ওযু করার নিয়ম কিভাবে বিস্তারিত জানুন
ইসলামিক বিষয়ে আলোচনাইসলাম ধর্মে পবিত্রতা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। প্রতিটি ইবাদতের মূল
শর্ত হলো পবিত্র থাকা।
এবং এই পবিত্রতা নিশ্চিত করার অন্যতম উপায় হলো ওযু। এটি একটি বিশেষ বিধান যা
কেবল শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়
বরং আত্মিক শুদ্ধির মাধ্যমেও মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওযু
মানুষকে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন, শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
এবং আল্লাহর ইবাদতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। ইসলামের প্রতিটি
বিধানেই মানুষের জন্য শারীরিক মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উপকার নিহিত রয়েছে, আর ওযু
তার উজ্জ্বল উদাহরণ।
ওযু ইসলামে পবিত্রতা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত
এবং বিশেষ কিছু ইবাদতের পূর্বশর্ত। নিচে ওযুর বিস্তারিত দিকগুলো উল্লেখ করা
হলো।
সূচিপত্রঃ- ওযু করার নিয়ম-কানুন দলিল বিস্তারিত জেনে নিন
- ওযুর সংজ্ঞা
- ওযু করার নিয়ম
- ওযুর ফরজ
- ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ
- ওযুর ফজিলত
- ওযুর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি
- ওযুর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির দলিল
- সর্বশেষ কথা
ওযুর সংজ্ঞা
ওযু শব্দটি আরবি "উদূ" থেকে এসেছে, যার অর্থ পবিত্রতা বা পরিচ্ছন্নতা। ইসলামী
শরীয়তে, এটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী শরীরের নির্দিষ্ট অংশ ধোয়া এবং মুছে
পবিত্রতা অর্জনের একটি প্রক্রিয়া।
ওযু করার নিয়ম
ওযুর সময় শরীরের কয়েকটি নির্দিষ্ট অংশ পরিষ্কার করতে হয়। ধাপে ধাপে ওযু করার
পদ্ধতি।
- (নিয়ত করা) ওযুর শুরুতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অন্তরে নিয়ত করতে হবে। মুখে উচ্চারণ করাও ভালো।
- (বিসমিল্লাহ বলা) ওযু শুরু করার সময় “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলা সুন্নত।
- (হাত ধোয়া) প্রথমে দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে।
- (কুলি করা) মুখে পানি নিয়ে কুলি করতে হবে এবং মুখ পরিষ্কার করতে হবে। সুন্নত অনুযায়ী, এটি তিনবার করা উত্তম।
- (নাকে পানি নেওয়া) নাকে পানি টেনে নিয়ে তা পরিষ্কার করতে হবে। এটি তিনবার করা সুন্নত।
- (মুখ ধোয়া) পুরো মুখ একবার ধোয়া ফরজ। সুন্নত অনুযায়ী, মুখ তিনবার ধোয়া উত্তম।
- (হাত ধোয়া) উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া ফরজ। প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত ধুতে হবে। এটি তিনবার করা উত্তম।
- (মাথার মাসাহ করা) ভেজা হাত দিয়ে মাথার চতুর্থাংশ মাসাহ করা ফরজ। তবে পুরো মাথা মাসাহ করা সুন্নত।
- (কানের মাসাহ করা) ভেজা হাত দিয়ে উভয় কানের ভেতরের এবং বাইরের অংশ মুছা সুন্নত।
- (পা ধোয়া) দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া ফরজ। প্রথমে ডান পা এবং পরে বাম পা ধুতে হবে। সুন্নত অনুযায়ী, এটি তিনবার করা উত্তম।
ওযুর ফরজ
ওযুর চারটি ফরজ কাজ আছে। এগুলো না করলে ওযু হবে না।
- মুখ ধোয়া।
- উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া।
- মাথার চতুর্থাংশ মাসাহ করা।
- পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া।
ওযুর সুন্নত
ওযু করার সময় কিছু সুন্নতি কাজ করলে ওযু আরও পূর্ণাঙ্গ হয়।
- বিসমিল্লাহ বলা।
- প্রতিটি অঙ্গ তিনবার ধোয়া।
- অঙ্গ ধোয়ার সময় ডান দিক থেকে শুরু করা।
- দাঁত পরিষ্কার করা (মিসওয়াক করা)।
- ধারাবাহিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা।
- অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় অন্যদের কথা না বলা।
ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ
ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ শরীয়তে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। এসব কারণ ওযু ভঙ্গ
করে, যার ফলে নতুন করে ওযু করতে হয়। নিচে ওযু ভঙ্গের প্রধান কারণগুলো
বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো।
প্রাকৃতিক নির্গমন (তাহারাত নষ্ট হওয়া)
- মলঃ- পায়ু পথে মল ত্যাগ করলে।
- মূত্রঃ- প্রস্রাব করলে।
- গ্যাসঃ- পায়ু পথে বায়ু নির্গত হলে।
- মাজি বা ওয়াদিঃ- শারীরিক উত্তেজনার ফলে বা প্রস্রাবের পরে সাদা আঠালো তরল (মাজি বা ওয়াদি) বের হলে।
- রক্ত, পুঁজ, বা পানি শরীর থেকে নির্গত হলে, যদি তা চলার মতো হয়।
- বমি, যদি তা মুখভর্তি হয় এবং গলার ভেতর থেকে বের হয়।
গভীর ঘুম
এমনভাবে ঘুমানো যাতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রণ থাকে না (যেমনঃ-
শুয়ে বা হেলান দিয়ে গভীর ঘুমানো)।
তবে বসে থাকা অবস্থায়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকলে ওযু ভঙ্গ
হবে না।
পাগল বা বেহুঁশ হওয়াঃ
- পাগল হয়ে যাওয়া।
- বেহুঁশ হয়ে পড়া বা মদ, মাদকজাতীয় কিছু সেবনের ফলে সংজ্ঞাহীন হওয়া।
নামাজে উচ্চস্বরে হাসলে ওযু ভেঙে যায়। তবে নামাজের বাইরে হাসলে ওযু ভঙ্গ হয়
না।
প্রাণীর কামড় বা ক্ষত থেকে নির্গমনঃ- যদি ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ
বা রক্ত নির্গত হয় এবং তা প্রবাহিত হয়।
স্পর্শঃ ইসলামি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির স্ত্রী বা বিপরীত লিঙ্গের কাউকে
কামভাবসহ স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হতে পারে। তবে এটি মাজহাবভেদে ভিন্ন।
নাপাক হওয়াঃ- কোনো নাপাক জিনিস স্পর্শ করার ফলে যদি শরীর বা
কাপড় নাপাক হয়।
(উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়)
- হাঁচি বা কাশি দিলে ওযু ভঙ্গ হয় না।
- সামান্য রক্ত বা ক্ষত থেকে বের হওয়া রক্ত ওযু ভঙ্গ করে না, যদি তা প্রবাহিত না হয়।
- কান্না বা দুঃখে চোখের পানি বের হলে ওযু ভঙ্গ হয় না।
ওযুর শুদ্ধতা রক্ষা করা ইবাদতের জন্য অপরিহার্য। তাই ওযু ভঙ্গের কারণ
সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা এবং নতুন করে ওযু করা জরুরি।
ওযুর ফজিলত
ওযুর ফজিলত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি কেবল শারীরিক পরিচ্ছন্নতা
নয়। আত্মিক শুদ্ধিরও মাধ্যম। হাদিস ও কুরআনে ওযুর বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত
বর্ণিত হয়েছে। নিচে ওযুর প্রধান ফজিলত গুলো উল্লেখ করা হলো।
- পাপ মোচন হয়। ওযু করার সময় পানি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপও ধুয়ে যায়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন। যখন কোনো বান্দা ওযু করে, তখন তার মুখ থেকে সব পাপ
বের হয়ে যায়। যা সে চোখ দিয়ে দেখেছিল।
এরপর হাত ধোয়ার সময় হাতের পাপ, এবং পা ধোয়ার সময় পায়ের পাপ বের হয়ে
যায়, যতক্ষণ না সে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম হাদিসঃ- ২৪৪)
- জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যমঃ- ওযু করা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালোভাবে ওযু করবে, তার জন্য জান্নাতের
আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে যেকোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
(মুসলিম হাদিসঃ- ২৩৪)
- কিয়ামতের দিন উজ্জ্বলতা লাভ ওযুর ফলে কিয়ামতের দিন ওযুর অঙ্গগুলো আলোকিত থাকবে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,"আমার উম্মত কিয়ামতের দিন ওযুর কারণে উজ্জ্বল
মুখমণ্ডল এবং উজ্জ্বল হাত-পাসহ উপস্থিত হবে।" (বুখারি হাদিসঃ- ১৩৬)
- গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধিঃ- ওযু করার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়। এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ ওযু করে, আল্লাহ তার
গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।" (মুসলিম হাদিসঃ-
২২৯)
- নামাজের পূর্বশর্তঃ- ওযু ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। এটি ইবাদতের জন্য পবিত্রতা ও আল্লাহর কাছে একাগ্রতা অর্জনের প্রধান শর্ত।
কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, "হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে, তখন
মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, এবং মাথার মাসাহ করো, এবং পা টাখনু
পর্যন্ত ধুয়ে নাও।" (সুরা মায়েদাঃ ৬)
- ফেরেশতাদের সান্নিধ্য লাভঃ- যে ব্যক্তি সবসময় পবিত্র থাকে, এবং ওযু অবস্থায় থাকে, তার কাছে ফেরেশতারা থাকে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ওযু অবস্থায় ঘুমায়, তার সঙ্গে একজন
ফেরেশতা থাকে এবং সে আল্লাহর কাছে দোয়া করে: হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা
করুন।" (মুয়াত্তা মালিক, হাদিসঃ- ২৯৮)
- ওযু অবস্থায় ইবাদতের ফজিলত বৃদ্ধিঃ- ওযু অবস্থায় ইবাদত করলে সেই ইবাদতের ফজিলত অনেক বেশি হয়। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।
শয়তানের প্রভাব দূর করাঃ- ওযু করলে শয়তানের প্রভাব কমে যায়।
ওযু একটি আধ্যাত্মিক ঢাল হিসেবে কাজ করে।
- দুআ কবুল হওয়া- ওযু অবস্থায় দুআ করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ওযু শুদ্ধতার প্রতীক, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক।
- রোগমুক্তি ও শারীরিক পবিত্রতাঃ- ওযু শারীরিক পবিত্রতা রক্ষা করে, যা বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। এটি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও উপকারী।
ওযু কেবল একটি শারীরিক কাজ নয়। এটি আত্মার শুদ্ধি পাপ মোচন, এবং আল্লাহর
নৈকট্য অর্জনের একটি বিশেষ মাধ্যম। নিয়মিত ওযু করা। এবং সবসময় পবিত্র থাকা
একজন মুসলিমের জীবনে বিশেষ বরকত ও ফজিলত বয়ে আনে।
ওযুর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি
ওযু কেবল শারীরিক পবিত্রতার বিষয় নয়। এটি আত্মার পরিশুদ্ধির একটি মাধ্যম। এটি
মনের একাগ্রতা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে।
আপনার ইবাদতকে আরও অর্থবহ করতে সঠিকভাবে ওযু করার চেষ্টা করুন। ওযু (অজু)
ইসলামে আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়।
এটি শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য নয় বরং আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতার
একটি উপায় হিসেবেও কাজ করে ওযুর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির কিছু দিক নিম্নরূপ
ওযুর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির দলিল
ওযুর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির দলিল কুরআন এবং হাদীসের মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ
করা হয়েছে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত এবং হাদীস আরবি হরফসহ তুলে ধরা
হলো।
কুরআন থেকেঃ "يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ
فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا
بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ" (سورة المائدة، 5:6)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের নামাজের জন্য ওযু করার নির্দেশ দিয়েছেন,
যাতে শরীর এবং আত্মা উভয় পরিশুদ্ধ হয়। ওযু শারীরিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি
আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতারও একটি মাধ্যম।
হাদীস থেকেঃ"مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ
حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ" (صحيح مسلم)
অর্থ: "যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করবে, তার গুনাহ তার শরীর থেকে বের
হয়ে যাবে এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।" (মুসলিম)
এই হাদীসে বলা হয়েছে যে, সঠিকভাবে ওযু করার মাধ্যমে এক ব্যক্তি তার গুনাহ
থেকে মুক্তি পায়, যা তার আত্মশুদ্ধির লক্ষণ।
"إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ، خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ
وَجْهِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ عَيْنَيْهِ" (صحيح البخاري)
অর্থ: "যখন বান্দা ওযু করে এবং তার মুখ ধোয়, তখন তার মুখের সমস্ত
গুনাহ ঝরে পড়ে এমনকি তার চোখের নিচ থেকেও।" (বুখারি)
এই হাদীসে আরও একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ওযুর
মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি অংশ পরিশুদ্ধ হয় এবং গুনাহ মাফ হয়।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ ওযু শুধুমাত্র বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, বরং এটি আধ্যাত্মিক
পরিশুদ্ধতার একটি পদ্ধতি। আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে ওযু করার মাধ্যমে মানুষ
তার শরীর, মন।
এবং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। ওযু নামাজের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে নেওয়া
হলেও, এটি এক ধরনের আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া যা ঈমানকে দৃঢ় করে।
- শারীরিক ও আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতাঃ- ওযু শারীরিকভাবে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে, কিন্তু এর আধ্যাত্মিক গুরুত্বও রয়েছে। যখন মুসলমান অজু করেন,
গুনাহের ক্ষমাঃ- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি
পূর্ণরূপে ওযু করবে, তার গুনাহ অজুর পানির সঙ্গে বা পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে
ঝরে যাবে।" (মুসলিম) অর্থাৎ, ওযু করার মাধ্যমে মনের দূষিত চিন্তা ও পূর্বে
করা গুনাহ ক্ষমা লাভের সুযোগ পায়।
- নামাজের প্রস্তুতিঃ- ওযু নামাজের জন্য প্রস্তুতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি নামাজের খুশু ও খুজুর (অন্তরের শান্তি ও মনোযোগ) বৃদ্ধি করে, যখন মুসলমান সঠিকভাবে ওযু করেন। তারা নামাজে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারেন। এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর হয়।
আত্মবিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যঃ- ওযু করা ইসলামী
জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন মুসলমান যখন প্রতিদিন কয়েকবার ওযু
করেন। তাদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য
এবং আত্মবিশ্বাসের একটি শক্তিশালী নিদর্শন। এটি তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে
শক্তিশালী করে এবং তাদের ঈমানের প্রতি আরও নিবেদিত হতে সাহায্য করে।
আত্মসমালোচনা ও উন্নতিঃ- ওযু করার সময় মুসলমান নিজের পাপ ও
ভুলগুলো চিন্তা করে, এবং তা থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা
প্রার্থনা করেন। এটি তাদের আত্মসমালোচনার জন্য একটি মাধ্যম এবং জীবনের
উন্নতির জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
অতএব, ওযু শুধুমাত্র একটি শারীরিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক
প্রক্রিয়া যা মুসলমানদের জীবনে আত্মশুদ্ধি ও ঈমানের পরিপূর্ণতা আনে।
সর্বশেষ কথা
এটি ইসলামী জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এটি শুধু শরীরের পরিচ্ছন্নতা
নিশ্চিত করে না। বরং আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতা। এবং মনোযোগী হওয়ার জন্যও সহায়ক
নামাজ।
এবং অন্যান্য ইবাদত সঠিকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য অজু করা আবশ্যক। এছাড়া,
অজু ভঙ্গ করার কিছু কারণ যেমন পায়খানা বা প্রস্রাব, ঘুম, বা গায়ে অপবিত্র
কিছু লাগা ইত্যাদি থেকে এড়ানো জরুরি।
অজু শুধুমাত্র শারীরিক পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়। বরং এক ধরণের আধ্যাত্মিক
প্রস্তুতি হিসেবেও দেখা হয়, যা মানুষকে তাদের বিশ্বাসে আরও শক্তিশালী করে
তোলে।