কর্তব্য
হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো।{বোখারি}
- রমজান হল কোরআন অবতীর্ণ বা নাজিলের মাস। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, রমজান মাস এতে নাজিল হয়েছে, আল-কোরআন যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তিনি বলেন। اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ ؕ فَمَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ وَ عَلَی الَّذِیۡنَ یُطِیۡقُوۡنَهٗ فِدۡیَۃٌ طَعَامُ مِسۡکِیۡنٍ ؕ فَمَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا فَهُوَ خَیۡرٌ لَّهٗ ؕ وَ اَنۡ تَصُوۡمُوۡا خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَনির্দিষ্ট কয়েক দিন।
তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা
পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া- একজন দরিদ্রকে
খাবার প্রদান করা। অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর
হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান। {সূরা বাকারা আয়াত
নং-১৮৪}
রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র
আল-কোরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের
দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে।
শুধু আল-কোরআনই নয়। বরং ইবরাহিম {আ.}-এর সহিফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল সহ সকল ঐশী
গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। বলে তাবরানী বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা
হয়েছে। (সহি আল-জামে)
এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে, তেমনি আল্লাহর রহমত
হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি
করে,
কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। এবং রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাকে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ
রমজানে আল্লাহর রাসূল দুইবার পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস
দ্বারা এটা প্রমাণিত।
- রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এবং শয়তানদের শিকল দিয়ে আবদ্ধ করা হয়।{মুসলিম}
তাই শয়তান রমজানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করত, রমজান মাস আসার ফলে সে
সকল স্থানে যেতে পারে না। শয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দেখা গেছে,
ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা, ধর্মপরায়ণতা, ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয়। ও পাপাচার
থেকে দূরে থাকে, তারপরও কিছু মানুষ অসৎ ও অন্যায় কাজ-কর্মে তৎপর থাকে। কারণ,
শয়তানের কু-প্রভাবে তারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।
- রমজান মাসে রয়েছে, {লাইলাতুল কদর} আল্লাহ তাআলা বলেন। লাইলাতুল কদর হাজার মাস চেয়েও উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয়। প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।{সূরা আল-কদর আয়াত নং- ৩-৫}
- রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়।{মুসনাদ আহমদ} অন্য হাদিসে এসেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। {সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব}
তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য যেমন
দোয়া-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য
সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করবে।
- রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপসমূহ ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি।{তিরমিজি}
সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল
আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে এই
মাসের কল্যাণ দান করুন। এবং অকল্যাণ সকল কাজ থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান
করুন। {আমীন}
- রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ এ মাসে আর তা খোলা হয় না। এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে যা এই মাসে আর বন্ধ হয় না।
- রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেমন হাদিসে এসেছে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে, একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়ে থাকে।
রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস। এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও
অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন, তা অন্য কোন
মাসে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে। যে ধৈর্যের প্রমাণ দেই তা অন্য কোন
ইবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন।
قُلۡ یٰعِبَادِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ لِلَّذِیۡنَ
اَحۡسَنُوۡا فِیۡ هٰذِهِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃٌ ؕ وَ اَرۡضُ اللّٰهِ وَاسِعَۃٌ ؕ
اِنَّمَا یُوَفَّی الصّٰبِرُوۡنَ اَجۡرَهُمۡ بِغَیۡرِ حِسَابٍ বল, ‘হে আমার মুমিন বান্দারা যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর।
যারা এ দুনিয়ায় ভাল কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর যমীন প্রশস্ত,
কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে কোন হিসাব ছাড়াই। {সূরা
যুমার আয়াত নং-১০}
রমজান মাসে কোন কাজগুলি বেশি বেশি করতে হয়
রমজান মাসে আমরা বিশেষ কিছু কাজ করতে পারি। যা আমাদের দিনগুলি প্রয়োজনীয় করে
তোলে। নিম্নলিখিত কিছু কাজ রমজানে বেশি বেশি করা উচিত, কুরআন তেলাওয়াত ও তাফসির
পড়া রমজানে কুরআন পড়া অত্যধিক প্রশংসিত কাজ। আমরা বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত
করতে পারি এবং তাফসির পড়তে পারি।
ইফতারের জন্য অন্য রোজাদারকে দাওয়াত দেওয়া ইফতারের সময় অন্য রোজাদারকে দাওয়াত
দেওয়া একটি ফজিলতপূর্ণ কাজ। গরিব-অসহায়ের জন্য ইফতার বিতরণ করলে তা সর্বোত্তম
হয়। তাহাজ্জদ নামাজ পড়া। রমজানে তাহাজ্জদ নামাজ পড়া অত্যধিক প্রশংসিত। তওবা
করা, রমজান মাসে আমরা বেশি বেশি তওবা করতে পারি।
এই কাজগুলি আমাদের রমজানে আমল করতে সাহায্য করবে, এবং আমরা আল্লাহর রহমত এবং
মাগফেরাত পেতে সাহায্য করবে। আসুন আমরা রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত
করি এবং রোজাদারদের দাওয়াত দিয়ে ইফতারি করাই বেশি বেশি তওবা করি, এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহ পাক
আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন।{আমীন}
রমজানে শবে কদরের ফজিলত
রমজানের শবে কদর একটি অত্যন্ত মহিমান্বিত রাত। এটি খুবই সম্মানীয় এবং
মর্যাদাপূর্ণ। এ রাতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্বনবী হযরত
মুহাম্মদ{সাঃ} এর উম্মতের জন্য শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এ রাত হাজার মাসের থেকেও
উত্তম। এ রাতে বান্দা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নিজেকে ক্ষমা প্রার্থনা করার
সুযোগ পায়। একই সঙ্গে গোনাহ মাফের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করারও
সুযোগ থাকে।
রমজানে ইফতারের ফজিলত
রমজান মাসে ইফতারের গুরুত্ব অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ। এই মাসে ইফতার করার
সময় দুটি আনন্দ প্রথমটি ইফতার সঠিক সময়ে করা হলে সে উক্ত রোজাদারের সমান
সওয়াব পাবে। তাই ইফতারের সময় রোজাদারের জন্য ইফতারের সময় অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যাস্তের পরপরই দ্রুত ইফতার করতে হবে।
দ্বিতীয়টি মহান আল্লাহর সঙ্গে মোলাকাত বা সাক্ষাতের সময়। আল্লাহর অনুগ্রহ
ও দয়া পেতে রমজানে ইফতার করার পরিকল্পনা করতে হবে, সেহরি
খাওয়ার মতোই এবাদত এবং রসূলের {সাঃ} সুন্নত অনুসরণ করতে হবে। খেজুর-খোরমা
ও পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।
আপনি এই মাসে বেশি বেশি নেক আমল গুলো পালন করতে পারেন, যাতে আপনি আল্লাহর
অনুগ্রহ ও দয়া পেতে পারেন। মহান আল্লাহ আদম জাতির ওপর সন্তুষ্ট হয়ে,
তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন।
রমজানে কুরআনের ফজিলত
রমজান মাস হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াতের মাস। রমজান মাসে যে ব্যক্তি কুরআন কে
নিজের আবশ্যক মনে করবে কুরআন অনুযায়ী চলাচল করবে, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ
থেকে আছে, অগণিত বরকত ও নিয়ামত। কুরআনুল কারিম তেলাওয়াতের উদ্দেশ্য যদি
তার কাছে উপদেশ গ্রহণ করা হয়।
আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া এবং শাস্তির ব্যাপারে ভয় গ্রহণ করে, তাহলে
তার মুক্তির জন্য কুরআনই যথেষ্ট। রমজান মাসের কোরআন তেলাওয়াত করলে
আল্লাহ দ্বিগুণ সওয়াব দেবেন। আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা আমাদের
সবাইকে রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন পড়ার তৌফিক দান করুন।{আমীন}
রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াতের ফজিলত অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ। কোরআন শরিফ
মাজিদ দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ, এবং তার অর্থ পড়া, পাঠ করা,
পাঠযোগ্য হওয়া সম্পর্কে বারবার পড়া হয়। কোরআন অর্থ কাছে যাওয়া,
নিকটবর্তী হওয়া,
এবং পঠন-পাঠনের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করে।
পঠন-পাঠন ও বিদ্যার্জনের মাধ্যমে কোরআন মাজিদের প্রথম আয়াতগুলো অবতীর্ণ
হয়। কোরআন শরিফ তিলাওয়াতের ফরজ রয়েছে।
- হরফ বা বর্ণসমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করা
- হরকত বা স্বরচিহ্ন তাড়াতাড়ি পড়া
- মাদ বা দীর্ঘস্বর হলে টেনে পড়া
- পবিত্র হওয়া-{ফরজ}
- আউজুবিল্লাহ পড়া-{ওয়াজিব}
- বিসমিল্লাহ পড়া-{সুন্নাত}
তিনটি কাজে পবিত্রতা প্রয়োজন বা ফরজ হয়। নামাজ পড়া, কাবা শরিফ তাওয়াফ
করা, কোরআন শরিফ স্পর্শ করা। কোরআন মাজিদ শিক্ষা করা ফরজ, শিখে ভুলে
গেলে মারাত্মক গুনাহ, অশুদ্ধ বা ভুল পাঠ করলে কঠিন পাপের কারণ হতে
পারে। তাই কোরআন বিশুদ্ধভাবে শেখা ও সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা জরুরী।
রমজানে তারাবীর ফজিলত
রমজান মাসে তারাবির নামাজের ফজিলত অত্যন্ত মুক্তিদায়ক। রাসূলুল্লাহ
{সাঃ} বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সাথে আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য
লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন। এবং কদরের রাতে জাগ্রত
থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করা
হবে, এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়।
বন্ধ করে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো, অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি
করা হয়। এ মাসে রয়েছে, একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
আমরা কর্তব্যবহীন নয়, আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা
করতে চাই, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও
ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা।
রমজানে ইতেকাফের ফজিলত
ইতেকাফ একটি ধর্মীয় অবস্থা যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে
প্রচলিত। এটি রমজান মাসের শেষ দশকে অনুষ্ঠান করা হয়। যখন বিশেষ
নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদে বা ঘরের পবিত্র স্থানে অবস্থান গ্রহণ করা
হয়। ইতেকাফের সময়ে ব্যক্তি দুনিয়ার সব কাজকর্ম থেকে মুক্ত হয়ে
শুধু আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে আত্মনির্যাতন করে থাকে।
ইতেকাফের ফজিলত অনেক বেশি। এটি মুসলিম সমাজে যুগে যুগে প্রচলিত
ছিল। ইতেকাফ পালনকারী দুই কবুল হজ ও দুই ওমরার সাওয়াব পাবেন।
ইতেকাফের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ঘোষণা দেন, যে ব্যক্তি রমজানে দশ দিন ইতেকাফ করবে তার
আমল নামায় দুইটি কবুল হজ ও দুইটি ওমরার সমতুল্য সওয়াব লিখা হবে।{
শুআবুল ইমান কানযুল উম্মাল}
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
‘ইতেকাফকারী ইতেকাফের কারণে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এবং সব
নেকির সওয়াব অর্জন করে। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা
যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রমজান মাসে ইতেকাফ করে জীবনের
সকল গুনাহ মাফ করে নিয়ে ইহকাল পরকালের কল্যাণকারী হিসেবে কবুল
করুন।{আমীন}
কেন সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়
সাদকাতুল ফিতর একটি দানের খাতা, যা রমজানের পর আসে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরে। এই দানের
মাধ্যমে ধনী-গরিব সকলে সমানভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। ইসলাম এই দানকে
সাওমের কাফফারা বা জাকাত হিসাবে পরিচিত করে। সাদকাতুল ফিতরা হলো ঐ সব
খাদ্যসামগ্রী দান করা যা দ্বারা সিয়াম পালনকারী তাদের সাওম ভঙ্গ করতেন।
সোজা কথায়, ফিতরা হলো এমন খাদ্যসামগ্রী দান করা যা দ্বারা গরিব দুঃখীরা ইদের
দিনে খেয়ে খুশি হয়। আর এই দান প্রতিটি সাওম পালনকারীকেই প্রদান করতে হবে।
সাদকাতুল ফিতর কেন দিতে হয়? ইসলামে সম্পদের পবিত্রতার জন্য যেমন জাকাত (দান)
দিতে হয়। ঠিক তেমনি রমাদানের সিয়ামের পবিত্রতার জন্য সাদকাতুল ফিতর (দান) দিতে
হয়।
আরও সহজ করে বললে বলতে হয়। পবিত্র রমাদানে সিয়াম পালন করতে গিয়ে প্রতিটি
মানুষেরই অবচেতনমনে কোনো না কোনো ভাবে সিয়ামের অনেক সাধারণ ভুলত্রুটি যেমনঃ
সাওমে অবাঞ্ছনীয় অসারতা, গীবত করা, অশ্লীল কথাবার্তা, গালাগালি করাসহ নানান
ছোটখাটো সগিরা গুনাহ হয়ে থাকে এজন্য ফিতরা আদায় করতে হয়।
কোন কোন জিনিসের মাধ্যমে সাদকাতুল ফিতর এবং কি পরিমান
সাদকাতুল ফিতর হলো এমন দানের খাতা, যা রমজানের সাওম সমাপ্তির পর আদায় করা হয়। এই
দানের মাধ্যমে গরিব ও দুঃখীরা মানুষের খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা হয়। সাদকাতুল ফিতর
আদায়ের জন্য নিম্নলিখিত পাঁচটি খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার করা হয়।
এই খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে
সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা
নির্ধারণ করা হয়েছে। সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে শরিয়তে দুটি মাপকাঠি
নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হচ্ছে।
‘এক সা’ বা ‘নিসফে সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিস দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’
= ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়) অর্থাৎ তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। এ ছাড়া গম
দ্বারা আদায় করতে চাইলে, প্রতি ব্যক্তির জন্য গমের আধা সা’ (প্রায় ১ কেজি ৭৫০
গ্রাম) পরিমাণ গম কিংবা তার বাজার মূল্যের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে
হবে।
- গমঃ- প্রতি ব্যক্তির জন্য গমের আধা সা’ (প্রায় ১ কেজি ৭৫০ গ্রাম) পরিমাণ গম কিংবা তার বাজার মূল্যের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে।
- যবঃ- প্রতি ব্যক্তির জন্য যবের এক সা’ (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) পরিমাণ কিংবা তার বাজার মূল্যের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে।
- খেজুরঃ- প্রতি ব্যক্তির জন্য খেজুরের এক সা’ (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) পরিমাণ কিংবা তার বাজার মূল্যের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে।
- পনিরঃ- প্রতি ব্যক্তির জন্য পনিরের এক সা’ (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) পরিমাণ কিংবা তার বাজার মূল্যের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে।
- কিসমিসঃ- প্রতি ব্যক্তির জন্য কিসমিসের এক সা’ (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) পরিমাণ কিংবা তার বাজার মূল্যের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে।
সাদকাতুল ফিতর দেওয়ার পরিমাণ সামর্থ্যানুসারে উত্তম জিনিস দিয়ে আদায় করতেন। আসুন,
সবাই এই পবিত্র দান দিয়ে ইদের খুশি করি। সাদকাতুল ফিতর হচ্ছে রমযান মাসের সিয়াম
ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতি পূরনার্থে এবং অভাবগ্রস্থদের খাবার প্রদানের,
vযাকাত প্রদানের ৮টি খাত
উদ্দেশ্যে ঈদের সালাতের পূর্বে নির্ধারিত পরিমানের খাদ্যসামগ্রী অভাবীদের দান করা
হয়ে থাকে। ইসলামী শরীয়তে প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফিতরা দেয়া ওয়াজিব। যাকাত
প্রদানের আটটি খাতে ফিতরা প্রদান করা যাবে বলে অধিকাংশ আলেম একমত হয়েছেন। মহান
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে যাকাত প্রদানের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। তিনি
বলেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ
عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِيْ الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ
وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ وَاللهُ
عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
নিশ্চয়ই ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত
কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয়।
তাদের জন্য (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে,
আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর
আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়, {সুরাতুল তওবা আয়াত নং-৬০}
- ফকীরঃ- নিঃসম্বল ভিক্ষাপ্রার্থী। যাকে আল্লাহ তা‘আলা যাকাতের ৮টি খাতের প্রথমেই উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতিনিয়ত দারিদ্র্য থেকে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন,اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কুফরী ও দারিদ্র্য থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
রাসূলুল্লাহ {সাঃ} বলেছেন,
أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِيْ أَمْوَالِهِمْ، تُؤْخَذُ مِنْ
أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ- ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদে ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা
তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর তাদের দরিদ্রের মাঝে বণ্টন হবে।
- মিসকীনঃ- যাকাত প্রদানের ৮টি খাতের মধ্যে দ্বিতীয় খাত হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা মিসকীনকে উল্লেখ করেছেন। আর মিসকীন হল ঐ ব্যক্তি যে নিজের প্রয়োজন মিটাতেও পারে না, মুখ ফুটে চাইতেও পারে না। বাহ্যিকভাবে তাকে সচ্ছল বলেই মনে হয়। হাদীছে এসেছে,
এবং তাকে তা দেওয়া হলে ফিরে আসে। বরং প্রকৃত মিসকীন হল সেই ব্যক্তি যার প্রয়োজন
পূরণ করার মত যথেষ্ট সঙ্গতী নেই। অথচ তাকে চেনাও যায় না যাতে লোকে তাকে
ছাদাক্বাহ্ করতে পারে এবং সে নিজেও মানুষের নিকট কিছু চায় না।
- যাকাত আদায়কারী ও হেফাযতকারীঃ- আল্লাহ তা‘আলা যাকাত প্রদানের তৃতীয় খাত হিসাবে ঐ ব্যক্তিকে উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি যাকাত আদায়, হেফাযত ও বণ্টনের কাজে নিয়োজিত। অতএব উক্ত ব্যক্তি সম্পদশালী হলেও সে চাইলে যাকাতের অংশ গ্রহণ করতে পারবে। হাদীছে এসেছে,
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়কারী হিসাবে নিযুক্ত করলেন। যখন আমি
কাজ শেষ করলাম এবং তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে দিলাম তখন তিনি নির্দেশ দিলেন আমাকে
পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য। আমি বললাম, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি ইহা
করেছি। সুতরাং আমি আল্লাহর নিকট থেকেই এর প্রতিদান নেব। তিনি বললেন, আমি যা
দিচ্ছি তা নিয়ে নাও।
কেননা আমিও রাসূলুল্লাহ {সাঃ} এর সময় যাকাত আদায়কারীর কাজ করেছি। তখন তিনিও
আমাকে পারিশ্রমিক প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন আমিও তোমার মত এরূপ কথা
বলেছিলাম। রাসূল {সাঃ} আমাকে বলেছিলেন, যখন তুমি না চাওয়া সত্ত্বেও তোমাকে
কিছু দেওয়া হয়। তখন তুমি তা গ্রহণ কর। তুমি তা নিজে খাও অথবা ছাদাক্বাহ্ কর।
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
لاَ تَحِلُّ الصَّدَقَةُ لِغَنِىٍّ إِلاَّ لِخَمْسَةٍ لِغَازٍ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ أَوْ لِعَامِلٍ عَلَيْهَا أَوْ لِغَارِمٍ أَوْ لِرَجُلٍ اشْتَرَاهَا
بِمَالِهِ أَوْ لِرَجُلٍ كَانَ لَهُ جَارٌ مِسْكِيْنٌ فَتُصُدِّقَ عَلَى
الْمِسْكِيْنِ فَأَهْدَاهَا الْمِسْكِيْنُ لِلْغَنِىِّ
আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী
ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়। তবে পাঁচ শ্রেণীর ধনীর জন্য তা জায়েয।
- আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি।
- যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী।
- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।
- যে ব্যক্তি যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছে এবং
- মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছে।
- দাস মুক্তির জন্যঃ- যারা লিখিত কোন চুক্তির বিনিময়ে দাসে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে মালিকের নিকট থেকে ক্রয়ের মাধ্যমে মুক্ত করার লক্ষ্যে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়। অনুরূপভাবে বর্তমানে কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিমদের হাতে বন্দি হলে সে ব্যক্তিও এই খাতের অন্তর্ভুক্ত হবে।
- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিঃ- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার ঋণ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যাকাত প্রদান করা যাবে।
- আল্লাহর রাস্তায়ঃ- আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে যে কোন ধরনের প্রচেষ্টা ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ বা আল্লাহর রাস্তার অন্তর্ভুক্ত। জিহাদ, দ্বীনী ইলম অর্জনের যাবতীয় পথ এবং দ্বীন প্রচারের যাবতীয় মাধ্যম এ খাতের অন্তর্ভুক্ত।
- মুসাফিরঃ- সফরে গিয়ে যার পাথেয় শেষ হয়ে গেছে সে ব্যক্তিকে যাকাতের অর্থ প্রদান করে বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে যাকাতের অর্থ দান করা যাবে। এক্ষেত্রে উক্ত মুসাফির সম্পদশালী হলেও তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে।
পনির কি
পনির হল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রচলিত ছানা থেকে তৈরি একটি দুগ্ধজাত খাদ্য। সাধারণত
ফুটন্ত দুধে লেবুর রস, ভিনেগার অথবা অম্লজাতীয় কোন পদার্থ যোগ করে ছানা তৈরি করা
হয় এবং সেই ছানা থেকে পানি বের করে দিয়ে পনির প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। পনির হল
একটি দুগ্ধজাত পণ্য যা দুধের প্রোটিন কেসিনের জমাট বাঁধার মাধ্যমে বিস্তৃত স্বাদ,
টেক্সচার এবং আকারে উৎপাদিত হয়।
এটি দুধ থেকে প্রোটিন এবং চর্বি নিয়ে গঠিত, সাধারণত গরু, মহিষ, ছাগল বা ভেড়ার
দুধ। উৎপাদনের সময়, দুধ সাধারণত অম্লীয় হয় এবং একই ধরনের কার্যকলাপ সহ রেনেট
বা ব্যাকটেরিয়াল এনজাইমের এনজাইম যোগ করা হয় যাতে ক্যাসিন জমাট বাঁধতে
থাকে।
তারপর শক্ত দইগুলোকে তরল ছাই থেকে আলাদা করে তৈরি করা পনিরে চাপানো হয়। কিছু
পনিরের ছাঁচে, বাইরের স্তরে বা জুড়ে সুগন্ধযুক্ত ছাঁচ থাকে। এক হাজারেরও বেশি
ধরনের পনির বিদ্যমান এবং বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয়। তাদের শৈলী, টেক্সচার এবং
স্বাদ নির্ভর করে দুধের উৎপত্তির উপাদান।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, রমজান মাসে শবে কদর নিয়ামত এবং বরকতপূর্ণ একটি রাত যা আল্লাহর পক্ষ
থেকে বিশেষভাবে পৃথিবীর জমিনে অবতীর্ণ হয়। এই রাতে শবে কদরের আমল যেই সকল
বান্দাগণ করবেন। আল্লাহ তাদের উপর অনেক বেশি খুশি হোন, এবং সেই বান্দার উপর রহমত
নাযিল করেন। বিস্তারিত জেনে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে সকল বন্ধুদের মাঝে শেয়ার
করতে পারেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাদের পাশেই থাকুন। এবং অনুপ্রেরণা যোগান এবং
আপনাদের সুস্থতা কামনা রেখে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ হাফেজ।