ওমরা হজ সম্পর্কে আলোচনা মে ২০২৪ বিস্তারিত জানুন
হজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কিছু দিকনির্দেশনাউমরাহ হজ ইসলামিক তীর্থযাত্রার একটি ধরন, যা মুসলমানরা মক্কায় সম্পন্ন করে
থাকে। এটি হজের তুলনায় কম সময় সাপেক্ষ এবং কম আনুষ্ঠানিকতা জড়িত। উমরাহ হজ
সারা বছর যে কোনো সময় করা যায়,
হজের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে। তবে আজকে জানবো উমরাহ হজ কি তার তাৎপর্য ও
গুরুত্ব সময়সীমা সবমিলিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা চলুন আলোচনা শুরু করি, এবং
আশা করছি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ- ওমরা হজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু আলোচনা
উমরাহ হজ কি?
উমরাহ হজ হলো একটি ইসলামী তীর্থযাত্রা যা মুসলমানরা মক্কা শহরে সম্পন্ন করে। এটি
হজের মতো বাধ্যতামূলক নয়। বরং স্বেচ্ছায় সম্পন্ন করা হয়, এবং এটি সারা বছর যে
কোনো সময় করা যেতে পারে, হজের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে। উমরাহর মাধ্যমে মুসলমানরা
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাদের পাপের ক্ষমা প্রার্থনা করেন। উমরাহ পালনকারী
ব্যক্তিকে ‘মু’তামির’ বলা হয়।
উমরাহ হজের প্রধান কর্মগুলো হলো:
- **ইহরাম**: উমরাহ শুরু করার পূর্বে নির্দিষ্ট পোষাক পরিধান করা হয়। পুরুষরা দুই টুকরো সাদা অঈ সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করে, এবং মহিলারা সাধারণত তাদের দৈনন্দিন পোষাক পরে থাকে যা শরীরের সব অংশ আবৃত করে।
- **তাওয়াফ**: মসজিদ আল-হারাম এর কাবা শরীফের চারপাশে সাতবার ঘুরে তাওয়াফ করা হয়। এটি আল্লাহর কাছে উপাসনা ও প্রার্থনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- **সাঈ**: তাওয়াফ শেষ করার পর, মসজিদ আল-হারাম এর সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার হাঁটা হয়। এই কর্মটি হাজেরা আলাইহাসসালাম এর পানির খোঁজে দৌড়ানোর স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়।
- **তাহাল্লুল**: সাঈ সম্পন্ন করার পরে, পুরুষরা মাথার চুল ছোট করে বা সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলে এবং মহিলারা চুলের একটি ছোট অংশ কেটে ফেলে। এটি উমরাহর আনুষ্ঠানিকতার সমাপ্তি নির্দেশ করে।
উমরাহ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলমানদের জন্য তাদের ঈমান ও তাকওয়া
বৃদ্ধি করার একটি উপায়। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং নিজের পাপের ক্ষমা
প্রার্থনার একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়।
আরো পড়ুনঃ- হজের তাৎপর্য ও গুরুত্ব ২০২৪ বিস্তারিত জানুন
উমরাহর **সাঈ**
উমরাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল **সাঈ**, যা সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে
সাতবার চলাফেরা করা। সাঈ মূলত হাজেরা (আলাইহাস সালাম) এর ত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি
বিশ্বাসের স্মরণে পালন করা হয়, যখন তিনি তার পুত্র ইসমাইল (আলাইহিস সালাম) এর
জন্য পানি খুঁজতে এই দুই পাহাড়ের মধ্যে দৌড়েছিলেন।
**সাঈ পালনের ধাপসমূহ:**
- **সাফা থেকে শুরু**: উমরাহ পালনকারী ব্যক্তি সাফা পাহাড়ে উঠে কাবার দিকে মুখ করে হাত উঠিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে দোয়া করবেন। এরপর সাফা থেকে মারওয়া পাহাড়ের দিকে হাঁটা শুরু করবেন।
- **দোয়া ও প্রার্থনা**: সাফা থেকে মারওয়া যাওয়ার পথে বিভিন্ন দোয়া এবং প্রার্থনা করা যায়। বিশেষ করে সবুজ আলো দিয়ে চিহ্নিত অংশে (যা পুরুষদের জন্য দ্রুত চলার নির্দেশনা দেয়), দৌড়ানো বা দ্রুত চলা সুন্নত।
- **মারওয়া পৌঁছানো**: মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে আবার আল্লাহর প্রশংসা ও দোয়া করবেন। এরপর মারওয়া থেকে সাফার দিকে আবার হাঁটা শুরু করবেন।
- **সাতবার পুনরাবৃত্তি**: এভাবে সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফা, মোট সাতবার চলাফেরা করা হবে। প্রথমবার সাফা থেকে শুরু হয় এবং সপ্তমবার মারওয়া পাহাড়ে শেষ হয়।
**বিশেষ দিকনির্দেশনা**:
- সাঈ শুরু করার আগে উমরাহর অন্য আনুষ্ঠানিকতাগুলি (যেমন: ইহরাম এবং তাওয়াফ) সম্পন্ন করতে হবে।
- মহিলাদের জন্য দৌড়ানো বা দ্রুত চলার প্রয়োজন নেই; তারা সাধারণ গতিতে হাঁটতে পারেন।
- সাঈর সময় মনে মনে বা উচ্চস্বরে দোয়া করা যেতে পারে, তবে এটি কোনো বাধ্যতামূলক অংশ নয়।
সাঈ শর্তসমূহ ও ওয়াজিব সমূহ
**সাঈ** (সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার চলাফেরা) উমরাহ এবং
হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাঈ সম্পন্ন করার জন্য কিছু শর্ত এবং ওয়াজিব
(বাধ্যতামূলক কাজ) রয়েছে। নিচে এই শর্তসমূহ এবং ওয়াজিব সমূহ বর্ণনা করা
হলো:
সাঈর শর্তসমূহ:
- **ইহরাম অবস্থা**: সাঈ শুরু করার আগে ইহরাম অবস্থায় থাকা আবশ্যক। উমরাহ বা হজের জন্য ইহরাম বেঁধে সাঈ করতে হবে।
- **তাওয়াফের পর**: সাঈ শুরু করার আগে তাওয়াফ সম্পন্ন করতে হবে। তাওয়াফ শেষ করার পরই সাঈ শুরু করা যাবে।
- **সাফা থেকে শুরু**: সাঈ অবশ্যই সাফা পাহাড় থেকে শুরু করতে হবে।
- **মারওয়ায় শেষ**: সাঈ শেষ করতে হবে মারওয়া পাহাড়ে।
- **কাবা শরীফের তাওয়াফ**: সাঈর সময় কাবা শরীফের দিকে দৃষ্টি রাখা সুন্নত, তবে এটি শর্ত নয়।
সাঈর ওয়াজিব সমূহ:
- **সাতবার সম্পন্ন করা**: সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার চলাফেরা করা বাধ্যতামূলক। সাফা থেকে মারওয়া একবার, এবং মারওয়া থেকে সাফা ফেরত আসা দুটি বার হিসেবে গণ্য করা হয়।
- **নিয়ত করা**: সাঈ শুরু করার পূর্বে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিয়ত করা আবশ্যক।
- **পরপর করা**: সাতবার চলাফেরা নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন করতে হবে। তবে শারীরিক অসুবিধার কারণে বা অন্য বৈধ কারণে বিরতি নিলে সাঈ পুনরায় শুরু করতে হবে না, যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই চালিয়ে যেতে হবে।
- **সাফা ও মারওয়ার পূর্ণ অংশ পার হওয়া**: প্রতিবার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পুরো অংশ পার হওয়া ওয়াজিব।
- **পুরুষদের জন্য দ্রুত চলা**: পুরুষদের জন্য সবুজ বাতি দিয়ে চিহ্নিত স্থানগুলিতে দ্রুত চলা (হরওয়ালা) সুন্নত।
অতিরিক্ত নির্দেশনা:
- **দোয়া ও প্রার্থনা**: সাঈর সময় দোয়া ও প্রার্থনা করা যেতে পারে, বিশেষত আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা এবং কল্যাণ কামনা করা।
- **শান্ত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকা**: সাঈর সময় সকলকে শান্ত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকা উচিত এবং অন্যদের জন্য কষ্ট সৃষ্টি করা উচিত নয়।
- **শারীরিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা**: সাঈ চলাকালীন শারীরিক শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা উচিত।
সাঈর শর্ত ও ওয়াজিবগুলো যথাযথভাবে পালন করলে উমরাহ ও হজের এই অংশটি সঠিকভাবে
সম্পন্ন হবে। এটি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা যা
তাদের ঈমানকে আরো শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ- কোরবানি মে ২০২৪ বিস্তারিত জানুন
সাঈর সুন্নাহ সমূহ
সাঈর সুন্নাহ সমূহ হল সেসব কর্ম যা নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) পালন করেছেন এবং উমরাহ ও হজের সময় মুসলমানদের জন্য তা পালন করা
সুন্নত। নিচে সাঈর সুন্নাহ সমূহ উল্লেখ করা হলো:
- **তাওয়াফের পর সাঈ শুরু করা**: তাওয়াফ শেষ করার পর সাঈ শুরু করা সুন্নত। তাওয়াফের সাথে সাঈ সংযুক্ত
- **মারওয়ায় উঠা এবং দোয়া করা**: সাফা থেকে সাঈ শুরু করার সময় সাফায় উঠা এবং কাবার দিকে মুখ করে দোয়া করা। সাঈর প্রতিটি চক্করে মারওয়ায় গিয়ে একইভাবে দোয়া করা।
- **সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের দিকে মুখ করা**: সাফায় পৌঁছানোর পর কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো, এবং আল্লাহর প্রশংসা, তাসবিহ ও দোয়া করা।
- **দোয়া ও জিকির করা**: সাঈ করার সময় বিভিন্ন দোয়া ও জিকির করা সুন্নত। বিশেষ করে "রাব্বিগফির ওয়ারহাম, ইন্নাকা আনতাল আ’জুল আকরাম" অর্থাৎ "হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন ও আমার প্রতি রহম করুন, নিশ্চয়ই আপনি মহাশক্তিশালী ও মহাশ্রেষ্ঠ।"
- **দ্রুত চলা**: পুরুষদের জন্য সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী সবুজ বাতি চিহ্নিত অংশে দ্রুত চলা (হরওয়ালা) করা সুন্নত।
- **সাফা থেকে মারওয়া সাতবার পার হওয়া**: সাফা থেকে মারওয়া যাওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফা ফিরে আসা, এইভাবে সাতবার সাঈ সম্পন্ন করা। প্রথম বার সাফা থেকে মারওয়া যাওয়া, এবং শেষবার মারওয়া পাহাড়ে সমাপ্তি।
- **স্বাভাবিক গতিতে চলা**: সবুজ বাতি চিহ্নিত অংশ ছাড়া বাকি অংশে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা।
- **মনে মনে দোয়া করা**: সাঈ চলাকালে মনে মনে দোয়া ও প্রার্থনা করা, এবং আল্লাহর স্মরণ করা।
সাঈর এই সুন্নাহসমূহ পালন করলে মুসলমানরা সাঈর মাধ্যমে আরও বেশি সাওয়াব
অর্জন করতে পারেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন। এসব সুন্নাহ সঠিকভাবে
পালনের মাধ্যমে সাঈর পুরো প্রক্রিয়া আরও অর্থবহ ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ
হয়ে ওঠে।
সাঈর মুস্তাহাব ও মাকরুহ কাজসমূহ:
সাঈর সময় কিছু মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) ও মাকরুহ (অপছন্দনীয়) কাজ রয়েছে।
মুস্তাহাব কাজগুলো করলে সাওয়াব পাওয়া যায়, এবং মাকরুহ কাজগুলো থেকে বিরত থাকা
উচিত। নিচে সাঈর মুস্তাহাব ও মাকরুহ কাজগুলো উল্লেখ করা হলো:
সাঈর মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) কাজসমূহ:
- **তাওয়াফের সাথে সংযুক্তি**: তাওয়াফ শেষে সঙ্গে সঙ্গে সাঈ শুরু করা মুস্তাহাব।
- **তাহিয়াতুল মসজিদ**: তাওয়াফ ও সাঈর মধ্যে দুই রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ নামাজ আদায় করা।
- **সাফা ও মারওয়ায় দাঁড়ানো**: সাফা ও মারওয়ায় উঠা এবং কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো ও দোয়া করা।
- **দ্রুত চলা (হরওয়ালা)**: পুরুষদের জন্য সবুজ আলো দিয়ে চিহ্নিত অংশে দ্রুত চলা।
- **দোয়া ও জিকির**: সাঈর সময় বিভিন্ন দোয়া ও জিকির করা, আল্লাহর প্রশংসা করা, এবং প্রার্থনা করা।
- **সাহসিকতা ও উত্সাহ**: সাঈ করার সময় উৎসাহ ও সাহসিকতার সাথে কাজ করা।
- **সংযম ও শৃঙ্খলা**: সাঈর সময় শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং অন্যদের জন্য কষ্ট সৃষ্টি না করা।
সাঈর মাকরুহ (অপছন্দনীয়) কাজসমূহ:
- **অশ্রদ্ধা প্রদর্শন**: সাঈ করার সময় অশ্রদ্ধা বা অসংযত আচরণ করা।
- **ক্লান্তি বা অবহেলা**: সাঈর সময় ক্লান্তি বা অবহেলার সাথে কাজ করা, বা অনাদরে কাজ করা।
- **দৌড়ানোর সময় অসতর্কতা**: সবুজ আলোর অংশে দ্রুত চলার সময় অসতর্কতা প্রদর্শন করা, যা অন্যদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
- **অপ্রয়োজনীয় কথা বলা**: সাঈ করার সময় অপ্রয়োজনীয় বা অর্থহীন কথা বলা।
- **সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া**: অন্য হাজিদের সাথে ধাক্কাধাক্কি বা সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া।
- **স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তা অবহেলা**: নিজের স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তার প্রতি অবহেলা করা এবং অন্যদেরও বিপদে ফেলা।
অতিরিক্ত নির্দেশনা:
- সাঈ করার সময় মনে রাখতে হবে এটি একটি ইবাদত এবং এই সময় আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করা ও নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার একটি সুযোগ।
- সব ধরনের বিরক্তিকর আচরণ ও বিশৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকা উচিত, যাতে সবার জন্য একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে।
এই মুস্তাহাব ও মাকরুহ কাজগুলো অনুসরণ করে সাঈ সম্পন্ন করলে তা হবে আরও বেশি
পূর্ণাঙ্গ ও অর্থবহ, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উপায় হতে পারে।
ওমরাহ তাওয়াফ
উমরাহ তাওয়াফ হল উমরাহ হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাওয়াফের সময়
মুসলমানরা কাবা শরীফের চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণ করে, যা একটি বিশেষ ধর্মীয়
আচার। তাওয়াফ পালনের সঠিক নিয়ম ও প্রক্রিয়া নিচে বর্ণনা করা হলো:
তাওয়াফের শর্তসমূহ:
- **ইহরাম**: তাওয়াফ শুরুর আগে ইহরাম বেঁধে নিতে হবে। পুরুষদের জন্য ইহরাম হলো দুই টুকরো সাদা কাপড়, আর মহিলাদের জন্য ইহরামের নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করতে হবে।
- **নিয়ত**: তাওয়াফ শুরু করার আগে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়ত করতে হবে।
- **তাহারাত (পবিত্রতা)**: তাওয়াফ করার সময় পবিত্র থাকা বাধ্যতামূলক। ওজু (অজু) বা গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা নিশ্চিত করতে হবে।
তাওয়াফের প্রক্রিয়া:
- **হাতের কাবার দিকে উঠানো**: তাওয়াফ শুরু করার সময় হাজরে আসওয়াদ (কাবার কালো পাথর) এর সমান জায়গায় দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে তাকবির বলা, এটি ইস্তিলাম হিসেবে পরিচিত। যদি সম্ভব হয় তবে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা বা চুম্বন করা, না পারলে সেদিকে তাকিয়ে তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা।
- **প্রদক্ষিণ শুরু করা**: তাওয়াফ কাবার বাম পাশ রেখে প্রদক্ষিণ শুরু করতে হবে। কাবার চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণ করতে হবে।
- **দোয়া ও জিকির**: তাওয়াফের সময় বিভিন্ন দোয়া ও জিকির করা, বিশেষত "রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান ওয়া কিনা আজাবান নার" (হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করুন ও আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন)।
- **রামাল**: পুরুষদের জন্য প্রথম তিন চক্করে দ্রুত গতিতে (রামাল) চলা সুন্নত।
- **মুলতাজাম**: তাওয়াফ শেষ করার পর মুলতাজামে (কাবার দরজার সামনে) দোয়া করা।
তাওয়াফের সুন্নত ও মুস্তাহাব কাজসমূহ:
- **ইস্তিলাম**: প্রতিবার হাজরে আসওয়াদের কাছাকাছি পৌঁছানোর সময় ইস্তিলাম করা, অর্থাৎ হাত উঠিয়ে তাকবির বলা বা স্পর্শ করা।
- **দোয়া**: তাওয়াফের সময় নিয়মিত দোয়া ও জিকির করা, যা তাওয়াফকে আরো আধ্যাত্মিক ও অর্থবহ করে তোলে।
- **কাবা দেখা**: তাওয়াফ করার সময় কাবার দিকে নজর রাখা এবং নিজের মনকে আল্লাহর দিকে একাগ্র করা।
- **মৃদু কথা বলা**: তাওয়াফের সময় মৃদু ও বিনম্রভাবে কথা বলা এবং অন্যদের জন্য কষ্ট না হওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকা।
তাওয়াফ শেষে:
- **মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ**: তাওয়াফ শেষ করার পর মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
- **জমজমের পানি পান**: নামাজ শেষ করে জমজমের পানি পান করা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
- **সাঈর প্রস্তুতি**: তাওয়াফ শেষে সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ সম্পন্ন করা।
উমরাহ তাওয়াফ মুসলমানদের জন্য একটি গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা। এটি আল্লাহর
প্রতি ভালবাসা ও একাগ্রতার প্রকাশ এবং পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনার একটি
সুযোগ। তাওয়াফ সঠিকভাবে সম্পন্ন করলে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এবং
আত্মশুদ্ধির একটি বিশেষ সুযোগ পাওয়া যায়।
ওমরাহ তাওয়াফের ওয়াজিব ও সুন্নাহ সমূহ
উমরাহ তাওয়াফের সময় পালনীয় ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) ও সুন্নাহ (সুন্নত) সমূহ
নিচে উল্লেখ করা হলো:
তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ:
- **ইহরাম অবস্থায় থাকা**: তাওয়াফ শুরুর আগে ইহরাম বাঁধা ও ইহরামের নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক।
- **কাবা শরীফকে বাম দিকে রাখা**: তাওয়াফ করার সময় কাবা শরীফকে বাম দিকে রাখা এবং তার চারপাশে সাতবার প্রদক্ষিণ করা বাধ্যতামূলক।
- **সাত চক্কর সম্পন্ন করা**: পূর্ণ সাত চক্কর তাওয়াফ করা আবশ্যক। কম হলে তাওয়াফ পূর্ণ হবে না।
- **তাহারাত (পবিত্রতা)**: তাওয়াফের সময় পবিত্র থাকা (ওজু বা গোসলের মাধ্যমে) বাধ্যতামূলক।
তাওয়াফের সুন্নাহ সমূহ:
- **ইস্তিলাম**: তাওয়াফের শুরুতে এবং প্রতিটি চক্করে হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পর্শ করা বা তার দিকে হাত তুলে তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা সুন্নত। যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয়, তাহলে দূর থেকে হাত উঁচিয়ে ইস্তিলাম করতে হয়।
- **রামাল**: পুরুষদের জন্য তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে দ্রুত গতিতে (রামাল) চলা সুন্নত।
- **ইযতিরাব**: পুরুষদের জন্য ইহরামের চাদর ডান কাঁধ থেকে সরিয়ে রাখা এবং বাম কাঁধে ফেলা সুন্নত।
- **দোয়া ও জিকির**: তাওয়াফ করার সময় বিভিন্ন দোয়া ও জিকির করা সুন্নত। তাওয়াফের সময় আল্লাহর প্রশংসা, তাসবিহ এবং প্রার্থনা করা যেতে পারে।
- **মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ**: তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহিমের পিছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
- **জমজমের পানি পান**: নামাজ শেষে জমজমের পানি পান করা এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা সুন্নত।
- **মুলতাজামে দোয়া**: তাওয়াফ শেষে মুলতাজামে (কাবার দরজার সামনে) দাঁড়িয়ে দোয়া করা সুন্নত।
- **শান্ত ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে চলা**: তাওয়াফের সময় শান্ত ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে চলা এবং অন্যদের জন্য কষ্ট সৃষ্টি না করা সুন্নত।
তাওয়াফে মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) কাজসমূহ:
- **মৃদু কথা বলা**: তাওয়াফের সময় প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা এবং যদি কথা বলতেই হয়, তাহলে মৃদু স্বরে বলা মুস্তাহাব।
- **অজান্তে ত্রুটি হলে ক্ষমা প্রার্থনা**: তাওয়াফের সময় কোনো ভুল বা ত্রুটি হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা মুস্তাহাব।
- **অন্যদের সহায়তা করা**: তাওয়াফের সময় অন্যদের সহায়তা করা ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া মুস্তাহাব।
এই ওয়াজিব ও সুন্নাহ সমূহ যথাযথভাবে পালন করলে উমরাহ তাওয়াফ সঠিকভাবে
সম্পন্ন হবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
লেখকের শেষ কথাঃ-
উমরাহ একটি বিশেষ ও পবিত্র ইবাদত, যা মুসলমানদের আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও
আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাওয়াফ এবং সাঈ উমরাহর মূল অংশ, যা
নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে সম্পন্ন করতে হয়। এখানে সাঈ ও তাওয়াফের
গুরুত্বপূর্ণ শর্ত, ওয়াজিব এবং সুন্নাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা একজন
মুসলমানের জন্য সঠিকভাবে উমরাহ পালন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা।
সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে উমরাহ পালনের মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের ঈমানকে আরও
শক্তিশালী করতে পারে এবং আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে সমর্পিত করতে পারে। এই
পবিত্র যাত্রায় মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত আবেগময় এবং আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা
রয়েছে, যা তাদের জীবনে একটি গভীর ছাপ ফেলবে। উমরাহ পালনের সময় যে কয়েকটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত:-
- সম্পূর্ণ নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা।
- নিজের এবং অন্যদের জন্য দোয়া করা।
- সকল শর্ত, ওয়াজিব এবং সুন্নাহ মেনে চলা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে উমরাহ পালন করার তৌফিক দান করুন। এবং আমাদের
ইবাদতগুলো কবুল করুন। আমিন।