রামাজান মাস ইবাদাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম বিস্তারিত জানুন

রামায়ান মাসের প্রথম রাতের ফযীলত সমূহপ্রিয় পাঠক আজকে আমরা অল্প আমলে আল্লাহ্ তায়ালার মহামূল্য স্থান জান্নাতুল ফেরদাউস কিভাবে ক্রয় করা যায়। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি হচ্ছে রমজান সেই বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা, যদি না জেনে থাকি তাহলে
রামাজান মাস ইবাদাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম বিস্তারিত জানুন
আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য অতীব গুরুত্বপণ্য আর্টিকেল হতে চলেছে, যার মাধ্যমে আপনি অল্প সময়ে আল্লাহর প্রিয় স্থান জান্নাতুল ফেরদাউস অর্জন করতে পারবেন ইনশাল্লাহ। তাহলে চলুন আর দেরি না করে মূল আলোচনা শুরু করি। 

পেজ সুচিপত্রঃ রামাজান মাস ইবাদাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন শাইতান ও দুষ্ট জিনদেরকে রামাযান মাসের প্রথম রাতেই শিকল দিয়ে বন্দি করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়। এবং এর দরজাও তখন আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয়। জান্নাতের দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ হয় না। 

(এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ হতে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে। {সহীহ ইবনু মা-জাহ হাদিস নং-৬৮২}

রাসুলের সুন্নাতের অনুসরণ অনুকরণ করা বিকল্প নেই

আব্দুর রাহমান ইবনু আমর আস-সুলামী ও হুজর ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, একদা আমরা আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) এর নিকট আসলাম। যাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্তঃ তাদেরও কোনো অপরাধ নেই যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য এলে তুমি বলেছিলে, আমি তোমাদের জন্য কোনো বাহনের ব্যবস্থা করতে পারছি না। {সূরা আত-তওবা আয়াত নং- ৯২}
আমরা সালাম দিয়ে বললাম, আমরা আপনাকে দেখতে, আপনার অসুস্থতার খবর নিতে এবং আপনার কাছ থেকে কিছু অর্জন করতে এসেছি। আল-ইরবাদ (রাঃ) বললেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সালাত আদায় করলেন, অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে আমাদের উদ্দেশ্য জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন,

তাতে চোখগুলো অশ্রুসিক্ত হলো এবং অন্তরগুলো বিগলিত হলো। তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন কারো বিদায়ী ভাষণ! অতএব আপনি আমাদেরকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে (আমীর) একজন হাবশী গোলাম হয়। 

কারণ তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের সুন্নাত অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে। সাবধান! (ধর্মে) প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদ’আত এবং প্রতিটি বিদ’আত হলো ভ্রষ্টতা {আবু দাউদ হাদিস নং- ৪৬০৭}

রমজান মাসের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ও সাহাবীগণের তারাবির বিবরণ 

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে দুই দিন অথবা তিনদিন তারাবি পড়েছেন। এবং সাহাবীদের সঙ্গে করে নিয়ে, কিন্তু আল্লাহর রাসূল{সাঃ}যখন দেখলেন। তারাবি নামাজের জন্য সাহাবীদের সমাগম বেশি তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম পরের দিন থেকে তারাবি নামাজ পড়াতে আসেননি।

কারণ তিনি আশঙ্কা করছিলেন। যে না জানি তারাবির নামাজ সাহাবীদের প্রতি ফরজ হয়ে যায়। এ আশঙ্কার কারণে আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তীতে জামাতে আর উপস্থিত হয়নি। এ ছিল রাসুলের সালাত তাহলে এখান থেকে তারাবির তিন দিন পাওয়া গেল। পরবর্তীতে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর আমলে। 

তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়ানো হয়। তাহলে এখানে বোঝা গেল, রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী তিন দিন আর সাহাবীর সুন্নাহ অনুযায়ী ২০ রাকাত তারাবি তার রাসুলের সুন্নত এবং সাহাবীদের সুন্নাহ অনুযায়ী বিশ রাকাত তারাবি হচ্ছে, সাহাবীদের সুন্নাহ ও রাসূলের সুন্নাত একই এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহ রাসুল বলেছেন। 

আমার এবং আমার সাহাবীদের সুন্নাহ মাড়ির দাবি আঁকড়ে ধরা আর সেই জন্যই হযরত এর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর সুন্নাহ ছিল ২০ রাকাত তাহলে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর সুন্নাহ মানা আমাদের জন্য জরুরী।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল ইবাদতের প্রতি সাহাবীদের উৎসাহ 

উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করছিলেন, কিছু লোক তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলো। পরবর্তী রাতেও তিনি সালাত আদায় করলেন এবং লোক আরো বেড়ে গেল। অতঃপর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতে লোকজন সমবেত হলেন, 
কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন না। সকাল হলে তিনি বললেনঃ তোমরা যা করেছ আমি লক্ষ্য করেছি। তোমাদের নিকট বেরিয়ে আসার ব্যাপারে এ আশঙ্কায় আমাকে বাধা দিয়েছে যে, তোমাদের উপর যেন তারাবির নামাজ ফরজ না হয়ে যায়। এই ভয়ে বা আশঙ্কায় আমি তোমাদের সামনে তারাবি পড়তে আসে নাই।{বুখারী হাদিস নং-১১২৯}

রমাযানে ও অন্যান্য সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাত্রির ইবাদাত সম্পর্কে

আবূ সালামাহ্ ইবনু আবদুর রাহমান (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) কে জিজ্ঞেস করেন, রমাযান মাসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার রাক‘আতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। 

তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাক‘আত (বিতর) সালাত আদায় করতেন। 

আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেন, (একদা) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতরের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেন, আমার চোখ দু’টি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না।{বুখারী হাদিস নং-১১৪৭}

আর এ হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে এবং অন্যান্য মাসে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। এর মানে এটাই নয়, যে এই আট রাকাত এবং তিন রাকাত বেতের সহ ১১ রাকাত নামাজ এটাই তারাবি যদি তাই হয়। তাহলে আম্মাজান হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তিনি বললেন।

১১ রাকাতের বেশি আল্লাহ রাসূল নামাজ পড়েননি। তাহলে এটা তো বারো মাসের জন্য কিন্তু তারাবি তো আর ১২ মাস হয় না। শুধুমাত্র কেবলমাত্র রমজান মাসেই তারাবি কিন্তু এখানে তো একটা জিনিস বোঝার রয়েছে। যে তারাবি তো শুধু রমজান মাসে হয়, অন্য মাসে না যেহেতু অন্য মাসে তারাবি হয় না। সেহেতু তারাবি আট রাকাত হতে পারে না।

তাই অন্য মাসের নামাজ অনুযায়ী এই আট রাকাত এবং তিন রাকাত বেতেরসহ ১১ রাকাত নামাজ এটা তাহাজ্জুদ নামাজ কারণ আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলছেন। আল্লাহর রাসূল রমজান এবং অন্যান্য মাসে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। আর একই নামাজের নাম তো দুই রকম হয় না, তারাবি আলাদা আর তাহাজ্জুদ আলাদা। 

অতএব রমজান মাসে তারাবি হচ্ছে ২০ রাকাত এবং রমজান মাস সহ অন্যান্য মাস বেতের সহ ৮ রাকাত মোট ১১ রাকাত নামাজ তাহাজ্জত এটাই সঠিক এটির কোন বিকল্প নাই। কারণ এ নামাজ শুধু রমজান মাস ছাড়াও অন্যান্য মাসে পড়া হয়। আর তারাবির নামাজ অন্যান্য মাসে করা হয় না। সেই ক্ষেত্রে তারাবি ২০ রাকাত তাহাজ্জুদ ৮ রাকাত।

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল সেহরি খাওয়া

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বলছেন। সেহরি খাও কারণ সেহরির মধ্যে বরকত রয়েছে। আমরা অনেকেই বলে থাকি সেহেরী না খেলে কি রোজা হবে না, তার আগে ঐ সমস্ত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা দরকার সেহরি কেন খাব না, কারণ আল্লাহর রাসূল বলেছেন। সাহারিতে বরকত রয়েছে, আর এই বরকত কেন আমরা হাতছাড়া করবো। 
রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল সেহরি খাওয়া
অতএব রমজান মাসে অবশ্যই আমরা সেহরি খাব। শুধু তাই নয়, সেহরির পরে আমরা পারতপক্ষে চেষ্টা করব, দু-চারটা খেজুর খাওয়ার কারণ খেজুরে অনেক প্রোটিন রয়েছে। যা আপনার ক্লান্ত শরীরকে সতেজ রাখবে ইনশাআল্লাহ। আর এটি তো আল্লাহ রাসুল খেয়েছেন,

সেজন্য আমরাও অবশ্যই খাওয়ার চেষ্টা করব আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেহরির শেষে দু-চারটা খেজুর খাওয়ার তৌফিক দান করুন। {আমীন} এবং সঠিক বুঝ, দান করুন। যাতে করে আমরা সবাই রাসূলের সুন্নাহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে পারি। {আমিন}

এবার রোজা রাখার পালা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বলছেন। যদি কোন ব্যক্তি ঈমানের সাথে রমজান মাসে সিয়াম পালন করে। তাহলে তার পূর্বের সব গোনা মাফ করে দেওয়া হয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তিনি আরো বলেন, রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ঢাল শুরুফ যদি এটাকে ছিদ্র না করা হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীরা আল্লাহর রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ রোজা আবার ছিদ্র হয় কিভাবে, তিনি বললেন। দুইটা অপরাধ এর কারণে রোজা ছিদ্র হয়ে যায়। প্রথমটি হচ্ছে মিথ্যা কথা, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে অন্যের গীবত করা। জিব্বা সংযত রাখা এবং সংযত বাক্য প্রয়োগ করা,

রমজানের রোজা ছিদ্র হয়ে যাওয়ার বিশেষ কারণ জিব্বা

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুক্তির উপায় কি? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার জিব্বা সংযত রাখ, তোমার বাসস্থান যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয়। (অর্থাৎ তুমি তোমার বাড়ীতে অবস্থান কর) 

এবং তোমার পূর্বের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে এসমস্ত আমল করার তৌফিক দান করুন। {আমীন}{তিরমিজী শরিফ হাদিস নং- ২৪০৬} আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 মানুষ সকালে ঘুম হতে উঠার সময় তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহবাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় কর। আমরা তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক তাহলে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহলে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য। {তিরমিজী শরিফ হাদিস নং- ২৪০৭}

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দুই ঠোটের মাঝখানের বস্তু (জিহ্বা) ও দুই পায়ের মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থানের) যামিন হতে পারে (অপব্যবহার হতে সংযত রাখবে), আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হবো। {তিরমিজী শরিফ হাদিস নং- ২৪০৮}

সালিহ ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) উকবা ইবন আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, নাজাত কিসে নিহিত? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার যবানকে নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখবে, তামার ঘর যেন সুপশ্রস্ত হয় আর স্বীয় গুনাহর জন্য রোনাযারী করবে।{তিরমিজী শরিফ হাদিস নং- ২৪০৯}

মুহাম্মদ ইবন মূসা বাসরী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফুরূপে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আদম সন্তান যখন সকালে উপনীত হয় তখন তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহ্বার কাছে মিনতি প্রকাশ করে এবং বলেঃ আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, আমরাতো তোমার ওয়াসীলায়ই আছি। তুমি ঠিক থাকলে আমরাও ঠিক থাকি আর তুমি বক্রতা অবলম্বন করলে আমরাও বক্র হয়ে যাই। {তিরমিজী শরিফ হাদিস নং- ২৪১০}

মু’আয ইবনু জাবাল (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কোন এক ভ্রমণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। একদিন যেতে যেতে আমি তার নিকটবর্তী হলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি কাজ সম্পর্কে আমাকে জানিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম হতে দূরে রাখবে। 

তিনি বললেনঃ তুমি তো আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করেছো। তবে সেই ব্যক্তির জন্য এ ব্যাপারটা অতি সহজ যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা’আলা তা সহজ করে দেন। তুমি আল্লাহ তা’আলার ইবাদাত করবে, কোন কিছুকে তার সাথে শরীক করবে না, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা রাখবে এবং বাইতুল্লাহর হাজ্জ করবে। 

তিনি আরো বললেনঃ আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজাসমূহ সম্পর্কে বলে দিব না? রোযা হলো ঢালস্বরূপ, দান-খাইরাত গুনাহসমূহ বিলীন করে দেয়, যেমনিভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয় এবং কোন ব্যক্তির মধ্যরাতের নামায আদায় করা। তারপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “তাদের দেহপাশ বিছানা থেকে আলাদা হয়ে যায়। 

এবং তারা তাদের প্রভুকে ডাকে আশায় ও ভয়ে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কি লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ " (সূরা আস-সিজদা ১৬, ১৭)

সকল কাজের মূল হলো ইসলাম স্তম্ভ হলো নামায 

তিনি আবার বলেনঃ আমি কি সমস্ত কাজের মূল, স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ শিখর সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ সকল কাজের মূল হলো ইসলাম, স্তম্ভ হলো নামায এবং সর্বোচ্চ শিখর হলো জিহাদ। তিনি আরো বললেন? আমি কি এসব কিছুর সার সম্পর্কে তোমাকে বলব না? 
ইফতারী সামনে নিয়ে বসে থাকা
আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি তার জিহ্বা ধরে বললেনঃ এটা সংযত রাখ। আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা যে কথাবার্তা বলি এগুলো সম্পর্কেও কি পাকড়াও করা (জবাবদিহি) হবে? তিনি বললেনঃ হে মু’আয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধুমাত্র জিহবার উপার্জনের কারণেই অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। {তিরমিজী শরিফ হাদিস নং- ২৬১৬}

রমজান মাস সমস্ত লোকদের জন্য ধ্বংস এর মাস

রামাজান মাস ইবাদাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পাওয়ার পরেও যারা নিজের জীবনের গুনাগুলো মাফ করে নিতে না পারলে তাদের জন্য দূরভোগ একদা আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেম্বারে দাঁড়িয়ে সাহাবীদেরকে ক্ষুদ্র শোনাচ্ছেন। এমন সময় জিব্রাইল আলাই সাল্লাম এসে আল্লাহ রাসুলের কানে কানে তিনটি বিষয় নিয়ে শোনাচ্ছেন।

এবং সে কথাগুলো শুনে আল্লাহ রাসুল আমিন বলছেন। সাহাবীরা আল্লাহর রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ ইয়া হাবিব আল্লাহ আমরা তো কখনো আপনাকে এরকম করতে দেখিনি, মেম্বারের সিড়িতে আপনি প্রথম পা দিয়ে আমিন বললেন। তারপরে দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রেখে আমিন বললেন। এবং তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখে আমিন বললেন।

যে রাসুল আল্লাহ এর কারণ কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বললেন, আমি যা শুনি তোমরা তা শোনো না। আমি যা দেখি তোমরা তা দেখো না। আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি জিব্রাইল আমার কানে কানে এসে বলল, রমজান মাস পাওয়ার পরে যারা নিজের জীবনের গুনাহ গুলো মাফ করে নিতে পারল না তাদের জীবন ধ্বংস হোক। 

অথবা তাদের নাক ধুলোয় দূষিত হোক জবাবে আমি বললাম আমিন। তারপরে আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পা রাখি হযরত জিব্রাইল বলেন, যে ব্যক্তি বৃদ্ধ পিতা মাতা পাওয়ার পরেও তাদের সেবা করে জীবনের গুনাহ গুলো মাফ করে নিতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক অথবা তাদের নাক ধোলায় দূষিত হোক এর জবাবে আমি বললাম আমিন।

তারপরে আমি যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখি ঠিক তখনই জিব্রাইল আমার কানে কানে এসে বলে ইয়া রাসুল আল্লাহ আপনার প্রতি দুরুদ পাঠ হওয়ার পরেও যে ব্যক্তি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন না, তারা ধ্বংস হোক অথবা তাদের নাক ধুলায় ভূষিত হোক এর জবাবে আমি আমিন বললাম। তাহলে বোঝা গেল যে রমজান মাস পাবার পরেও, 

নিজের জীবনের গুনাগুলো মাফ করে নিতে পারা গেল না সেই ক্ষেত্রে আল্লাহ রাসুলের ধ্বংসের জন্য আমিন শব্দ উচ্চারণ করেছে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে রমজান মাসে বেশি বেশি আমল করে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি হাসিল করা তৌফিক দান করুন আমিন।

রমজান মাসে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি আমল সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ {সাঃ} এর বাণী

একদা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তিনি বলছেন, কে আছো আমার এ কথাগুলো শুনবে এবং অন্যদেরকে আমল করার জন্য উৎসাহ দেবে, হযরত আবু হুরায়রা তিনি বললেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ আমি শুনবো এবং আমল করব আল্লাহ রাসুল গুনে গুনে পাঁচটি বিষয়ে আলোচনা করলেন। সেই পাঁচটি বিষয়ে নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ-
  • হারাম কাজ থেকে বাঁচো নিষিদ্ধ কাজ থেকে বাঁচো তুমি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ আবেদ হয়ে যাবে। 
  • আল্লাহ তোমার রেজিকে যা রেখেছেন যা বন্টন করে দিয়েছেন তাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে তাহলে তুমি দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ স্বনির্ভর বান্দা হয়ে যাবে। 
  • প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করো তুমি খাঁটি ঈমানদার বান্দা হয়ে যাবে। 
  • তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ করো অন্যের জন্য তা পছন্দ করো তুমি খাঁটি মুসলমান হয়ে যাবে।
  •  বেশি হাসবে না বেশি হাসলে অন্তর মৃত বানিয়ে দেয় নাউজুবিল্লাহ 
তাহলে রমজান মাস আসার আগেই আমরা সকল খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবেন এমনকি সকল খারাপ কাজ ছেড়ে দেব এবং ভালো কাজ গুলো আঁকড়ে ধরবো ইনশাল্লাহ আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সে তৌফিক দান করুন। {আমীন}

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি ছিল, রমজান মাসে ইবাদাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আশা করি পড়ে উপকৃত হয়েছেন, বা হবেন এই প্রত্যাশা রেখেই আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন