অভাব-কারণ প্রভাব - এবং উত্তরণের পথ বিস্তারিত জানুন

পরামর্শমূলক বিষয় সমূহ নিয়ে আলোচনাপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো অপবাদ সম্পর্কে অভাব, সমাজের এমন একটি বাস্তবতা যা অনেক মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে। এটি জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলির অভাব বোঝায়, যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ইত্যাদি। 
অভাব থেকে মুক্তির উপায়
একটি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা অভাবের মাত্রা ও ধরন নির্ধারণ করে। তবে, অভাবের মূল কারণগুলো বোঝা এবং এর প্রভাব থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

পেজ সূচিপত্রঃ- অভাব-কারণ প্রভাব - এবং উত্তরণের পথ বিস্তারিত জানুন 

  • অভাব কি।
  • অভাবের কারণ।
  • অভাব থেকে উত্তরণের উপায়।
  • অভাব থেকে উত্তরণের দোয়া। 
  • অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়।
  • অভাবে স্বভাব নষ্ট।
  • সর্বশেষ কথা

অভাব কি

"অভাব" শব্দটি বাংলা ভাষায় অভাব বা ঘাটতির ধারণা বোঝায়। এটি সাধারণত এমন একটি পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে যেখানে কোনো প্রয়োজনীয় বা কাম্য কিছু অনুপস্থিত থাকে, যেমন খাদ্য, অর্থ, সম্পদ বা সুযোগ। 

অভাবের কারণে মানুষের জীবনে কষ্ট বা চাহিদা পূরণ না হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। অভাবের বিভিন্ন ধরনের দিক হতে পারে, সে দিকগুলো আর নিম্নে ব্লক আকারে তুলে ধরা হলো। যেমনঃ-
  • আর্থিক অভাবঃ- অর্থ বা সম্পদের অভাব যা মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • খাদ্য অভাবঃ- খাদ্য সরবরাহের ঘাটতি যা মানুষের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়।
  • শিক্ষা বা চাকরির সুযোগ না পাওয়া, যা উন্নতি বা স্বনির্ভরতার পথে বাধা সৃষ্টি করে।
অভাবের কারণে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার ফলে মানুষকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।

অভাবের কারণ সমূহ

অভাবের কারণসমূহ অনেক রকম হতে পারে, তবে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু কারণ সমূহ ব্লক আকারে তুলে ধরলাম আশা করি আমাদের বুঝতে অনেক সুবিধা হবে, তাহলে চলুন বিষয়গুলো স্টেপ বাই স্টেপ জেনে নেওয়া যাক। অভাবের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিচে এর কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলোঃ-
  • দারিদ্র্যঃ- দারিদ্র্য অভাবের সবচেয়ে বড় কারণ। দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম থাকে, যা তাদের জীবনযাত্রার মানকে নিম্নমুখী করে তোলে। দারিদ্র্য সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, যাদের অর্থনৈতিক সুযোগ ও সম্পদ সীমিত।
  • বেকারত্বঃ- বেকারত্বের কারণে অনেক মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন না, যার ফলে তারা তাদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়। দীর্ঘমেয়াদী বেকারত্ব সামাজিক ও মানসিক সমস্যারও সৃষ্টি করে।
  • অশিক্ষাঃ- শিক্ষা জীবনের মৌলিক চাহিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষা না থাকলে মানুষের জীবিকার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। যা অভাবকে ত্বরান্বিত করে। অশিক্ষিত মানুষেরা দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। যা তাদের কর্মসংস্থান ও উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
  • অপর্যাপ্ত সম্পদের বণ্টনঃ- সম্পদের অনিয়মিত বণ্টনের ফলে কিছু মানুষ সম্পদের বিশাল অংশের মালিক হয়ে যায়, আর অন্যদিকে, অনেক মানুষ প্রয়োজনীয় মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। এ ধরণের বৈষম্য সমাজে অভাবের গভীরতা বাড়ায়।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ- খরা, বন্যা, ভূমিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়ই মানুষের জীবনে অভাব সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল নষ্ট হওয়া, গৃহহীন হওয়া, বা জীবিকা হারানো অভাবকে ত্বরান্বিত করে।

অভাবের প্রভাব

অভাবের প্রভাব শুধুমাত্র ব্যক্তির জীবনযাত্রার উপরই সীমাবদ্ধ নয়, এটি পুরো সমাজ ও অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলে। কিছু উল্লেখযোগ্য প্রভাব নিচে তুলে ধরা হলো।
  1. স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টিঃ- অভাবে থাকা মানুষ প্রায়ই যথাযথ পুষ্টি ও চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে অপুষ্টি, অসুখ-বিসুখ এবং দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি আরও মারাত্মক হয়, কারণ অপুষ্টির কারণে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
  2. অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধিঃ- যখন মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয় না, তখন অনেকেই বেঁচে থাকার জন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে ধাবিত হয়। দরিদ্রতা ও বেকারত্ব অপরাধ প্রবণতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
  3. শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়াঃ- অর্থের অভাবে অনেক শিশু ও তরুণ শিক্ষার সুযোগ পায় না। এর ফলে তারা ভবিষ্যতে ভালো চাকরি বা আয়ের সুযোগ হারায়, যা তাদের দারিদ্র্যের চক্রে আটকে রাখে।
  4. মৃত্যুর হার বৃদ্ধিঃ- অভাবে থাকা মানুষদের প্রায়ই সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, যা তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য অভাব খুবই ক্ষতিকর হতে পারে।

অভাব থেকে উত্তরণের উপায়

অভাব দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রের সমন্বিত প্রচেষ্টা অভাব দূর করতে পারে।
  • শিক্ষার প্রসারঃ- শিক্ষা অভাব দূর করার অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার। সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা হলে মানুষ দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
  • নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিঃ- বেকারত্ব কমাতে হলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোগে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা হলে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে।
  • সরকারি সহায়তাঃ- দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারকে বিশেষ সুবিধা এবং সহায়তা প্রদান করতে হবে। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসনসহ মৌলিক চাহিদাগুলির জন্য সরকারকে সহায়তা বাড়াতে হবে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাঃ- প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
  • সম্পদের সুষম বণ্টনঃ- সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে সমাজের সব শ্রেণি তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারে। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমাতে সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
অভাব একটি জটিল সামাজিক সমস্যা, যার সমাধান শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নীতি ও উদ্যোগের মাধ্যমে অভাব দূর করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ও সামাজিক সহায়তার সমন্বিত পদক্ষেপ।

অভাব থেকে উত্তরণের দোয়া

ইসলামে অভাব থেকে মুক্তির জন্য বেশ কিছু দোয়া ও আমল রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া উল্লেখ করা হলো। যেগুলো আমাদের জীবন চলার পথে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
অভাব থেকে উত্তরণের দোয়া
  • ইয়া মুগনিঃ- এই দোয়াটি দারিদ্র্যতা ও অভাব থেকে মুক্তির জন্য পড়া হয়। আল্লাহর নাম "ইয়া মুগনি" অর্থাৎ "হে অতি দানশীল" বলে প্রার্থনা করা হয়।
পড়ার নিয়মঃ- প্রতি দিন ১০০ বার "ইয়া মুগনি" পাঠ করা যেতে পারে, বিশেষ করে নামাজের পর।
  • সুরা আল-ওয়াকিয়া (সূরা ৫৬): হাদিসে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনো অভাবে পড়বে না।
পড়ার নিয়মঃ- প্রতিদিন মাগরিব বা এশার নামাজের পর সুরা আল-ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করতে পারেন।
  • আল্লাহুম্মা আকফিনি বিহালালিকা ‘আন হারামিকা ওয়াগ্নিনি বিফাদলিকা ‘আম্মান সিওয়াক
অর্থঃ- “হে আল্লাহ, তুমি হালাল রিজিক দিয়ে আমার প্রয়োজন মেটাও এবং হারাম থেকে বাঁচাও এবং তোমার দয়ায় আমাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে রক্ষা কর।” 

পড়ার নিয়মঃ- এই দোয়াটি প্রতি নামাজের পর এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে পাঠ করা যায়। এই দোয়াগুলো নিয়মিতভাবে পাঠ করার পাশাপাশি আল্লাহর ওপর আস্থাও রাখতে হবে।

অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায় ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়

এই কথাটি একটি বাংলা প্রবাদ যা বোঝাতে চায় যে, যখন জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলি যেমন অর্থ বা খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, তখন সম্পর্কের সৌন্দর্য এবং ভালোবাসা ম্লান হতে শুরু করে। 
অভাবের কষ্ট মানুষকে এতটাই ক্লান্ত করে যে, সেই সময় ভালোবাসার মাধুর্য হারিয়ে যায় বা মানুষ সম্পর্কের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, আর্থিক সমস্যা এবং কষ্টের মুহূর্তে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

অভাবে স্বভাব নষ্ট

"অভাবে স্বভাব নষ্ট" একটি জনপ্রিয় বাংলা প্রবাদ, যার অর্থ হলো যখন মানুষের জীবনে অভাব বা দারিদ্র্য এসে পড়ে, তখন তার স্বাভাবিক গুণাবলি বা চরিত্র পরিবর্তিত হয়ে যায়। 

অভাবের চাপের কারণে মানুষ প্রায়শই নৈতিকতা বা নীতিবোধ থেকে বিচ্যুত হয়। এবং কখনও কখনও এমন কাজ করতে পারে যা সাধারণ অবস্থায় তারা করত না। মূলত, দারিদ্র্য বা কষ্ট মানুষের আচার-আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা তাকে স্বভাবত বদলে দিতে পারে।

সর্বশেষ কথা

অভাব সম্পর্কে বলা হয় যে এটি মানুষের জীবনে নানা প্রভাব ফেলতে পারে। আর্থিক অভাব বা দারিদ্র্য কেবলমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক এবং সামাজিকভাবে ও মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সম্পর্কের গুণমান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

অভাব মানুষের স্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তিত করে, এবং অনেক সময় এটি নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে, অভাবের মধ্যেও মানুষের সৃজনশীলতা ও সাহসিকতার প্রদর্শন ঘটে, যা নতুন উপায়ে সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করতে পারে। 

প্রিয় পাঠক নিশ্চয়ই আপনার অবগত হয়েছেন। উপরের বিষয়গুলো পড়ে এই বিষয়গুলো ভালোভাবে উপলব্ধি করলে আশা করা যায়। অভাব থেকে নেশন হওয়া সম্ভব ইনশাল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন