ক্যাথেটার এর কাজ কি-ক্যাথেটার ব্যবহারের নিয়ম বিস্তারিত জানুন
চিকিৎসা বিষয়ক সরঞ্জাম এর পরিচিতি প্রিয়পাঠক আজকে আমরা জানবো ক্যাথেটার সম্পর্কে ক্যাথেটার একটি সাধারণ কিন্তু
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম, যা বিভিন্ন চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের
ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত একটি নল আকারে থাকে, যা নমনীয় বা আধা-নমনীয়
হতে পারে।
এবং শরীরের ভিতরে তরল প্রবাহ পরিচালনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। আধুনিক চিকিৎসা
বিজ্ঞানে ক্যাথেটার ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম, বিশেষ করে মূত্রনালীর সমস্যার
সমাধান, রক্তনালীর মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহ এবং বিভিন্ন ধরনের শল্যচিকিৎসা ও
ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য। ক্যাথেটার ব্যবহারের পেছনের কারণগুলো ভিন্ন হতে
পারে।
যেমন অপারেশনের পরে মূত্রনালী খালি রাখা, রক্তনালীর মাধ্যমে ওষুধ প্রবেশ করানো,
অথবা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসা করা। সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে, এটি
রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সাধারণত একটি নল
(টিউব) আকারে থাকে এবং নমনীয় বা আধা-নমনীয় হতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্যাথেটার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। যেমন মূত্র
নির্গমন, রক্তনালীর মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহ, অথবা ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করা। চলুন,
ক্যাথেটারের কাজ এবং এর বিভিন্ন ব্যবহারের বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেই।
পেজ সূচিপত্রঃ- ক্যাথেটার এর কাজ কি-ক্যাথেটার ব্যবহারের নিয়ম বিস্তারিত আলোচনা
ক্যাথেটার এর কাজ কি
ক্যাথেটারের কাজ হলো শরীরের ভিতরে তরল প্রবেশ করানো বা নির্গমন করা। এটি মূলত
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে যেমনঃ-
- মূত্র নির্গমনঃ- ক্যাথেটার প্রায়শই মূত্রথলির মাধ্যমে প্রস্রাব বের করার জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যেসব রোগী মূত্রত্যাগ করতে অক্ষম।
- ওষুধ বা তরল সরবরাহঃ- এটি রক্তনালীর মাধ্যমে শরীরে ওষুধ, স্যালাইন, বা অন্যান্য তরল প্রবেশ করানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, যা বিশেষ করে শল্যচিকিৎসা বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে প্রয়োজনীয়।
- ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাঃ- হৃদপিণ্ড বা রক্তনালী পরীক্ষা করার জন্য ক্যাথেটার ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে ব্লকেজ বা অন্যান্য সমস্যা নির্ণয় করা যায়।
- শল্যচিকিৎসাঃ- অপারেশনের সময় বা পরে শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বের করার জন্য এটি ব্যবহৃত হতে পারে।
ক্যাথেটার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন ইউরিনারি ক্যাথেটার, সেন্ট্রাল ভেনাস
ক্যাথেটার, বা পেরিফেরাল ভেনাস ক্যাথেটার, যা বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
ক্যাথেটার এর ব্যবহার
ক্যাথেটার বিভিন্ন চিকিৎসা ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত একটি সরঞ্জাম। এর বিভিন্ন
ধরনের ব্যবহার রয়েছে। যা নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন হতে পারে।
ক্যাথেটারের প্রধান ব্যবহারগুলো নিম্নরূপঃ-
- মূত্র নির্গমনঃ- ক্যাথেটারের সবচেয়ে সাধারণ ব্যবহার হলো মূত্রনালী বা মূত্রথলির মাধ্যমে প্রস্রাব বের করা। বিশেষ করে যেসব রোগী মূত্রত্যাগ করতে অক্ষম, তাদের জন্য ক্যাথেটার ব্যবহৃত হয়। এটি প্রায়শই শল্যচিকিৎসা বা অপারেশনের পর, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে, অথবা মূত্রনালীর অবরোধের সময় ব্যবহৃত হয়।
- ওষুধ বা তরল সরবরাহঃ- ক্যাথেটারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো রক্তনালীর মাধ্যমে ওষুধ, স্যালাইন, পুষ্টি, বা অন্যান্য তরল প্রবেশ করানো। এটি বিশেষ করে শল্যচিকিৎসার সময়, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে, বা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাঃ- হৃদপিণ্ড, রক্তনালী, বা অন্যান্য অঙ্গের অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য ক্যাথেটার ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, হার্টের ব্লকেজ বা রক্তনালীর সংকীর্ণতা নির্ণয়ের জন্য ক্যাথেটার ব্যবহার করে এঞ্জিওগ্রাম করা হয়।
- শল্যচিকিৎসা বা সার্জারিঃ- শল্যচিকিৎসার সময় বা এর পরে শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল, রক্ত, বা পুঁজ বের করার জন্য ক্যাথেটার ব্যবহার করা হয়। এটি বিশেষত অপারেশনের পর মূত্রথলি খালি রাখতে বা ক্ষতস্থানে জমে থাকা তরল বের করতে সাহায্য করে।
- দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতাঃ- যেসব রোগীরা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন এবং মূত্রত্যাগ করতে অক্ষম, তাদের জন্য ক্যাথেটার দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা হয়। এটি কিডনি রোগ, প্যারালাইসিস, অথবা প্রোস্টেটের সমস্যা থাকলে কার্যকর হতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিক ডিকমপ্রেশনঃ- ক্যাথেটারের মাধ্যমে পেটের ভেতরে জমে থাকা বাতাস বা তরল বের করা যেতে পারে। এটি পাকস্থলী বা অন্ত্রের কোন অবরোধ থাকলে, বা শল্যচিকিৎসার পরে পেট থেকে অতিরিক্ত বাতাস বের করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের মাধ্যমে, ক্যাথেটার চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি
অপরিহার্য সরঞ্জাম হিসেবে পরিচিত। আমরা আরো জেনে নেই, ক্যাথেটার আরো কিছু
ব্যবহারের নমুনা আর সেই নমুনাগুলো নিম্নে বোল্ড আকারে উপস্থাপন করা হলো।
- চিকিৎসা সরঞ্জাম (Medical Device) ক্যাথেটার হলো একটি চিকিৎসা সরঞ্জাম যা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার সময় ব্যবহৃত হয়। এটি শরীরের ভিতরে তরল প্রবেশ করাতে বা নির্গত করতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এটি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে, যেমন শল্যচিকিৎসা বা গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার সময়।
- তরল প্রবেশ বা নির্গমন (Fluid Insertion or Drainage) ক্যাথেটার ব্যবহারের অন্যতম প্রধান কাজ হলো শরীরের ভিতরে তরল প্রবেশ করানো বা বের করা। এটি চিকিৎসকেরা বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করে, যেমন শরীর থেকে মূত্র বের করা বা রক্তনালীর মাধ্যমে ওষুধ প্রবেশ করানো।
- নল বা টিউব (Tube) ক্যাথেটার একটি নল আকারে থাকে যা সাধারণত প্লাস্টিক, সিলিকন, বা রাবার দিয়ে তৈরি হয়। এর আকার এবং উপাদান নির্ভর করে কী ধরনের তরল প্রবাহের প্রয়োজন এবং কোথায় এটি ব্যবহার করা হবে।
- মূত্র নির্গমন (Urine Drainage) যেসব রোগীরা মূত্রত্যাগ করতে অক্ষম, তাদের ক্ষেত্রে মূত্রথলির মাধ্যমে ক্যাথেটার ব্যবহার করে মূত্র নির্গমন করা হয়। এটি সাধারণত শল্যচিকিৎসার পরে, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য বা মূত্রনালীর অবরোধের সময় ব্যবহার করা হয়।
- রক্তনালী (Blood Vessel) ক্যাথেটার রক্তনালীর মধ্য দিয়ে শরীরের ভিতরে ওষুধ বা অন্যান্য তরল প্রবেশ করানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হৃদরোগের চিকিৎসা, শল্যচিকিৎসার সময়, বা বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
- ওষুধ সরবরাহ (Medication Delivery) ক্যাথেটার ব্যবহার করে সরাসরি রক্তনালীর মধ্যে ওষুধ সরবরাহ করা যায়। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী রোগীদের জন্য যারা নিয়মিত ওষুধ প্রয়োজন তাদের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
- ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা (Diagnostic Testing) ক্যাথেটার ব্যবহারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিভিন্ন ধরনের ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করা। যেমন, হার্টের ব্লকেজ বা রক্তনালীর অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য ক্যাথেটার ব্যবহার করা হয়।
- মূত্রথলি (Bladder) ক্যাথেটার প্রায়শই মূত্রথলিতে ব্যবহার করা হয় মূত্র নির্গত করার জন্য, বিশেষ করে যেসব রোগী মূত্রত্যাগ করতে অক্ষম।
- শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি (Surgery) শল্যচিকিৎসার সময় বা এর পরে ক্যাথেটার ব্যবহার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন অপারেশনের পর মূত্রথলি খালি রাখতে।
- দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতা (Long-term Physical Illness) যেসব রোগীরা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এবং মূত্রত্যাগ করতে অক্ষম, তাদের জন্য ক্যাথেটার একটি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হয়ে থাকে। ক্যাথেটার বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা এবং ডায়াগনস্টিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অপরিহার্য একটি সরঞ্জাম। এর মাধ্যমে তরল প্রবেশ করানো বা নির্গত করা, ওষুধ সরবরাহ, এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করা সম্ভব হয়।
বিভিন্ন প্রয়োজনে ক্যাথেটার ব্যবহারের কৌশল এবং প্রক্রিয়া নির্ভর করে রোগীর
শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের উপর। এভাবে ক্যাথেটার চিকিৎসা ক্ষেত্রে
একটি অপরিহার্য উপকরণ যা বিভিন্ন রোগের কার্যকর চিকিৎসা প্রদান করে।
ক্যাথেটার কতদিন রাখা যায়
ক্যাথেটার কতদিন রাখা যাবে, তা ক্যাথেটারের ধরন। এবং রোগীর স্বাস্থ্য অবস্থার
উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ক্যাথেটার প্রধানত তিন প্রকারের হতে পারে।
- ইন্ডওয়েলিং (ফোলি) ক্যাথেটারঃ- এই ক্যাথেটার সাধারণত মূত্রথলিতে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি প্রায় ২ সপ্তাহ থেকে ১ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে, সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে বা ক্যাথেটার থেকে সমস্যা দেখা দিলে তা আরও আগে পরিবর্তন করতে হতে পারে।
- আউটডোয়ার ক্যাথেটার (স্ট্রেইট ক্যাথেটার) এটি অস্থায়ী ক্যাথেটার, যা একবার ব্যবহার করার পরই সরিয়ে ফেলা হয়। এটি মূত্রত্যাগের সময় ব্যবহৃত হয় এবং মূত্রত্যাগের পরই এটি সরিয়ে ফেলা হয়।
- সুপ্রাপিউবিক ক্যাথেটারঃ- এটি একটি সার্জিকাল পদ্ধতিতে পেটের নিচে ছিদ্র করে মূত্রথলিতে স্থাপন করা হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য উপযোগী এবং প্রায় ১ মাস বা তার বেশি সময় পর্যন্ত রাখা যেতে পারে।
ক্যাথেটারের সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রমণ এবং অন্যান্য জটিলতা কমাতে
সাহায্য করে। ডাক্তার বা নার্সের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যাথেটার পরিবর্তন করা
উচিত।
পুরুষের ক্যাথেটার লাগানোর নিয়ম
পুরুষের ক্যাথেটার লাগানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করা হয়, যা
সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ধাপগুলো তুলে ধরা হলো।
প্রস্তুতি
- হাত ধোয়াঃ- প্রথমে ভালোভাবে হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
- সরঞ্জাম প্রস্তুতঃ- জীবাণুমুক্ত ক্যাথেটার, গ্লাভস, জীবাণুনাশক, জলাক্তকরণ জেল (lubricating gel) জীবাণুমুক্ত কাপড়, এবং মূত্র সংগ্রহের ব্যাগ প্রস্তুত রাখতে হবে।
- রোগীকে সঠিক অবস্থানে রাখাঃ- রোগীকে চিত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে এবং পায়ের মাঝখানে পর্যাপ্ত ফাঁকা রাখতে হবে।
জীবাণুমুক্তকরণ
- গ্লাভস পরাঃ- জীবাণুমুক্ত গ্লাভস পরে নিতে হবে।
- জীবাণুমুক্তকরণঃ- পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (glans) এবং চারপাশের এলাকাটি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ক্যাথেটার প্রবেশ করানো
- জলাক্তকরণঃ- ক্যাথেটারের অগ্রভাগে যথেষ্ট পরিমাণে জলাক্তকরণ জেল লাগাতে হবে, যাতে এটি সহজে প্রবেশ করতে পারে।
- ক্যাথেটার ঢোকানোঃ- ধীরে ধীরে এবং সাবধানে ক্যাথেটারটি মূত্রনালীর (উরেথ্রা) মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে। মূত্র বের হতে শুরু করলে বুঝতে হবে যে ক্যাথেটার মূত্রথলিতে পৌঁছেছে।
- বেলুন ফোলানোঃ- ক্যাথেটার যদি ফোলি ধরনের হয়, তবে এটি সঠিকভাবে স্থাপিত হলে ক্যাথেটারের বেলুনটিকে জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে ফোলানো হবে যাতে এটি স্থানে থাকে।
মূত্র সংগ্রহের ব্যাগ সংযুক্ত করা
- ক্যাথেটারের শেষে মূত্র সংগ্রহের ব্যাগ সংযুক্ত করতে হবে, যাতে মূত্র সহজেই সংগ্রহ করা যায়।
রোগীর আরাম নিশ্চিত করা
- ক্যাথেটার স্থাপনের পর রোগীকে আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হবে এবং ক্যাথেটার যেন কোনোভাবে বাঁক না হয়ে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
সঠিক পদ্ধতিতে ক্যাথেটার স্থাপন করলে সংক্রমণ ও অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি কমানো
যায়। যদি কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে
হবে।
মেয়েদের ক্যাথেটার লাগানোর নিয়ম
মেয়েদের ক্যাথেটার লাগানোর জন্য বিশেষ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। যাতে এটি
সঠিকভাবে স্থাপিত হয় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়। নিচে ধাপগুলো
বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলোঃ-
প্রস্তুতি
- হাত ধোয়াঃ- প্রথমে ভালোভাবে হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
- সরঞ্জাম প্রস্তুতঃ- জীবাণুমুক্ত ক্যাথেটার, গ্লাভস, জীবাণুনাশক, জলাক্তকরণ জেল (lubricating gel) জীবাণুমুক্ত কাপড়, এবং মূত্র সংগ্রহের ব্যাগ প্রস্তুত রাখতে হবে।
- রোগীকে সঠিক অবস্থানে রাখাঃ- রোগীকে চিত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে এবং হাঁটু সামান্য ফাঁক করে রাখতে হবে।
জীবাণুমুক্তকরণ
- গ্লাভস পরাঃ- জীবাণুমুক্ত গ্লাভস পরে নিতে হবে।
- জীবাণুমুক্তকরণঃ-মহিলাদের মূত্রনালী ও যোনির আশেপাশের এলাকা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। সাধারণত যোনির ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়।
ক্যাথেটার প্রবেশ করানো
- জলাক্তকরণঃ- ক্যাথেটারের অগ্রভাগে যথেষ্ট পরিমাণে জলাক্তকরণ জেল লাগাতে হবে, যাতে এটি সহজে প্রবেশ করতে পারে।
- ক্যাথেটার ঢোকানোঃ- ধীরে ধীরে এবং সাবধানে ক্যাথেটারটি মূত্রনালীর মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে। মূত্র বের হতে শুরু করলে বুঝতে হবে যে ক্যাথেটার মূত্রথলিতে পৌঁছেছে।
- বেলুন ফোলানোঃ যদি এটি ফোলি ক্যাথেটার হয়। তাহলে এটি সঠিকভাবে স্থাপিত হলে ক্যাথেটারের বেলুনটিকে জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে ফোলানো হবে, যাতে এটি স্থানে থাকে।
মূত্র সংগ্রহের ব্যাগ সংযুক্ত করা
- ক্যাথেটারের শেষে মূত্র সংগ্রহের ব্যাগ সংযুক্ত করতে হবে, যাতে মূত্র সহজেই সংগ্রহ করা যায়।
রোগীর আরাম নিশ্চিত করা
- ক্যাথেটার স্থাপনের পর রোগীকে আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হবে এবং ক্যাথেটার যেন কোনোভাবে বাঁক বা চাপে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
ক্যাথেটার লাগানোর সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে সংক্রমণ ও অন্যান্য
জটিলতার ঝুঁকি কমানো যায়। যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে।
ক্যাথেটার খোলার পদ্ধতি
ক্যাথেটার খোলার পদ্ধতি সংক্রমণ এড়ানোর জন্য ধীরে এবং সঠিকভাবে করতে
হয়। এখানে ধাপগুলো ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলোঃ-
প্রস্তুতি
- হাত ধোয়াঃ- প্রথমে হাত ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
- গ্লাভস পরাঃ- জীবাণুমুক্ত গ্লাভস পরতে হবে, যাতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
ক্যাথেটারের বেলুন নিষ্কাশনঃ- যদি এটি একটি ফোলি ক্যাথেটার
হয়। তবে বেলুনটিকে খোলার জন্য নির্দিষ্ট নলটি খুঁজে বের করতে হবে।
- সিরিঞ্জ ব্যবহারঃ- একটি জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জ বেলুনের ইনফ্লেশন পোর্টের সাথে সংযুক্ত করে বেলুনের ভেতরের তরল নিষ্কাশন করতে হবে। সিরিঞ্জ টানলে বেলুনের ভেতরের পানি বাইরে আসবে এবং বেলুন নিষ্কাশিত হবে।
ক্যাথেটার টেনে বের করা
- বেলুন সম্পূর্ণ নিষ্কাশন হলে, ধীরে ধীরে এবং সাবধানে ক্যাথেটারটি মূত্রনালী থেকে টেনে বের করতে হবে।
- ক্যাথেটার বের করার সময় যদি কোনো বাধা বা অস্বস্তি অনুভব হয়, তাহলে অবিলম্বে থামতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ক্যাথেটার এবং সরঞ্জাম ফেলে দেওয়া।
ব্যবহৃত ক্যাথেটার এবং অন্যান্য সরঞ্জামগুলি সঠিকভাবে ডিসপোজেবল ব্যাগে
ফেলে দিতে হবে, যাতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি না থাকে।
হাত ধোয়া
শেষ পর্যন্ত, গ্লাভস খুলে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
সঠিক পদ্ধতিতে ক্যাথেটার খোলা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায় এবং এটি
রোগীর আরাম নিশ্চিত করে। যেকোনো সমস্যা বা জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে।
ক্যাথেটার করতে কি কি লাগে
ক্যাথেটার করতে বেশ কয়েকটি সরঞ্জাম এবং উপকরণ প্রয়োজন, যা সঠিকভাবে
প্রস্তুত করা জরুরি। নিচে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর তালিকা দেওয়া হলোঃ-
- ক্যাথেটারঃ- ক্যাথেটারের ধরন রোগীর প্রয়োজন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন করা হয়। সাধারণত ফোলি ক্যাথেটার (যা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য উপযোগী) বা স্ট্রেইট ক্যাথেটার (অস্থায়ী ব্যবহারের জন্য) ব্যবহার করা হয়।
- জীবাণুমুক্ত গ্লাভসঃ- সংক্রমণ এড়ানোর জন্য জীবাণুমুক্ত গ্লাভস পরা জরুরি।
জীবাণুনাশক (অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন) ক্যাথেটার স্থাপন করার
আগে মূত্রনালী এবং আশপাশের এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
জীবাণুমুক্ত জলাক্তকরণ জেল (Lubricating gel) ক্যাথেটারের
অগ্রভাগে লাগানো হয়। যাতে এটি সহজে এবং আরামদায়কভাবে মূত্রনালীতে
প্রবেশ করতে পারে।
সিরিঞ্জ
- ফোলি ক্যাথেটারের ক্ষেত্রে, বেলুন ফোলানোর জন্য জীবাণুমুক্ত পানি সিরিঞ্জের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়।
মূত্র সংগ্রহের ব্যাগঃ- মূত্র ক্যাথেটারের মাধ্যমে বেরিয়ে
মূত্র সংগ্রহের ব্যাগে জমা হয়।
জীবাণুমুক্ত কাপড় বা ড্রেপঃ ক্যাথেটার লাগানোর সময়
আশেপাশের এলাকাকে ঢেকে রাখতে ব্যবহৃত হয়। যাতে এটি জীবাণুমুক্ত থাকে।
ক্ল্যাম্প (যদি প্রয়োজন হয়)-মাঝে মাঝে ক্যাথেটার বন্ধ করতে বা
নিয়ন্ত্রণ করতে ক্ল্যাম্প ব্যবহার করা হতে পারে।
এই সরঞ্জামগুলি সঠিকভাবে প্রস্তুত থাকলে ক্যাথেটার স্থাপনের প্রক্রিয়া
সহজ এবং নিরাপদ হয়। সংক্রমণ এবং অন্যান্য জটিলতা এড়াতে সবসময়
জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত।
ক্যাথেটার সাইজ
ক্যাথেটারের সাইজ সাধারণত **ফ্রেঞ্চ (Fr)** মাপে নির্ধারণ করা
হয়, যা মূত্রনালীর (উরেথ্রা) আকার এবং ক্যাথেটারের ধরণ অনুসারে
পরিবর্তিত হতে পারে। ফ্রেঞ্চ মাপের একক হচ্ছে ১ ফ্রেঞ্চ =
০.33 মিলিমিটার (mm) ব্যাস।
ক্যাথেটারের সাধারণ সাইজঃ
ফোলি ক্যাথেটার
- সাধারণত 12 Fr থেকে 24 Fr পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়।
- নারীদের জন্য 12 Fr থেকে 16 Fr আদর্শ হয়, এবং পুরুষদের জন্য 16 Fr থেকে 20 Fr।
স্ট্রেইট ক্যাথেটার
- এটি প্রায় 8 Fr থেকে 16 Fr পর্যন্ত হতে পারে, রোগীর অবস্থা এবং প্রয়োজনে।
বিশেষ ক্যাথেটার
- কিছু রোগীর বিশেষ অবস্থার জন্য 20 Fr থেকে 30 Fr সাইজের ক্যাথেটারও ব্যবহৃত হতে পারে।
সাইজের নির্বাচনঃ-সাইজ নির্বাচনের সময় রোগীর বয়স, লিঙ্গ,
স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং মূত্রনালীর অবস্থার কথা মাথায় রাখা উচিত।
সঠিক সাইজ নির্বাচনের মাধ্যমে যন্ত্রণার মাত্রা কমানো এবং
ক্যাথেটারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে ডাক্তার বা
স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী ক্যাথেটারের সাইজ নির্বাচন করা
উচিত।
সর্বশেষ কথা
প্রিয় পাঠক উপরের আর্টিকেল পড়ে নিশ্চয় অবগতিত হয়েছে যে, ক্যাথেটার
সম্পর্কিত প্রক্রিয়া যেমন লাগানো, খোলা, এবং রক্ষণাবেক্ষণের সময়
সংক্রমণ এবং অন্যান্য জটিলতা এড়ানোর জন্য জীবাণুমুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ
করা জরুরি। সঠিক সরঞ্জাম এবং পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীর আরাম
নিশ্চিত করা এবং ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
কোনো সমস্যা দেখা দিলে বা ক্যাথেটার ব্যবহারের সময় অসুবিধা হলে
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং উপযুক্ত যত্ন
নেওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ এবং অন্যান্য জটিলতা এড়ানো যায়। যত্নবান
হওয়া এবং পেশাদারী পদ্ধতি মেনে চলাই ভালো স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার মূল
চাবিকাঠি।