পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ের এই অবস্থার জন্য দায়ী কে? বিস্তারিত জানুন
পাসপোর্ট সম্পর্কে কিছু তথ্যএবং আর্টন ক্যাপিটালের গ্লোবাল পাসপোর্ট পাওয়ার র্যাঙ্কিং এর মতো
প্রতিষ্ঠানগুলো এই সূচক প্রকাশ করে।
পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ের অবস্থার উপর প্রভাব
বিস্তারকারী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু প্রধান কারণ নিচে
আলোচনা করা হলো:
পেজ সূচিপত্রঃ- পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ের এই অবস্থার জন্য দায়ী কে? বিস্তারিত জানুন
- ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুবিধা
- কূটনৈতিক সম্পর্ক
- আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি
- অর্থনৈতিক অবস্থা
- ভিসা নীতিমালা
- অন্যান্য প্রভাবক কারণ
- অন্যান্য প্রভাবক কারণ বিস্তারিত
- শেষ কথা
ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের সুবিধা
প্রত্যেকটি দেশের পাসপোর্টের শক্তি নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করে ওই
পাসপোর্টধারীরা কতগুলো দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন। যদি কোনও দেশের
পাসপোর্টধারীরা বেশি সংখ্যক দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন, তাহলে সেই দেশের
পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং উঁচুতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, জাপান, সিঙ্গাপুর এবং
জার্মানি’র পাসপোর্টগুলো বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী কারণ তাদের নাগরিকরা প্রায় ১৯০+
দেশে ভিসা-মুক্ত বা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পান।
কূটনৈতিক সম্পর্ক
কোনও দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য অন্যান্য
দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশের সুবিধা আদায় করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের
সদস্য দেশগুলো পরস্পরের মধ্যে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুবিধা দিয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি
কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিও পাসপোর্ট
র্যাঙ্কিংয়ের উপর প্রভাব ফেলে। কোনও দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সন্ত্রাসবাদের
হুমকি, এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি অন্য দেশগুলোকে ওই দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা
প্রদানের প্রক্রিয়া কঠোর করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, সিরিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তানের
মতো দেশের পাসপোর্ট র্যাঙ্কিং নিচের দিকে থাকে কারণ এদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি
সংকটাপন্ন।
অর্থনৈতিক অবস্থা
কোনও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং স্থিতিশীলতাও পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ে ভূমিকা পালন
করে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য অধিক সংখ্যক দেশে
ভিসা-মুক্ত প্রবেশের সুবিধা আদায় করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা
এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী দেশগুলোর পাসপোর্ট বিশ্বে অত্যন্ত শক্তিশালী।
ভিসা নীতিমালা
প্রতিটি দেশের ভিসা নীতিমালাও পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ের উপর প্রভাব ফেলে। যদি কোনও
দেশ অধিকসংখ্যক দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের সুবিধা দেয়, তাহলে তার
নাগরিকরাও অন্য দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশের সুবিধা পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, জাপান
এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো ব্যাপকভাবে ভিসা-মুক্ত প্রবেশের সুবিধা প্রদান করে।
অন্যান্য প্রভাবক কারণ
অন্যান্য কিছু প্রভাবক কারণের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক দক্ষতা, পাসপোর্ট
প্রদানের প্রক্রিয়ার সহজতা, এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি। এসব কারণ
মিলিতভাবে পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে।
পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ের বর্তমান অবস্থার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী, যেমন ভিসা-মুক্ত
ভ্রমণের সুবিধা, কূটনৈতিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, এবং
ভিসা নীতিমালা। এ সব কারণ মিলিয়ে একটি দেশের পাসপোর্টের শক্তি নির্ধারণ হয় এবং
সেই অনুযায়ী পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং নির্ধারণ করা হয়।
অন্যান্য প্রভাবক কারণ বিস্তারিত
পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ে অন্যান্য প্রভাবক কারণগুলোও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন
করে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক কারণের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক দক্ষতা
প্রত্যেক দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক দক্ষতা পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব
ফেলে। দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পাসপোর্ট প্রদান, পুনর্নবীকরণ, এবং অন্যান্য
প্রশাসনিক কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে নাগরিকরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের
ক্ষেত্রে সুবিধা পান।
উদাহরণস্বরূপ, যারা দ্রুত পাসপোর্ট প্রদান এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে
পাসপোর্টের নিরাপত্তা বাড়াতে সক্ষম, তারা তাদের নাগরিকদের জন্য আরও ভালো ভ্রমণ
সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে।
পাসপোর্ট প্রদানের প্রক্রিয়ার সহজতা
পাসপোর্ট প্রদানের প্রক্রিয়া যদি সহজ ও স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে
পাসপোর্টধারীরা সহজেই ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, অনলাইন
অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম, দ্রুত ডেলিভারি সেবা, এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে
পাসপোর্ট প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ এবং কার্যকর করা যায়।
ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি
বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভ্রমণ সংক্রান্ত চুক্তি বা অ্যাগ্রিমেন্ট পাসপোর্ট
র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, ভিসা-অ্যাবোলিশন অ্যাগ্রিমেন্ট,
যেখানে দুটি দেশ পরস্পরের নাগরিকদের জন্য ভিসা ছাড়াই প্রবেশের অনুমতি দেয়, তেমন
চুক্তি পাসপোর্ট র্যাঙ্কিং উন্নত করতে সহায়তা করে। এছাড়া, ট্রান্সপোর্টেশন
চুক্তি, বিমানবন্দর সুবিধা, এবং সীমানা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত চুক্তিগুলোও
গুরুত্বপূর্ণ।
ভিসা প্রক্রিয়ার সুবিধা
অন্যান্য দেশের পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ ও সুলভ করলে ওই
দেশগুলোর পাসপোর্টধারীরাও সেই সুবিধা পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও দেশ
সহজে অন-অ্যারাইভাল ভিসা বা ই-ভিসা প্রদান করে, তাহলে সেই দেশের নাগরিকরাও সহজে
অন্যান্য দেশে ভিসা পেতে পারেন।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলে।
যদি কোনও দেশে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে,
তাহলে অন্য দেশগুলো সেই দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদানে আরও নমনীয় হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর
ভিত্তি করে তাদের ভিসা নীতিমালা পরিবর্তিত হয়েছে।
সংস্কৃতি ও পর্যটন
কোনও দেশের সংস্কৃতি, পর্যটন আকর্ষণ, এবং ভ্রমণবান্ধব পরিবেশও পাসপোর্ট
র্যাঙ্কিংয়ে ভূমিকা পালন করে। যদি কোনও দেশ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হয় এবং
ভ্রমণের জন্য সহজ সুবিধা প্রদান করে, তাহলে সেই দেশের নাগরিকরাও অন্যান্য দেশে
ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারেন।
পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ের অবস্থার উপর বিভিন্ন প্রভাবক কারণ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ
প্রশাসনিক দক্ষতা, পাসপোর্ট প্রদানের প্রক্রিয়ার সহজতা, ভ্রমণ সংক্রান্ত
চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়ার সুবিধা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং সংস্কৃতি
ও পর্যটন এ সবকিছু মিলিয়ে একটি দেশের পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং নির্ধারণে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সব কারণের উন্নতি পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং উন্নত
করতে সহায়তা করে এবং নাগরিকদের জন্য আরও ভালো ভ্রমণ সুবিধা নিশ্চিত করে।
শেষ কথাঃ
পাসপোর্ট র্যাঙ্কিংয়ের বর্তমান অবস্থার জন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী, যেমন ভিসা-মুক্ত
ভ্রমণের সুবিধা, কূটনৈতিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, এবং
ভিসা নীতিমালা। একটি দেশের পাসপোর্টের শক্তি নির্ধারণে এই সব কারণগুলো একসাথে কাজ
করে।
বর্তমান বিশ্বে যেহেতু গ্লোবালাইজেশনের প্রভাব বাড়ছে, তাই কোনও দেশের পাসপোর্টের
র্যাঙ্কিং উন্নত করতে হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা
রক্ষার দিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। পাসপোর্টের র্যাঙ্কিং শুধুমাত্র একটি সংখ্যা
নয়, এটি একটি দেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং নাগরিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী ভ্রমণের
সুযোগের প্রতীক।