লাউ খাওয়ার বিশেষ গুনাগুন এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
বিভিন্ন ফল বা সবজির পুষ্টি গুনাগুনপ্রিয় পাঠক আমরা সবজি হিসেবে অনেক কিছু খেয়ে থাকি কিন্তু জানি না দিতে কি
পরিমাণ গুনাগুন রয়েছে, তাই আজকে লাউ এর গুনাগুন নিয়ে কিছু বিষয় আপনাদের সাথে
শেয়ার করব। লাউ একটি জনপ্রিয় সবজি যা আমাদের,
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জায়গাতে পাওয়া যায়। এবং চাষও করা হয়। লাউয়ের দানা থেকে শুরু
করে খোসা, ডাঁটা, এমনকি লাউ গাছের পাতাও খাওয়া হয়। লাউ সাধারণত শীতকালে চাষ হয়।
চলুন লাউয়ের বিশেষ গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করি।
পেজ কনটেন্ট সূচিপত্রঃ লাউ খাওয়ার বিশেষ গুনাগুন সম্পর্কে
লাউ কী?
লাউ বা কদু একটি শীতকালীন সবজি যা প্রায় সর্বত্রে চাষ হয়। যার বৈজ্ঞানিক নাম
হলোঃ- (Lagenaria siceraria) এটি কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে
খাওয়া হয়, আর পরিপক্ব অবস্থায় শুকিয়ে এটি বোতল, পাত্র বা নল হিসেবে ব্যবহার
করা হয়। এ কারণেই লাউ এর ইংরেজি নাম হয়েছে, {bottle gourd} কচি
লাউয়ের রং হালকা সবুজ, ভেতরে সাদা রঙের শাঁস।
চট্টগ্রাম এর আঞ্চলিক ভাষায় জাইত হদু বলা হয়। লাউ পৃথিবীর অন্যতম পুরনো চাষ
হওয়া সবজি, এর জন্ম আফ্রিকায়। এই সবজি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর ও
মস্তিষ্ককে ঠাণ্ডা রাখে। তাই আমাদের বেশি করে লাউ খাওয়া প্রয়োজন। লাউয়ে
রয়েছে, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ডি, শুধু তাই নয়।
লাউ এর মধ্যে রয়েছে। ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফোলেট,
আয়রন এবং পটাশিয়াম প্রচুর মাত্রায় রয়েছে । আয়রন ছাড়াও লাউতে আছে, সােডিয়াম,
পটাসিয়াম ও আরও নানা এসেনসিয়াল মিনারেলস থাকে। লাউ শরীরকে নানা রোগের হাত
থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লাউ খাওয়ার কিছু উপকারিতা নিম্নলিখিত:
- পাচনে সাহায্য: লাউ খেলে পাচনের সমস্যা দূর হয়।
- শরীরের ঠাণ্ডা রাখে: লাউ শরীরের তাপমাত্রা কমায় এবং ঠাণ্ডা রাখে।
- ওজন কমায়: লাউ খেলে ওজন কমায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য: লাউ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- হার্ট স্বাস্থ্যে উপকারী: লাউ হার্ট স্বাস্থ্যে উপকারী।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়: লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- ত্বকের স্বাস্থ্যে উপকারী: লাউ ত্বকের স্বাস্থ্যে উপকারী।
- প্রস্রাবনে সাহায্য: লাউ প্রস্রাবনে সাহায্য করে।
- মস্তিষ্কে ভাল প্রভাব: লাউ মস্তিষ্কে ভাল প্রভাব ফেলে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য: লাউ ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে ।
লাউ চাষ একটি সুস্বাদু সবজি যা আমাদের দেশে শীতকালে চাষ করা হয়। লাউ গাছ
অধিকাংশই শীতকালে ফসল দেয়। এই সবজির পাতা নরম ও সবুজ, এবং পাতা ও ডগা শাক
হিসাবে ব্যবহার করা হয়। লাউ ভাজি বা তরকারী রান্না করে খাওয়া হয়। লাউ শাক
পুষ্টিকর বেশি। তবে লাউ এখন বারো মাস আমাদের দেশে পাওয়া যায়।
লাউ চাষ করার জন্য সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি সুস্বাদু লাউ উৎপাদন
করতে পারেন। লাউ একটি সবজি যা সাধারণভাবে শীতকালে চাষ করা হয়। এই সবজির
পাতা নরম ও সবুজ, এবং লাউ ভাজি বা তরকারী রান্না করে খাওয়া হয়। ইত্যাদি
এখন আমরা লাউ চাষের জন্য অনুসরণ করতে পারি। যা আমাদের অনেক উপকারে আসবে,
পদ্ধতি নিম্নলিখিত
- জমি নির্বাচন ও তৈরি: লাউ চাষের জন্য প্রথমে জমি নির্বাচন করতে হয়। লাউ চাষের জন্য উত্তম মাটি হলো এঁটেল দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি। মাটি তৈরির আগে প্রস্তুত করতে হবে।
- বীজ বপন: লাউ চাষের জন্য বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের সময় নির্বাচন করতে হবে। বীজ তলায় চারার পরিচর্যা করতে হবে।
- চারা রোপণ ও পরিচর্যা: বীজ তলায় চারা রোপণ করতে হবে। চারা উৎপাদন করার পর প্রতিদিন সেচ দিতে হবে।
- সার প্রয়োগ: লাউ গাছে সার প্রদান করতে হবে। সার প্রয়োগের সময় নির্বাচন করতে হবে।
- পোকা মাকর ও আগাছা দমন: লাউ চাষে পোকা মাকর এবং আগাছা দমন করতে হবে। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে লাউ চাষ করলে আপনি সুস্বাদু লাউ উত্পাদন করতে পারবেন।
লাউ চাষের জন্য মাটি নির্বাচন
লাউ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাটি হচ্ছে, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি বা
এঁটেল দোআঁশ মাটি। বাংলাদেশে লাউ চাষের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে শীতকাল,
কারণ বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ তাই বেশি গরম ও না আবার বেশি ঠান্ডা ও না
এমন আবহাওয়া লাউ চাষে উপযোগী। লাউ গাছ হচ্ছে অত্যান্ত ক্ষুধার্ত আর
পিপাসার্ত একটি উদ্ভিদ।
আরো জানতে পড়ুনঃ সরিষা চাষের গুরুত্ব ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
তাকে যত খেতে দিবেন, আপনাকে ততো বেশি ভালোবাসা দিবে। রাসায়নিক সার দিয়ে
তার ক্ষুধা নিবারন কষ্টসাধ্য এবং ত্রুটিপূর্ণ। লাউ চাষের জন্য প্রয়োজন
এঁটেল দোআঁশ মাটি। উপযুক্ত মাটির সাথে প্রয়োজন মতন গোবর সার মিশিয়ে ভালো
করে মাটি তৈরি করে রাখতে হবে। যদি একেবারে জৈব সার ব্যবহার করতে চান তাহলে
সেই মাটিতে ৫ দিন অন্তর অন্তর সরষের খোল পচা সার দিন।
লাউ চাষের জন্য পদ্ধতি অনুসরণ
জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি লাউ চাষের জন্য উত্তম জমি হলো দো-আঁশ থেকে এটেল
দো-আঁশ মাটি।নিজেকে প্রস্তুত করে নিন। আপনি কোন জমি চাষ করতে চান, সে জমির
জন্য আপনার কতটুকু জ্ঞান আছে, আপনার এলাকায় সবজির চাহিদা কেমন, এবং সবজি
চাষে আপনি কি আনন্দ পাবেন। জমি তৈরির জন্য মাটি সহজে পানি ধরে রাখতে পারবে।
বীজের অংকুরোদগম বীজ তলায় চারা উৎপাদন করতে হবে। বীজ বপনের জন্য মাটির জো
ঠিক রাখতে হবে। চারা রোপণ, পরিচর্চা ও সেচ দেয়া চারা উঠার পর সঠিক
পরিচর্যা করতে হবে। শীতে চারা গজাতে সমস্যা হলে প্রতি দিন রাতে বেড ঢেকে
রাখতে হবে।
লাউ খেতে কি পরিমান সার প্রয়োগ
ফসল চাষাবাদের জন্য জমিতে কি পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হয়। এই বিষয়টি
অনেক গুরুত্বপূর্ণ সঠিক পরিমাণ সার প্রয়োগ না করলে ফসলের বিশেষ ক্ষতির
আশঙ্কা থাকে, তাই ফসলের জমিতে সঠিক পরিমাণ সার প্রয়োগ করা অতিব জরুরী
চলুন লাউ চাষের জন্য সঠিক সার প্রয়োগ করতে হলে নিম্নলিখিত পরামর্শ মেনে
সার প্রয়োগ করি।
লাউ চাষের আগে জমি প্রস্তুত করুন। জমি পরিষ্কার করে নিন এবং উপযুক্ত সার
মিশিয়ে দিন। লাউ বীজ রোপণ করার আগে বীজ পরিস্কার করুন। এটি অংকুরোদগমের
জন্য সহজ হতে সাহায্য করবে।লাউ চাষের জন্য উপযুক্ত সার প্রয়োগ করুন আশা
করি উপকৃত হবেন,
- পটাশিয়াম নাইট্রেট: প্রতি একরে ১৫-২০ কেজি পটাশিয়াম নাইট্রেট প্রয়োগ করুন।
- কার্বনিক সার: প্রতি একরে ২৫-৩০ কেজি কার্বনিক সার প্রয়োগ করুন।
- ডাপল সার: প্রতি একরে ২৫-৩০ কেজি ডাপল সার প্রয়োগ করুন।
রাতে লাউ খাওয়া উপকারিতা
প্রতিটি জিনিস বা খাদ্য অতিরিক্ত খেলে ক্ষতির দিক থাকে তেমনিভাবে সঠিক
নিয়মে খেলে তার মধ্যে উপকারিতা থাকে, তাই লাউ খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি!
এই সবজি প্রচুর গুণগত উপাদান ধারণ করে। এই লাউ আমাদের প্রিয় নবী হযরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনার খুব প্রিয় ছিলেন। চলুন
লাউয়ের বিশেষ গুনাগুন সম্পর্কে অল্প কিছু ধারনা নেব।
আরো জানতে পড়ুনঃ শসা খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
লাউ খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ইউরিন ইনফেকশন রোধ করতে লাউ
পানির অভাব মেটায় এবং ইউরিন ইনফেকশন রোধ করে। শরীর ঠান্ডা রাখতে লাউ খেলে
মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখে, ঘুমের সমস্যা দূর করে, ও দেহের তাপমাত্রাও
নিয়ন্ত্রণ করে। পেটের সমস্যা দূরে রাখে লাউ হজমে সাহায্য করে
কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
লাউ খেলে স্ট্রেস কমে যায়। লাউ রযেছে দ্রবণীয় ফাইবার ও পানি, যা দেহে জলের
অভাব মেটায়। লাউ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, পেট
ফাঁপা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় নিয়মিত
লাউ খেলে। লাউ খেলে দূর হয় হজমের সমস্যা। মানুষের রাতে ঘুমের সমস্যা দূর
করার জন্য লাউ ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমান কমাতে লাউ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। সুস্থ ও
রোগ মুক্ত থাকতে লাউ খানতাহলে, নিয়মিত লাউ খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার
স্বাস্থ্য সম্পর্কে যত্ন নেবেন! আশা করি লাভ খেলে আপনার শরীরের অনেক রকম
রোগ থেকে নিরাময় বা সম্ভব আসুন আমরা বেশি বেশি করে লাউয়ের তরকারি
ভক্ষণ করি!
লাউয়ের ঔষধি গুনাগুন
লাউ (বা কদু) একটি বৃহৎ বর্ষজীবী সপুষ্পক বীরুৎ, যা আমাদের জনপ্রিয় সবজি
হিসেবে চিহ্নিত। এই সবজিটির বহুবিধ পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা আছে, যেমন আয়ুর্বেদ
মতে, লাউ হচ্ছে মধুরস। লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। শরীর ও মস্তিষ্ককে
ঠাণ্ডা রাখে। লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। লাউ অলাবুর চলতি নাম হলো “লাউ”
আবার কোনো কোনো প্রদেশে “কন্দু” ও বলা হয়।
ফল স্বাদে তিক্ত ও মিষ্ট। ঔষধিক ব্যবহার লাউ বা কদুর ব্যবহার হয়। মূল, পত্র,
নাল, বীজ ও ফল। আমাদের প্রাচীন বনৌষধির গ্রন্থে লাউ এশিয়া ও আফ্রিকার জনপ্রিয়
সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য উল্লেখ দেখা যায়। ঔষধার্থে লাউ বা কদুর ব্যবহার
হয়। মূল, পত্র, নাল, বীজ ও ফল। বৈদ্যক সম্প্রদায়ে লাউয়ের প্রতিটি অংশকে
পৃথক, পৃথক পদ্ধতিতে কিভাবে কাজে লাগিয়েছেন।
সেইটাই আলোচনা করা যাক লাউ (বা কদু) একটি সবজি, যা আমাদের প্রায় সর্বত্রে চাষ
হয়। এটি এশিয়া ও আফ্রিকার জনপ্রিয় সবজি হিসেবে পরিচিত। লাউ বা কদুর কান্ড
শাখান্বিত, খাঁজযুক্ত, কৌণিক, রোমশ এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এই সবজিটি আমাদের
নিত্য আহার্যের তরকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
লাউ বা কদু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচে কিছু ব্যবহারিক উপায় উল্লেখ করা
হল
- পিতশ্লেমাজনিত জ্বরে: লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এ ছাড়াও শরীর ও মস্তিষ্ককে ঠাণ্ডা রাখে।
- চোর অম্বল: লাউ ঝলসে নিয়ে নিংড়ে রস করে তার সঙ্গে আধ চামচ আন্দাজ মধু মিশিয়ে খাওয়ালে গায়ের জ্বালা ও বমন বা বমনেচ্ছা চলে যাবে।
- দাহে: লাউ এই অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে রেহাই দেয়।
- অর্শবিকার: লাউ পোড়া রস ও চিনি অমোঘ ঔষধ।
- বারবার পিপাসা: লাউ খাওয়ার বিধি নিষেধ না মেনে ঐ ঝলসা পোড়া লাউয়ের রসে একটু চিনি মিশিয়ে দেখুন।
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক আজকের ট্রফিক বা আর্টিকেলে লাউ খাওয়া বিশেষ গুনাগুন
উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ছিল। আশা করি পূর্ণাঙ্গ
আর্টিকেলটি পড়ে ন্যূনতম হলেও কিছু লাউয়ের গুনাগুন সম্পর্কে ধারণা এসেছে। যদি
বিষয়গুলো পড়ে ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের কাছে শেয়ার করুন এবং জানানোর
সুযোগ করে দিন পরিশেষে আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত
আর্টিকেল ইতি করলাম। আল্লাহ হাফেজ!