অন্তবর্তী সরকারের সুবিধা-অসুবিধা বিস্তারিত জানুন
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অনুচ্ছেদ্য তথ্যপ্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো অন্তবর্তী সরকার, বিষয়ে যা সাধারণত
নির্বাচনকালীন সময়ে গঠিত হয়, একটি দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জীবনে বিশেষ
ভূমিকা পালন করে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এটি সেই সময়কালকে
পরিচালনা করে যখন বিদ্যমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এবং নতুনভাবে
নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়।
এ সময় রাজনৈতিক পরিবেশকে শান্ত ও স্থিতিশীল রাখা, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে
সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা এবং দেশকে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন দেওয়া অন্তবর্তী
সরকারের মূল দায়িত্ব।
প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য নির্বাচন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
কিন্তু এই নির্বাচনের সময়ে পক্ষপাতিত্ব ও রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকি থাকে। তাই,
অন্তবর্তী সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় যাতে নির্বাচনকালীন সময়ে
প্রশাসনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং জনগণের আস্থা বজায়
থাকে।
এই প্রবন্ধে, অন্তবর্তী সরকারের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা
হয়েছে, যা আমাদের এই প্রশাসনিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে
একটি সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করবে।
পেজ সূচিপত্রঃ- অন্তর্বর্তী সরকারের সংক্রান্ত কিছু তথ্য সার সংক্ষেপ
- অন্তর্বর্তী সরকার কি
- অন্তবর্তী সরকারের মুল বৈশিষ্ট্য
- অন্তর্বর্তী সরকারের উদাহরণ
- অন্তর্বর্তী সরকার কেন দিতে হয়
- অন্তর্বর্তী সরকার এর সুবিধা ও অসুবিধা
- অন্তর্বর্তী সরকারের সুবিধা
- অন্তবর্তী সরকারের অসুবিধা
অন্তর্বর্তী সরকার কি
অন্তর্বর্তী সরকার (Caretaker Government) হল একটি অস্থায়ী সরকার যা সাধারণত
একটি দেশের নির্বাচনের সময়কালে বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় গঠিত হয়।
এই সরকার সাধারণত বিদ্যমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এবং নতুনভাবে
নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ববর্তী সময়ে কার্যকর হয়। এর মূল লক্ষ্য
হল নির্বাচনের সময় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং দেশের স্থিতিশীলতা
বজায় রাখা।
**অন্তর্বর্তী সরকারের মূল বৈশিষ্ট্য:**
- **অস্থায়ী প্রশাসন:** অন্তর্বর্তী সরকার অস্থায়ী এবং এর মেয়াদ সাধারণত নির্বাচনের আগে ও পরে পর্যন্ত সীমিত থাকে।
- **নিরপেক্ষতা:** এই সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হল নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো পক্ষপাতিত্ব না ঘটে।
- **নির্বাচন পরিচালনা:** অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানত নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিচালনা করে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
- **সীমিত ক্ষমতা:** অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণত বড় ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। এর ক্ষমতা সীমিত, এবং এটি শুধুমাত্র দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
**অন্তর্বর্তী সরকারের উদাহরণ:**
কিছু দেশে, যেমন বাংলাদেশে, অন্তর্বর্তী সরকারের ধারণাটি নির্বাচনের আগে একটি
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার
জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের ব্যবস্থা জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করতে এবং নির্বাচনী
প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে সহায়ক হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার একটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে
নির্বাচনকালীন সময়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে
সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এর কার্যকারিতা
এবং সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন এটি দীর্ঘমেয়াদী
সমস্যা সমাধানে অক্ষম থাকে।
অন্তর্বর্তী সরকার কেন দিতে হয়
অন্তর্বর্তী সরকার দেওয়ার প্রধান কারণ হলো একটি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া
চলাকালে নিরপেক্ষতা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। এটি বিশেষত এমন পরিস্থিতিতে
প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে যখন বিদ্যমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়।
এবং নতুনভাবে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত একটি শূন্যতা তৈরি
হয়। এই শূন্যতা পূরণ করতে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ও অবাধ করতে
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এর কয়েকটি মূল কারণ নিচে আলোচনা করা হলো:
**১. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা**
নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা থাকে। যদি ক্ষমতাসীন
দল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে নির্বাচন অবাধ এবং
সুষ্ঠু হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন তৈরি
করা হয়, যা নির্বাচনের সময়কালীন নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়।
**২. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা**
নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ সময়
ক্ষমতায় থাকা একটি দল তার সুবিধা নিতে পারে, যা রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘাত
সৃষ্টি করতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে এই ধরনের অস্থিরতা কমানো
সম্ভব হয়, কারণ এটি একটি নিরপেক্ষ এবং পক্ষপাতহীন প্রশাসন হিসেবে কাজ করে।
**৩. সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা**
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো নির্বাচন পরিচালনা করা এবং এটি সুষ্ঠু ও
গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এর মাধ্যমে
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং ফলাফলকে সকল পক্ষ মেনে
নিতে প্রস্তুত হয়।
**৪. বিদ্যমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শাসন চালিয়ে যাওয়া**
যখন বিদ্যমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তখন দেশে একটি শূন্যতা তৈরি হয়।
এই শূন্যতা পূরণ করতে এবং দেশকে শাসন করতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
এটি নতুন নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম
পরিচালনা করে।
**৫. গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুরক্ষা**
গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি হলো একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। অন্তর্বর্তী
সরকার এই প্রক্রিয়ার সুরক্ষা প্রদান করে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো সমান সুযোগ
পায় এবং জনগণ তাদের ভোটাধিকার অবাধে প্রয়োগ করতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার দেওয়ার মূল কারণ হলো একটি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া যেন
নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করা। এটি দেশের
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায়
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
**অন্তবর্তী সরকার: সুবিধা ও অসুবিধা**
অন্তবর্তী সরকার বা কেয়ারটেকার সরকার হল একটি অস্থায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা যা
সাধারণত একটি দেশের নির্বাচনের সময় প্রয়োগ করা হয়। এটি সাধারণত বর্তমান সরকার
তার ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করার পরে।
এবং নতুনভাবে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ববর্তী সময়কালের মধ্যে কাজ
করে। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান কাজ হল নির্বাচন পরিচালনা করা এবং এই সময়ের মধ্যে
প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। এটি একটি বিশেষ ধরনের প্রশাসন যা সাধারণ
সরকারের তুলনায় বেশ ভিন্ন। এই নিবন্ধে, আমরা অন্তবর্তী সরকারের বিভিন্ন সুবিধা ও
অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
**অন্তবর্তী সরকারের সুবিধা**
- **নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ**
অন্তবর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর নিরপেক্ষতা। এটি সাধারণত কোনো
রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নয় এবং পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করার জন্য গঠিত হয়।
নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব রোধ করতে অন্তবর্তী সরকার বিশেষভাবে
কার্যকর। এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতার একটি স্তর যোগ করে, যা রাজনৈতিক
দলগুলির মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়।
- **সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন**
অন্তবর্তী সরকার নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। এটি
নির্বাচনের সময়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ
এবং গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কাজ করে। একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন নিশ্চিত করার
মাধ্যমে, এটি ভোটারদের জন্য একটি নিরাপদ এবং নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যা
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- **রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা**
নির্বাচনের সময়ে অনেক দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যা সমাজে
অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। অন্তবর্তী সরকার এই সময়ের মধ্যে স্থিতিশীলতা বজায়
রাখতে সাহায্য করে। এটি একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে যেখানে
জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
- **জনগণের আস্থা অর্জন**
অন্তবর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উদ্দেশ্য জনগণের মধ্যে আস্থা
বৃদ্ধি করে। যখন জনগণ জানে যে একটি নিরপেক্ষ সরকার নির্বাচনের সময় পরিচালনা
করছে, তখন তারা ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে বেশি উৎসাহিত হয়। এটি
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সরকারের
গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।
**অন্তবর্তী সরকারের অসুবিধা**
- **অভিজ্ঞতার অভাব**
অন্তবর্তী সরকারের সদস্যরা সাধারণত পূর্ণ মেয়াদী সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে
বঞ্চিত হন। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী প্রশাসনিক দক্ষতা রাখেন না, যার ফলে
তাদের নীতি নির্ধারণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
এটি সরকারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।
- **সীমিত ক্ষমতা ও কার্যক্ষমতা**
অন্তবর্তী সরকার সাধারণত বড় ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম থাকে। এটি
শুধুমাত্র দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপরই সীমাবদ্ধ থাকে।
দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্পগুলি শুরু করা বা বড় ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা
অন্তবর্তী সরকারের আওতার বাইরে থাকে। এটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে
বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
- **জনগণের প্রতিনিধি নয়**
অন্তবর্তী সরকার সরাসরি নির্বাচিত নয় এবং তাই এটি জনমতের প্রতিফলন নয়। জনগণের
প্রতিনিধি না হওয়ায় এটি জনগণের মধ্যে একটি অনাস্থার জন্ম দিতে পারে। এছাড়াও,
জনগণের কোনো প্রত্যক্ষ মতামত না থাকায় অন্তবর্তী সরকারকে অনেক সময় জনগণের
আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
- **অস্থায়ী ও সীমিত মেয়াদ**
অন্তবর্তী সরকার একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা হওয়ায় এটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সমাধান
করতে সক্ষম হয় না। এর কাজকর্ম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, এবং
নতুনভাবে নির্বাচিত সরকারের আগমনের সাথে সাথে এটি বিলুপ্ত হয়।
ফলে, এটি কেবলমাত্র অস্থায়ী সমাধান প্রদান করতে সক্ষম এবং বড় ধরনের প্রশাসনিক
পরিবর্তন বা উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।অন্তবর্তী সরকার একটি
নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, বিশেষ করে একটি নির্বাচনী
প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য।
তবে এর সীমাবদ্ধতা ও অসুবিধাও রয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি
থেকে বিবেচনা করলে কার্যকর নয়, এবং এটি শুধুমাত্র একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। ফলে,
অন্তবর্তী সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, এটি তার
কার্যকারিতা ও সীমাবদ্ধতার নিরিখে মূল্যায়ন করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ-
"অন্তর্ভুক্তির সরকার" (Inclusive Government) সাধারণত রাজনৈতিক সমঝোতার একটি
প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বা সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করার জন্য গঠিত হয়।
এটি বিশেষত রাজনৈতিক সংকট বা সংঘাত পরবর্তী পরিস্থিতিতে একটি দেশের স্থিতিশীলতা
এবং শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়। অন্তর্ভুক্তির সরকারের বিভিন্ন
কারণ রয়েছে, যা নিম্নরূপ:
- **রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা** যখন একটি দেশে রাজনৈতিক বিভাজন গভীর হয় বা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে একটি সরকার গঠন করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন অন্তর্ভুক্তির সরকার গঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়। এতে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার ফলে বিভাজনের পরিবর্তে ঐক্য গড়ে ওঠে।
- **সমাজের সব স্তরের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা** অন্তর্ভুক্তির সরকার গঠনের মূল উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জাতিগত গোষ্ঠী, এবং সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। এটি বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা এবং সহমর্মিতা বৃদ্ধি করে, যা একটি দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়।
- **সংঘাত ও দ্বন্দ্ব নিরসন** যখন একটি দেশে সংঘাত বা গৃহযুদ্ধ হয়, তখন অন্তর্ভুক্তির সরকার গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠীকে একত্রিত করে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও পুনর্মিলন নিশ্চিত করার একটি কার্যকর উপায়।
- **নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি** অন্তর্ভুক্তির সরকার সাধারণত বিভিন্ন পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত হয়, ফলে এটি সকলের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। এই ধরণের সরকার একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, যা সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে সহায়ক।
- **নির্বাচনের পরে সহযোগিতা ও সমঝোতা বৃদ্ধি** নির্বাচনের পর যে দলই ক্ষমতায় আসুক, অনেক সময় বিরোধী দল বা অংশীদারদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তির সরকার গঠন করা হয়, যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। এটি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং সরকারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- **অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা** অন্তর্ভুক্তির সরকার সমাজের বিভিন্ন অংশের মতামত এবং প্রয়োজনীয়তা গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। এতে উন্নয়ন প্রকল্প এবং নীতি নির্ধারণে সমাজের সব অংশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।
অন্তর্ভুক্তির সরকার সাধারণত সমাজের বিভিন্ন অংশকে একত্রিত করে একটি স্থিতিশীল,
গ্রহণযোগ্য, এবং কার্যকর প্রশাসন গঠনের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়। এটি গণতান্ত্রিক
মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে, সংঘাত নিরসন করতে, এবং সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
**সর্বশেষ কথা**
অন্তবর্তী সরকার একটি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, এর
কার্যকারিতা নির্ভর করে নির্দিষ্ট পরিস্থিতি ও ব্যবস্থার ওপর। এটি একটি
নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হলেও, এর সীমাবদ্ধতা
এবং ক্ষমতার অভাবকে উপেক্ষা করা যায় না।
অন্তবর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য হল দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং
একটি নির্ভরযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিচালনা করা, কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদী
প্রশাসনিক চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম। তাই, অন্তবর্তী সরকারকে শুধুমাত্র একটি
অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত,
যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে
সহায়ক। ভবিষ্যতে, এই ধরনের সরকারের কার্যকারিতা এবং তার সীমাবদ্ধতাগুলোকে
বিবেচনায় রেখে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত, যাতে গণতন্ত্রের মূল মূল্যবোধ
অক্ষুন্ন থাকে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত না হয়।