শসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সবজি খাওয়া বিশেষ গুনাগুন সম্পর্কেশসা খাইনি বা দেখেনি পৃথিবীতে এমন লোক খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন বা অসাধ্য কর সম্মানিত পাঠক নিশ্চয়ই আর্টিকেলের প্রথমলাইন পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। আজকের আর্টিকেলটি কোন বিষয়ে হতে যাচ্ছে।
শসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা
শসা এমন একটি ফল যার মধ্যে রয়েছে ভিন্ন মানে পুষ্টি গুণ সম্পন্ন তাই চলুন আজকে আমরা শসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চলেছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি
পেজ কন্টেন্ট সূচিপত্রঃ- শসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা সংশ্লিষ্ট

শসা কি

শসা (বৈজ্ঞানিক নাম: Cucumis sativus) একটি পরিচিত সবজি যা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। এটি সাধারণতঃ গরমের সময় বেশি পাওয়া যায় এবং সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শসা এক প্রকারের ফল, লম্বাটে আকৃতির এবং প্রায় ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। এর বাইরের রঙ সবুজ, তবে পাকলে হলুদ হয়। ভেতরে সাদাটে সবুজ রঙের হয়, এবং মধ্যভাগে বিচি থাকে।

শসা প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২০ কিলো ক্যালরী এবং জলের পরিমাণ বেশি থাকে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি সবজি, যেখানে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবার, ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য উপাদান প্রচুর পাওয়া যায়।
শসা খেলে মিলবে অনেক উপকার। সবজিটির প্রায় ৯৫ শতাংশই পানি। পানি ছাড়াও শসায় রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, কপার, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজ। নিয়মিত শসা খেলে দূরে থাকা যায় বিভিন্ন রোগ থেকে। 

জেনে নিন শসা খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে

  • হজমে সাহায্যঃ- শসা বুক জ্বলা, পাকস্থলীর এসিডিটি এমনকি গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি দিতে পারে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে ভুমিকাঃ- শসা কম ক্যালোরি আর প্রচুর ফাইবার থাকে, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • শরীরের খারাপ চর্বি কমিয়ে আনেঃ- শসা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। আর্থ্রাইটিস, অ্যাগজিমা, হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যায় উপকার শসা রস খেলে এই সমস্যাদি থেকে উপকার হতে পারে।

শসা নিয়মিত খেলে আপনি প্রতিদিনের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন কে এর ১৪ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশ পাবেন। এছাড়া কপার, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজগুলোর সাথে ভিটামিন বি এবং সি পাওয়া যায় সবজিটি থেকে।

নিয়মিত শসা খেলে আপনার সুস্থতা

শসা (Cucumber) খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই সবজি হাইড্রেটেড থাকার জন্য প্রশংসিত, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলোকে দূর করে। শসা খাওয়ার কিছু উপকারিতা নিম্নে দেওয়া হলোঃ-

  • হাইড্রেশনঃ- (Hydration) শসা প্রাচুর পানি ধারণ করে, যা আপনার শরীরে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এটি দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি এবং অন্যান্য তরল খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  • ওজন কমানোঃ- শসা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি ক্যালোরি কম থাকায় ওজন কমানো সহজ হয়।
  • জয়েন্টের ব্যথার উপশমঃ- শসা জয়েন্ট এবং পেশীর ব্যথায় ভালো কাজ করে। এটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা এবং আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তির জন্য একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার হতে পারে।
  • মাড়ির জন্য ভালোঃ- শসা মুখের অ্যাসিডের ভারসাম্য ও পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি মাড়ির রোগ এবং দাঁতের রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • টিস্যু তৈরি এবং রক্ত ​​প্রবাহঃ- শসা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা আপনার শরীরের জন্য খুব ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

শসা রাতে খাওয়ার উপকারিতা

রাতে শসা খাওয়ার অনেক উপকার থাকে। শসা সবজির প্রায় ৯৫% পানি ধারণ করে, যা আপনার শরীরের ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এটি পানি ছাড়াও ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, কপার, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজ সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ধারণ করে।
শসা খেলে নিম্নলিখিত উপকারিতা পাওয়া যায়ঃ-
  • হৃদরোগ প্রতিরোধঃ- শসা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পৃক্তঃ- শসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলস নামক পদার্থের কারণে কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সহায্য করে।
  • মলত্যাগ সহজ করেঃ- নিয়মিত শসা খেলে মলত্যাগের রুটিন সহজ করে দেবে।
  • পানির পরিমাণ বাড়াতে সাহায্যকারীঃ- শসা অনেক পরিমাণে পানি ধারণ করে, যা দূরে থাকা সমস্ত পানি শূন্যতা (Dehydration) দূর করার পাশাপাশি দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্যও বাড়াতে পারে।
  • মাংসপেশী স্বাস্থ্যঃ- শসা মাংসপেশীকে শিথিল রাতে সাহায্য করে এবং পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে সমাধান দিয়ে থাকেন।

মাত্র এক কাপ পরিমাণ শসায় প্রতিদিনের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন 

শসা একটি পুষ্টিকর সবজি, যা আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন কে প্রদান করে। মাত্র এক কাপ শসা থেকে আপনি প্রায় ১৪% থেকে ১৯% ভিটামিন কে পাবেন। এছাড়াও, শসা কপার, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজগুলোর সাথে ভিটামিন বি এবং সি পাওয়া যায় এই সবজি খেলে আপনি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে পারেন।

শসা খালি পেটে  খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে শসা খাওয়ার রয়েছে বিশেষ উপকারিতা। শসা শরীরে ফাইবার এবং জলের পরিমাণ বাড়ায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি প্রতিদিন খালি পেটে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে, হজম ক্ষমতা বাড়ায়, হাড় মজবুত করে, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে, চোখের অন্যান্য সমস্যা থেকে উপকারি,
শসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
এবং পর্যাপ্ত পরিমান জল ধরে রাখে। শসা খেলে স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক উপকার হতে পারে। আপনি যদি শসা খাওয়ার ফলাফল জানতে চান, তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে শসা খেলে পায়ের মাটি সরে যাবে। শসা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো একটি খাবার। এটি ওজন কমাতে, রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্মত উপকার করতে পারে। 

শসা ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। তাছাড়া, শসা কিডনি, ইউরিনারি, ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যার থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে। হজম ও ওজন কমাতে সহায়ক শসায় প্রচুর পরিমাণে পানি এবং কম পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে। 
ফলে যাঁরা দেহের ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করবে। ত্বকের যত্নে ও সৌন্দর্য প্রসাধনীতে উপকারী শসায় প্রচুর পরিমাণে ত্বকবান্ধব খনিজ সিলিকা থাকায় এটি আমাদের চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে। এ ছাড়া শসার সালফার ও সিলিকা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গেঁটেবাত থেকে মুক্তি শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে, 

যা গেঁটেবাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চোখের জ্যোতি বাড়ায় শসা গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসিয়ে রাখলে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা অপসারিত হয়। এতে চোখের প্রদাহপ্রতিরোধক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায় ছানি পড়া ঠেকাতেও এটি কাজ করে। চুল ও নখ সতেজ করে শসার মধ্যে যে খনিজ সিলিকা থাকে তা আমাদের চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে।

শসা খাওয়ার সঠিক সময়

শসা খাওয়ার সঠিক সময় হলো সকালে অথবা দুপুরে। এই দুইটি সময় শসা খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে, রাতে শসা খাওয়া উচিত নয়। রাতে শসা খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন হজমে সমস্যা হওয়া এবং পেট ভার হয়ে থাকার ফলে ঘুমে সমস্যা হওয়া তাই চেষ্টা করুন সকালে অথবা দুপুরে শসা খাওয়া আর এটাই হলো পারফেক্ট সময়।

ত্বকে জন্য শসার বিশেষ উপকারিতা

শসা একটি সুস্বাস্থ্য সুস্বাদু স্যালাড। স্বাস্থ্যের পক্ষে শসার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। গরমের দিনে দেহকে ঠাণ্ডা রাখতে এর তুলনা নেই। খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি এটি রূপচর্চার কাজেও ব্যবহৃত হয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। 
ত্বকে জন্য শসার বিশেষ উপকারিতা
যা ত্বককে নরম ও সতেজ রাখতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শসার ফেস প্যাক ত্বকের পক্ষে খুব উপকার। তাই আজ আপনাদের জন্য রইল ত্বকের যত্নে শসার কিছু ফেস প্যাক যা খুব সহজেই বাড়িতে তৈরি করা যায়।
  • শসা ও অ্যালোভেরা ফেস প্যাকঃ- শসা ও অ্যালোভেরা মিশ্রণ ত্বক টানটান রাখতে সহায্য করে।
  • শসা ও নিমপাতার ফেস প্যাকঃ- শসা ও নিমপাতা মিশ্রণ ত্বকের অস্বস্থি দূর করতে সাহায্য করে।
  • লেবু ও শসার ফেস প্যাকঃ- লেবু ও শসা মিশ্রণ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • টমেটো ও শসার ফেস প্যাকঃ- টমেটো ও শসা মিশ্রণ ত্বকের পরিস্থিতি সুধারে সাহায্য করে।
  • আলু ও শসার ফেস প্যাকঃ- আলু ও শসা মিশ্রণ ত্বকের নরম ও সতেজ রাখতে সাহায্য কর

শসার তৈরিকৃত তরকারি

শসার তরকারি একটি সুস্বাদু বাঙালি রেসিপি। এই তরকারি শসা (শসা চিংড়ি) এবং চিংড়ি মাছের সঙ্গে তৈরি হয়। নিচে এই রেসিপির উপকরণ এবং প্রণালি তুলে ধরা হলো যেগুলো আপনাদের রান্না করার ক্ষেত্রে অনেকটা কাজে আসবে বলে আমি মনে করি মানে চলুন দেখে নেওয়া যাক। ছয়টি শসা এবং চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করার জন্য উপকরণ সমূহঃ-

উপকরণ:
  • ৬ টি শসা (শসা চিংড়ি)
  • ১/২ কাপ চিংড়ি মাছ কুচি
  • ১/২ চা চামচ লবণ
  • ১/২ চা চামচ আদা বাটা/গুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ রসুন বাটা/গুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ জিরা গুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ মরিচ গুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ কাশ্মীরি লাল মরিচ গুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ ধনেপাতা কুচি
  • আন্দাজমত ৪/৫ টি কাঁচামরিচ
  • ২ চা চামচ তেল
প্রণালিঃ-
  1. প্রথমে শসাগুলা ছিলিয়ে ছোট টুকরা করে নিন।
  2. একটু হাঁড়িতে তেল গরম করে চিংড়ি কুচি একটু রান্না করে নিন।
  3. পেঁয়াজ যোগ করে সব মসল্লা একটা একটা করে যোগ করে পানি দিয়ে ভুনা করুন।
  4. তারপর শসার টুকরাগুলা দিয়ে ভালোভাবে মসল্লা মাখিয়ে পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
  5. শসা সিদ্ধ হলে ধনেপাতা এবং কাঁচামরিচ দিয়ে নামিয়ে নিন।
  6. সাদা ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।
এটি খুবই সহজ, স্বাস্থ্যকর তাই নয়, এটি অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সহজে মানিয়ে যায়।

লেখক এর কথাঃ-

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল আপনাদের জন্য একটি ইন্টারেস্টিং রেসিপি ছিল। আশা করি পূর্ণাঙ্গ আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হয়েছেন। বিশেষ করে আর রাধুনীদের জন্য আমার বিশ্বাস এই আর্টিকেল অনুযায়ী কোন ব্যক্তি শসা খেলে বিশেষ এই উপকারিতা ও অপকারিতা পাবে বলে আমি মনে করি তাই আর্টিকেলটি পূর্ণাঙ্গ পড়ার আহ্বান জানিয়ে এখানে শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন