নামাজের ওয়াজিব গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ওয়াজিব আমল বিস্তারিত পড়ুন

ধর্মীয় বিষয়েক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনানামাজের ওয়াজিবগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ওয়াজিব আমল হচ্ছে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে বসা। 
নামাজের ওয়াজিব গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ওয়াজিব আমল বিস্তারিত পড়ুন
আমরা জানি, নামাজে কোনো ওয়াজিব ভুলে ছুটে গেলে সাহু সিজদা করতে হয়। অন্যথায় সে নামায পুনরায় আদায় করতে হয়। 

আর ইচ্ছাপূর্বক কোনো নামাজের ওয়াাজিব ছেড়ে দিলে পরবতীতে সাহু সিজদা আদায় করলেও হবে না। এ নামাজ পুনরায় নতুন করে পড়তেই হবে। 

পেজ সূচিপত্র নামাজের ওয়াজিব গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিস্তারিত 

  • রুকু থেকে দাঁড়িয়ে দোয়া
  • দুই সিজদার মাঝখানের দোয়া
  • তাশাহ‍্হুদ - আত্তাহিয়্যাতু
  • দরূদ শরীফ (দরূদে ইবরাহীম)
  • দোয়ায়ে মাসুরা 
  • সালাম ফিরানোর পর দুআ/যিক‍‍্‍র
  • আয়াতুল কুরসি
  • দোয়ায়ে কুনুত 
  • সর্বশেষ কথা 
আমাদের অনেকেই রুকু থেকে কোনো রকম কোমর উঠিয়েই সিজদায় চলে যান। প্রথম সিজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে স্থির হয়ে বসার আগেই দ্বিতীয় সিজদায় চলে যান। যারা নিয়মিত এভাবে নামাজ পড়ছেন, 
আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন, তাদের সকল নামাজ নষ্ট হয়েযাচ্ছে কিনা। আমরা যারা কষ্ট করে নামাজ পড়ছিই, তারা একটু সচেতন হলেই এই ভয়ংকর গুনাহ থেকে বেঁচে যেতে পারি। 

এই দুটি ওয়াজিব আদায়ের জন্য ৩ থেকে ৪ সেকেন্ড সময় ব্যয় করাই যথেষ্ট! তবুও আমরা তাড়াহুড়া করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এভাবে কেউ নামাজ পড়লে,

তিনি ঐ নামাজ আবার পড়ার জন্য নির্দেশ দিতেন। যারা এরকম ত্বরিঘড়ি করে নামাজ পড়ে তাদের ব্যাপারে রাসূল (সা) তিনি বলেছেনঃ ঐ নামাজ হলো মুনাফিকের নামাজ, 

যে বসে বসে সূর্যের প্রতি তাকাতে থাকে আর যখন তা অস্তপ্রায় হয়ে যায়। তখন উঠে গিয়ে চারবার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে। (মুসলিম ৬২২)

অন্য হাদীসে এরকম দ্রুত রুকু সিজদাহকারীকে তুলনা করা হয়েছে, রক্তে কাকের ঠোকর মারার সাথে। (ইবনে খুযায়মা, ৬৬৫)

কখনো কখনো এমন হতো, নফল নামাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে দাঁড়ানোর পর সাহাবিরা মনে করতেন, আল্লাহর রাসূল (সা) হয়ত সিজদায় যেতে ভুলেই গেছেন! 

রুকু থেকে দাঁড়িয়ে দোয়া 

অর্থাৎ তিনি রুকু থেকে দাঁড়িয়ে অনেক লম্বা সময় ধরে দুয়া পড়তেন। সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আমাদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামাজের বর্ণনা দিলেন। 

অতঃপর তিনি নামাজ আদায় করে দেখালেন। তিনি যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠালেন, তখন (এত দীর্ঘ সময়) দাঁড়িয়ে রইলেন যে আমরা মনে করলাম, তিনি (সিজদার কথা) ভুলেই গেছেন। (বুখারী, ৮০০)

আমাদের উচিত, অন্তত "সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ - রব্বানা লাকাল হামদ" পুরো বাক্য ধীরস্থিরভাবে উচ্চারণ করে আস্তেধীরে সিজদায় যাওয়া। 

নফল নামাজে রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় "সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলার পর আমরা এই দুআটিও পড়তে পারিঃ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ (মুয়াত্তা - ২৩২)

দুই সিজদার মাঝখানের দোয়া 

দুই সিজদার মাঝে রাসূল (সা) অত্যন্ত চমৎকার একটা দুআ পড়তেন। এই দু্আর মাঝে দুনিয়া আখিরাতের সকল চাওয়াই চলে আসে। اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِيْ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন। আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন। এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।

(হাদীসটি নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, ১/২৩১, নং ৮৫০; তিরমিযী, নং ২৮৪, ২৮৫; ইবন মাজাহ, নং ৮৯৮)

আরো একটি ছোট দুআ হাদীসে পাওয়া যায়। এ দু্আটিও দুই সিজদার মাঝে বসে পাঠ করতে পারি। যেমনঃ- رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ অর্থঃ- হে আমার রব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। (আবূ দাউদ ১/২৩১, নং ৮৭৪; ইবন মাজাহ নং ৮৯৭)

চলুন পরবর্তী সকল নামাজে আরো কয়েক সেকেন্ড বেশি ব্যয় করে। এই দুআ গুলো নিয়মিত মনোযোগের সঙ্গে পড়ি। ওয়েবসাইটে নামাজের দুআ গুলো অর্থসহ পাওয়া যাবে।

অর্থ বুঝে বুঝে দুআগুলো পড়লে আস্তে আস্তে আমাদের নামাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। নামাজে মনোযোগ ও আন্তরিকতা বাড়বে। নামাজ তখন প্রকৃতভাবেই আল্লাহর স্মরণের মাধ্যম হয়ে উঠবে। 

আল্লাহ আমাদের সকলের নামাজকে সুন্দর করার তাওফিক দান করুন। আমীন। আমরা আবার শিখবো আত্তাহিয়াতু চলুন শুরু করা যাক।

তাশাহ‍্হুদ - আত্তাহিয়্যাতু

اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ، وَالصَّلَوَاتُ، وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللّٰهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ 

যাবতীয় অভিবাদন আল্লাহর জন্য, অনুরূপভাবে সকল সালাত ও পবিত্র কাজও। হে নবী! আপনার উপর বর্ষিত হোক আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি, রহমত ও বরকতসমূহ। আমাদের উপর।

এবং আল্লাহর সৎ বান্দাদের উপরও বর্ষিত হোক শান্তি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। বুখারীর নং ৮৩১; মুসলিম ১/৩০১, নং ৪০২
দরূদ শরীফ

দরূদ শরীফ (দরূদে ইবরাহীম)

اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ،

 اللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ

হে আল্লাহ! আপনি শান্তি বর্ষণ করুন মুহাম্মাদের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর, যেমন আপনি শান্তি বর্ষণ করেছেন। ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার পরিজনদের উপর নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। 
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের উপর বরকত নাযিল করুন যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত।বুখারী, নং ৩৩৭০; মুসলিম, নং ৪০৬

দোয়ায়ে মাসুরা 

  • দুআ ১
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ হে আল্লাহ! 

আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই। অতএব আমাকে আপনার পক্ষ থেকে আমাকে মাফ করে দিন, আর আমার প্রতি দয়া করুন।

আপনিই তো ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু। বুখারী, নং ৮৩৪; মুসলিম ৪/২০৭৮, নং ২৭০৫
  • দুআ ২ 
اللّٰهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ 

হে আল্লাহ! আপনার যিক্‌র করতে, আপনার শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন। (আবূ দাউদ, নং ১৫২২; নাসাঈ, নং ২৩০২)
  • দুআ ৩
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا اِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ وَحْدَكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ، الْمَنَّانُ، يَا بَدِيْعَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ

হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি কারণ সকল প্রশংসা আপনার জন্য, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কোনো মাবুদ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, হে সীমাহীন অনুগ্রহকারী।

হে আসমান সমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, হে মহিমাময় ও মহানুভব হে চিরঞ্জীব হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। (আবূ দাউদ, নং ১৪৯৫; তিরমিযী, নং ৩৫৪৪; ইবন মাজাহ, নং ৩৮৫৮)

সালাম ফিরানোর পর দুআ/যিক‍‍্‍র

  • একবার বলবেঃ اللّٰهُ أَكْبَر‎ আল্লাহ সবকিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
  • তিনবার বলবেঃ أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ আমি আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
  • এরপর পড়বেঃ اَللّٰهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়। আপনার নিকট থেকেই শান্তি বর্ষিত হয়। আপনি বরকতময়, হে মহিমাময় ও সম্মানের অধিকারী! মুসলিম, নং ৫৯১
  • এরপর একবার বলবে, لَا اِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সর্বশক্তিমান।
  • তারপর, اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করেছেন তা প্রতিহত করার কেউ নেই, আর আপনি যা আটকে রেখেছেন। তা প্রদান করারও কেউ নেই, আর কোনো ক্ষমতা-প্রতিপত্তি আপনার কাছে কোনো উপকারে আসবে না। বুখারী, নং ৮৪৪; মুসলিম, নং ৫৯৩
  • প্রত্যেকটি ৩৩ বার করে বলবে,
  • سُبْحَانَ اللّٰهِ আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান।
  • وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য।
  • وَاللّٰهُ أَكْبَرُ আল্লাহ সবচেয়ে বড়। 
তারপর বলবে, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ 

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সর্বশক্তিমান। মুসলিম, ১/৪১৮, নং ৫৯৭)

মাগরিব ও ফজরের নামাযের পর ১০ বার করে পড়বে, لَا إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ 

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সর্বশক্তিমান।

তিরমিযী, নং ৩৪৭৪; আহমাদ, নং ১৭৯৯০। হাদীসটির তাখরীজের জন্য আরও দেখুন, যাদুল মা‘আদ ১/৩০০

ফজর নামাযের সালাম ফিরানোর পর পড়বে, اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا 

হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুল হবে এমন আমল প্রার্থনা করি। 

ইবন মাজাহ্‌, নং ৯২৫ নাসাঈ, তাঁর আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ গ্রন্থে, হাদীস নং ১০২
  • প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর একবার করে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়া সুন্নাহ।সূত্রঃ আবু দাঊদ, নং ১৫২৩; তিরমিযী, নং ২৯০৩; নাসাঈ, নং ১৩৩৫) 

আয়াতুল কুরসি 

প্রত্যেক সালাতের পর একবার আয়াতুল কুরসি পড়া। যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, মৃত্যু ছাড়া তার জান্নাতে প্রবেশে আর অন্য কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
  • اللّٰهُ لَآ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ ۚআল্লাহ্, তিনি ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক।
  • لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ ۚ তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রা তো নয়ই।
  • لَّهُ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ ۗ আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর।
  • مَنْ ذَا الَّذِى يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهٖ ۚ কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে?
  • يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন।
  • وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না।
  • وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ ۖ তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে;
  • وَلَا يَؤُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না।
  • وَهُوَ الْعَلِىُّ الْعَظِيْمُ আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।
নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ১০০; ইবনুস সুন্নী, নং ১২১আয়াতুল কুরসি বলা হয়। সূরা বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াতকে।

দুআয়ে কুনুত

দুআয়ে কুনুত ১
  • اَللّٰهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللّٰهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি। এবং সকল প্রশংসা তোমার জন্যেই করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। 

যে তোমার অবাধ্য হয় আমরা তাকে বর্জন করি ও তার থেকে সরে যাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। 

আমরা তোমার আনুগত্যের দিকেই এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাব তো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

দুআয়ে কুনুত ২
  • اللّٰهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ 
হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে হেদায়াত করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও হেদায়াত দিন, আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করেছেন। তাদের মধ্যে আমাকেও নিরাপত্তা দিন, আপনি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন, 

তাদের মধ্যে আমার অভিভাবকত্বও গ্রহণ করুন, আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন। আপনি যা ফয়সালা করেছেন তার অকল্যাণ থেকে আমাকে রক্ষা করুন।

فَإِنَّكَ تَقْضِيْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، (وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ) تَبارَكْتَ رَبَّنْا وَتَعَالَيْتَ 

কারণ আপনিই চুড়ান্ত ফয়সালা দেন, আপনার বিপরীতে ফয়সালা দেওয়া হয় না। আপনি যার সাথে বন্ধুত্ব করেছেন সে অবশ্যই অপমানিত হয় না। এবং আপনি যার সাথে শত্রুতা করেছেন। সে সম্মানিত হয় না। আপনি বরকতপূর্ণ হে আমাদের প্রতিপালক! আর আপনি সুউচ্চ-সুমহান।

আবূ দাউদ, নং ১৪২৫; তিরমিযী, নং ৪৬৪; নাসাঈ, নং ১৭৪৪; ইবন মাজাহ, নং ১১৭৮; আহমাদ, নং ১৭১৮; দারিমী, নং ১৫৯২; হাকিম, ৩/১৭২; বাইহাকী, ২/২০৯। আর দু’ ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ বাইহাকীর। 

দুআয়ে কুনুত ৩
  • اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ، وَأَعُــوْذُ بِكَ مِنْكَ، لاَ أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ 
হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে অসন্তুষ্টি থেকে, আর আপনার নিরাপত্তার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি আপনার নিকটে আপনার (পাকড়াও) থেকে আশ্রয় চাই। 

আমি গুনে গুনে আপনার প্রশংসা করতে সক্ষম নই; আপনি সেরূপই, যেরূপ প্রশংসা আপনি নিজের জন্য করেছেন। (আবূ দাউদ, নং ১৪২৭; তিরমিযী, নং ৩৫৬৬; নাসাঈ, নং ১৭৪৬; ইবন মাজাহ্‌, নং ১১৭৯)

তারাবীহ সালাতের প্রতি চার রাকাতের বিরতিতে একটি সুন্দর দুআ হলো: **سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ، سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَلَالِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لا يَمُوتُ، سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ، لا إِلَهَ إِلاَّ اللهُ نَسْتَغْفِرُ اللهَ، نَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.**

এর অর্থ হলোঃ- পরম পবিত্র তিনি যিনি রাজত্ব ও সার্বভৌমত্বের অধিকারী, পবিত্র তিনি যিনি মর্যাদা ও মহত্ত্বের অধিকারী, পবিত্র তিনি যিনি মহা শক্তিমত্তা ও গৌরব এবং অনন্য সৌন্দর্যের অধিকারী। 

তিনি অনন্ত জীবনের অধিকারী মহান রাজা যিনি কখনো মারা যাবেন না। তিনি অত্যন্ত পবিত্র এবং মহাসম্মানিত ফেরেশতাদের এবং রূহ-এর প্রতিপালক। 

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য তাঁর আশ্রয় চাই।”

এই দুআটি পড়লে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা হয় এবং তা তারাবীহের সালাতের মাঝে খুবই প্রাসঙ্গিক। আপনি যদি এটি নিয়মিত পাঠ করেন তবে এটি আত্মার প্রশান্তি এনে 

তারাবীর নামাজের প্রতি চার রাকাতের বিরতিতে পড়ার জন্যে বিশেষ কোনো দুআ নেই। যে কোনো দুআ এ সময় পড়া যেতে পারে। এ সময়টা মূলত বিশ্রামের জন্যে। তারাবীহ অর্থই হলো বিশ্রাম। 

আমাদের সমাজে এ সময়ে পড়ার একটি দুআ প্রচলিত আছে। দুআটি কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়নি। তাই ভুল উচ্চারণে কষ্ট করে এ দুআ না পড়ে সহীহ উচ্চারণে সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ বা এ জাতীয় কোনো দুআ পড়ুন। এমনকি বিশ্রামও নিতে পারেন। 

এতেও কোনো অসুবিধা নেই। আর এ তো বলাবাহুল্য, ভুল উচ্চারণে বেশি কিছু পড়ার চেয়ে সঠিক উচ্চারণে কম পড়াও ভালো। বিশেষত যদি হাদীসে সে ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো দুআ বর্ণিত না থাকে।

সর্বশেষ কথা 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আশা করি উপরের বিষয় নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পেরেছেন নামাজের মধ্যে কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে।এটি পড়ে যদি একটু উপকারে এসে থাকে অবশ্যই ওয়েবসাইট এর সঙ্গে থাকবেন। ধন্যবাদ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন