চতুর্থ খলিফা আলী (রাঃ) এর শেখানো ঋণ মুক্তির দোয়া বিস্তারিত জানুন
ইসলামিক আলোচনা সমূহএকবার এক লোক ঋণ পরিশোধের জন্য ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী রাঃ এর কাছে কিছু
সাহায্য চাইলেন।
আলী (রাঃ) তাঁকে বললেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে কয়েকটি শব্দ শিখিয়ে দিয়েছিলেন,
আমি কি তোমাকে সেটা শিখিয়ে দেব।
সেটা পড়লে আল্লাহ তোমার ঋণমুক্তির দায়িত্ব নেবেন।তোমার ঋণ যদি পর্বতপ্রমাণ হয়।
তাহলেও এরপর আলী (রাঃ) ওই ব্যক্তিকে কথাগুলো শিখিয়ে দিলেন।
পেজ সূচিপত্রঃ- চতুর্থ খলিফা আলী (রাঃ) এর শেখানো ঋণ মুক্তির দোয়া বিস্তারিত
দোয়াটি হলোঃ-
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ
عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা ইকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আঘ্নিনি বিফাদলিকা আম্মান
সিওয়াকা,
অর্থঃ- হে আল্লাহ, আপনার
হালাল রিজিকের মাধ্যমে আমাকে আপনার হারাম থেকে মুক্ত করুন। এবং আপনার অনুগ্রহের
দ্বারা আমাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে রক্ষা করুন। (তিরমিজি হাদিসঃ ৩৫৬৩)
আর্থিক দুরবস্থায় পড়লে মানুষ ঋণ নিতে বাধ্য হয়। ঋণের টাকায় প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা
করে। তবে সাধ্যের বাইরে ঋণ দেওয়া-নেওয়া দুটিই ইসলাম নিষেধ করেছে।
কারণ তাতে সময়মতো ঋণ পরিশোধের সম্ভাবনা কমে যায়। এর ফলে ঋণদাতাকে যেমন
হতাশাগ্রস্ত হতে হয়। ঋণগ্রহীতার আত্মমর্যাদাও ক্ষতির শিকার হয়।
ঋণ মুক্তির দোয়া ও হাদিস মহানবী (সাঃ) আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। যাতে
তিনি ঋণে জড়িয়ে না পড়েন। হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নামাজের
পরে দোয়া করতেন।
‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে গুনাহ ও ঋণ থেকে পানাহ চাচ্ছি। এক প্রশ্নকারী
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি ঋণ থেকে বেশি পানাহ চান কেন? রাসুল
(সাঃ) জবাব দিলেন। মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে মিথ্যা বলে। এবং ওয়াদা ভঙ্গ করে। (বুখারি
হাদিসঃ- ২৩৯৭)
আরবি হাদিস
بَاب مَنْ اسْتَعَاذَ مِنْ الدَّيْنِ
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ ح و
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ قَالَ حَدَّثَنِي أَخِي عَنْ سُلَيْمَانَ عَنْ
مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي عَتِيقٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ أَنَّ
عَائِشَةَ أَخْبَرَتْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَدْعُو
فِي الصَّلاَةِ وَيَقُولُ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْمَأْثَمِ
وَالْمَغْرَمِ فَقَالَ لَهُ قَائِلٌ مَا أَكْثَرَ مَا تَسْتَعِيذُ يَا رَسُولَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ الْمَغْرَمِ قَالَ إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا غَرِمَ
حَدَّثَ فَكَذَبَ وَوَعَدَ আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন। আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এই বলে দোয়া করতেন। হে আল্লাহ আমি তোমার
কাছে গুনাহ।
এবং ঋণ হতে পানাহ চাচ্ছি। একজন প্রশ্নকারী বলল, হে আল্লাহর রাসূল আপনি ঋণ হতে
এত বেশী বেশী পানাহ্ চান কেন? তিনি জওয়াব দিলেন, মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে যখন কথা
বলে মিথ্যা বলে।
এবং ওয়াদা করলে তা খেলাফ করে। হাদিসে ঋণ থেকে মুক্তির আরও কয়েকটি দোয়া
রয়েছে।
نَا قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا يَعْقُوْبُ عَنْ عَمْرٍو عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِأَبِيْ طَلْحَةَ الْتَمِسْ
غُلَامًا مِنْ غِلْمَانِكُمْ يَخْدُمُنِيْ حَتَّى أَخْرُجَ إِلَى خَيْبَرَ
فَخَرَجَ بِيْ أَبُوْ طَلْحَةَ مُرْدِفِيْ وَأَنَا غُلَامٌ رَاهَقْتُ الْحُلُمَ
فَكُنْتُ أَخْدُمُ رَسُوْلَ اللهِ إِذَا نَزَلَ فَكُنْتُ أَسْمَعُهُ كَثِيْرًا
يَقُوْلُ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ
وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ
وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ ثُمَّ قَدِمْنَا خَيْبَرَ فَلَمَّا فَتَحَ اللهُ
عَلَيْهِ الْحِصْنَ ذُكِرَ لَهُ جَمَالُ صَفِيَّةَ بِنْتِ حُيَيِّ بْنِ
أَخْطَبَ وَقَدْ قُتِلَ زَوْجُهَا وَكَانَتْ عَرُوسًا فَاصْطَفَاهَا رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم لِنَفْسِهِ فَخَرَجَ بِهَا حَتَّى بَلَغْنَا سَدَّ
الصَّهْبَاءِ حَلَّتْ فَبَنَى بِهَا ثُمَّ صَنَعَ حَيْسًا فِيْ نِطَعٍ صَغِيْرٍ
ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم آذِنْ مَنْ حَوْلَكَ فَكَانَتْ
تِلْكَ وَلِيْمَةَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى صَفِيَّةَ ثُمَّ
خَرَجْنَا إِلَى الْمَدِيْنَةِ قَالَ فَرَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يُحَوِّيْ
لَهَا وَرَاءَهُ بِعَبَاءَةٍ ثُمَّ يَجْلِسُ عِنْدَ بَعِيْرِهِ فَيَضَعُ
رُكْبَتَهُ فَتَضَعُ صَفِيَّةُ رِجْلَهَا عَلَى رُكْبَتِهِ حَتَّى تَرْكَبَ
فَسِرْنَا حَتَّى إِذَا أَشْرَفْنَا عَلَى الْمَدِيْنَةِ نَظَرَ إِلَى أُحُدٍ
فَقَالَ هَذَا جَبَلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ ثُمَّ نَظَرَ إِلَى الْمَدِيْنَةِ
فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أُحَرِّمُ مَا بَيْنَ لَابَتَيْهَا بِمِثْلِ مَا
حَرَّمَ إِبْرَاهِيْمُ مَكَّةَ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيْ مُدِّهِمْ
وَصَاعِهِمْ আনাস ইবনু মালিক রাঃ হতে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) আবূ ত্বলহাকে বলেন, তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুঁজে
আন,
যে আমার খেদমত করতে পারে। এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। অতঃপর আবূ
ত্বলহা (রাঃ) আমাকে তার সাওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায়
সাবালক।
আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর খেদমত করতে লাগলাম।
তিনি যখন অবতরণ করতেন। তখন প্রায়ই তাকে এই দোয়া পড়তে শুনতাম ‘হে আল্লাহ!
আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে
ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি। পরে আমরা খায়বারে
গিয়ে হাজির হলাম।
অতঃপর যখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে দুর্গের উপর বিজয়ী করলেন। তখন তাঁর নিকট সাফিয়্যা
বিনতু হুয়াই ইবনু আখতাবের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করা হলো তিনি ছিলেন।
সদ্য বিবাহিতা তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল। এবং আল্লাহর রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে নিজের জন্য মনোনীত করলেন। অতঃপর তাঁকে
নিয়ে রওয়ানা দিলেন।
আমরা যখন সাদ্দুস্ সাহ্বা নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন সফিয়্যাহ (রাঃ) হায়েয থেকে
পবিত্র হন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে তাঁর সঙ্গে
বাসর যাপন করেন।
অতঃপর তিনি চামড়ার ছোট দস্তরখানে ‘হায়সা’ প্রস্তুত করে আমাকে আশেপাশের লোকজনকে
ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই ছিল আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে সাফিয়্যার বিয়ের ওয়ালিমা।
অতঃপর আমরা মদিনার দিকে রওয়ানা দিলাম। আনাস (রাঃ) বলেন। আমি দেখতে পেলাম যে,
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর পেছনে চাদর দিয়ে
সফিয়্যাহ্কে পর্দা করছেন।
উঠানামার প্রয়োজন হলে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর
উটের কাছে হাঁটু বাড়িয়ে বসতেন। আর সাফিয়্যা রাঃ তাঁর উপর পা রেখে উটে আরোহণ
করতেন,
এভাবে আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলাম। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) উহুদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটি এমন এক পর্বত যা আমাদের ভালবাসে এবং
আমরাও তাকে ভালবাসি।
অতঃপর মদিনার দিকে তাকিয়ে বললেন হে আল্লাহ এই কঙ্করময় দু’টি ময়দানের
মধ্যবর্তী স্থানকে আমি ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করছি। যেমন ইব্রাহীম (আঃ) মক্কাকে
‘হারাম’ ঘোষণা করেছিলেন।
হে আল্লাহ্ আপনি তাদের মুদ এবং সা‘তে বরকত দান করুন। (বুখারি হাদিসঃ- ২৮৯৩)
একজন বিশ্বাসী লোকের কাছে ঋণের বোঝার চেয়ে ভারী কিছু নেই। কারণ, ঋণ বান্দার হক।
ক্ষমা না পেলে ঋণ থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই। তাই কেউ ঋণ মাফ করে দিলে ওই
ব্যক্তির জন্য আখিরাতে অনেক বড় পুরস্কারের ঘোষণা এসেছে হাদিসে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু রবিআ আল-মাখযুমি (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সাঃ)
হুনাইন যুদ্ধের সময় তাঁর কাছ থেকে ৩০ বা ৪০ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন।
নবী (সাঃ) যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তাঁর পাওনা পরিশোধ করেন। এরপর নবী করিম (সাঃ)
তাঁকে দোয়া করে বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান
করুন। নিশ্চয়ই ঋণের প্রতিদান হলো, তা পরিশোধ করা ও প্রশংসা করা। (ইবনে মাজাহ,
মুসনাদে আহমদ)
সর্বশেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক আশা করি উপরের বিষয়ে সম্পূর্ণ রূপে পড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন, যে
ঋণ জিনিসটা অনেক খারাপ আর যদি ঋণ কারো কাছ থেকে নিতে হয়।
তাহলে সাধ্যের মধ্যে রাখা সবচাইতে উত্তম আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন, আল্লাহ
আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন আমিন।