কিডনি মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিস্তারিত জানতে পড়ুন

স্বাস্থ্য ও তথ্য বিষয়ক আলোচনাপ্রিয় পাঠক আজকে আমরা মানব দেহের অমূল্য সম্পদ কিডনি সম্পর্কে আলোচনা করব। কিডনি মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা শরীরের রক্ত বিশেষ পরিশোধন করে। 
কিডনি মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিস্তারিত জানুন
শুধু তাই নয়, বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ অপসারণের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখে সাহায্য করে। কিডনি জোড়া আকারে কোমরের নিচে পিঠের দুপাশে অবস্থিত। কিডনি প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে রক্ত পরিশোধন করে।
 
পানি ও প্রয়োজনীয় লবণ সামঞ্জস্য বজায় রাখে। এবং অতিরিক্ত পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। কিডনির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর সমস্যা হলে রক্তে বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে পারে। 

যা নানা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। আর তাই তিনি বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

পেজ সূচিপত্রঃ- কিডনি মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিস্তারিত পড়ুন।

কিডনি বিকল (Kidney Failure)

কিডনি বিকল (Kidney Failure) হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে কিডনি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। এবং শরীরের বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল সরিয়ে ফেলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এটি দুটি প্রকারে হতে পারে।
  • আকস্মিক কিডনি বিকলঃ- Acute Kidney Failure) এটি হঠাৎ করে ঘটে এবং এর কারণ হতে পারে গুরুতর আঘাত, সংক্রমণ, রক্তচাপের হঠাৎ পতন, অথবা কিডনির রক্ত প্রবাহের বাধা।
  • দীর্ঘস্থায়ী কিডনি বিকলঃ- Chronic Kidney Failure) এটি ধীরে ধীরে ঘটে এবং সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে কিডনি রোগের কারণে হয়। এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এবং দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগের কারণে হতে পারে।
লক্ষণসমূহ
  • ক্লান্তি বা দুর্বলতা
  • মূত্রত্যাগের পরিবর্তন
  • পা, গোড়ালি এবং চোখের ফোলাভাব
  • বমি বা মন্দ স্বাদ
  • শ্বাসকষ্ট
  • উচ্চ রক্তচাপ
কারণ
  • ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ
  • কিডনি সংক্রমণ বা প্রদাহ
  • পাথর ক্যান্সার প্রোস্টেট সমস্যা থেকে কিডনিতে বাধা।
  • কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
চিকিৎসা
কিডনি বিকলের চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণ এবং পরিস্থিতির উপর। এর মধ্যে রয়েছে।
  • ওষুধ
  • ডায়ালিসিসঃ- যেখানে একটি যন্ত্রের সাহায্যে শরীরের বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে নেওয়া হয়।
  • কিডনি প্রতিস্থাপন একটি সুস্থ কিডনি প্রতিস্থাপন করা
কিডনি বিকল প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং রক্তচাপ ও রক্তে চিনির নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রনিক কিডনি রোগ Chronic Kidney Disease CKD

ক্রনিক কিডনি রোগ (Chronic Kidney Disease বা CKD) হলো কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা। এই রোগে কিডনি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রক্ত পরিশোধন ও বর্জ্য পদার্থ নির্গমন করার ক্ষমতা হারাতে থাকে। CKD-এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে।
  1. ডায়াবেটিসঃ- ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন থাকলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
  2. উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করে এবং CKD-এর প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে।
  3. প্রস্রাবের সংক্রমণ ও কিডনির পাথরঃ দীর্ঘমেয়াদী প্রস্রাবের সংক্রমণ বা কিডনির পাথর কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  4. বংশগত কারণঃ- পরিবারের মধ্যে CKD-এর ইতিহাস থাকলে রোগের ঝুঁকি বেশি।
CKD-এর উপসর্গসমূহঃ-
1. দুর্বলতা এবং ক্লান্তি
2. প্রস্রাবে পরিবর্তন (রং, পরিমাণ, প্রয়াস)
3. পা, পা, মুখের ফোলা
4. বমি ভাব ও ক্ষুধামান্দ্য
5. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণহীন

CKD-এর চিকিৎসা

CKD-এর চিকিৎসা রোগের স্টেজ, এবং কারণের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত জীবনযাত্রা পরিবর্তন খাদ্যনিয়ন্ত্রণ ঔষধ সেবন, এবং প্রয়োজনীয় হলে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করানো হতে পারে।

ডায়ালাইসিস (Dialysis)

ডায়ালাইসিস (Dialysis) হলো এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে কিডনি বিকল বা অকার্যকর হলে শরীরের অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত পানি এবং বিষাক্ত পদার্থগুলো অপসারণ করা হয়। ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিডনির কাজ সম্পন্ন করা হয়। যা রোগীর রক্ত পরিশোধন করতে সহায়তা করে।

*ডায়ালাইসিসের দুইটি প্রধান ধরন রয়েছে*

  • হেমোডায়ালাইসিস (Hemodialysis) এই পদ্ধতিতে, একটি মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশোধন করা হয়। রক্ত ধমনী থেকে একটি টিউবের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস মেশিনে নিয়ে যাওয়া হয়। 
যেখানে ফিল্টারের সাহায্যে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি অপসারণ করা হয়। পরিশোধিত রক্ত পুনরায় শরীরে ফেরত দেওয়া হয়। সাধারণত এই প্রক্রিয়াটি সপ্তাহে তিনবার সম্পন্ন করতে হয়। এবং প্রতিবারের সেশন প্রায় ৩-৫ ঘণ্টা সময় নেয়।
  
  • পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসঃ- Peritoneal Dialysis এই পদ্ধতিতে পেটের গহ্বরের পেরিটোনিয়াম (একটি পাতলা আবরণ) ব্যবহার করে রক্ত পরিশোধন করা হয়। পেটের মধ্যে একটি ক্যাথেটারের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড ঢোকানো হয়। 
এবং পেরিটোনিয়ামের মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি শোষিত হয়ে ফ্লুইডের সাথে মিশে যায়। এরপর সেই ফ্লুইড অপসারণ করা হয়। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস রোগী নিজে ঘরে বসেও করতে পারে এবং এটি প্রতিদিন কয়েকবার করতে হয়।

ডায়ালাইসিসের কারণ
  • কিডনি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে গেলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি অপসারণের জন্য ডায়ালাইসিস করা হয়।
  • সাধারণত ক্রনিক কিডনি রোগ (Chronic Kidney Disease) বা আকস্মিক কিডনি বিকল হলে ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হতে পারে।
ডায়ালাইসিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া
  • ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
  • সংক্রমণ
  • পেট ব্যথা পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে
  • পেশীর ক্র্যাম্প
ডায়ালাইসিস কিডনির বিকল্প একটি প্রক্রিয়া হলেও এটি কিডনির কাজ পুরোপুরি পরিবর্তন করতে পারে না। তাই কিডনি প্রতিস্থাপনও একটি বিকল্প চিকিৎসা হতে পারে যদি উপযুক্ত দাতা পাওয়া যায়। এবং রোগী শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকে।

গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস 

গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (Glomerulonephritis) হলো কিডনির গ্লোমেরুলি নামক ছোট রক্তনালীর গুচ্ছের প্রদাহ। গ্লোমেরুলি কিডনির এমন অংশ যা রক্তের বর্জ্য পদার্থ, এবং অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করে। 
এই প্রদাহ হলে কিডনি সঠিকভাবে রক্ত পরিশোধন করতে পারে না। ফলে রক্ত এবং প্রোটিন প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যেতে পারে। এবং কিডনি ফাংশন নষ্ট হতে পারে।গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস দুই ধরনের হতে পারে, যেমনঃ-
  • আকস্মিক গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসঃ এই ধরনের গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস হঠাৎ করে ঘটে, এবং এর কারণে দ্রুত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যেমনঃ- স্ট্রেপটোকক্কাল গলা ব্যথা বা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হতে পারে। 
  • দীর্ঘস্থায়ী গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসঃ- এই ধরনের গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে, এবং দীর্ঘ সময় ধরে কিডনির কার্যক্ষমতা ধ্বংস করতে পারে। এটি স্বয়ংক্রিয় রোগ autoimmune disease বংশগত সমস্যা বা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের কারণে হতে পারে।
লক্ষণসমূহ
  • প্রস্রাবে রক্ত বা গাঢ় রঙের প্রস্রাব (Hematuria)
  • প্রস্রাবে প্রোটিন Proteinuria যা প্রস্রাব ফেনাযুক্ত হতে পারে।
  • শরীরের ফোলাভাব বিশেষ করে মুখমণ্ডল, হাত, পা ও পায়ের গোড়ালি
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • ক্লান্তি বা দুর্বলতা
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
কারণ
  • ব্যাকটেরিয়াল এবং ভাইরাস সংক্রমণ (যেমন স্ট্রেপটোকক্কাল গলা ব্যথা, হেপাটাইটিস)
  • স্বয়ংক্রিয় রোগ (যেমন লুপাস, গুডপাস্টিউর সিন্ড্রোম)
  • কিডনির প্রদাহের বিভিন্ন অসুখ
  • বংশগত কারণে কিডনি প্রদাহ
চিকিৎসা
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসের চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণ এবং রোগের তীব্রতার ওপর। এর মধ্যে রয়েছে।
  • সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক
  • প্রদাহ কমানোর জন্য স্টেরয়েড ওষুধ
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ
  • প্রোটিন কমানোর জন্য খাদ্য পরিবর্তন
  • কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন।
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসের জন্য দ্রুত চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কিডনির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে পারে, এবং কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

প্রোটিন ইউরিয়া (Proteinuria)

প্রোটিন ইউরিয়া (Proteinuria) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে প্রস্রাবে অস্বাভাবিক পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়। সাধারণ অবস্থায় কিডনি গ্লোমেরুলি রক্ত পরিশোধন করে, এবং প্রোটিনকে শরীরে ধরে রাখে, কিন্তু যখন গ্লোমেরুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন প্রোটিন প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। এটি কিডনির সমস্যার একটি লক্ষণ হতে পারে।

প্রোটিন ইউরিয়ার কারণ
  • কিডনির রোগ গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম ইত্যাদি কিডনির সমস্যায় প্রোটিন ইউরিয়া হতে পারে।
  • ডায়াবেটিসঃ- অনিয়ন্ত্রিত রক্তের শর্করা কিডনির গ্লোমেরুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্রোটিন প্রস্রাবে বেরিয়ে যেতে পারে।
  • উচ্চ রক্তচাপঃ- দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালীতে চাপ সৃষ্টি করে এবং প্রোটিন ইউরিয়ার কারণ হতে পারে।
  • প্রোস্টেট সমস্যাঃ- প্রোস্টেট গ্রন্থির বিভিন্ন সমস্যা বা সংক্রমণ প্রোটিন ইউরিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • স্বয়ংক্রিয় রোগ Autoimmune diseases) যেমন লুপাস, যেটি কিডনির গ্লোমেরুলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
  • সংক্রমণঃ- কিডনি বা মূত্রনালীর সংক্রমণও প্রোটিন ইউরিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
লক্ষণসমূহ
প্রোটিন ইউরিয়ার বিশেষ কোন দৃশ্যমান লক্ষণ নাও থাকতে পারে। কিন্তু উচ্চ পরিমাণ প্রোটিন থাকলে দেখা দিতে পারে।
  • ফেনাযুক্ত প্রস্রাব
  • হাত-পা, পায়ের গোড়ালি বা চোখের ফোলাভাব
  • ক্লান্তি বা দুর্বলতা
নির্ণয়ঃ- প্রোটিন ইউরিয়া নির্ণয়ের জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয়। ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাব সংগ্রহ করে প্রোটিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা যেতে পারে। মাইক্রোঅ্যালবুমিনুরিয়া পরীক্ষা সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করা হয়। যা ছোট পরিমাণে প্রোটিনের উপস্থিতি চিহ্নিত করে।

চিকিৎসা
  • প্রোটিন ইউরিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের উপর যেমনঃ- উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ।রক্তচাপ ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ বা জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা।
  • কিডনি রোগের চিকিৎসাঃ- প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড ওষুধ বা কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে।
  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ- কম প্রোটিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, লবণ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা।
প্রোটিন ইউরিয়া দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সমস্যার পূর্বলক্ষণ হতে পারে। তাই এটি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

কিডনি পাথর (Kidney Stone)

কিডনি পাথর (Kidney Stone) হলো কিডনিতে জমে থাকা কঠিন খনিজ ও লবণের মিশ্রণ যা পাথরের মতো আকার ধারণ করে। এগুলো কিডনিতে তৈরি হতে পারে এবং মূত্রনালীতে চলাচল করতে পারে। পাথরের আকার ছোট থেকে বড় পর্যন্ত হতে পারে, এবং কখনও কখনও মূত্রনালীর মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে।

কিডনি পাথরের কারণঃ-
  • পানি কম পান করাঃ শরীর পর্যাপ্ত পানি না পেলে মূত্র ঘন হয়ে যায়। যা খনিজ পদার্থ জমা হতে সহায়তা করে।
  • খাদ্যাভ্যাসঃ- অতিরিক্ত লবণ, প্রোটিন, এবং অক্সালেট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ কিডনি পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। 
  • পরিবারিক ইতিহাসঃ- বংশগত কারণে কারও কিডনি পাথর হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
  • অতিরিক্ত ওজনঃ- শরীরের অতিরিক্ত ওজন কিডনিতে পাথর গঠনের সম্ভাবনা বাড়ায়।
  • কিছু মেডিক্যাল অবস্থাঃ- যেমন গাউট হাইপারপ্যারাথাইরয়ডিজম এবং কিছু প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ।
  • ওষুধঃ- কিছু ওষুধ কিডনিতে পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
লক্ষণসমূহ
  1. পিঠ, পাঁজরের নিচে অথবা তলপেটে তীব্র ব্যথা
  2. প্রস্রাবে রক্ত (Hematuria)
  3. মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা
  4. ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন বোধ
  5. বমি বা বমি ভাব
  6. জ্বর এবং শীত
প্রকারভেদ
কিডনি পাথর প্রধানত চার ধরনের হতে পারে। প্রকার গুলো নিম্নে বোল্ড আকারে তুলে ধরা হলোঃ-
  • ক্যালসিয়াম স্টোনঃ- সবচেয়ে সাধারণ পাথর, যা ক্যালসিয়াম অক্সালেট বা ক্যালসিয়াম ফসফেট থেকে গঠিত হয়।
  • স্ট্রুভাইট স্টোনঃ সংক্রমণের কারণে হওয়া পাথর, যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রায়শই বড় আকারের হয়।
  • ইউরিক এসিড স্টোনঃ- যাদের ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি (যেমন গাউট রোগীদের), তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের পাথর হতে পারে।
  • সিস্টিন স্টোনঃ- বংশগত একটি অবস্থা যেখানে কিডনি অতিরিক্ত সিস্টিন (একটি অ্যামিনো এসিড) নির্গত করে, যার ফলে এই ধরনের পাথর তৈরি হয়।
চিকিৎসা
  • ওষুধঃ- ছোট পাথর প্রাকৃতিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যথানাশক এবং পাথর গলানোর ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
  • শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি (SWL) শক ওয়েভ ব্যবহার করে পাথর ভেঙে ছোট টুকরা করা হয়, যাতে এগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে।
  • ইউরেটেরোস্কপিঃ- মূত্রনালীর মাধ্যমে একটি ছোট নল ঢুকিয়ে পাথর খুঁজে বের করে সেটি ভাঙা বা সরিয়ে ফেলা হয়।
  • পারকুটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটমি PCNL:- কিডনিতে বড় পাথর থাকলে ছোট কাটের মাধ্যমে সরাসরি কিডনি থেকে পাথর সরানো হয়।
প্রতিরোধ
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা, যাতে প্রস্রাব পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ থাকে।
  • খাদ্যে লবণ এবং প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে রাখা।
  • অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার (যেমন পালংশাক, বাদাম) নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা, তবে অতিরিক্ত নয়।
কিডনি পাথর ছোট থাকলে প্রাকৃতিকভাবে বেরিয়ে যেতে পারে, কিন্তু বড় পাথরের ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম (Nephrotic Syndrome)

নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম (Nephrotic Syndrome) হলো একটি কিডনি সম্পর্কিত অবস্থা, যেখানে কিডনির গ্লোমেরুলি (যা রক্ত ফিল্টার করে) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে প্রস্রাবে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন নিঃসরিত হয়। এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যেমন শরীরে ফোলাভাব, উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস।

নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমের কারণ
  • মিনিমাল চেঞ্জ ডিজিজ Minimal Change ডিসেয়াসেঃ- শিশুদের মধ্যে এটি নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমের একটি প্রধান কারণ। এর প্রকৃত কারণ অজানা, তবে এটি গ্লোমেরুলির অণুবীক্ষণিক পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।
  • ফোকাল সেগমেন্টাল গ্লোমেরুলোস্ক্লেরোসিস (FSGS) গ্লোমেরুলির ক্ষতি বা দাগ সৃষ্টি হওয়ার ফলে নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম হতে পারে। এর কারণ হতে পারে জেনেটিক প্রভাব, সংক্রমণ, বা অন্যান্য অসুস্থতা।
  • মেমব্রেনাস নেফ্রোপ্যাথি Membranous ণেফ্রপাথ্যঃ- গ্লোমেরুলির মেমব্রেনে পুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে প্রোটিন ইউরিয়া এবং নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম হতে পারে।
  • ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথিঃ ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির গ্লোমেরুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম হতে পারে।
  • সিস্টেমিক রোগঃ- যেমন লুপাস অ্যামাইলয়েডোসিস।
লক্ষণসমূহ
  1. প্রস্রাবে প্রোটিন (প্রতেইনুরিয়া) অস্বাভাবিক পরিমাণ প্রোটিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।
  2. ফোলাভাব (Edema) বিশেষত চোখ, পা, পায়ের গোড়ালি এবং তলপেটে ফোলাভাব দেখা যায়।
  3. হাইপোআলবুমিনেমিয়াঃ- রক্তে অ্যালবুমিনের পরিমাণ কমে যায়, যা শরীরের ফোলাভাবের জন্য দায়ী।
  4. হাইপারলিপিডেমিয়াঃ- রক্তে চর্বি বা লিপিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  5. প্রস্রাবে ফেনাঃ- প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন নিঃসরিত হলে প্রস্রাব ফেনাযুক্ত হতে পারে।
নির্ণয়
নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো করা হয়।
প্রস্রাব পরীক্ষাঃ- প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি যাচাই করা হয়।
রক্ত পরীক্ষাঃ- রক্তে অ্যালবুমিন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নির্ধারণ।
বায়োপসিঃ কিডনির গ্লোমেরুলিতে কি পরিবর্তন ঘটেছে তা জানতে কিডনি বায়োপসি করা হতে পারে।

চিকিৎসা
  • স্টেরয়েড ওষুধ প্রদাহ কমানোর জন্য কোর্টিকোস্টেরয়েড দেওয়া হয়, যা কিডনির গ্লোমেরুলির ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।
  • ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধঃ- গ্লোমেরুলির প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • ডাইউরেটিকঃ- ফোলাভাব কমানোর জন্য ডাইউরেটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রক্তচাপ কমাতে ACE ইনহিবিটর বা ARB ওষুধ দেওয়া হতে পারে, যা প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণও কমাতে সাহায্য করে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রক্তে চর্বির মাত্রা কমানোর জন্য স্ট্যাটিন দেওয়া হতে পারে।
  • খাদ্যাভ্যাস লবণ এবং চর্বি কমানো, এবং পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমের কারণে কিডনির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে, তাই এর দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (Acute Kidney Injury - AKI)

অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (Acute Kidney Injury - AKI) হলো কিডনির হঠাৎ করে কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার একটি অবস্থা, যা শরীরের বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল সঠিকভাবে ফিল্টার করতে ব্যর্থ হয়। এটি অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে এবং এটি একটি জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।

অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরির কারণ

কিডনিতে রক্ত প্রবাহের হ্রাস (Pre-renal Causes) কিডনিতে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না হলে কিডনি কাজ করা বন্ধ করতে পারে। এর কারণ হতে পারে রক্তচাপের হঠাৎ পতন, ডিহাইড্রেশন, বা হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে কম রক্ত প্রবাহ।

কিডনির অভ্যন্তরীণ ক্ষতি Intrinsic Causes কিডনির গ্লোমেরুলি, টিউবিউল বা টিস্যু সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে। এর মধ্যে হতে পারে।
  • গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস
  • কিডনিতে প্রদাহ বা সংক্রমণ
বিষাক্ত পদার্থ বা কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়া (যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, ননস্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস - NSAIDs)

মূত্রনালীতে বাধা Post-renal Causes মূত্রনালীর বাধা বা ব্লকেজের কারণে মূত্র সঠিকভাবে কিডনি থেকে বের হতে না পারলে কিডনিতে চাপ সৃষ্টি হয়। এর কারণ হতে পারে।
  • পাথর
  • প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি
  • টিউমার
লক্ষণসমূহ
  • প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস বা প্রস্রাব না হওয়া
  • পিঠ, পাঁজরের নিচে বা তলপেটে ব্যথা
  • ফোলাভাব, বিশেষ করে পা, পায়ের গোড়ালি, ও চোখের আশেপাশে
  • ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
  • বমি বা বমি ভাব
  • শ্বাসকষ্ট
  • রক্তচাপ বৃদ্ধি
নির্ণয়
  • প্রস্রাব পরীক্ষাঃ- কিডনির কার্যক্ষমতা মূল্যায়নের জন্য।
  • রক্ত পরীক্ষাঃ- রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়া লেভেল পরিমাপ করে কিডনির কার্যক্ষমতা যাচাই করা।
  • ইমেজিং টেস্টঃ- আল্ট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যান ব্যবহার করে কিডনির গঠন এবং মূত্রনালীর বাধা চিহ্নিত করা।
  • বায়োপসিঃ- কখনও কখনও কিডনির টিস্যু পরীক্ষার জন্য বায়োপসি করা হয়।
চিকিৎসা
  • কারণ নির্ধারণ এবং সংশোধনঃ- যেই কারণেই হোক, সেটি যত দ্রুত সম্ভব নির্ধারণ করে চিকিৎসা করা হয়, যেমন ডিহাইড্রেশনের জন্য তরল দেওয়া বা সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া।
  • ডায়ালিসিসঃ- কিডনির কাজ পুরোপুরি বন্ধ হলে ডায়ালিসিস ব্যবহার করা যেতে পারে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত পানি অপসারণের জন্য।
  • রক্তচাপ এবং ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টঃ- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং শরীরের তরল বজায় রাখার জন্য ওষুধ বা অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রতিরোধ
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং শরীরের পানির অভাব না হওয়া।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ, বিশেষ করে NSAIDs এবং কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা।
  • ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • সংক্রমণ এড়ানোর জন্য ভালো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি দ্রুত নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা না হলে কিডনি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ কথা

কিডনি সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন কিডনি পাথর, গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম, অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (AKI), এবং প্রোটিন ইউরিয়া ইত্যাদি কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। এবং আমাদের স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। 

কিডনি আমাদের শরীরের বিষাক্ত পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এবং বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণ করে। তাই কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। 

কিডনি সমস্যার লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে। প্রস্রাবে পরিবর্তন, শরীরে ফোলাভাব, পিঠে বা তলপেটে ব্যথা, ক্লান্তি এবং দুর্বলতা। এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিডনি সমস্যাগুলোর কারণ হতে পারে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি না পান করা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, সংক্রমণ, এবং কিছু ওষুধের ব্যবহার। কিডনি সমস্যাগুলোর জন্য সঠিক সময়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি প্রতিরোধ করা যায়।

কিডনি সুস্থ রাখতে
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • লবণ ও প্রোটিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন।
  • ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ ব্যবহার করবেন না।
কিডনির যত্ন নিলে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে, চিকিৎসা করলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকি কমে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় থাকে। আশা করি উপরের বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন