কিডনিকে 'স্ট্রং' করা-এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কিছু উপায়

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনাপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমরা জানি কিডনি শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা রক্ত পরিশোধন ও অতিরিক্ত তরল ও বর্জ্য পদার্থ অপসারণের কাজ করে। 
কিডনি
অপর্যাপ্ত যত্নের ফলে কিডনি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এদিকে, কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা, যা দীর্ঘমেয়াদে অস্বস্তি ও অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে। 

তাই কিডনির যত্ন নেওয়া, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা প্রয়োজন। তাই আজকের আর্টিকেলে কিডনিজনিত সমস্যা এবং আরোগ্যের কিছু ধারণা নিতে চলেছি। যা আমাদের শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটিকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে ভূমিকা পালন করবে। তাহলে চলুন সেই বিষয়গুলো আমরা বিস্তারিত জেনে নিই।

পেজ সূচিপত্রঃ- কিডনিকে 'স্ট্রং' করা-এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কিছু উপায় বিস্তারিত জানুন

  • কিডনি কি?
  • কিডনি সমস্যা হলে শরীরে কি কি লক্ষণ দেখাই।
  • কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
  • কিডনির ব্যথা কেমন হয়।
  • কিডনিতে কি পানি জমে।
  • সুস্থ কিডনির লক্ষণ।
  • কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ।
  • কিডনি সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়।
  • কিডনি রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার।
  • কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ।
  • দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের লক্ষণ।
  • কিডনি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা।
  • কিনে রোগ কি ভাল হয়।
  • কিডনি সমস্যা সমাধান।
  • কিডনি রোগ কেন হয়।
  • কেনে রোগের প্রতিকার।
  • কিডনি পাথরের লক্ষণ।
  • কিডনি রোগের ওষুধের নাম।
  • সর্বশেষ কথা

কিডনি কি

কিডনি (Kidney) হলো মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা রক্ত পরিশোধন করে। প্রতিটি মানুষ সাধারণত দুটি কিডনি নিয়ে জন্মায়। কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে তা শরীর থেকে বের করে দেওয়া। 

এছাড়াও, কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, লবণ ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা, এবং লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে থাকে।

কিডনি সমস্যা হলে শরীরে কি কি লক্ষণ দেখাই?

কিডনি সমস্যার ক্ষেত্রে শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো সেগুলো নিম্নে লিপিবদ্ধ করা হলোঃ-
  • ফোলাঃ- কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে ফ্লুইড জমা হয়, যা পা, গোড়ালি, মুখ এবং হাতের ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
  • মূত্রের পরিমাণ এবং রং পরিবর্তনঃ- মূত্রের পরিমাণ কমে যেতে পারে, মূত্রের রং গাঢ় বা ফেনা যুক্ত হতে পারে, অথবা ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে রাতে।
  • উচ্চ রক্তচাপঃ- কিডনি সমস্যা থাকলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, কারণ কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শরীরের ক্লান্তিঃ কিডনি পর্যাপ্ত পরিমাণে ফিল্টার করতে না পারলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমা হয়, যার ফলে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব হয়।
  • ত্বক খসখসে হওয়া বা চুলকানিঃ- কিডনি সমস্যার কারণে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমে গেলে ত্বকে চুলকানি হতে পারে।
  • অ্যাপেটাইট কমে যাওয়াঃ- কিডনি সমস্যার কারণে খাদ্যের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে, এমনকি খাবারের গন্ধও বিরক্তিকর হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব এবং বমিঃ- রক্তে বিষাক্ত পদার্থ জমে গেলে বমি বমি ভাব, বমি বা খাবারে অরুচি দেখা দিতে পারে।
  • শ্বাসকষ্টঃ- শরীরে অতিরিক্ত ফ্লুইড জমা হলে তা ফুসফুসে চলে যেতে পারে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
যদি উপরের লক্ষণগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যায়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কিডনি সমস্যার সঠিক চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যার কারণ এবং এর তীব্রতার উপর।

কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।

কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে এবং এগুলো সহজে চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো।
  1. ফুলে যাওয়াঃ- মুখ, পা, বা হাত ফুলে যেতে পারে কারণ কিডনি অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করতে পারে না।
  2. প্রস্রাবের সমস্যাঃ- প্রস্রাবের পরিমাণে পরিবর্তন, ঘন ঘন প্রস্রাব, বিশেষ করে রাতে, অথবা প্রস্রাবে ফেনা বা রক্ত দেখা যেতে পারে।
  3. চাপবোধ বা ব্যথাঃ- পিঠের নিচের দিকে বা কিডনি অঞ্চলে ব্যথা হতে পারে।
  4. অতিরিক্ত ক্লান্তিঃ- কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে শুরু করে, যা ক্লান্তি এবং দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
  5. ত্বকের চুলকানিঃ- কিডনি সঠিকভাবে বর্জ্য অপসারণ করতে না পারলে শরীরে অতিরিক্ত বিষাক্ত পদার্থ জমে, যা ত্বকে চুলকানি সৃষ্টি করে।
  6. বমি বমি ভাব এবং বমিঃ- খাদ্য হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার ফলে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।
  7. ক্ষুধামন্দাঃ- কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে খাদ্যে অরুচি দেখা দেয় এবং ক্ষুধামন্দা হয়।
  8. উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কিডনি সমস্যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
যদি এই লক্ষণগুলির কোনোটি দেখা দেয়, তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ প্রাথমিক ধাপে কিডনি রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসা করা গেলে কিডনির ক্ষতি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কিডনির ব্যথা কেমন হয়।

কিডনির ব্যথা সাধারণত কোমরের পেছনের দিকে, পাঁজরের নিচে অনুভূত হয়। এটি তীব্র বা মৃদু হতে পারে এবং দুই পাশেই বা এক পাশেও হতে পারে। কিডনির ব্যথার সাথে যে লক্ষণগুলো থাকতে পারে তা হলো।
  • তীব্র ব্যথা বিশেষ করে কিডনির পাথরের ক্ষেত্রে ব্যথা খুব তীব্র এবং হঠাৎ শুরু হতে পারে। এটি পিঠের এক পাশে বা নিচের পাঁজরের নিচে হতে পারে এবং তলপেট ও তলপায় পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
  • *মৃদু ব্যথা কখনও কখনও সংক্রমণ বা কিডনির প্রদাহের কারণে মৃদু ব্যথা হতে পারে।
  • জ্বর এবং ঠান্ডা কিডনির সংক্রমণের ক্ষেত্রে জ্বর, কাঁপুনি এবং ঠান্ডা অনুভূতি হতে পারে।
  • প্রস্রাবের সমস্যা কিডনির সমস্যা থাকলে প্রস্রাবে জ্বালা, ঘন ঘন প্রস্রাব, রক্ত দেখা বা প্রস্রাবের গন্ধ পরিবর্তিত হতে পারে।
  • বমি বা বমির অনুভূতিঃ- কিডনির পাথর বা সংক্রমণের কারণে বমি বা বমির বোধ হতে পারে।
যদি কিডনির ব্যথা হয়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি কিডনির সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

কিডনিতে কি পানি জমে

হ্যাঁ, কিডনিতে পানি জমতে পারে, যা সাধারণত একটি বিশেষ রোগের লক্ষণ হতে পারে। একে মেডিকেল পরিভাষায় "এডিমা" বা "প্লুরাল ইফিউশন" বলা হয়। এ ধরনের পানি জমা সাধারণত কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে হয়। 
কিডনি যদি রক্ত থেকে অতিরিক্ত তরল এবং বর্জ্য পদার্থ সঠিকভাবে ছেঁকে না বের করতে পারে, তাহলে শরীরে পানি জমা হতে পারে। এটি পায়ে, হাতে বা ফুসফুসে জমতে পারে এবং কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে।কিছু সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে।
  1. কিডনি ফেইলিউর (বিকলতা) যখন কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারায়।
  2. নেফ্রোটিক সিনড্রোম কিডনির সৃষ্টির কারণে শরীরে অতিরিক্ত প্রোটিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা শরীরে পানি জমার কারণ হতে পারে।
  3. কিডনিতে সিস্ট বা টিউমারঃ- কিডনিতে সিস্ট বা টিউমার থাকলে তরল জমে থাকতে পারে।
যদি কিডনিতে পানি জমার লক্ষণ দেখা যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সুস্থ কিডনির লক্ষণ।

সুস্থ কিডনির কিছু লক্ষণ নিম্নরূপ
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রস্রাব হওয়াঃ- একজন সুস্থ ব্যক্তির দিনে প্রায় ৭০০ মি.লি. থেকে ২ লিটার প্রস্রাব হওয়া উচিত। প্রস্রাবের রং সাধারণত পরিষ্কার বা হালকা হলুদ থাকে।
  • শরীরে ফোলাভাব না থাকাঃ- কিডনি ঠিকমতো কাজ করলে শরীরের অতিরিক্ত পানি ও লবণ ফিল্টার করে ফেলে, ফলে হাত, পা, মুখ বা চোখের চারপাশে ফোলাভাব দেখা যায় না।
  • রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকাঃ- কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাভাবিক রক্তচাপ সুস্থ কিডনির লক্ষণ হতে পারে।
  • ক্লান্তি বা দুর্বলতা না থাকাঃ- কিডনি ঠিকমতো কাজ করলে শরীরে শক্তি উৎপাদন এবং রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ সঠিকভাবে হয়, ফলে শরীরে ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভূত হয় না।
  • ত্বক ও চোখের সাদা অংশের রং স্বাভাবিক থাকাঃ- কিডনি সমস্যা হলে ত্বকে শুষ্কতা, চুলকানি বা চোখের সাদা অংশে হলুদাভ ভাব দেখা দিতে পারে। এগুলোর অনুপস্থিতি সুস্থ কিডনির নির্দেশ দেয়।
  • প্রস্রাবে কোন ব্যথা বা পুড়া ভাব না থাকাঃ- সুস্থ কিডনির ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সময় কোন ব্যথা বা পুড়া ভাব অনুভূত হয় না।
এই লক্ষণগুলো সাধারণত সুস্থ কিডনির ইঙ্গিত দেয়, তবে কিডনির কার্যক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাও করতে হতে পারে।

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ।

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে খুব স্পষ্ট না হলেও, সময়ের সাথে সাথে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিডনি ড্যামেজের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো।
  • শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তিঃ- কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমে গিয়ে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়।
  • প্রস্রাবের পরিবর্তন প্রস্রাবের পরিমাণ, রঙ, বা ঘনত্বে পরিবর্তন আসতে পারে। ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবে ফেনা, রক্ত, বা অস্বাভাবিক দুর্গন্ধ লক্ষ্য করা যেতে পারে।
  • শরীরে ফুলে যাওয়াঃ- কিডনি বর্জ্য পদার্থ বা অতিরিক্ত জল ঠিকমতো শরীর থেকে বের করতে না পারলে, মুখ, হাত, পা, বা পায়ের গোড়ালি ফুলে যেতে পারে।
  • মাথাব্যথা ও ঘুমের সমস্যাঃ- কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরের টক্সিন জমা হয়ে মাথাব্যথা বা ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ত্বকের খোসা বা চুলকানিঃ- কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমা হয়, যা ত্বকে চুলকানি বা শুষ্ক ত্বকের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত উচ্চ রক্তচাপঃ- কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
  • বমি বা বমি বমি ভাবঃ- রক্তে টক্সিন জমা হলে এমন অনুভূতি হতে পারে।
  • মূত্রত্যাগের সময় ব্যথাঃ প্রস্রাবে সংক্রমণ থাকলে বা কিডনি পাথর থাকলে মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা হতে পারে।
তাহলে বোঝা গেল ওপরের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আশা করি ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছেন।

