হজের তাৎপর্য ও গুরুত্ব ২০২৪ বিস্তারিত জানুন

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি স্তম্ভ হজহজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি, যা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলিমের জীবনে অন্তত একবার পালন করা আবশ্যক। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা প্রতিবছর সৌদি আরবের মক্কা শহরে অনুষ্ঠিত হয়। 
হজ
হজ পালনের সময় লক্ষ লক্ষ মুসলিম পবিত্র স্থানগুলি পরিদর্শন করেন, এবং নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেল এ হাত হজ সম্পর্কে জেনে নেই। যা আমাদের অনেক কাজে আসবে তাহলে চলুন শুরু করি। 

পেজ সূচিপত্রঃ- হজের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা

হজ কি?

হজ ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য জীবনে অন্তত একবার পালন করা ফরজ (বাধ্যতামূলক)। হজ পালনের সময় লক্ষ লক্ষ মুসলিম মক্কায় সমবেত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। হজ পালনের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্য ও বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটান।

হজ ফরজ হওয়ার শর্ত

ইসলামের ফরজ পাঁচটি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটিঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত (নামাজ) কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, বাইতুল্লাহর হজ করা, মাহে রমজানের রোজা রাখা (বুখারী-মুসলিম)

সুরা আল ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াতটি হজের গুরুত্ব এবং তার ফরজ হওয়ার বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করে। নিচে উক্ত আয়াতটির বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো:
**আয়াত**
۞ فِيهِ آيَاتٌۭ بَيِّنَـٰتٌۭ مَّقَامُ إِبْرَٰهِـۧمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُۥ كَانَ ءَامِنًۭا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلْبَيْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًۭا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ عَنِ ٱلْعَـٰلَمِينَ ٩٧
**বাংলা অনুবাদ**
“এতে আছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী, (এর মধ্যে রয়েছে) ইবরাহিমের দাঁড়ানোর স্থান। আর যে কেউ এতে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ থাকে। মানুষের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই ঘরের হজ করা তাদের জন্য অবশ্যকর্তব্য। আর যে অস্বীকার করে (হজের বাধ্যবাধকতা) তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ জগতসমূহের প্রতি অভাবমুক্ত।
এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, যাদের সামর্থ্য রয়েছে, তাদের জন্য হজ পালন করা, ফরজ বা বাধ্যতামূলক। আল্লাহ তা'আলা এখানে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যারা হজের বাধ্যবাধকতা অস্বীকার করবে, তাদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে এবং আল্লাহ জগতসমূহের প্রতি অভাবমুক্ত।

হজ ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ 

হজ ফরজ হওয়ার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। এই শর্তগুলো পূরণ হলে একজন মুসলিমের জন্য হজ পালন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। হজ ফরজ হওয়ার শর্তগুলো নিম্নরূপ:
হজ ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ
  • ইসলাম: হজ শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য ফরজ।
  • বয়স: প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হতে হবে। 
  • বুদ্ধি: সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হতে হবে, অর্থাৎ মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
  • স্বাধীনতা: হজ আদায়ের জন্য স্বাধীন হওয়া আবশ্যক, ক্রীতদাস বা বন্দী হলে হজ ফরজ নয়।
  • সামর্থ্য: শারীরিক এবং আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে। এতে যাতায়াত, থাকা-খাওয়া এবং হজের অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত।
  • মাহরাম (মহিলাদের জন্য): মহিলাদের ক্ষেত্রে, হজে যাওয়ার জন্য একজন মাহরাম (পুরুষ অভিভাবক, যেমন স্বামী, পিতা, ভাই ইত্যাদি) থাকা আবশ্যক।
  • শারীরিক স্বাস্থ্য: শারীরিকভাবে হজ পালনের সামর্থ্য থাকতে হবে।
এই শর্তগুলো পূরণ হলে একজন মুসলিমের জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা বাধ্যতামূলক। 
বিস্তারিত বর্ণনা:
  • আর্থিক সামর্থ্য: হজ পালন করতে গেলে নিজের এবং পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানোর পরে পর্যাপ্ত সঞ্চয় থাকতে হবে। এতে হজের ভ্রমণ ব্যয়, থাকা-খাওয়ার খরচ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ অন্তর্ভুক্ত।
  • শারীরিক সামর্থ্য: হজের সময় অনেক ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়। যদি কেউ শারীরিকভাবে অক্ষম হন, তাহলে তার পক্ষে হজ ফরজ নয়। তবে কেউ যদি আর্থিকভাবে সক্ষম হন কিন্তু শারীরিকভাবে অক্ষম হন, তাহলে তার পক্ষে একজন প্রতিনিধি পাঠানো যায়, যাকে 'হজে বদল' বলা হয়।
  • মাহরাম: মহিলাদের ক্ষেত্রে মাহরামের সঙ্গে যাওয়া আবশ্যক, যা তাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
হজের এই শর্তগুলো পূরণ করলে একজন মুসলিমের জন্য হজ পালন ফরজ হয়, যা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং এক মহান ইবাদত।

ইহরাম

ইহরাম হল হজ এবং উমরার সময় পালন করতে হয় এমন একটি বিশেষ অবস্থা এবং পোশাক, যা এই ইবাদতের জন্য নির্ধারিত নিয়ম-কানুনের প্রতীক। ইহরাম পরিধান করার মাধ্যমে একজন হাজী বা উমরাকারী নিজেকে আল্লাহর নিকট পূর্ণভাবে সমর্পিত করেন এবং নির্দিষ্ট কিছু কাজ থেকে বিরত থাকেন। ইহরাম সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নরূপ:
  • পবিত্রতা: ইহরাম পরিধানের আগে পুরো শরীর পরিষ্কার করে গোসল (গোসল বা অন্তত ওজু) করা সুন্নত।
  • ইহরামের পোশাক: পুরুষদের জন্য ইহরামের পোশাক হলো দুটি সাদা কাপড়। এক টুকরো কাপড় কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পরা হয় এবং অন্য টুকরো কাপড় কাঁধে জড়ানো হয়। মহিলাদের জন্য ইহরামের নির্দিষ্ট কোনো পোশাক নেই, তবে তারা শালীন এবং শরীর ঢাকা পোশাক পরিধান করবেন, মুখ ও হাত বাদে।
  • নিয়ত: ইহরাম পরিধানের সময় নির্দিষ্ট নিয়তের মাধ্যমে হজ বা উমরা পালনের অভিপ্রায় করতে হয়।
  • তালবিয়া পাঠ করা: নিয়তের পর তালবিয়া পাঠ করা হয়, যা হলো: "لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لَا شَرِيكَ لَكَ"
বাংলা উচ্চারণ: "লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইনাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক।"

 ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজগুলো:

ইহরাম অবস্থায় কিছু কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা পালনকারীর জন্য হজ বা উমরা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত মেনে চলা আবশ্যক। এই নিষিদ্ধ কাজগুলো নিম্নরূপ:

 ১. শারীরিক পরিচ্ছন্নতার কাজ:
  • **চুল বা দাড়ি কাটা**: মাথার চুল, দাড়ি বা শরীরের অন্য কোনো চুল কাটা নিষিদ্ধ।
  • **নখ কাটা**: ইহরামের সময় নখ কাটা যাবে না।
 ২. সুগন্ধি ব্যবহার:
  •  **সুগন্ধি বা পারফিউম**: ইহরামের অবস্থায় কোনো ধরনের সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। এ ক্ষেত্রে ইহরাম পরার আগে সুগন্ধি ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু ইহরাম পরার পর তা নিষিদ্ধ।
 ৩. পোশাক সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা:
  •  **পুরুষদের জন্য সেলাই করা পোশাক**: পুরুষদের ইহরাম অবস্থায় সেলাই করা পোশাক পরিধান নিষিদ্ধ। তারা দুটি সাদা অজুড়া কাপড় পরিধান করবেন।
  • **মহিলাদের জন্য মুখ ঢাকা**: মহিলাদের ইহরামের অবস্থায় মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ, তবে তারা শালীন পোশাক পরিধান করবেন যা শরীর ঢেকে রাখবে।
 ৪. শিকার করা:
  • **শিকার**: ইহরাম অবস্থায় কোনো প্রাণী শিকার করা নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা হারাম এলাকার ভিতরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
৫. যৌন সম্পর্ক:
  • **যৌন সম্পর্ক ও যৌন আকাঙ্ক্ষা**: ইহরাম অবস্থায় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা, যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগানো বা এ ধরনের কোনো কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
 ৬. বিবাহ সংক্রান্ত কাজ:
  • **বিবাহ বা বিবাহের প্রস্তাব**: ইহরামের সময় কোনো ধরনের বিবাহ, বিবাহের প্রস্তাব বা বিবাহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিষিদ্ধ।
৭. ঝগড়া-বিবাদ:
  • **ঝগড়া বা তর্ক করা**: ইহরামের সময় ঝগড়া-বিবাদ বা তর্ক করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮. ক্ষতিকারক আচরণ:
  • **প্রাণীদের কষ্ট দেওয়া**: ইহরাম অবস্থায় কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া বা তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করা নিষিদ্ধ।
এই নিয়মগুলো পালনের মাধ্যমে ইহরাম পালনকারী ব্যক্তি তার ইবাদতের পবিত্রতা ও মর্যাদা বজায় রাখেন। হজ ও উমরার প্রতিটি ধাপই মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নির্ধারিত, এবং এই নিষেধাজ্ঞাগুলো তার অংশ।

ইহরামের সময়সীমা:

  • ইহরাম অবস্থায় হাজী বা উমরাকারীকে নির্দিষ্ট কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হয় এবং সমস্ত ইবাদত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ইহরামের অবস্থায় থাকতে হয়। হজ বা উমরার নির্দিষ্ট কাজগুলো সম্পন্ন হলে ইহরাম খোলা যায়।
ইহরাম ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার, যা হজ ও উমরার সময় একজন মুসলিমকে আল্লাহর নৈকট্যে নিয়ে আসে এবং তার আনুগত্যের প্রকাশ করে। ইহরাম পালন এবং হজ বা উমরা সম্পন্ন করার জন্য কিছু পরামর্শ এবং নির্দেশনা রয়েছে, যা অনুসরণ করলে আপনার ইবাদত সহজ এবং সুচারুভাবে সম্পন্ন হবে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হলো:
ইহরাম পালনের জন্য পরামর্শ:
  1. সঠিক প্রস্তুতি নিন: হজ বা উমরার আগে ইহরামের নিয়মগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। প্রয়োজনীয় বইপত্র পড়ুন এবং যারা ইতিমধ্যে হজ বা উমরা করেছেন, তাদের সাথে আলোচনা করুন।
  2. স্বাস্থ্যকর থাকুন: হজ বা উমরা একটি শারীরিকভাবে কষ্টসাধ্য ইবাদত। এজন্য শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিয়ে যান।
  3. পর্যাপ্ত পোশাক নিন: ইহরামের জন্য সঠিক পোশাক সঙ্গে রাখুন। পুরুষদের জন্য দুটি সাদা কাপড় এবং মহিলাদের জন্য শালীন, আরামদায়ক পোশাক নিন।
  4. যথাযথ নিয়ত করুন: ইহরাম পরিধান করার আগে নিয়ত করুন এবং তালবিয়া পাঠ করুন। নিয়ত করতে ভুলবেন না, কারণ এটি ইহরামের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
  5. ধৈর্য ধরে থাকুন: হজ বা উমরা পালনকালে বিভিন্ন ধরনের কষ্ট ও অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন। ধৈর্য ধরে আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।

হজ বা উমরা পালনের জন্য সাধারণ পরামর্শ:

  1. সময়মতো কাজ করুন: হজ বা উমরার প্রতিটি ধাপ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। তাই সময়মতো কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন।
  2. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন: প্রতিদিন নিয়মিতভাবে গোসল করুন এবং পরিচ্ছন্ন থাকুন। ইহরামের নিয়ম মেনে পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং পবিত্রতা রক্ষা করুন।
  3. মানসিক প্রস্তুতি নিন: হজ বা উমরার সময় মানসিকভাবে শান্ত ও স্থির থাকুন। প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করুন।
  4. প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখুন: প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সঙ্গে রাখুন। বিশেষ করে ইহরামের সময় সাদা কাপড়, টুপি, ছাতা ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন।
  5. সতর্ক থাকুন: হারাম অঞ্চলে সতর্ক থাকুন এবং ইহরামের নিয়ম মেনে চলুন। কোনো প্রকার ঝগড়া বা বিবাদে জড়াবেন না এবং কোনো নিষিদ্ধ কাজ করবেন না।
  6. আল্লাহর কাছে দোয়া করুন: হজ বা উমরার প্রতিটি ধাপেই আল্লাহর কাছে দোয়া করুন এবং তার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করুন। আপনার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং সমস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করুন।
এই পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনার হজ বা উমরা পালনের অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর ও অর্থবহ হবে, ইনশাআল্লাহ।

কয়েকটি বিশিষ্ট স্থানের পরিচয়

হজ ও উমরার সময় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র স্থান রয়েছে, যেগুলোর ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। এই স্থানগুলো মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। নিচে কয়েকটি বিশিষ্ট স্থানের পরিচয় দেওয়া হলো:
কয়েকটি বিশিষ্ট স্থানের পরিচয়
১. কাবা শরীফ
  • **অবস্থান**: মসজিদুল হারাম, মক্কা, সৌদি আরব।
  •  **বর্ণনা**: কাবা হল ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। এটি একটি ঘনাকার ভবন যা মুসলমানদের কিবলা হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মুসলমানরা কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন।
 ২. মসজিদুল হারাম
  •  **অবস্থান**: মক্কা, সৌদি আরব।
  • **বর্ণনা**: এটি বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদ এবং ইসলামের পবিত্রতম স্থান। মসজিদুল হারামে কাবা অবস্থিত। হাজী ও উমরাকারীরা তাওয়াফ (কাবার চারপাশে প্রদক্ষিণ) করেন এবং সাঈ (সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ান) সম্পন্ন করেন।
৩. মিনা
  •  **অবস্থান**: মক্কার পূর্বে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে।
  • **বর্ণনা**: মিনা হল একটি তীব্র উপত্যকা যেখানে হজের সময় হাজীরা তাঁবুতে রাত যাপন করেন। এটি "তাঁবুর শহর" নামেও পরিচিত। মিনাতে রামি (শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ) করার কাজটি সম্পন্ন হয়।
 ৪. আরাফাত ময়দান
  •  **অবস্থান**: মক্কার দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে।
  • **বর্ণনা**: আরাফাত ময়দান হজের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান, কারণ ৯ জিলহজ্ব তারিখে হাজীরা এখানে অবস্থান করেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এই দিনে আরাফাতে অবস্থান হজের আবশ্যিক অংশ।
 ৫. মুযদালিফা
  • **অবস্থান**: মিনা ও আরাফাতের মধ্যবর্তী স্থানে।
  •  **বর্ণনা**: মুযদালিফায় হাজীরা আরাফাত থেকে ফেরার পথে রাত যাপন করেন এবং পাথর সংগ্রহ করেন যা পরদিন মিনাতে শয়তানকে নিক্ষেপ করা হয়।
৬. জামারাত
  • **অবস্থান**: মিনা, সৌদি আরব।
  • **বর্ণনা**: জামারাত হল তিনটি পাথরের স্তম্ভ, যা শয়তানের প্রতীক। হাজীরা এই স্তম্ভগুলোর প্রতি পাথর নিক্ষেপ করেন, যা রামি নামে পরিচিত। এটি হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৭. সাফা ও মারওয়া
  • **অবস্থান**: মসজিদুল হারামের মধ্যে।
  • **বর্ণনা**: সাফা ও মারওয়া দুটি ছোট পাহাড়, যেখানে হাজী ও উমরাকারীরা সাতবার দৌড়ান, যা সাঈ নামে পরিচিত। এটি হযরত হাজেরার পানির জন্য অনুসন্ধানের স্মরণে সম্পন্ন হয়।
 ৮. মসজিদে নববী
  • **অবস্থান**: মদিনা, সৌদি আরব।
  • **বর্ণনা**: এটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম মসজিদ, যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক অবস্থিত।
এই স্থানগুলো ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে জড়িত এবং মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হজ ও উমরার সময় এই স্থানগুলোর প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়।

দোয়া কবুলের স্থান

হজ এবং উমরার সময় এমন কিছু পবিত্র স্থান রয়েছে যেখানে দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই স্থানগুলোতে দোয়া করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ বেশি এবং দোয়া কবুলের সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া কবুলের স্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

 ১. কাবা শরীফ
  •  **মসজিদুল হারাম, মক্কা**: কাবার সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। কাবার দিকে মুখ করে দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা সেই দোয়া কবুল করেন।
 ২. মুলতাযাম
  • **কাবার দরজার পাশের অংশ**: কাবার দরজার পাশের অংশকে মুলতাযাম বলা হয়। এখানে বুক ঠেকিয়ে এবং হাত প্রসারিত করে দোয়া করলে তা কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।
 ৩. জমজম কূপ
  • **মসজিদুল হারাম, মক্কা**: জমজম কূপের পানি পান করে এবং সেখানে দোয়া করলে তা কবুল হয়। জমজমের পানিকে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র এবং শিফা হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
৪. আরাফাত ময়দান
  • **আরাফাত, মক্কা**: হজের ৯ জিলহজ তারিখে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করে দোয়া করা হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দিনে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করে দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা সেই দোয়া কবুল করেন এবং গুনাহ মাফ করেন।
 ৫. মুযদালিফা
  • **মিনা ও আরাফাতের মধ্যবর্তী স্থান**: হজের রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করে দোয়া করলে তা কবুল হয়। এটি আরাফাতের দিনের পরের রাত।
৬. মিনা 
  • **মক্কা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে**: মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় এবং পশু কোরবানির পর দোয়া কবুল হয়।
 ৭. মসজিদে নববী
  • **মদিনা**: মসজিদে নববীতে বিশেষত রওজা মোবারকের সামনে (যেখানে মহানবী (সা.)-এর কবর রয়েছে) দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা তা কবুল করেন।
 ৮. রওজা মোবারক
  • **মসজিদে নববী, মদিনা**: মহানবী (সা.)-এর রওজা মোবারকের সামনে দোয়া করা খুবই ফজিলতপূর্ণ।
 ৯. হিজরে ইসমাইল
  • **কাবার পাশে আধা-বৃত্তাকার এলাকা**: এটি কাবার একটি অংশ এবং এখানে দোয়া করলে তা কবুল হয়।
১০. মাকামে ইব্রাহিম
  • **কাবার পাশে**: এখানে দাঁড়িয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা তা কবুল করেন। এটি ইব্রাহিম (আ.)-এর দোয়া কবুলের স্থান।
১১. সাফা ও মারওয়া
  • **মসজিদুল হারাম, মক্কা**: সাঈ (সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়ানো) করার সময় এবং শেষ করে দোয়া করলে তা কবুল হয়।
এই পবিত্র স্থানগুলোতে দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা দোয়া কবুল করেন বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাছাড়া, যেকোনো স্থানে ও যেকোনো অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন, তবে এই স্থানগুলোতে দোয়া করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

লেখকের শেষ কথাঃ-


হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ এবং মুসলিম জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কর্তব্য। এটি আল্লাহর কাছে আনুগত্য প্রকাশের চূড়ান্ত মাধ্যম এবং আত্মশুদ্ধির একটি বিশেষ সুযোগ। হজ পালন করতে গিয়ে একজন মুসলিম যে মানসিক ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন, তা তার জীবনের ধারা পরিবর্তন করে দিতে পারে।

হজ এক মহান ইবাদত যা প্রতিটি মুসলিমের জীবনে অন্তত একবার পালন করা উচিত। এটি একটি আত্মিক ভ্রমণ যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ দেয়, এবং মানব জীবনের গুণগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম। আল্লাহ সবাইকে এই মহান ইবাদত পালন করার তৌফিক দান করুন। এবং আমাদের সকলের দোয়া কবুল করুন। আমিন।

আল্লাহুম্মা লাব্বাইক! আল্লাহুম্মা লাব্বাইক! লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক! ইনাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন