এমপক্স কি কেন হয় বিস্তারিত জেনে নিন
রোগ সংক্রান্ত কিছু তথ্যবলি জানতে চোখ রাখুনপ্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো এমপক্স সম্পর্কে, যা পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে
পরিচিত ছিল, একটি সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। মূলত আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ
দেখা গেলেও,
বৈশ্বিক ভ্রমণ এবং অন্যান্য কারণের মাধ্যমে এটি অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে
পড়েছে। এমপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা এবং
লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া অন্তর্ভুক্ত। পরে এটি ত্বকের ওপর ফুসকুড়ি সৃষ্টি
করে, যা ধীরে ধীরে ঘাঁ বা দাগে পরিণত হয়।
এই রোগটি মূলত পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমণ
ঘটতে পারে। সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি এবং সতর্কতা বজায় রাখা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক
স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি এমপক্সের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ
গ্রহণ করছে, যা রোগের বিস্তার রোধে সহায়ক হতে পারে।
পেজ সূচিপত্রঃ- এমপক্স কি কেন হয় বিস্তারিত জেনে নিন
- এমপক্স (Mpox) কি?
- এমপক্স কীভাবে ছড়ায়?
- এমপক্সের লক্ষণগুলো কী?
- এমপক্সের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ
- অবস্থানরত স্থানসমূহ
- বাংলাদেশের সম্ভাবনা
- সর্বশেষ কথা
**এমপক্স (Mpox) কী?**
এমপক্স (Mpox), যা পূর্বে মাঙ্কিপক্স (Monkeypox) নামে পরিচিত ছিল, একটি
ভাইরাসজনিত রোগ যা *Orthopoxvirus* গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এটি মূলত মাঙ্কিপক্স
ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় এবং প্রাথমিকভাবে আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয়
বনাঞ্চলগুলিতে সাধারণ ছিল। যদিও এই রোগটি মূলত পশুদের মধ্যে সংক্রমিত হয়, তবে
মানুষের মধ্যেও এর সংক্রমণ হতে পারে।
### **এমপক্স: বিস্তারিত বিশ্লেষণ**
**এমপক্স (Mpox) কী?**
এমপক্স, যা আগে মাঙ্কিপক্স (Monkeypox) নামে পরিচিত ছিল, একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা
*Orthopoxvirus* গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এই রোগটি মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের কারণে হয়
এবং মূলত পশুদের মধ্যে দেখা যায়। তবে, পশু থেকে মানুষের মধ্যে এবং মানুষের
মধ্যেও সংক্রমণ ঘটতে পারে।
এমপক্সের প্রাদুর্ভাব প্রথম ১৯৭০ সালে কঙ্গোতে দেখা দেয় এবং তারপর থেকে এটি মাঝে
মাঝে আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে দেখা গেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী
এমপক্সের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
### **এমপক্স কীভাবে ছড়ায়?**
এমপক্স বিভিন্ন উপায়ে ছড়াতে পারে, যার মধ্যে প্রধান কয়েকটি নিম্নরূপ:
1. **প্রাণীর মাধ্যমে সংক্রমণ:**
- এমপক্স সংক্রমিত বন্য প্রাণী, যেমন ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, এবং প্রাইমেট থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।
- সংক্রমিত প্রাণীর কামড়, আঁচড় বা তাদের রক্ত, মাংস বা শরীরের তরল সরাসরি স্পর্শ করলে সংক্রমণ হতে পারে।
2. **মানুষের মাধ্যমে সংক্রমণ:**
- সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্রের তরল, ফুসকুড়ি, বা শরীরের অন্যান্য তরল সরাসরি স্পর্শ করলে।
- সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত বিছানাপত্র, পোশাক বা অন্যান্য বস্তু স্পর্শের মাধ্যমে।
- ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে মুখোমুখি অবস্থানে থাকলে।
3. **পরিবেশের মাধ্যমে সংক্রমণ:**
- এমন বস্তুর মাধ্যমে যা সংক্রমিত ব্যক্তির ঘাঁ, ফুসকুড়ি বা শরীরের তরল দ্বারা দূষিত হয়েছে।
**এমপক্সের লক্ষণগুলো কী?**
এমপক্সের লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ৬ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে দেখা দেয়, তবে কখনও
কখনও ২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং দুটি
পর্যায়ে বিভক্ত হতে পারে:
1. **প্রাথমিক লক্ষণ:**
- **জ্বর:** প্রাথমিকভাবে জ্বর দেখা দেয়, যা সাধারণত ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হতে পারে।
- **মাথাব্যথা:** মাথাব্যথা রোগের প্রথম লক্ষণগুলির মধ্যে একটি।
- **মাংসপেশি এবং পিঠে ব্যথা:** পেশিতে এবং পিঠে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- **দুর্বলতা:** শরীরে দুর্বলতা এবং ক্লান্তি দেখা দেয়।
- **লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া:** রোগের অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো লসিকা গ্রন্থির ফুলে যাওয়া, যা গলা, বগল, বা কুঁচকিতে ঘটতে পারে।
2. **ত্বকের ফুসকুড়ি:**
- **ফুসকুড়ি:** প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার এক বা দুইদিন পরে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা পরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এটি সাধারণত মুখ, হাত, পা, এবং অন্যান্য স্থানে হতে পারে।
- **ফুসকুড়ি থেকে ঘাঁ:** ফুসকুড়ি ধীরে ধীরে পুঁজ ভরা ফোস্কায় পরিণত হয় এবং পরে সেগুলো খোসা পড়ে শুকিয়ে যায়।
- **ব্যথা:** ঘাঁগুলোতে ব্যথা হতে পারে, যা পরে দাগ ফেলে যায়।
**এমপক্সের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ:**
এমপক্সের জন্য কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ
করলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়:
- **টিকা:** কিছু অঞ্চলে স্যামলপক্সের টিকা এমপক্স প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
- **সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রাখা:** রোগী এবং রোগের সংক্রমিত পরিবেশ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।
- **ব্যক্তিগত সুরক্ষা:** সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের সময় গ্লাভস, মাস্ক এবং সুরক্ষা পোশাক পরিধান করা।
- **স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা:** হাত ধোয়া এবং সংক্রমিত সামগ্রী এড়িয়ে চলা।
অবস্থানরত স্থানসমূহ
বর্তমানে এমপক্স (Mpox) রোগটি বেশ কিছু দেশে বিদ্যমান রয়েছে। ২০২৪ সালের
পরিস্থিতি অনুযায়ী, নিম্নোক্ত দেশগুলোতে এমপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে:
- ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (DRC): এটি এমপক্সের প্রধান কেন্দ্রস্থল এবং সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত দেশ। এই দেশে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এমপক্স কেস রেকর্ড করা হয়।
- ইউরোপের কিছু দেশ: ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে এমপক্স ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে ২০২২ সালের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের সময়। বর্তমানেও কিছু দেশে এমপক্সের বিচ্ছিন্ন কেস রেকর্ড করা হয়েছে।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা: যদিও এই দেশগুলোতে এমপক্স স্থানীয়ভাবে বিদ্যমান নয়, তবুও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু কেস রিপোর্ট করা হয়েছে।
- আফ্রিকার অন্যান্য দেশ: DRC এর পাশাপাশি সেন্ট্রাল এবং ইস্টার্ন আফ্রিকার কিছু দেশেও এমপক্স সংক্রমণের কেস দেখা গেছে, বিশেষ করে যেখানে আগে এই রোগটি দেখা যায়নি।
এই দেশগুলো এমপক্সের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য
সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় সংক্রমণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। WHO এবং অন্যান্য
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো নিয়মিত আপডেট প্রদান করছে এবং সংক্রমিত
দেশগুলোতে তত্ত্বাবধান করছে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা
বাংলাদেশে বর্তমানে এমপক্সের (Mpox) প্রভাবের আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম
থাকলেও, ভবিষ্যতে এই রোগটির সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া
যায় না। এমপক্স মূলত আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে বিদ্যমান এবং সেখান
থেকে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
যেহেতু বাংলাদেশ আফ্রিকা থেকে দূরে এবং এমপক্সের স্থানীয় প্রাদুর্ভাব নেই,
তাই ঝুঁকি কম। তবে, যদি এমপক্স সংক্রমিত কোনো ব্যক্তি বা বাহক দেশের ভেতরে
প্রবেশ করে, তাহলে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকতে পারে। এ জন্য, স্বাস্থ্য
সংস্থা
এবং সরকারের সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা এবং যেকোনো সংক্রমণের ক্ষেত্রে
দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এমপক্সের কোনো কেস বাংলাদেশে
রিপোর্ট করা হয়নি, কিন্তু সুরক্ষা এবং সচেতনতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
সর্বশেষ কথা
বর্তমানে মপক্স (আগে যা মাংকিপক্স নামে পরিচিত ছিল) আবারও বিশ্বব্যাপী
আলোচনায় এসেছে, বিশেষ করে আফ্রিকাতে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে, বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মপক্সের নতুন প্রাদুর্ভাবকে "আন্তর্জাতিক উদ্বেগের
জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা" হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এই বছর, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (DRC) এবং এর আশেপাশের দেশগুলোতে
মপক্সের একটি নতুন স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়েছে, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি
প্রাণঘাতী বলে বিবেচিত হচ্ছে। আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে, যেখানে আগে কখনও
মপক্সের প্রাদুর্ভাব হয়নি, সেখানেও এখন নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে নতুন এই স্ট্রেন শিশুদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে,
যা বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত ২০২৪ সালে ডেমোক্রেটিক
রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে ১৪,০০০ এর বেশি সংক্রমণ এবং ৫০০ এরও বেশি মৃত্যু ঘটেছে,
যা গত বছরের সংখ্যার সমান।
WHO এবং আফ্রিকা CDC দ্রুত সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সক্রিয় উদ্যোগ নিচ্ছে,
কিন্তু বিশ্বের সকল দেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা বলে মনে
করা হচ্ছে। আফ্রিকায় সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক স্তরে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে রোগ
পর্যবেক্ষণ,
চিকিৎসা পরীক্ষা, ক্লিনিক্যাল কেয়ার এবং জনগণকে সচেতন করা। এছাড়াও,
WHO এর প্রধান ডঃ টেড্রস আধানম ঘেব্রেয়েসুস বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গঠন করে
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই উপরের বিষয়ে সময়ের দিকে
লক্ষ্য রেখে আমাদের জীবন যাপন অতিবাহিত করতে হবে আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক
দান করুন আমিন