কিডনি সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়।

আমাদেরকে জেনে রাখা অবশ্যই প্রয়োজন কিডনিতে সমস্যা হলে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা অনুভব করা যেতে পারে, সাধারণত নিম্নলিখিত স্থানগুলোতে ব্যথা হতে পারে।
  1. পিঠের নিচের অংশে (Lower Back) কিডনি সমস্যা হলে পিঠের নিচের অংশে বা কোমরের ঠিক উপরে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত একপাশে বা উভয় পাশে অনুভূত হয়।
  2. পাঁজরের নিচে (Flank Pain) পাঁজরের নিচে, পিছনের দিকে কিডনির অবস্থান থাকে, তাই সেখানে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে যদি কিডনিতে পাথর থাকে বা সংক্রমণ হয়।
  3. পেটের নিচের অংশে (Lower Abdomen) কিছু ক্ষেত্রে, কিডনির সমস্যার কারণে পেটের নিচের অংশে ব্যথা হতে পারে। 
  4. উরুতে বা কুঁচকিতে (Groin and Thigh) কিডনিতে পাথর বা সংক্রমণ থাকলে সেই ব্যথা কুঁচকি ও উরুর দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যদি উপরে উল্লেখিত কোনো ব্যথা বা উপসর্গ দেখা দেয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিডনির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।

কিডনি রোগের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার।

কিডনি রোগ এমন একটি শারীরিক অবস্থা যা কিডনির কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি ছেঁকে বের করতে সাহায্য করে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিডনি রোগের কারণসমূহ যেমনঃ-
  • ডায়াবেটিসঃ- দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
  • উচ্চ রক্তচাপঃ- রক্তচাপ দীর্ঘদিন বেশি থাকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • জেনেটিক বা বংশগত কারণঃ- অনেক সময় পারিবারিক ইতিহাসে কিডনি রোগের প্রবণতা থাকতে পারে।
  • নেফ্রাইটিসঃ- কিডনির প্রদাহ যা বিভিন্ন ইনফেকশন বা ইমিউন সিস্টেমের সমস্যার কারণে হতে পারে।
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ- কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে কিডনির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়াঃ- অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে ইউরিয়া উৎপন্ন করে, যা কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

কিডনি রোগের লক্ষণসমূহঃ-

  1. ফোলাভাবঃ- মুখ, পা, হাত বা গোড়ালিতে ফোলা দেখা দিতে পারে।
  2. প্রস্রাবের সমস্যাঃ- ঘন ঘন বা কম প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে রক্ত বা ফেনা দেখা দিতে পারে।
  3. উচ্চ রক্তচাপঃ- কিডনি সমস্যার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
  4. অতিরিক্ত ক্লান্তিঃ- শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি বা কোনো কাজে মনোযোগের অভাব।
  5. ক্ষুধামান্দ্য ও বমি বমি ভাবঃ- খাদ্যে অরুচি ও বমির প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
  6. ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানিঃ- কিডনির সমস্যা থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং তীব্র চুলকানি হতে পারে।

প্রতিকার ও প্রতিরোধ

  • সঠিক খাদ্যাভ্যাসঃ কম লবণ, কম প্রোটিন, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা কিডনির সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • পর্যাপ্ত পানি পানঃ- দৈনিক প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।
  • ওষুধ ব্যবহারঃ ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা এবং কিডনির জন্য ক্ষতিকর ওষুধ এড়িয়ে চলা।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ- বিশেষ করে যাদের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে (ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ), তাদের নিয়মিত কিডনির কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা উচিত।
  • শরীরচর্চাঃ- নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
কিডনি রোগ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ

কিডনি ইনফেকশনের Kidney Infection লক্ষণগুলো সাধারণত তীব্র হয় এবং এগুলো দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। কিডনি ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণগুলো হল।
  1. প্রবল পিঠের বা কোমরের ব্যথাঃ- বিশেষত পাশের দিকে।
  2. জ্বর এবং শীত লাগাঃ- উচ্চ তাপমাত্রা এবং শীত শীত ভাব।
  3. প্রস্রাবে সমস্যাঃ- যেমন প্রস্রাবের সময় ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ, অথবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
  4. প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, রঙ পরিবর্তন, অথবা রক্ত প্রস্রাবে অস্বাভাবিক রঙ বা গন্ধ দেখা দিতে পারে।
  5. বমি বমি ভাব ও বমি
  6. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  7. ক্ষুধামন্দা
যদি এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ কিডনি ইনফেকশন গুরুতর হতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের লক্ষণ।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের (Chronic Kidney Disease বা CKD) লক্ষণগুলি প্রাথমিকভাবে খুব স্পষ্ট নাও হতে পারে, তবে রোগ বাড়ার সাথে সাথে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • শরীরে ফোলাঃ- বিশেষ করে পায়ে, গোড়ালিতে, মুখে বা হাতে পানি জমে ফোলা হতে পারে।
  • প্রস্রাবের পরিমাণের পরিবর্তনঃ- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা প্রস্রাবের সাথে ফেনা হওয়া।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতাঃ- শরীরের শক্তি কমে যাওয়া বা দুর্বল অনুভব করা।
  • বমি বমি ভাব বা বমিঃ- খাদ্য গ্রহণে অনীহা, বমি বমি লাগা বা খাবার খেতে ইচ্ছা না করা।
  • ত্বকে চুলকানিঃ- শরীরে টক্সিন জমা হওয়ার ফলে ত্বকে অতিরিক্ত চুলকানি হতে পারে।
  • শ্বাসকষ্টঃ- ফুসফুসে পানি জমার কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  • ঘুমের সমস্যাঃ- অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা।
  • রক্তাল্পতা (এনিমিয়া)- কিডনি সঠিকভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে না পারলে রক্তাল্পতা হতে পারে।
  • পেশী ব্যথা বা ক্র্যাম্পঃ- পেশীতে টান লাগা বা ব্যথা।
  • ব্লাড প্রেসারের বৃদ্ধিঃ- উচ্চ রক্তচাপ কিডনি সমস্যার কারণে বা কিডনির সমস্যা থেকে হতে পারে।
কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গগুলি হালকা হতে পারে, তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

**কিডনি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা**

কিডনি রোগের লক্ষণ:
  1. শরীর ফুলে যাওয়াঃ- পায়ে, মুখে বা হাত-পায়ে পানি জমে ফুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
  2. প্রস্রাবে পরিবর্তনঃ- ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন, প্রস্রাবে ফেনা হওয়া, রক্ত আসা বা প্রস্রাব কমে যাওয়া।
  3. অতিরিক্ত ক্লান্তিঃ- কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে দেহে বিষাক্ত পদার্থ জমে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দেয়।
  4. ত্বকে চুলকানিঃ- শরীরে টক্সিন জমার কারণে ত্বকে চুলকানি হতে পারে।
  5. খাওয়ার রুচি কমে যাওয়াঃ- খাবারে অরুচি এবং বমি ভাব হতে পারে।
  6. মাথা ঘোরা ও মনোযোগের অভাবঃ- রক্তে টক্সিন বেড়ে গেলে মাথা ঘোরা এবং মনোযোগ কমে যাওয়ার সমস্যা হয়।
  7. বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টঃ- কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে ফুসফুসে তরল জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  8. রক্তচাপ বেড়ে যাওয়াঃ- কিডনি রোগের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়।

কিডনি রোগের চিকিৎসা

  • ঔষধ সেবনঃ- চিকিৎসক কিডনি সমস্যার ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ঔষধ প্রদান করেন। যা রোগের উপসর্গ ও প্রাথমিক অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ- কিডনি রোগে আক্রান্তদের জন্য লবণ, প্রোটিন, পটাসিয়াম, এবং ফসফরাস নিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
  • ডায়ালাইসিসঃ- কিডনি যখন তার কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে হারায়, তখন রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ দূর করতে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়।
  • কিডনি প্রতিস্থাপনঃ কিডনি সম্পূর্ণভাবে অকেজো হলে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নতুন কিডনি সংযোজন করা হয়।
  • জীবনধারা পরিবর্তনঃ- ধূমপান পরিহার, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ কিডনির কার্যক্রম ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
কিডনি রোগের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

কিডনি রোগের ওষুধের নাম।

কিডনি রোগের চিকিৎসা রোগের ধরণ ও পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, কিডনি রোগের ওষুধগুলো প্রধানত নিম্নলিখিত কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ- ACE ইনহিবিটর যেমনঃ-রামিপ্রিল, এনালাপ্রিল)
  • ARBs (যেমনঃ- লোসারটান, ভালসারটান)
**ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে**
  • ইনসুলিন বা মেটফরমিন প্রভৃতি ওষুধ।
**পানি কমাতে (ডায়ুরেটিকস)**
  • ফুরোসেমাইডঃ- (Lasix)
  • হাইড্রোক্লোরোথিয়াজাইড
**ফসফেট লেভেল নিয়ন্ত্রণে**
  • ফসফেট বাইন্ডারস (যেমন, সিভেলামার)
ইরিথ্রোপয়েসিস স্টিমুলেটিং এজেন্টস (ESA)
  • কিডনি রোগের কারণে অ্যানিমিয়া হলে রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। যেমন (এরিথ্রোপোয়েটিন)
**অ্যান্টি-প্রোটিনিউরিক ওষুধ** 
  • ACE ইনহিবিটর বা ARBs ব্যবহার করা হয়। প্রোটিন কমানোর জন্য।
তবে, কিডনি রোগের ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ ভুল ওষুধ গ্রহণে কিডনির ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

কিডনিতে পাথর হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:

1. তীব্র পিঠ বা তলপেটের ব্যথাঃ- কিডনির পাথর যদি ইউরিনারি ট্র্যাক্টে আটকে যায়, তাহলে পিঠের নিচের অংশে বা তলপেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত আকস্মিক হয় এবং সময়ের সঙ্গে কমে বা বাড়তে পারে।

2. প্রস্রাব করার সময় ব্যথাঃ- পাথর মূত্রনালিতে এসে আটকে গেলে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

3. রক্তযুক্ত প্রস্রাব (হেমাটুরিয়া) কিডনিতে পাথর থাকলে অনেক সময় প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিতে পারে। প্রস্রাবের রঙ গোলাপী, লাল বা বাদামী হতে পারে।

4. প্রস্রাবের চাপ বা প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধিঃ- পাথর মূত্রনালির নিচের দিকে গেলে প্রস্রাব করার ইচ্ছা বা চাপ বাড়তে পারে, এমনকি সামান্য প্রস্রাবও হতে পারে।

5. মূত্র প্রবাহ কমে যাওয়াঃ- যদি পাথর মূত্রনালীতে আটকে যায়, তাহলে মূত্র প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বা সম্পূর্ণ বন্ধও হয়ে যেতে পারে। বমি ও বমিভাব তীব্র ব্যথার কারণে বমি বা বমির ভাব হতে পারে।

7. জ্বর ও ঠাণ্ডা লাগাঃ- যদি কিডনির সংক্রমণ ঘটে, তাহলে জ্বর এবং ঠাণ্ডা লাগা দেখা দিতে পারে। কিডনিতে পাথরের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

**কিডনিকে 'স্ট্রং' করার উপায়**

পর্যাপ্ত পানি কিডনি থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয় এবং কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। সঠিক খাদ্যগ্রহণ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন কলা, পালং শাক, এবং বাদাম, কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে।

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ কিডনির ওপর চাপ বাড়ায়, যা তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা কিডনির সুস্থতায় সহায়ক।ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান কিডনির ক্ষতি করতে পারে, তাই এগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত।

**কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়**

  • আঁশযুক্ত খাবার খাওয়াঃ ফল, সবজি, ওটস, এবং শস্য জাতীয় খাবার খাদ্যনালীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং মল নরম করে।
  • অলিভ অয়েল ও ঘিঃ- অলিভ অয়েল ও ঘি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে প্রভাবশালী হতে পারে।
  • প্রতিদিনের পর্যাপ্ত পানি পানঃ- পর্যাপ্ত পানি পান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
  • নিয়মিত ব্যায়ামঃ- নিয়মিত শরীরচর্চা অন্ত্রের গতি বাড়ায় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • প্রাকৃতিক ঔষধ ব্যবহারঃ- ইসবগুলের ভুষি, আমলকি বা গরম পানি সহ লেবু খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর।
এই অভ্যাসগুলি গ্রহণের মাধ্যমে কিডনি সুস্থ রাখা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কিডনিকে 'স্ট্রং' করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

কিডনি হলো আমাদের শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীর থেকে বর্জ্য এবং বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে সহায়ক। কিডনি সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

একইভাবে, কোষ্ঠকাঠিন্যও দৈনন্দিন জীবনে একটি সাধারণ সমস্যা, যা সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইলের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। নিচে কিডনি শক্তিশালী করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কিছু কার্যকর উপায় বর্ণনা করা হলো।

**কিডনি শক্তিশালী করার উপায়**

*পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ- কিডনি সুস্থ রাখার জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ সহজ হয়। এছাড়াও পর্যাপ্ত পানি পান করলে মূত্রনালীতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

**স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন**

কিডনি ভালো রাখতে খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফল, শাকসবজি, এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার যোগ করুন।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল যেমন ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, আপেল ইত্যাদি কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
  • শাকসবজি, বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • লবণ ও প্রসেসড খাবার কম খাওয়া উচিত, কারণ এগুলো কিডনিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

**রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন**

উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস কিডনির ক্ষতি করতে পারে। নিয়মিত রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে চলুন। এই দুইটি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনির কার্যক্ষমতা ভালো থাকবে।
  • ব্যায়াম করুন। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম কিডনির রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং শরীরের বর্জ্য পণ্যগুলো দ্রুত অপসারণে সহায়তা করে। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন।

**কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়**

  • ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।
  • পুরো শস্য, ওটস, বার্লি, এবং ফ্ল্যাক্স সিড ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ভালো কাজ করে।
  • আপেল, পেয়ারা, আম, কমলা, এবং নাশপাতির মতো ফলগুলিও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
প্রচুর পানি পান করুনঃ- পানি না খেলে শরীরের তরল অভাব হয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণ হতে পারে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে পাচনতন্ত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে।

অ্যাকটিভ লাইফস্টাইল বজায় রাখুনঃ- ব্যায়াম করার ফলে অন্ত্রের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে পেটের গতি ভালো থাকে।

প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুনঃ- দই বা অন্যান্য প্রোবায়োটিক খাবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে।

পানি ও লেবুর মিশ্রণঃ- সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খেলে পাচনতন্ত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমতে সহায়তা করে।

**কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ**

কফি ও চা পান করুনঃ- কফি ও চায়ে ক্যাফেইন থাকায় এগুলো অন্ত্রের কার্যকলাপ বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তবে, অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় না পান করাই ভালো।

খাবার সময় সচেতনতাঃ- প্রতিবার খাবার খাওয়ার সময় সঠিকভাবে চিবিয়ে খাবার খেলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে যায়।

কিডনি শক্তিশালী করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য প্রধানত সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং নিয়মিত ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাবারে ফাইবার যুক্ত করা, প্রোবায়োটিক গ্রহণ, এবং সক্রিয় জীবনধারা বজায় রাখলে শরীরের কার্যক্ষমতা ভালো থাকে।

সর্বশেষ কথা

কিডনির সুস্থতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং প্রাকৃতিক উপায়গুলোকে জীবনের অংশ করা জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন কেবল শরীরকে সুস্থ রাখে না, 

বরং দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। তাই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির যত্নে সচেতন হওয়া উচিত। বিষয়টা যদি আপনাদের কাছে একটু ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পেজ থেকে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন